বন্য সৌন্দর্যের স্বর্গ 'মাসাই মারা'

শেয়ার
বন্য সৌন্দর্যের স্বর্গ 'মাসাই মারা'
সংগৃহীত ছবি

আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এক তৃণভূমি, যেখানে আকাশজুড়ে সূর্যের আলো। দূরে কোথাও একদল সিংহ বিশ্রাম নিচ্ছে শিকারের পর—এটাই মাসাই মারা ন্যাশনাল রিজার্ভ, কেনিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এলাকা। 

মাসাই মারার অবস্থান ও বিস্তৃতি
কেনিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে, তানজানিয়ার বিখ্যাত সেরেনগেটি ন্যাশনাল পার্কের সঙ্গে সংযুক্ত মাসাই মারা। এটি প্রায় ১,৫০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।

যার মাঝে দিয়ে বয়ে গেছে মারা নদী। এখানেই ঘটে বিশ্বের অন্যতম প্রাণী অভিবাসন, গ্রেট মাইগ্রেশন।

গ্রেট মাইগ্রেশন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অভিবাসন
প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবরে লক্ষ লক্ষ উইল্ডবিস্ট, জেব্রা ও গাজেল খাবারের সন্ধানে তানজানিয়া থেকে মাসাই মারায় আসে। কিন্তু এই যাত্রা মোটেও সহজ নয়।

তাদের মারা নদী পার হতে হয়। যেখানে ওঁৎ পেতে থাকে ভয়ঙ্কর নাইল কুমির। হাজার হাজার প্রাণী যখন একসঙ্গে নদীতে ঝাঁপ দেয়, তখন শুরু হয় বেঁচে থাকার এক ভয়ংকর প্রতিযোগিতা। কিছু প্রাণী সফলভাবে নদীর ওপারে পৌঁছে যায়, আবার অনেকেই কুমিরের খাবারে পরিণত হয়।
এই পুরো দৃশ্য এক অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক ঘটনা।

মাসাই মারার বিখ্যাত প্রাণী

এখানে দেখা যায় বিগ ফাইভ অর্থাৎ আফ্রিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচটি প্রাণী—
সিংহ: মাসাই মারায় আফ্রিকার সবচেয়ে বড় সিংহগোষ্ঠী রয়েছে।
হাতি: বিশাল আকৃতির হাতির দল ঘুরে বেড়ায়, যাদের মধ্যে শতবর্ষী হাতিও থাকে।
গণ্ডার: বিরল ব্ল্যাক রাইনো প্রজাতির গণ্ডার এখানে টিকে আছে।
চিতাবাঘ: মাসাই মারায় সহজেই চিতাবাঘ দেখা যায়।

যারা গাছের উপর উঠে বিশ্রাম নেয়।
মহিষ: বিশাল মহিষের দল তৃণভূমিতে অবাধে ঘুরে বেড়ায়।

এ ছাড়াও এখানে দেখা যায়—
চিতা: বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রাণী।
হায়েনা: এরা মৃত প্রাণী খায়। অনেক সময় নিজেরাও শিকার করে।
জিরাফ: তাদের লম্বা গলা দিয়ে উঁচু গাছের পাতা খেতে পারে।
জেব্রা ও গাজেল: হাজার হাজার সংখ্যায় মাসাই মারায় বিচরণ করে।


মাসাই মারার অভিজ্ঞতা

১। গেম ড্রাইভ
খোলা জিপে সাফারি, যেখানে খুব কাছে থেকে বন্যপ্রাণী দেখা যায়। সকালে ও সন্ধ্যায় এই সাফারি সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ তখন শিকারি প্রাণীরা সক্রিয় থাকে।

২। হট এয়ার বেলুন সাফারি
উড়ন্ত বেলুন থেকে মাসাই মারার পুরো তৃণভূমির দৃশ্য দেখার মতো অভিজ্ঞতা আর কিছুতেই পাওয়া যায় না। সিংহের শিকার করা, হাতির দল চলাফেরা করা—সবকিছু উপর থেকে এক ভিন্নরকম রোমাঞ্চ তৈরি করে।

৩। মাসাই উপজাতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ
মাসাই উপজাতির মানুষরা এই অঞ্চলের আদিবাসী, যারা তাদের ঐতিহ্য বজায় রেখে চলছে। তাদের লাল পোশাক, বর্শা ও বিখ্যাত ‘মাসাই জাম্পিং ডান্স’ এই অঞ্চলের সংস্কৃতির অংশ।

মাসাই মারার ভ্রমণের সেরা সময় হচ্ছে জুলাই-অক্টোবর বা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস। মাসাই মারা শুধু একটি ন্যাশনাল পার্ক নয়, এটি প্রকৃতির এক বিশাল নাট্যমঞ্চ, যেখানে প্রতিদিন জন্ম ও মৃত্যুর খেলা চলে। বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণ, ভয়ঙ্কর শিকার ও অভিবাসন এটিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা সাফারি পার্ক হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। প্রকৃতিকে তার আসল রূপে দেখতে চাইলে ভ্রমণ পিপাসুদের মাসাই মারা অন্তত একবার ঘুরে আসা উচিত।

