<p>আগের দিন বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিককে আগাম ইঙ্গিত দিয়ে ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, ‘দুই দিনের মধ্যেই আপনাদের একটি সুসংবাদ দেব।’ তবে বিসিবি সভাপতি অত সময়ও নিলেন না। আইসিসির সভায় যোগ দিতে গতকাল সকালে দুবাইয়ের ফ্লাইট ধরার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে রাতে নিয়ে গিয়ে বিকেলেই হাজির সংবাদ সম্মেলনে। সেখানেই দিলেন একসঙ্গে দুটো খবর।</p> <p>এর একটি বাংলাদেশে চন্দিকা হাতুরাসিংহে অধ্যায়ের সমাপ্তি এবং অন্যটি তাঁর জায়গায় অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ক্রিকেটার ফিল সিমন্সকে নিয়োগ দেওয়ার।</p> <p>এঁরা দুজন দুই ঘরানার কোচ। হাতুরাসিংহে যেমন তাঁর কড়া হেডমাস্টারসুলভ মনোভাব এবং খেলোয়াড়দের প্রতি কঠোর হতে জানেন বলে আগের বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের পছন্দের শীর্ষে ছিলেন। তাঁর সময়েও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের হেড কোচ হতে আগ্রহী ছিলেন সিমন্স।</p> <p>কিন্তু ‘প্লেয়ার্স কোচ’ হিসেবে তাঁর ভাবমূর্তির জন্য ক্রিকেট প্রশাসনের তখনকার নেতৃত্ব সিমন্সকে উপযুক্ত বলে মনে করেনি। খেলোয়াড়দের স্বার্থরক্ষায় বরাবরই সচেতন এই ক্যারিবীয় এবার ক্রিকেট প্রশাসনের নেতৃত্ব বদলাতেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত দায়িত্ব নিতে আজ চলে আসছেন ঢাকায়।<br /> দেনা-পাওনার হিসাব বুঝে দিন-দুয়েকের মধ্যে ঢাকা ছাড়ার অপেক্ষায় থাকা হাতুরাসিংহেকে এবার বাংলাদেশ থেকে যেতে হচ্ছে ভিন্ন ভাগ্য বরণ করে। আগেরবার এই শ্রীলঙ্কান কোচ মেয়াদ পুরো করার আগে নিজেই চাকরি ছেড়েছিলেন।</p> <p>এবার তাঁকে ‘ছাড়ানো’ হলো মেয়াদ পূর্তির সাড়ে চার মাস আগে। যদিও হাতুরাসিংহেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তা বলার আগে আরো কয়েকটি দিনের অপেক্ষা আছে। সেটির ব্যাখ্যায় ফারুক বলেছেন, “আমরা তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে দায়িত্ব থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সাসপেন্ড করেছি। কোনো ‘মিস কনডাক্ট’-এর কারণে কারো চাকরি গেলে তাঁকে সাসপেন্ড করার খুব প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু আমরা আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছি। এটি না করলেও হতো। এখন সাসপেন্ড করেছি, এরপর বরখাস্ত হবে।”</p> <p>বরখাস্তের সেই প্রক্রিয়ায় হাতুরাসিংহের ‘মিস কনডাক্ট’ দুটো। প্রথমত, জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসুম আহমেদকে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় ‘ফিজিক্যালি অ্যাজল্ট’ বা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার প্রমাণ পেয়েছেন ফারুক। দ্বিতীয়ত, চুক্তিতে নির্ধারিত ছুটির অনেক বেশি ভোগ করার ব্যাপারটিও বর্তমান বিসিবি সভাপতির চোখে ‘চাকরিজীবী হিসেবে অসদাচরণ’। যতদূর জানা গেছে, আগের সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে বিশেষ সখ্যতার কারণে ছুটি অনুমোদন করিয়ে নিতেন হাতুরাসিংহে। বেশির ভাগ সময়ই বিষয়টি মৌখিক হতো বলে বিসিবিতে এর দাপ্তরিক দলিলও তেমন নেই। ফারুক বলছিলেন, ‘তিনি তিন মাসের বেশি ছুটি কাটিয়েছেন। বিচ্ছিন্নভাবে এক-দুটো ই-মেইলে জানিয়েছেন, তবে সেটি তিন মাসের বেশি হতে পারে না।’</p> <p>বোর্ডের বাইরে থাকার সময় ফারুক পত্রিকা পড়ে জেনেছিলেন, চেন্নাইতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড ম্যাচের সময় নাসুমের ওপর হাতুরাসিংহের চড়াও হওয়ার খবর। সভাপতি হওয়ার পর নতুন করে তদন্তে নামেন তিনি। এতে পুরনো তদন্ত প্রতিবেদনও বড় ভূমিকা রেখেছে। যেটি নাজমুলের কাছে জমা দিয়েছিল আগের বোর্ডের তিন সদস্যের কমিটি (এঁদের মধ্যে আকরাম খান ও মাহবুব আনাম এই বোর্ডেও আছেন)। তবে সাবেক সভাপতি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন যে ওই প্রতিবেদনে ও রকম কিছুই নেই। ‘ওই প্রতিবেদনেই বিষয়টির উল্লেখ ছিল’—গতকাল ফারুকের এই কথার পরই স্পষ্ট হয়ে যায় যে আগের সভাপতির সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবিধা এ ক্ষেত্রেও ভোগ করেছিলেন হাতুরাসিংহে। যদিও সংবাদ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ফারুক নিশ্চিত করেছেন যে নাসুমকে হাতুরাসিংহের ‘ফিজিক্যাল অ্যাজল্ট’ চড় ছিল না, ‘চড় মারেনি। এদিকে লেগেছে (মাথার পেছন দিক দেখিয়ে) আর জামা (জার্সি) টেনে ধরেছে।’ পুরনো তদন্ত প্রতিবেদন পড়ে এবং সাক্ষী ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েই ব্যবস্থা নিলেন ফারুক, যিনি বোর্ডে আসার আগে থেকেই হাতুরাসিংহেকে বিদায় করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত ২১ আগস্ট সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরও তাঁর আগের অবস্থান বদলায়নি বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।</p>