ঢাকা, রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫
৯ চৈত্র ১৪৩১, ২২ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫
৯ চৈত্র ১৪৩১, ২২ রমজান ১৪৪৬

একদিনেই ঘুরে দেখা সম্ভব পৃথিবীর যে দেশ

শেয়ার
একদিনেই ঘুরে দেখা সম্ভব পৃথিবীর যে দেশ
সংগৃহীত ছবি

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে পরিচিত ভ্যাটিকান সিটি। যারা দেশ-বিদেশ ঘুরতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ভ্যাটিকান সিটি একটি স্বপ্নের গন্তব্য। দেশটির অপূর্ব স্থাপত্য, শিল্পকলা ও আকর্ষণীয় ইতিহাস ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করে।   

ভ্যাটিকানের আয়তন মাত্র ০.৪৯ বর্গকিলোমিটার।

সাধারণভাবে আমরা যখন দেশ বলতে বিশাল ভূখণ্ডের কথা ভাবি, তখন ভ্যাটিকানকে একটি শহর মনে হয়। বহির্বিশ্বের কাছে ভ্যাটিকান সিটি বিশাল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বলে পরিচিত। আপনি চাইলে ভ্যাটিকান সিটি একদিনেই পুরোপুরি ঘুরে দেখতে পারবেন। চলুন জেনে নেই একদিন ভ্রমণের জন্য ভ্যাটিকান সিটির দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে।

 
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা
ভ্যাটিকান সিটির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা। এর ভেতরে রয়েছে মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর ডিজাইন করা বিশাল গম্বুজ টাওয়ার, বিখ্যাত পিটা ভাস্কর্য ও বারনিনির নকশা করা বালদাচিন ভাস্কর্যসহ আরো অনেক অমূল্য সৃষ্টি। এ ছাড়া এখানে ক্যাথলিক ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম এবং ঐতিহাসিক জিনিসপত্র রয়েছে।

ভ্যাটিকান মিউজিয়াম
ভ্যাটিকান মিউজিয়াম পৃথিবীর অন্যতম সেরা শিল্প সংগ্রহশালা।

এখানে নবজাগরণ যুগের অসাধারণ সৃষ্টি, পুরনো ভাস্কর্য এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ হলো সিস্টিন চ্যাপেল। এখানে মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর বিখ্যাত চিত্রকলা ‘ফ্রেস্কো’ রয়েছে।

অ্যাপোস্টোলিক প্রাসাদ (পোপের বাসভবন)
অ্যাপোস্টোলিক প্রাসাদ হল পোপের বাসভবন। যেখানে তিনি তার ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করেন।

তবে এই প্রাসাদের কিছু অংশ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। যেমন- পোপের অ্যাপার্টমেন্ট, সিক্রেট আর্কাইভ এবং বাগান।

ভ্যাটিকান গার্ডেন
ভ্যাটিকান গার্ডেন হচ্ছে ভ্যাটিকান সিটির প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে বিস্তৃত। শান্ত ও সুন্দর একটি বাগান যা শহরের মধ্যে এক প্রকার মরুদ্যানের মতো। গাছপালা এবং স্থাপত্যের সৌন্দর্য এখানে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

সুইস গার্ড
ভ্যাটিকান সিটির একটি বিশেষ দর্শনীয় স্থান হল সুইস গার্ড। যা বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সেনাবাহিনী। তারা রেনেসাঁ যুগের ঐতিহ্যবাহী নীল, লাল এবং হলুদ ইউনিফর্ম পড়েন। তাদের মূল দায়িত্ব হল পোপ ও ভ্যাটিকান সিটিকে রক্ষা করা।

সূত্র: ড্রিম প্ল্যান এক্সপেরিয়েন্স

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কলকাতার সুলুক সন্ধানে- শেষ পর্ব

জাহিদ হাসান
জাহিদ হাসান
শেয়ার
কলকাতার সুলুক সন্ধানে- শেষ পর্ব
বিশ্বকবির জোড়াসাঁকোর বাড়ির আঙিনায়

