<p>মেয়েদের মধ্যে ভালোবাসা দিয়ে ভালো করে দেওয়ার প্রবণতা থাকে। কথাটির আংশিক সত্য। তবে, কেবল মেয়ে নয়। অনেক পুরুষও ভালোবেসে ভালো করে দেওয়ার থিওরিতে বিশ্বাস করেন। এর প্রধান কারণ ব্যাখ্যা করছি।</p> <p>আত্ম-অহং সবার মধ্যেই থাকে। আমার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছেন এমন একজন কাছের মানুষ আমাকে একটা কথা বলেছেন— ‘প্রতিটি মানুষ নিজ মনে হিটলার।’ বছর তিনেক আগে এর মানে ভালোভাবে না বুঝলেও এখন বুঝি। এই যে আমরা আরেকজনকে ভালোবাসি বা সে ছেড়ে গেলে কান্নাকাটি করি, এর কারণ কিন্তু আমাদের অহং। এই অহংবোধ আমাদেরকে স্বার্থপর করে তোলে।</p> <p>ভালোবাসার মানুষ আশেপাশে থাকলে ডোপামিন বেশি ক্ষরণ হয়, আমরা ভালো থাকি। এই ভালো থাকাটাকে দীর্ঘায়িত করতে না পারার দুঃখেই আমরা কাঁদি। এটি কী একটি স্বার্থপর বৈশিষ্ট্য নয়?</p> <p>মানব সম্প্রদায়ের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণ। এটির কারণও মস্তিষ্কের গঠনগত। আমাদের লিম্বিক সিস্টেম (আগের অধ্যায় দ্রষ্টব্য) কখনোই গতানুগতিকতা বেশিদিন পছন্দ করে না। হয়তো কেউ অনিরাপত্তাবোধ, কেউ হীনম্মন্যতা কিংবা কেউ প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের আবেগগুলোর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণে ‘রোমাঞ্চকর’ কিংবা 'দুঃসাহসী' কাজ এড়িয়ে চলেন।</p> <p>কিন্তু আমাদের অ্যামিগডালার প্যারাহিল্লোক্যাম্পাসের কাজই হচ্ছে গতানুগতিক রুটিনের মাঝে আসলেই আমাদের জীবনে ‘পরিবর্তনের’ ছোঁয়া এনে দেওয়া এবং কঠিনতম চ্যালেঞ্জের দিকে উদ্বুদ্ধ করা।</p> <p>সাধারণত যেসব ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্ব সাধারণ মানুষের মতো নয়, যাদের আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ খুব ক্ষীণ, তাদেরকে সবাই আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারে। সাধারণের থেকে ও আলাদা- এ বিষয়টি একজন সাধারণ মানুষকে গ্রিল দেয়। সাধারণ ব্যক্তিটির অ্যামিগডালা বলে, ‘যা। ওকে জয় করে আয়। অমুক-তমুক জয় করার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু লাভ হয়নি।’</p> <p>মস্তিষ্কের এই জটিল মিথস্ক্রিয়ার কারণে অনুভূতির প্রকাশহীন সাইকোপ্যাথ বা সোশিওপ্যাথদের প্রতি মানুষের এত যৌন আকর্ষণ কাজ করে। মেয়েদের ক্ষেত্রে আরেকটা ব্যাপার কাজ করে। অনেক উচ্চ বুদ্ধিমত্তা বিশিষ্ট সাইকোপ্যাথ বা সোশিওপ্যাথ যৌনতাকে দীর্ঘদিন আটকে রাখতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে যেসব পুরুষ ‘সেক্সফ্রিক’ নয় বা কথায় কথায় ‘শরীর শরীর’ করে না, তাদের প্রতি অসম্ভব আকর্ষণ কাজ করে। কারণ অ্যামিগডালা মেয়েদের সিগন্যাল দেয়, ‘সব কামুক পুরুষের থেকে ও আলাদা।’</p> <p>ভালোবেসে ভালো করে দেওয়ার এবং সিরিয়াল কিলারদের প্রেমে পড়ার প্রবণতা মেয়েদের মাঝে বেশি থাকার আরও কয়েকটি কারণ—</p> <p>১. নিজের জীবনে খুব শক্তপোক্ত কোনো পিতৃস্থানীয় ব্যক্তির অনুপস্থিতি। </p> <p>২. হাইব্রিস্টোফিলিয়া নামের বিচিত্র যৌন বিকৃতি। এটি একটি প্যারাফিলিয়া। এর কারণে মেয়েরা ভয়ংকর দাগি আসামি, রেপিস্ট, নরখাদকদের প্রেমে হাবুডুবু খায়। টেড বান্ডি এবং জেফরি ডেহমার জেলে বসে অসংখ্য নারীর প্রেমপত্র পেয়েছিলেন। অনেকে প্রেমপত্রের সাথে সাথে টাকাও পাঠাত।</p> <p>৩. স্পটলাইট বা মিডিয়ার আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা।</p> <p>৪. প্রাক-ঐতিহাসিককাল থেকেই গুহামানব নারীরা আগ্রাসী মনোভাব সম্পন্ন বলশালী যেসব পুরুষ শত্রুদের মোকাবিলা করে মেরে ফেলত, তাদেরকে স্বামী হিসেবে পছন্দ করত। বিবর্তনের ধারায় অনেক কিছু বদলালেও মস্তিষ্কে এই প্রবণতা রয়ে গেছে। তাই নারীরা আজও মাফিয়া, ডন কিংবা সুঠামদেহী বলশালী গুন্ডার প্রেমে পড়ে।</p> <p>৫. মেয়েদের মাঝে হিস্ট্রায়োনিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হবার প্রবণতা।</p> <p>৬. কেউ কেউ সিরিয়াল কিলারের মাঝে ছোটোবেলার সেই দুধের শিশু বা শৈশবে কোনো অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতায় ট্রমায় আক্রান্ত শিশুকে দেখতে পান। রাশিয়ান সিরিয়াল কিলার চিকাতিল্লো কিংবা অত্যন্ত বুদ্ধিমান সিরিয়াল কিলার এড কেম্পারসহ অনেকের ক্ষেত্রে শৈশবে তীব্র শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নারীদের অরবিটো ফ্রন্টাল কর্টেক্স, অ্যান্টেরিয়র ইনসুলাতে মাতৃসুলভ ভালোবাসা এবং মায়া-মমতা প্রবল থাকে। আমার ধারণা, এই অংশ আমার মস্তিষ্কেও প্রবলভাবে ক্রিয়াশীল।</p> <p>লেখক: কথাসাহিত্যিক ও চিকিৎসক</p>