সূত্র : মাসাই মারা ডট কম

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঈদে এক দিনে ঘুরে আসুন ঢাকার আশপাশের কিছু মনোরম জায়গা থেকে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ঈদে এক দিনে ঘুরে আসুন ঢাকার আশপাশের কিছু মনোরম জায়গা থেকে
সংগৃহীত ছবি

ঈদের ছুটিতে অনেকে অনেক জায়গায় ঘুরতে যান। কেউ বন্ধু-বান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে, কেউ-বা পরিবার নিয়ে। বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবার- যে কাউকে নিয়েই চাইলে এক দিনে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার আশপাশের কিছু জায়গা থেকে। কোন কোন জায়গায় যাবেন এবং কিভাবে যাবেন, তা জানাতেই এই প্রতিবেদন।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক।

আহসান মঞ্জিল

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকার নবাবদের আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত স্থান আহসান মঞ্জিল। এই ঈদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নবাবদের আভিজাত্যের ছোঁয়া উপভোগ করার মতো মজা আর হবে না। এই আহসান মঞ্জিলে প্রথম ঢাকা শহরে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলেছিল।

আহসান মঞ্জিল দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্ব দিকের অংশটি দরবার বা রংমহল  এবং পশ্চিম দিকের অংশটি ছিল অন্দরমহল। দুটি অংশে সংযোগ করা হয়েছে দোতলায়। দক্ষিণ পাশে রয়েছে খোলা চত্বর।
তারপর বুড়িগঙ্গা নদী।

1
আহসান মঞ্জিল। সংগৃহীত ছবি

প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা ভ্রমণ ও বিনোদনপ্রিয় শত শত মানুষের পদচারণে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এ চত্বর। দোতলা থেকে সিঁড়ি চলে গেছে নদীর ঘাটে। প্রায় পাঁচ একর জমিসহ ঐতিহাসিক এই ভবনটি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহণ করে জাদুঘরে রূপান্তর করে।

জাদুঘরের মোট ২৩টি গ্যালারিতে ঢাকার নবাবদের জীবনযাত্রা ও পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে।

আরো পড়ুন
সমুদ্রসৈকত ছাড়া কক্সবাজারে আরো যা আছে, পর্ব-১

সমুদ্রসৈকত ছাড়া কক্সবাজারে আরো যা আছে, পর্ব-১

 

লালবাগ কেল্লা

মুঘল আমলে নির্মিত একটি অনন্য ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত লালবাগ কেল্লা। প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড়ে মুখর থাকে লাল ইটের দর্শনীয় কেল্লাটি। সেই সঙ্গে দেখে আসতে পারেন কেল্লার পাশেই অবস্থিত ঐতিহাসিক লালবাগ শাহি মসজিদও। এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৬৭৮ সালে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র মুঘল সুবেদার মুহাম্মদ আজম শাহ এটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেও সম্রাট পদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি দিল্লি চলে যাওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তার উত্তরসূরি মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু শেষ করতে পারেননি। কারণ মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরিবীবী মারা যান। এ কারণে তিনি নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।

2
লালবাগ কেল্লা। সংগৃহীত ছবি

বলধা গার্ডেন

রাজধানীর ওয়ারীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেনে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার প্রজাতির গাছ। এখানে একটি সুন্দর পুকুর আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই বাগানে নানা ধরনের গাছের পাশাপাশি রয়েছে পর্যটকদের জন্য গেস্ট হাউস। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বন বিভাগ নব-উদ্যোগে উদ্যানের উন্নয়ন শুরু করে। ফলে বাগানের হারানো গৌরব অনেকটা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর দুটি নতুন গ্রিনহাউস নির্মাণসহ সর্বসাধারণের জন্য বাগানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও গড়ে ওঠে।

বলধা গার্ডেন দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশের নাম সাইকী এবং অন্যটি সিবলী। সাইকী অর্থ আত্মা ও সিবলী অর্থ প্রকৃতির দেবী। দুটি শব্দই গ্রিক পৌরাণিক শব্দ। সাইকী অংশের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে নীল, লাল, সাদা, হলুদ, জাতের শাপলায় ভরা অনেকগুলো শাপলা হাউস, বিরল প্রজাতির দেশি-বিদেশি ক্যাকটাস, অর্কিড, এনথুরিয়াম, ভূজ্জপত্র গাছ, বিচিত্র বকুল, আমাজান লিলি, সুড়ঙ্গসহ একটি ছায়াতর ঘর।

আরো পড়ুন
ঢাকার কাছেই ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি, ঘুরে আসুন এক দিনেই

ঢাকার কাছেই ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি, ঘুরে আসুন এক দিনেই

 


বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক

শান বাঁধানো নদীর ঘাটে নৌকা বাঁধা দেখতে যেতে হবে বুড়িগঙ্গা ইকোপার্কে। মৃদুমন্দ হাওয়া খেতে চাইলে এখানে নৌকায় করে ঘুরতে পারেন। জায়গাটি গাছগাছালিতে ঢাকা। গাছের সারির ফাঁকে পাকা রাস্তা। শহরের কোলাহল ছেড়ে রাজধানীর উপকণ্ঠ শ্যামপুরে প্রায় সাত একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে পার্কটি। বুড়িগঙ্গা পার্ক বা উদ্যান বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি সর্বজনীন স্থান। এই উদ্যানটি ২০১২ সালের অক্টোবরে পাবলিক উদ্যান হিসেবে স্থাপিত হয় যদিও পূর্বে মালবাহী জেটি ছিল।