প্রিন্সেপ ঘাট
আমরা রওনা হলাম ঐতিহাসিক স্থান প্রিন্সেপ ঘাটের দিকে। কলকাতার ঘিঞ্জি শহর থেকে দূরে নির্জনে অবস্থিত প্রিন্সেপ ঘাট। হুগলি নদীর তীরে ঐতিহাসিক এ স্থানটি ব্রিটিশ আমলে ১৮৪১ সালে নির্মিত হয়েছে। ব্রিটিশ যাত্রীবাহী জাহাজের ওঠানামার কাজে ব্যবহার করা হত এই ঘাট।

ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত এই ঘাট দিয়ে। 

ঘাটে পৌঁছে দেখলাম বিশেষ আকর্ষণীয় একটি মনুমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। অন্ধকার আর বাহারি লাইট মিলিয়ে এক অপরূপ দৃশ্য ধারণ করেছে প্রিন্সেপ ঘাট। মনুমেন্টের পেছনে আবছা অন্ধকারে ছেয়ে আছে।

ঘাটের চারপাশের পরিবেশ বেশ মনোরম ও খোলামেলা, ডান দিকে সুসজ্জিত একটি পার্ক। বাহারি খাবারের দোকানে বিক্রি হচ্ছে পাউ ভাজি, ফুচকা। ঘাটকে ঘিরে পর্যটককেন্দ্র ভালোই গড়ে উঠেছে। সিঁড়ি বেয়ে ঘাটের নিচে নামলাম।
পানির ওপর কয়েকটি জাহাজ নোঙর করা আছে। হুগলি নদীতে ভাটা চলছে। পানির ওপর আলোর ঝাপটা পড়ে অন্য রকম এক আবহ সৃষ্টি হয়েছে। সত্যিই ব্রিটিশ নির্মিত ঘাটের সৌন্দর্য্যের তুলনা হয় না।

হাওড়া ব্রিজ
দিনের শেষ ভ্রমণ হিসেবে বাসে চেপে রওনা হলাম হাওড়া ব্রিজের দিকে।

কলকাতা ও হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগকারী ব্রিজ হচ্ছে হাওড়া। সেতুর মূল আকর্ষণ হলো এতে কোনো পিলার নেই। বিশাল স্টিলের পাত একটার সঙ্গে আরেকটা জুড়ে বানানো হয়েছে। ব্রিজটি দেড়শ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী দাঁড়িয়ে আছে। নাটবল্টু ছাড়াই ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশরা নির্মিত করেছিলেন হাওড়া ব্রিজ। হাওড়া এখনো বিশ্বের ষষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু।

হাওড়া ব্রিজের কাছে পৌঁছে দেখলাম ব্রিজের দুই পাশের পানির ওপর আলো পড়ে অন্য রকম আবহ সৃষ্টি করেছে। উপভোগ করছি, আলোর ছন্দে ছন্দে রং বদলানোর দৃশ্যপট। ভাবছি, আঠারো শতকে সেতু প্রকৌশল ও প্রযুক্তি জ্ঞানের কথা। দেড় শ বছর আগে কিভাবে নকশা প্রনয়ণ করে, নাটবল্টু ছাড়াই ব্রিজ নির্মাণ করল? সত্যি, ইংরেজরা শুধু ভারতবর্ষ নয় পুরো পৃথিবী শাসন করতো বুদ্ধির জোরে।
পথচারীদের দেখে মনে হচ্ছে, ব্রিজের ওপর দিয়ে নির্বাচনী মিছিল যাচ্ছে। মানুষের এমন চলন্ত স্রোত কখনো চোখে পড়েনি। দৈনিক ৮০,০০০ যানবাহন ও প্রায় ১০ লাখ পথচারী চলাচল করে। 

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি 
দ্বিতীয় দিন সকালে রওনা হলাম কবি গুরুর জোড়াসাঁকোর বাড়ির উদ্দেশে। বাড়িতে প্রবেশের সময় মনে হচ্ছে ইতিহাসের পুরাতন অধ্যায়ে প্রবেশ করছি। বিশ্বভারতীর গেট পেরিয়ে সবুজ আঙিনা। ২০ রুপির টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম, বিশ্বকবির পদচারণে মুখরিত চোখধাঁধানো লাল বিল্ডিংয়ে। নীলমণি ঠাকুরের ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। বাড়ির সামনে মূর্তি  হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মহর্ষি রবীন্দ্রনাথ। কবি গুরু হাতে বই রেখে সাহিত্য চর্চায় মগ্ন।

