<p style="text-align:justify">নেশার টাকা জোগাড়ে মাদকসেবীরা মা-বাবার মতো আপনজনকেও হত্যা করতে দ্বিধা করছে না। সম্প্রতি বেশ কিছু পারিবারিক অপরাধমূলক ঘটনা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ ঘটনার পেছনে কোনো না কোনোভাবে মাদকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, মাদকের কারণে দেশে কী পরিমাণ অপরাধ ঘটছে, এ ব্যাপারে সার্বিক কোনো একক জরিপ না থাকলেও মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান বলছে, মাদকের বিস্তার ভয়ানক রকম বাড়ছে।</p> <p style="text-align:justify">মাদকসংক্রান্ত অপরাধ থেকে ঘটছে অন্যান্য চাঞ্চল্যকর অপরাধ। মাদক সেবনের টাকা সংগ্রহে পরিবারের সদস্যদের ওপর সহিংস হামলা কিংবা ছিনতাইকালে সামান্য টাকার জন্য খুনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে মাদকসেবীরা। গতকাল রবিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে নোয়াগাঁও ইউনিয়নে মাদকসেবী তরুণ মো. রিফাতের (১৮) ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবা শফিকুল ইসলাম (৪৫)। রিফাতের মা রোজিনা আক্তারের ভাষ্য, রিফাত দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন করে আসছে।</p> <p style="text-align:justify">মাদক কেনার টাকা নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রায়ই তার ঝগড়া হতো। গতকালও ২০ হাজার টাকার জন্য রিফাত তার বাবার ওপর চাপ দেয়। ওই টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে রিফাত বাবাকে ছুরিকাঘাত করলে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।</p> <p style="text-align:justify">নিহতের ভাতিজা ইয়ামিন সুজন বলেন, ‘স্থানীয় উঠতি বয়সের কয়েকজন ছেলে মাদকের সঙ্গে জড়িত। রিফাত তাদেরই একজন।’</p> <p style="text-align:justify">এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বেপরোয়া গতিতে চলা প্রাইভেট কারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ নিহত এবং তাঁর দুই বন্ধু গুরুতর আহত হন। গ্রেপ্তারের পর প্রাইভেট কারের চালকসহ অন্য দুই আরোহীর ডোপ টেস্ট করে তাঁদের শরীরে মাদক পাওয়া গেছে।</p> <p style="text-align:justify">এর আগে গত ২৩ নভেম্বর কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বড়ুয়া পাড়ায় মাদকের টাকা দিতে না পারায় মা আনোয়ারা বেগম মেরীকে (৫৫) কুপিয়ে হত্যা করেন ছেলে হোসাইন মোহাম্মদ আবিদ (২৮)।</p> <p style="text-align:justify">গত ১১ নভেম্বর খুলনার ডুমুরিয়ায় টিউবওয়েল থেকে পানি নেওয়াকে কেন্দ্র করে মাদকাসক্ত ছোট ভাই সোহান তাঁর আপন বড় ভাই রুবেলকে কুপিয়ে হত্যা করেন।<br /> মাদককে কেন্দ্র করে ঘটা বা মাদকসেবীদের দ্বারা সংঘটিত এসব অপরাধমূলক ঘটনা শুধু একটি বা দুটি নয়, প্রায়ই ঘটছে। সংবাদমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাদকাসক্ত অনেকে নেশার টাকা না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের খুন করেছে।</p> <p style="text-align:justify">অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদকসেবীদের বেশির ভাগই তরুণ বয়সী। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের একাংশ মাদক সেবনের টাকা জোগাড়ে চুরি-ছনতাইসহ হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">ঢাকার মানসিক ও মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রের মেন্টাল হেলথ কাউন্সিলর নুসরাত সাবরিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে মাদকসেবীর তুলনায় সরকারি-বেসরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র খুব কম হলেও এগুলো বেশির ভাগ সময় ফাঁকা থাকে। এ থেকে স্পষ্ট যে বিপুলসংখ্যক মাদকাসক্ত ব্যক্তি চিকিৎসার আওতায় আসেন না। এখানে মাদকসেবী নিজেও মনে করেন না যে তাঁর কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন আছে। এদিকে বেশির ভাগ পরিবার মাদকসেবীর কথা চেপে রাখে। এ নিয়ে কারো সঙ্গে বলতে চায় না বা চিকিৎসার প্রয়োজন মনে করে না। এভাবেও কিন্তু মাদকসেবী দিন দিন বাড়ছে। </p> <p style="text-align:justify">সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) হিসাব অনুযায়ী, দেশে মাদকসেবী প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে এক কোটি মাদকাসক্ত এবং বাকি ৫০ লাখ মাঝেমধ্যে মাদক সেবন করে।  এই হিসাবে দেশে প্রায় ১৭ কোটি ১৫ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে গড়ে প্রতি ১২ জনে একজন মাদকসেবী।</p> <p style="text-align:justify">সংস্থাটির তথ্য মতে, দেশে মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশই কিশোর-তরুণ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত । পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশ শুধু নেশার খরচ জোগাতে অপরাধ ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।</p> <p style="text-align:justify">অপরাধ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এতে সমাজ, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে মাদক নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।</p>