ঐতিহ্যবাহী পানাম নগর

ঢাকা হতে ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোনারগাঁয়ে অবস্থিত এই পানাম নগর। পানাম নগরকে চার শত বছরের প্রাচীন বাংলাদেশের নগরভিত্তিক একটি প্রাচীন নগরীর মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর প্রাচীনত্ব আরো গভীর হতে পারে। ফার্সি শব্দ পাইনাম থেকে পানাম শব্দটি এসেছে। অর্থ আশ্রয়। ধারণা করা যেতে পারে ঐতিহাসিক সড়কে-ই-আযম গ্রান্ড ট্রাংক রোডের সমাপ্তি এ পানাম নগরেই হয়েছিল। সে সুবাদে পানাম নগরী সরকার-ই-সোনারগাঁওয়ের পরগনার হেড কোয়ার্টার হিসেবেও বিবেচিত।

3
পানাম নগর। সংগৃহীত ছবি

পানামের প্রাচীনত্ব বহন করে ট্রেজারার হাউস, সেতু, কস্পানির কুঠি এবং প্রাচীন বনেদি ইমারতসমূহ। সোনারগাঁয়ের নান্দনিক চারু ও কারু শিল্পের জন্যে বিখ্যাত মসলিনের আড়ং ছিল পানাম নগর। পানাম নগরের বিভাশিত বর্ণাঢ্য-ইমারতসমূহ সাক্ষ্য দেয় একসময় সোনারগাঁয়ের অভিজাত নাগরিকদের বসবাসের কেন্দ্র ছিল।

আরো পড়ুন
সাগরের মাঝে এক টুকরো স্বর্গ নিঝুম দ্বীপ, যেভাবে যাবেন

সাগরের মাঝে এক টুকরো স্বর্গ নিঝুম দ্বীপ, যেভাবে যাবেন

 

লোকজ শিল্পসমৃদ্ধ নান্দনিক ফুল, লতাপাতাসংবলিত দেয়াল, চিত্রিত চারুতায় ভরপুর মায়াবি নাচঘরকে কেন্দ্র করে লোকজ গানের আসর বসত। মায়াবি পর্দা দুলে ওঠার মতো মসলিনের পর্দা ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন পূজা উৎসবে মুখর নগরী আবহমান বাঙালির লোকাচার, জীবনাচার, আবহমান জীবন সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল ছিল পানাম নগর।

4
পানাম নগর। সংগৃহীত ছবি

লোকজ উপাদানের মোটিভসংবলিত একচালা দোচালা ছনের ঘরের মডেলসংবলিত ইমারত, বঙ্গীয় ‘একচালা দোচালা গৃহায়ণ’ সংস্কৃতির আদল রূপে সুদূঢ় দিল্লিতে সমাদৃত হয়েছিল। এ থেকে ধারণা করা যায়, প্রাচীন এ সোনারগাঁয়ের ছনে ছাওয়া কুঁড়েঘরের আদলই মোগল শিল্পকলাকে উৎসাহিত করেছিল। এসবেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল সোনারগাঁয়ের পৃথিবীখ্যাত নান্দনিক চারু ও কারুশিল্পের জন্য।

জিন্দা পার্ক

গন্তব্য যদি হয় খানিকটা দূরে, আর হাতে যদি থাকে সারা দিনের সময়, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন নারায়ণগঞ্জের জিন্দা পার্ক থেকে। ঢাকাতে সময় কাটানোর মতো অনেক পার্ক আছে। ঢাকার যানযট, কোলাহল থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি পেতে হলে ঘুড়ে আসা উচিত জিন্দা পার্ক থেকে।

আরো পড়ুন
অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা দ্বীপ মনপুরা, যেভাবে যাবেন

অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা দ্বীপ মনপুরা, যেভাবে যাবেন

 

অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর ব্যাবহার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পার্কটিতে। পার্কটি কোনো সরকারি উদ্যাগের ফসল নয়। আবার কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নির্মাণও নয়। পার্কটি তৈরি হয়েছে এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং তাদের প্রাণান্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে।

এলাকার ৫০০০ সদস্য নিয়ে ‘অগ্রপথিক পল্লী সমিতি’ ১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু করে। এ দীর্ঘ ৩৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম আর ত্যাগের ফসল এই পার্কটি। এ রকম মহাউদ্দেশ্য, এত লোকের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ত্যাগ স্বীকারের উদাহরণ খুব কমই দেখা যায়। অপস ক্যাবিনেট, অপস সংসদ এবং অপস কমিশন নামে পার্কটিতে ৩টি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। বর্তমানে জিন্দা গ্রামটিকে একটি আদর্শ গ্রামও বলা হয়।

5
জিন্দা পার্ক। সংগৃহীত ছবি

জিন্দা পার্কের অবস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। প্রায় ১০০ বিঘা জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা জিন্দা পার্কে রয়েছে একটি কমিউনিটি স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক, নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি, মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, রয়েছে একটি রেঁস্তোরাও। ২৫০ প্রজাতির ১০ হাজারের বেশি গাছগাছালি আছে পার্কটিতে। গাছের এই সমারোহের পরিবেশকে করেছে শান্তিময় সবুজ, কলকাকলীতে মুখর করেছে অসংখ্য পাখি। শীতল আবেশ এনেছে ৫টি সুবিশাল লেক। তাই গরম যতই হোক পার্কের পরিবেশ আপনাকে দেবে শান্তির ছোঁয়া।

