<p>এটা নেই, সেটা নেই; শুধু নেই আর নেই ছিল এই মেয়েদের নিত্য দিনের সঙ্গী। দক্ষিণ এশিয়ার মঞ্চে অবশ্য বার বার ব্যর্থতাও তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। সেসময়ের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন আগলে রেখে মেয়েদের বড় স্বপ্নের ভীত গড়ে দেন। একবার হয়নি তো কী হয়েছে! আবার হবে। এই যে হবে, মনের জোরই মেয়েদের ২০২২ সালে এসে স্বপ্নের সিঁড়িতে এনে দাঁড় করায়।</p> <p>দেশকে কিছু একটা দিতে হবে, আমাদের প্রমাণ করতে হবে সেই প্রতিজ্ঞা থেকেই দুই বছর আগে সাফের মুকুট পড়ে বাংলাদেশ। দুই বছরের ব্যবধানে গতকাল আরও একবার সাফের শিরোপা উৎসব করলেন মেয়েরা। তবে এবার আর শুধু মনের জোর নয়, ফুটবলের যাবতীয় সব স্কিল দেখিয়েই, সমর্থকদের মাত করেই মুকুট মাথায় পড়েছে। নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে প্রায় ১৬ হাজার দর্শকের সামনে স্নায়ুর চাপ যেভাবে সামলেছেন মেয়েরা তা সত্যি অবিশ্বাস্য। </p> <p>এখন আর পুরোনো ঘরনার সেই ফুটবল খেলে না মেয়েরা। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার এই মেয়েদের স্কিলে এনে দিয়েছেন অভাবনীয় পরিবর্তন। ডিফেন্স থেকে শুরু করে মধ্যমাঠ কিংবা আক্রমণ; প্রতিটা বিভাগেই পরিবর্তনের ছোয়া স্পষ্ট। বয়সভিত্তিক ফুটবলে নিয়মিত খেলা সেন্টার ব্যাক আফিদা খন্দকারের কথাই উদাহরণ হিসেবে বলা যায়। এবারই প্রথম সাফ খেলতে আসেন এই তরুণী। কিন্তু প্রতিটা ম্যাচে যেভাবে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেস্তে দিয়েছেন, রক্ষণে যেভাবে পরিপক্কতা দেখিয়েছেন তাতে মনে হয়নি এবারই সে প্রথম সাফের মতো টুর্নামেন্টে খেলছে। বল এলেই উড়িয়ে মেরে ক্লিয়ার করার মানসিকতা আর নেই এই মেয়েদের। দুই বছর আগে সাফ জেতা মাসুরা পারভীম, শিউলি আজিমরাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতির পথেই হেঁটেছেন।</p> <p>মধ্যমাঠে মনিকা চাকমা, মারিয়া মান্দারা আরও পরিণত এখন। নিখুঁত পাসিংয়ের সঙ্গে ভিশনেও দারুণ উন্নতি করেছেন তারা। ছোট ছোট পাসের সঙ্গে থ্রু বলে প্রতিপক্ষকে বানিয়েছেন বোকা। তাদের সঙ্গে প্রথমবার দলে থাকা স্বপ্না রানীর বলে প্রথম টাচ আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য করবে। সাবিনা খাতুনকে নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। এখনো এই দলের স্তম্ভ তিনিই। বয়স বাড়লেও তাকে আটকাতে এখনো প্রতিপক্ষ নানা পরিকল্পনা সাজান। সাবিনাও এই দলটাকে আগলে রেখেছেন, গুছিয়ে রেখেছেন।</p> <p>দুই উইংয়ে ঋতুপর্ণা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র ছিলেন অনবদ্য। বাম দিক থেকে ঋতুপর্নার ক্রস মন কেড়েছে অনেকের। ফাইনালে তার অবিশ্বাস্য গোলই বলে কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। আর সেন্টার ফরোয়ার্ডে তহুরা খাতুন ফিনিশিংয়ের কাজটা করেছেন পাকা জহুরির মতোই। চার ম্যাচে পাঁচ গোলই বলছে, আক্রমণে তিনিই ছিলেন ভরসার প্রতীক।</p> <p>দুর্দান্ত ফুটবলে আরেকবার দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা এই মেয়েদের এখন চ্যালেঞ্জ হবে এশিয়ার ফুটবলে। পিটার বাটলার অধ্যায়ের পর নতুন কোচ হিসেবে যেই আসুক না কেন তার প্রথম কাজ হবেই সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মনোভব জাগিয়ে তোলা। তবেই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারবেন বাংলাদেশের মেয়েরা।</p>