বিশ্বকবি ১৮৬১ সালে এ বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করে ১৯৪১ সালে মারা যান। কবির স্মৃতি সংরক্ষণে মিউজিয়াম ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাড়িতে। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় জাদুঘর ও সংরক্ষণাগার। সাউন্ড সিস্টেমে অবিরত রবীন্দ্রসংগীত বেজে চলেছে। বিল্ডিংয়ে রয়েছে সারি সারি রুম। প্রধান দর্শনীয় ঘরের নাম রবীন্দ্র প্রয়াণকক্ষ। এ ঘরেই কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। বিছানাটি ঘেরা রয়েছে কাঠের বেষ্টনীতে। সময় সবাইকে অতীত করে দেয়। হোক সে মহা পরাক্রমশালী বা জ্ঞানী।

ভবনে আর্কাইভ করে রাখা হয়েছে কবি গুরুর লিখার প্রয়োজনীয় উপকরণ। আছে কবির ব্যবহৃত পোশাক ও তার নানা বয়সের ছবি। কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর রান্নার কাজে ব্যবহৃত তৈজসপত্র সংরক্ষণিত আছে যথাযথ ভাবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব ভ্রমণে গিয়ে ৩০টির অধিক দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। কবির ভ্রমণকালীন স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য রয়েছে সংগ্রহশালা। গ্যালারিতে প্রদর্শিত আছে কবির আগের কয়েক প্রজন্মের শিল্পকলা ও সাহিত্য। শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকর্ম, তৈলচিত্র, ল্যান্ডস্ক্যাপ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। এ বাড়িতেই কবি তার সাহিত্যের উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন। ১৯১৩ সালে কবি নোবেল পুরস্কারে ভুষিত হয়েছিলেন। সব শেষে সিঁড়ির পাশের রুমে চোখে পড়ল বিশ্বকবির বংশতালিকার ওয়ালমেট।

ভবনের তত্ত্বাবধায়ককে জিজ্ঞেস করলাম, দাদা একটা ছবি নেওয়া যাবে? উনি বললেন, জাদুঘরের ভেতরে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ কিন্তু বাইরে অনুমোদিত। আমি ছবি নিলে কর্তৃপক্ষ তার চাকরিটা নিয়ে নেবে।

পরদিন সকালে কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। ফিরতি পথে ভাবছি, এক সময় দুই বাংলার মানুষের দেখা করতে ভিসা পাসপোর্ট লাগত না। দেশভাগের সময় ব্রিটিশরা রাজনীতির কূটখেলায় অবিভক্ত বাংলাকে বিভক্ত করে দিয়ে গেছেন। দুই বাংলায় চির বিভাজন সৃষ্টি হলো। হয়তো দুই বাংলার বিভাজনের দেওয়াল আর ভাঙবে না কখনো। দুই বাংলা পরস্পরের সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হবে চিরকাল। এটি হয়তো দেশ বিভাজনের সময় তলিয়ে দেখেনি বাঙালি। হয়তো দেখার মতো চোখও তখন তাদের ছিল না।

মন্তব্য

কলকাতার সুলুক সন্ধানে- পর্ব ২

জাহিদ হাসান
জাহিদ হাসান
শেয়ার
কলকাতার সুলুক সন্ধানে- পর্ব ২
সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রালের সামনে সহকর্মীর সাথে

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে
কলকাতার পথ ঘাট আমাদের অজানা। সূর্য পশ্চিম দিগন্তে ডুব দেওয়ার আগে ট্যাক্সি ক্যাবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে পৌঁছে আমরা বিদেশি কোঠায় টিকিট কেটে নিলাম। 
কলকাতা শহরে  বৃটিশদের তৈরি অনেক ভবন আছে। মহারানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধটি তাজমহলের আদলে তৈরি।

কেউ হঠাৎ দেখলে তাজমহল মনে করে গোলকধাঁধায় পড়ে যাবে। স্মৃতি সৌধটির মধ্যভাগে মসজিদের মতো বিশালাকার গম্বুজ। চারিধারে রয়েছে আরো চারটি ছোট গম্বুজ। বড় গম্বুজটির চূড়ায় পিতলে মোড়ানো পরী বসানো।
 