আরো পড়ুন
পাখির অভয়ারণ্য হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা, কিভাবে যাবেন

পাখির অভয়ারণ্য হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা, কিভাবে যাবেন

 

ফ্যামিলি পিকনিকের জন্য জিন্দা পার্ক এখন বেশ পরিচিত জায়গা। কাঠের ব্রিজ পার হয়ে দিঘির মাঝামাঝি তৈরি করা বাঁশের টি রুমে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে এক কাপ চা কিংবা পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকার সময়গুলো দারুণ উপভোগ করবেন। জিন্দা পার্কে প্রবেশের টিকিট মূল্য প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিজন ১০০ টাকা। ৫ বছরের নিচে ছোট বাচ্চাদের টিকেট ৫০ টাকা। তবে খাবার নিয়ে প্রবেশ করলে টিকিটের মূল্য হবে ১২৫টাকা। এ ছাড়া লাইব্রেরিতে প্রবেশমূল্য ২৫ টাকা এবং পুকুরে নৌকায় ঘুরে বেড়াতে খরচ পড়বে ৩০ মিনিট ২০০ টাকা।

6
জিন্দা পার্ক। সংগৃহীত ছবি

কিভাবে যাবেন জিন্দা পার্ক

ঢাকা থেকে জিন্দা পার্কের দূরত্ব ৩৭ কিলোমিটার। কুড়িল বিশ্বরোডের বিআরটিসি বাস কাউন্টার থেকে কাঞ্চন ব্রিজের টিকিট কেটে নামতে হবে কাঞ্চন ব্রিজ। কাঞ্চন ব্রিজ থেকে জিন্দা পার্ক বাইপাসে যেতে লেগুনা বা অটো পাবেন। বাইপাসে নেমে ডিরেকশন অনুযায়ী হেটেই পৌঁছাতে পারবেন পার্কের গেট পর্যন্ত। তবে রিকশায়ও যেতে পারেন।

আরো পড়ুন
ট্রেকিং, হাইকিং ও ক্যাম্পিংয়ে সাপের কামড় থেকে দূরে থাকবেন যেভাবে

ট্রেকিং, হাইকিং ও ক্যাম্পিংয়ে সাপের কামড় থেকে দূরে থাকবেন যেভাবে

 

ঈদের সময়ে ঢাকার এসব জায়গায় পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন। ঈদের ছুটিও কাটবে, মনও ভালো হবে।

মন্তব্য

রাবি শিক্ষার্থীর টেকনাফ-তেঁতুলিয়া ক্রসকান্ট্রি হাইকিং

মো. মেহেদী হাসান (বুলেট)
মো. মেহেদী হাসান (বুলেট)
শেয়ার
রাবি শিক্ষার্থীর টেকনাফ-তেঁতুলিয়া ক্রসকান্ট্রি হাইকিং
সংগৃহীত ছবি

ক্রসকান্ট্রি হাইকিংয়ের পরিকল্পনা করা হয় গত ১৮ ডিসেম্বর। বের হয় পড়ি ২৫ ডিসেম্বরেই। মূলত প্রয়াত কবি হেলাল হাফিজকে উৎসর্গ করেই এই পরিকল্পনা। মূল অনুপ্রেরণা ছিল মৃত্যু, ভালোবাসা, হেলাল হাফিজ।

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বের হওয়ার সময় আমার বন্ধু সায়েম শাহাদাতও আমার সঙ্গে বের হয়। আমরা একই ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করেছি। দুজন একসঙ্গে থাকাতে অনেক কঠিন পরিস্থিতিও সহজ হয়ে যায়। সময়গুলো হয়ে ওঠে আরো আনন্দমুখর ও প্রাণবন্ত।

এভাবেই ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায় দেশের সর্বোচ্চ লম্বা পথে হাঁটার যাত্রা। আমাদের যাত্রা শুরু হয় তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে এবং শেষ হয় টেকনাফ শাহ পরীর দ্বীপে গিয়ে।

কত দিন সময় লেগেছে

আমাদের এই হাইকিংয়ে সর্বমোট ৩৭ দিন সময় লেগেছে। যদিও আরো কম সময়ে শেষ করা যেত, কিন্তু আমরা কোনো রেকর্ড কিংবা ইতিহাস করতে বের হইনি।

পথে পথে ভাই-ব্রাদার আর অপরিচিত মানুষের ভালোবাসায় আমরা সময় নিয়েই পথ শেষ করি।

কত কিলোমিটার পথ হেঁটেছি

‘হেলথ অ্যাপ’-এর রেকর্ড অনুযায়ী, আমরা বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে শাহ পরীর দ্বীপ জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত মোট ১০০৩.৪৬ কিলোমিটার পথ হেঁটেছি।

রাত্রীযাপন

যেহেতু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ছিলাম তাই মোটামুটি সব জায়গায় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত মানুষ ছিল। থাকা খাওয়া নিয়ে তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। বাকিটা মানিয়ে নিয়েছি।