রবার্ট ক্লাইভ সিরাজুদ্দৌলাকে গদিচ্যুত করতে সেনাপতি মীর জাফরকে ঘুষ দিয়েছিল, প্রতিশ্রতি দিয়েছিল পরবর্তী নবাব করার। মাকড়সার জালে পোকামাকড় আঁটকে পড়ার মতো লোভের ফাঁদে আটকে গিয়েছিল মীর জাফর। তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পলাশীর যুদ্ধে ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হন সিরাজউদ্দৌলা। ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৭৬ সাল থেকে ১৯০১ সাল অবধি ভারতবর্ষে সম্রাজ্ঞীর দায়িত্ব পালন করেন রানি। রানির ক্ষমতার পরিধি ছিল দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত। ১৯০১ ইং সালে রানী মৃত্যুবরণ করলে ব্রিটিশ শাসকরা রানীর স্মৃতি ধরে রাখতে নির্মাণ করেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। অত্যন্ত সুদর্শনা দেখাচ্ছে ব্রোঞ্জ দিয়ে নির্মিত রানিকে। 
পৃথিবীর অনেক রাজা বাদশা, প্রজাদের কাছ থেকে লুন্ঠন করা ধনসম্পদ রানীকে খুশি করতে বখরা দিত।

সময়ের স্রোতে রানী আজ মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। 

ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে জাতীয় সংগ্রহশালা। গ্যালারিতে রয়েছে মহারানি ও তার পরিবারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। ১৬৫০ সাল থেকে সংরক্ষিত আছে ইতিহাসের প্রতাপশালী ব্যক্তিদের পদক, অস্ত্রশস্ত্র, ভাস্কর্য, কস্টিউমস এবং ব্যক্তিগত স্মৃতিচিহ্ন। সেখানে খাপ থেকে তরবারি খুলে দাঁড়িয়ে আছেন লর্ড ক্লাইড। যার কুট বুদ্ধির কাছে হার মেনে ভারতবর্ষকে প্রায় দুইশো বছর পরাধীনতার গ্লানির স্বাদ নিতে হয়েছে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে বিদায় নিয়ে যখন পথ চলতি সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল এর দিকে। তখন সূর্য পশ্চিম আকাশে সামান্য ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছে। তেজহীন  সূর্যটা যেন অন্ধকারের কাছে বিদায় চেয়ে নিচ্ছে। 

সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল
সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল কলকাতার বৃহত্তম গির্জা। এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১৮৩৯ সালে। নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয় ১৮৪৭ সালে। ক্যাথিড্রালে সকল ধর্মের মানুষের প্রবেশাধিকার রয়েছে। যে কোন ধর্মীয় উপাসনালয় মনকে অন্য রকম প্রশান্তিতে ভরে দেয়।  

টিকেট কেটে ক্যাথিড্রাল এর ভেতরে প্রবেশ করলাম। চোখে পড়ল যিশুর একটা ভাস্কর্য। প্রবেশ পথের ডানদিকে আছে বড় গ্রন্থাগার। পাশে রয়েছে স্মারক দ্রব্যের প্রদর্শশালা। ক্যাথিড্রালের বাম পাশে বিশাল উপাসনার স্থান। সুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। চেয়ারে বসে ধ্যানী বকের মতো কেউ অর্ধেক চোখ বুজে, কেউ চোখ অর্ধেক খুলে প্রার্থনায় মগ্ন। 

ক্যাথিড্রাল থেকে বেরিয়ে এলাম। ক্যাথিড্রালে প্রবেশের আগে প্রকৃতি চারদিকে অন্ধকারের যে প্রাচীর টেনে দিয়েছিল, বিদ্যুতের আলো সে অন্ধকারের স্থান দখল দিয়ে ঝিকিমিকি করে হাসছে। দিনের ঘুমন্ত জীর্ণ শীর্ণ নোংরা কলকাতা যেন রাতে জেগে উঠছে আলোর ঝলকানিতে। ধবধবে আলোয় বয়োজ্যেষ্ঠা কলকাতা যেন সদ্য যৌবনে পদার্পণ করা ষোড়শীর যৌবন পেয়েছে। আমরা সামনের দিকে আসতেই চোখে পড়ল  বিড়লা প্ল্যানেটেরিয়াম। এটি ক্যাথেড্রাল ঠিক সামনেই অবস্থিত। ১৯৮৮ সালে নির্মিত এই প্ল্যানেটেরিয়ামটি এশিয়ার বৃহত্তম প্ল্যানেটেরিয়াম ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। টেলিস্কোপে চোখ রেখে মহাকাশের বিস্ময়কর দারুণ সব গ্রহ নক্ষত্র দেখা যায় এই সেন্টার থেকে। এটি রাতের আকাশে ভার্চুয়াল ভ্রমণ এবং মহাজাগতিক শো প্রদশন করে। এই 
প্ল্যানেটেরিয়াম থেকে জ্যোতিবিজ্ঞান, মহাকাশবিজ্ঞান এবং গ্রহ নক্ষত্র সংক্রান্ত মহাবিশ্বের তথ্য জানতে পারে মানুষ । 

মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্য অনেকেরই অজানা। আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহের আয়তন ৫১ কোটি বর্গ কিলোমিটার। সূর্য পৃথিবী থেকে  ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পৃথিবী থেকে সূর্য তের লক্ষ গুন বড়। শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও পৃথিবী সহ যে ৮ টি গ্রহ সূর্যের চারপাশে ঘুরছে, আমরা একেই বলি সৌর জগৎ। সূর্য অবস্থান করছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে। 

বিজ্ঞানীদের মতে, একশো থেকে চারশ বিলিয়ন সূর্যের মতো নক্ষত্র মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চারপাশে চক্রাকারে ঘুরছে। মহাকাশে দুই লক্ষ কোটি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি আছে যা আমরা রাতের আকাশে তারা হিসাবে দেখি। মহাসাগরের পানির কাছে এক বালতি পানি যেমন তুচ্ছ তেমনি মহাবিশ্বের তুলনায় ক্ষুদ্র আমাদের এ পৃথিবী। তাহলে স্রষ্টা কত বড় আর তার শক্তি কতুটুকু, এটা মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও অসম্ভব। সৃষ্টির বিশালত্বের কথা কেউ চিন্তা করলে সে কখনো ঠগবাজী, হানাহানি, খুনোখুনির কথা চিন্তা করবে না।

(চলবে...) 

মন্তব্য

নদীর নাম যাদুকাটা

শেয়ার
নদীর নাম যাদুকাটা
সংগৃহীত ছবি

যাদুকাটা নদী সুনামগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ-ভারত উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত একটি সুন্দর নদী। এর দৈর্ঘ্য ৩৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৫৭ কিলোমিটার। নদীটির উৎপত্তি ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে। জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নদীটি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভপুরে প্রবেশ করেছে।

 

পরে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে সুরমা নদীতে গিয়ে মিশেছে। নদীর গভীরতা ৮ মিটার ও অববাহিকার আয়তন ১২৫ বর্গকিলোমিটার। সারা বছর ধরে এই নদীতে পানি থাকে। বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ সবচেয়ে বেশি থাকে।

যাদুকাটা নদীর নামকরণ :
এই নদীটির আদি নাম ছিল রেণুকা। কথিত আছে যে, একদিন গ্রামের একজন বধু নদীর তীরে বসে তার শিশুপুত্র যাদুকে কোলে নিয়ে মাছ কাটছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে তিনি ভুলক্রমে তার সন্তানকে মাছের জায়গায় কেটে ফেলেন। এই ঘটনাটি থেকেই নদীটির নাম হয় যাদুকাটা।

যাদুকাটা নদীর সৌন্দর্য :
যাদুকাটা নদীর একদিকে সবুজ পাহাড় আর নীল আকাশ। পাহাড় ও আকাশের মিলনে এক অপূর্ব দৃশ্য সৃষ্টি হয়। নদীটির আশপাশে দেখতে পাওয়া যায় স্থানীয় মানুষদের পাথর, কয়লা ও বালি আহরণ করার দৃশ্য। বাংলাদেশের খনিজ শিল্পে যাদুকাটা নদীর অবদান গুরুত্বপূর্ণ।

দর্শনীয় স্থানসমূহ :
যাদুকাটা নদীর আশেপাশে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে শিমুল বাগান, নিলাদ্রি লেক, টাঙ্গুয়ার হাওর, বারিক্কা টিলা, খাসিয়া পাহাড়, আউলিয়া শাহ্ আরেফিনের আস্তানা।

নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশের শত শত পর্যটক এখানে আসেন। 