এ জন্যই আমাদের সময়টাও বেশি লেগেছে। এ ছাড়া ৫০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকায় আসার পর বাকিপথে সঙ্গে তাঁবু ছিল। শেষটা ক্যাম্পিং করে কাটানোর ইচ্ছে থেকেই তাঁবু সঙ্গে রাখা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমেও রাত কাটিয়েছি। 

সর্বমোট কত টাকা খরচ হয়েছে

এটার সঠিক কোনো হিসাবে নেই। রাজশাহী থেকে ২৫ ডিসেম্বর বের হওয়ার সময় বিকাশে ১৫০০ টাকার মতো ছিল। আর ক্যাশ সম্ভবত ৫০০-৬০০ টাকা। বাকিটা পথে বের হওয়ার পর ম্যানেজ হয়ে গেছে। বিশেষ করে আমার ভাই বন্ধুরা দূর থেকে হলেও বিকাশ, নগদ, ব্যাংকের মাধ্যমে গিফট পাঠিয়েছেন। বিশেষ করে আমার নিজ বিভাগের বড় ভাই, বন্ধু, ছোট ভাইয়েরা। আর গত ৫ বছর ধরে আমার ব্যক্তিগত একটা অনলাইন বিজনেস আছে। বাকিটা সেখান থেকে খরচ হয়েছে।

কোনো শারীরিক সমস্যা হয়েছিল কি না

আলহামদুলিল্লাহ, পুরো পথে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। সুস্থ, সুন্দর, প্রাণবন্তভাবেই শেষ করি। হাঁটতে গিয়ে প্রথম প্রথম একটু পা ফুলে যায়, ব্যথা করে, তবে ৮-১০ দিন যাওয়ার পর সব ফ্রি হয়ে গেছে। যদিও আমার সঙ্গে ১০ কেজির ব্যাকপ্যাক ছিল। তবু কোনো অসুবিধা হয়নি।  

সারা দিন হাঁটার পর পায়ের যত্ন কিভাবে নেওয়া হতো

প্রথম দিকে ব্যথা বেশি ছিল। তাই হাইকিং শেষ করে, ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণ পা চুবিয়ে রেখে। তারপর মুভ স্প্রে করতাম, তারপর ১০-১২ দিন পর থেকে শুধু ট্রেক শেষ করে ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণ পা চুবিয়ে রাখতাম। তবে কেউ চাইলে সরিষা তেল গরম করেও ব্যথা নিরাময়ের কাজ করতে পারেন।

ছোটবেলায় গ্রামে বেড়ে উঠা তো, মা নানা রকম ন্যাচারাল জিনিস খাওয়ায়ে বড় করছে। তাই মনে হয় এত বড় লং জার্নি তে প্রেশার বা ধকল যায়নি তেমন। মনের জোরটা ছিল একশ একশ। তাই কঠিন পথও সহজ হয়ে গেছে।

মেহেদীর ভাবনা

ক্রসকান্ট্রি হাইকিং শেষ করে বন্ধু শাহাদাত তার গন্তব্যে ফিরে গেছে। আমার গন্তব্য বাকি ৪৯ জেলা পায়ে হেঁটে শেষ করা এবং একটা মেসেজ পৌঁছে দেওয়া ‘Be the source of your own essentials!’

আমরা প্রতিটা পরিবার যদি যথাসাধ্য নিজেদের প্রয়োজনীয় সব কিছু নিজেরা উৎপাদন করি, যে যতটুকু পারি নিজেদের রিসোর্স অনুযায়ী, তাহলেই প্রিয় পরিবারকে ফ্রেশ ও অর্গানিক খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব অন্যথায় বাণিজ্যিক ভাবে ডিপেন্ডেবল হয়ে গেলে মুখ থুবড়ে পড়বে ভেজাল নামক মরীচিকা।

যদিও উচ্চ শিক্ষিত অনেকেই অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমে নির্ভেজাল পণ্য সবার মাঝে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। গত ৪-৫ বছর ধরে এ সংখ্যাটা দৃশ্যমান, তাদের সাধুবাদ জানাই। সেটা অফলাইনেও ছড়িয়ে পড়ুক দৃশ্যমানভাবে। সেই সঙ্গে আমরা সবাই যদি খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক হয়ে যাই, তাহলেই পৃথিবীতে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুকে আপনি আমি তার মৌলিক ও প্রধান চাহিদা স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করতে পারি। অন্যথায় আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় একটা নতুন প্রাণকে পৃথিবীতে আনার মানুষের কোনো অধিকার নেই।

আমরা বর্তমানে এমন একটা পৃথিবীতে বসবাস করছি যেখানে সব কিছুই বিষক্রিয়ায় ভরা। আমাদের মৌলিক চাহিদা অন্ন বলেন, শিক্ষা বলেন কিংবা চিকিৎসা—যেদিকেই তাকান, স্বস্তি পান? নিজেকে প্রশ্ন করলেই উত্তর পেয়ে যাই আমরা, তাই না? সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর জন্য আমি আপনি বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণের নিশ্চয়তা দিতে পারি না, বিশুদ্ধ খাবার মুখে তুলে দিতে পারি না। পুরো পৃথিবীটা আপনার আমার আবর্জনায় ভরপুর। এখানে সেখানে প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি, একটু নিজ নিজ চারপাশে তাকালেই বুঝে যাই আমরা।