কীভাবে যাদুকাটা নদী ভ্রমণ করবেন :
যাদুকাটা নদীতে ঘুরতে যাবার জন্য প্রথমে আপনাকে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যেতে শ্যামলী, এনা, হানিফ, গ্রীন লাইন, এস আলম সোহাগ পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস চলাচল করে। বাস ভাড়া ৭০০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যাত্রা সময় প্রায় ৬ ঘণ্টা। এরপরে সুনামগঞ্জ বাস স্টেশনে নেমে আপনি অটোরিকশা বা সিএনজিতে করে যাদুকাটা নদী যেতে পারবেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যাওয়ার পর সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে বিরতিহীন বাস ছাড়ে। 

খাবারের ব্যবস্থা :
যাদুকাটা নদীর আশেপাশে তেমন খাবারের হোটেল নেই। লাউড়ের গড় বাজারে কিছু খাবারের হোটেল পাওয়া যায়। বারিক্কা টিলার নিচে সকালের নাস্তা ও দেশী খাবারের হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া আপনি সুনামগঞ্জ শহরে গিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিইয়ে আসতে পারেন।

থাকার ব্যবস্থা :
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সময় পর্যটকরা হাউসবোর্ডে রাত্রি যাপন করে থাকেন। যারা নদীসংলগ্ন থাকতে চান তারা বড়ছড়া বাজারে কিছু আবাসিক হোটেলে থাকতে পারেন। সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন হোটেলে ১০০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায়।

সূত্র : ভ্রমণ টিপস ডট কম

মন্তব্য

কম খরচে বেড়াতে যাওয়ার টিপস

শেয়ার
কম খরচে বেড়াতে যাওয়ার টিপস
সংগৃহীত ছবি

মূল্যবৃদ্ধির এই সময়ে কম খরচে বেড়ানো মধ্যবিত্তের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাতায়াত থেকে থাকা-খাওয়ার বাজেট সব কিছুই সীমিত অর্থের মধ্যে ঠিকভাবে পরিকল্পনা করা কঠিন। আজকাল দুই একদিনের ট্রিপেও ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। আর ৭-১০ দিনের ট্রিপে ২০ হাজার টাকা লাগেই।

তবুও বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছেটাও আটকে রাখা যায় না। 

চলুন জেনে নেই কম খরচে কিভাবে ঘুরতে যাবার পরিকল্পনা করবেন।

গন্তব্য ঠিক করুন
যে জায়গায় বেশি পর্যটক যায়, সেখানকার খরচও বেশি হয়। তাই এমন জায়গা বেছে নিন যেখানে বেড়াতে গিয়ে খরচ তুলনামূলকভাবে কম।

এক্ষেত্রে আপনি চাইলে বাড়ির কাছাকাছি কোনো জায়গা বেছে নিতে পারেন।

লোকাল ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন
প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে ঘুরলে খরচ বাড়বে। তার চেয়ে সরকারি বা বেসরকারি বাসে ভ্রমণ করলে খরচ কম হবে। এতে করে আপনি স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশতে পারবেন।

যা ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় নতুনত্ব দিবে।

পূর্ব পরিকল্পনা করুন
বছরে একবার বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিন। কবে কোথায় যাবেন, বিমান বা ট্রেনের টিকিট বুকিং, হোটেল ও গাড়ির বুকিং আগেই করে ফেলুন। এর ফলে শেষ মুহূর্তে বাড়তি খরচ এড়ানো যাবে।

অফ সিজনে বেড়াতে যান
কিছু জায়গায় সবসময় পর্যটকদের ভিড় থাকে, যেমন ঈদ বা পূজার সময়।

দূরে কোথাও ঘুরতে গেলে তাই অফ সিজনে বেড়াতে যান। এতে খরচ কম হবে ও পর্যটন এলাকায় ভিড়ও কম থাকবে।

বাজেট তৈরি করুন
যতটুকু বাজেট আপনি নির্ধারণ করেছেন, সেই অনুযায়ী খরচের খসড়া তৈরি করুন। খরচের ধরন ঠিক করে রাখলে বাজেটের মধ্যে থাকতে পারবেন। তবে সঙ্গে কিছু নগদ টাকা রাখুন। যা জরুরি পরিস্থিতিতে কাজে আসতে পারে। বাজেট তৈরি করে খরচ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সূত্র : এই সময়

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