পায়ে হেঁটে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট তেতুলিয়া টু টেকনাফ শাহ পরীর দ্বীপ পর্যন্ত যেতে প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চি জমিতে মনে হয় প্লাস্টিক,পলিথিন দেখেছি। আপনি একটু পর পর রাস্তার দুপাশে, জমিতে, হাট-বাজার থেকে শুরু করে মোটামুটি দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্ত সব যায়গায় কমন জিনিস পাবেন, সেগুলো হলো আমার আপনার ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক, পলিথিন।

এবার পুরো বাংলাদেশ ইমাজিনেশন করলে সর্বনাশটা বুঝে যাবেন। যেগুলো সমতল থেকে সর্বোচ্চ পর্বত পৌঁছে, এমনকি সমুদ্রের তল দেশ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি মানব সভ্যতার কল্যাণে। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় না, বলেন? সে আনন্দে একটা প্রশ্ন করি, সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া একটা প্রাণ এমন পৃথিবী চেয়েছিল বুঝি মানবসভ্যতার কাছে?

যেখানে জন্ম নেওয়ার পর থেকেই একটা প্রাণের শাস্তি শুরু হয়ে যায়, এমন পৃথিবীতে নিষ্পাপ প্রাণেরা আসতে চেয়েছিল কি? আমার জানা নেই।

তাই সবার কাছে আমার একটাই মেসেজ, নিজের চারপাশে প্রতিটা ইঞ্চি ইঞ্চি মাটিতে প্লাস্টিক নয়, পারলে নিজেরা খেতে পারেন, এমন কোনো শাক-সবজি, সেটা হোক একটা মরিচ গাছ কিংবা একটা লাউ গাছ লাগান। নিজেদের জন্য নিজেরা উৎপাদন করে খান, বাড়ির চারপাশে দেশীয় ফলগাছ লাগান, কাঠ গাছ দিয়ে ভরপুর করে দিয়েন না এবং পাবলিক প্লেস গুলোতেও কাঠ গাছ না লাগিয়ে ফল গাছ লাগান।

আমাদের কমন একটা ন্যাচারের কথা মনে পড়ল, পাবলিক প্লেসে কিংবা নিজের বাড়ি থেকে দূরের কোনো জমিতে ফল গাছ লাগালে ব্যক্তির লাভ নেই—এই ভেবে দূরের জমিগুলোতে দেখবেন কাঠ গাছ লাগায়। অথচ মানব সভ্যতার কল্যাণে এই যায়গা গুলোতে ফলগাছ লাগানো উচিত ছিল। একটা গাছ বীজ থেকে ফুটে চারা গাছ হয়ে তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুল ফল ধরতেছে এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য কি হতে পারে। তারপর নিজে খেলেন, না পাখি খেল, না কোনো পথিক- তাতে কি আসে যায়।

তাই এখানে সেখানে যত্রতত্র প্লাস্টিক পলথিন না ফেলে আমার আপনার চারপাশের মাটিগুলো উৎপাদনমুখী করে তুলি। নয়তো বাণিজ্যিক খপ্পরে আটকে যাবে আপনার, আমার ও ভবিষ্যৎ শিশুর প্রাণ।

আমার জন্মস্থান কুমিল্লা। তেতুলিয়া টু টেকনাফ ক্রসকান্টি হাইকিংয়ে আমার ১৫টা জেলা কভার হয়ে গেছে। আমি আপাতত টেকনাফ আছি। আজকালের মধ্যেই বাকি ৪৯ জেলা পায়ে হেঁটে দেখতে বের হয়ে যাব। একদিন পুরো পৃথিবী। তা ছাড়া পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশনের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমানোর প্ল্যান আছে। তাই ইচ্ছে পুরো বিশ্বে পদচিহ্ন রাখার আগে নিজের দেশে পদচিহ্ন এঁকে নিজেকে দেখে যাই।

সবার নিকট দোয়া ও ভালোবাসা কামনা করছি, যেন বাকি জেলাগুলো শেষ করে সুস্থ ও সুন্দরভাবে ফিরতে পারি মায়ের কাছে।

লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য

ঘুরতে যেতে পারেন ‘বনলতা সেন’-এর নাটোরে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ঘুরতে যেতে পারেন ‘বনলতা সেন’-এর নাটোরে
সংগৃহীত ছবি

‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।’ 

জীবনানন্দ দাশের এই বিখ্যাত পঙক্তি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আপনি যদি একটু প্রশান্তি খুঁজে বেড়াতে চান, তবে নাটোর হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য। নাটোর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ একটি জেলা। যা ‘রাজসিক নাটোর’ নামে পরিচিত।

নাটোরে রয়েছে একাধিক প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। এখানে রয়েছে রানি ভবানীর রাজবাড়ি, উত্তরা গণভবন, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি ও চৌগ্রাম জমিদারবাড়ি। এ ছাড়া রয়েছে চলনবিল ও হালতি বিলের মতো জায়গা। যেগুলো পরিবেশপ্রেমীদের জন্য অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়।

নাটোরকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এখানে দেশের সব প্রান্ত থেকে সড়ক, রেলপথ ও আকাশপথে সহজেই পৌঁছানো যায়। রাজশাহী থেকে এক ঘণ্টা সড়কপথে নাটোর পৌঁছানো সম্ভব। যা এই অঞ্চলের কাছে অত্যন্ত সুবিধাজনক।

চলুন, জেনে নিই নাটোরের কয়েকটি বিখ্যাত স্থান সম্পর্কে।

রানী ভবানীর রাজবাড়ি
নাটোর শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত রানী ভবানীর রাজবাড়ি। যা প্রাচীন নাটোর রাজবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। বাংলার সুবেদার মুর্শিদকুলী খানের শাসনামলে এই রাজবাড়ির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এটি প্রাসাদ, দিঘি, মন্দির, উদ্যান ও মনোরম অট্টালিকা দিয়ে একটি সুসজ্জিত নগরীতে পরিণত হয়।

নাটোর রাজবংশটি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল—বড় তরফ এবং ছোট তরফ। রাজপ্রাসাদ দুটি এই দুই তরফের জন্য আলাদা আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছিল। উদ্যানের মধ্যে প্রশস্ত জায়গা রয়েছে। যেখানে বড় তরফের প্রাসাদ উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং ছোট তরফের প্রাসাদ দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। রাজবাড়ির পোড়ামাটির টেরাকোটায় মোড়ানো প্রাসাদের মেঝে ও শ্বেতপাথরের উপস্থিতি এখনো রাজবংশের ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। পরিচর্যার অভাবে রাজপ্রাসাদের অনেক অংশ ভেঙে পড়ছে। রাজবাড়ি দর্শনের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশমূল্য দিতে হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। বনভোজনের জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে এখানে।

উত্তরা গণভবন
নাটোর শহরের দিঘাপতিয়ায়, নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত উত্তরা গণভবন। এটি ১৭৩৪ সালে দিঘাপতিয়ার দেওয়ান দয়ারাম রায় নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালে এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরে রাজা প্রমদানাথ রায় ১১ বছর ধরে এই রাজপ্রাসাদটি পুনর্নির্মাণ করেন। প্রাসাদটি পুনর্নির্মাণে তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নির্মাণ উপকরণ ও গাছপালা ব্যবহার করেন। চারদিকে সীমানাপ্রাচীর ও পরিখা দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছিল রাজপ্রাসাদটিকে। উত্তরা গণভবনের মূল ফটকটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। ফটকের মাঝখানে একটি বিশাল ঘড়ি রয়েছে, যা ঘণ্টাধ্বনি দিয়ে সময় জানায়। রাজবাড়ির ভেতরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফলের গাছের সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

চলনবিল 
নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও বগুড়া জেলার অল্প কিছু অংশ নিয়ে চলনবিল। চলনবিল এক বিশাল জলাভূমি। এটি দেশের অন্যান্য বিলের তুলনায় খুবই বিশেষ। সব ঋতুতেই চলনবিলের পানি প্রবাহিত থাকে। বর্ষাকালে ছোট ছোট গ্রামগুলো বিলের মধ্যে দ্বীপের মতো দেখা যায়। নৌকায় ঘুরে বেড়াতে গেলে বিলের সীমানা শেষ হয় না। 

মাথার ওপর উড়ন্ত পাখি, পাশাপাশি নৌকার শব্দ ও পানি থেকে ছোট মাছের লাফালাফি এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা দেয়। শুকনা মৌসুমে দুই বিলের মধ্যে ডুবোসড়কগুলো জেগে ওঠে। অনেকেই সেখানে হেঁটে বা মোটরসাইকেল চালিয়ে ঠাণ্ডা পানির স্পর্শ পান।

মন্তব্য
ইসলামী স্থাপত্য

ইসলামী সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের ধারক ‘হিন্দা শাহি মসজিদ’

সউদ আব্দুল্লাহ, কালাই( জয়পুরহাট)
সউদ আব্দুল্লাহ, কালাই( জয়পুরহাট)
শেয়ার
ইসলামী সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের ধারক ‘হিন্দা শাহি মসজিদ’

ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের ছোঁয়ায় নির্মিত অন্যতম মসজিদ হিন্দা-শাহি জামে মসজিদ। জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের অপূর্ব নির্মাণশৈলীর জন্য স্থানীয়দের কাছে তো বটেই, পর্যটকের কাছেও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বাংলা ১৩৬৫ সালে বাগমারী পীর হিসেবে পরিচিত চিশতিয়া তরিকার অন্যতম পীর হজরত আবদল গফুর চিশতির (রহ.) নির্দেশে মাওলানা আবদুল খালেক চিশতির তত্ত্বাবধানে মসজিদটি নির্মিত হয়।

হজরত আবদুল কাদের এর নকশা তৈরি ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে।

মসজিদটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর চমৎকার কারুকাজ ও গঠনশৈলী। মোগল আমলের অধিকাংশ স্থাপনার মতো পোড়ামাটির কারুকাজের পরিবর্তে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে রঙিন কাচ, চিনামাটির টুকরা ও মোজাইকের সমন্বয়ে তৈরি সুদৃশ্য অলংকরণ। যখন সূর্যের আলো মসজিদের গায়ে পড়ে, তখন তা এক স্বর্গীয় সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়।

পাঁচটি গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের নির্মাণশৈলী ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়েছে। প্রধান গম্বুজটি মাঝখানে স্থাপিত, আর চারটি ছোট গম্বুজ চার পাশে অবস্থান করছে। বিস্ময়কর বিষয় হলো, পুরো মসজিদটি নির্মাণে কোনো রড ব্যবহার করা হয়নি, যা আজকের আধুনিক প্রকৌশলীদেরও বিস্মিত করে।

মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করলে নজরে আসবে অপরূপ নকশা ও ক্যালিগ্রাফি।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো প্রধান গম্বুজের অভ্যন্তরে পবিত্র আয়াতুল কুরসি সুদৃশ্যভাবে খচিত রয়েছে, যা মুসল্লিদের মনে এক অনন্য ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করে। মসজিদের অভ্যন্তরের দৈর্ঘ্য ৪৯.৫০ ফুট এবং প্রস্থ ২২.৫০ ফুট। উত্তর পাশে ৪০ ফুট উচ্চতার একটি মিনার রয়েছে, যার শীর্ষে মাইকের মাধ্যমে আযানের ধ্বনি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় শিক্ষক ছাবের হোসেন ফকির। বয়স ৮৮ বছর।

কথা হয় তার সাথে, স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা এই মসজিদ নির্মাণের কাজে বাবার সাথে এসে সহযোগিতা করেছি। এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও এখানে নামাজ পড়ে হৃদয়ে তৃপ্তি নেয়। মসজিদসংলগ্ন স্থানে হজরত শাহ সুলতান বখতির চারজন শিষ্যের মাজার রয়েছে। যেখানে প্রতি বৃহস্পতিবার হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠিত হয়। দূরদূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এখানে সমবেত হন, কুরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আসকারে মগ্ন হন।

রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে অন্যতম সিরাজগঞ্জের আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হিন্দা শাহী মসজিদের স্থাপত্যের কারুকার্যের গুনকথা শুনে অনেক দূর থেকে এসেছি। এখানে জুমার নামাজ আদায় করে এক অভূতপূর্ব প্রশান্তি অনুভব করেছি। নামাজ শেষে মহান আল্লাহর কাছে সবার জন্য দোয়া করেছি।’

মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুস সালাম বলেন, ‘মোগল স্থাপত্যের ছোঁয়ায় অনন্য নিদর্শন হিন্দা শাহী মসজিদ কেবল মুসলমানদের নামাজ আদায়ের স্থান নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকও বটে। সুদৃশ্য নির্মাণশৈলী, কারুকাজ এবং ধর্মীয় আবহ এটিকে বিশেষভাবে অনন্য করে তুলেছে। যদি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তবে এটি ভবিষ্যতেও এক অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে টিকে থাকবে, যা যুগযুগ ধরে ইসলামি সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের ধারক হয়ে থাকবে।’

ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের ছোঁয়ায় নির্মিত অন্যতম মসজিদ হিন্দা-শাহি জামে মসজিদে আদায়ের অনুভূতি পেতে চাইলে আপনিও ছুটির দিনে পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের নিয়ে আসতে পারেন।

যেভাবে যাবেন
হিন্দা-শাহী জামে মসজিদ যেতে চাইলে প্রথমে জয়পুরহাট  শহরে আসতে হবে।  গাবতলি, মহাখালী আব্দুল্লাহপুর, শ্যামলী এবং কল্যাণপুর থেকে শাহ্ ফতেহ আলী পরিবহণ, সেইন্টমার্টিন ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন এ আর, এস আর ট্রাভেল এবং হানিফ সহ বেশ কয়েকটি পরিবহণের বাস সার্ভিস ঢাকা হতে জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে যাত্র করে। এসি, নন-এসি এসব বাসের ভাড়া ৫৫০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত। 

এছাড়া ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে নিলসাগর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, কুরিগ্রাম এক্সপ্রেস, ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে জয়পুরহাট যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে জনপ্রতি টিকেটের ভাড়া শোভন চেয়ার ৫১০ টাকা, স্নি ৯৭৮ টাকা, এসি সিট ১,১৭৩ টাকা ও এসি বার্থ ১,৮১০ টাকা। 


ঢাকা হতে জয়পুরহাট বাস টার্মিনালে পৌঁছে অন্য বাসে চড়ে ১৫ টাকা ভাড়ায় ক্ষেতলালের ইটাখোলায় এসে সেখান থেকে ১০-১৫ টাকা রিকশা ভাড়ায় হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ যেতে পারবেন। 
 

কোথায় থাকবেন 
জয়পুরহাট শহরের থানা রোডে হোটেল সৌরভ ইন্টাঃ, হোটেল জাহান আরা ইন্টাঃ, জসিম রেসিডেন্সিয়াল হোটেল, পৃথিবী হোটেল, হোটেল বৈশাখী রেসিডেন্সিয়াল ইত্যাদি ছাড়াও আরো বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। 


কোথায় খাবেন 
জয়পুরহাটে বিভিন্ন মানে চাইনিজ এবং বাংলা খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এদের মধ্যে ক্যাফে অরেঞ্জ চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, বিসমিল্লা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, রুচিটা রেস্টুরেন্ট এন্ড চাইনিজ, মিনা, প্রিন্স রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