<p style="text-align: justify;">প্রেমের খোঁজে ডেটিং অ্যাপ টিন্ডারে অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিলেন ভারতের এক সিভিল সার্ভিস প্রার্থী। তখনো তিনি জানতেন না, ভয়ঙ্করভাবে প্রতারিত হতে চলেছেন। ওই অ্যাপে খোঁজ পাওয়া প্রেমিকা বেরশার জন্মদিন পালন করতে রবিবার পূর্ব দিল্লির বিকাশ মার্গ এলাকার একটি ক্যাফেতে যান ওই যুবক। এর কিছুদিন আগেই মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তার।</p> <p style="text-align: justify;">ক্যাফেতে তারা কিছু স্ন্যাকস, দুটি কেক ও অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় অর্ডার করেছিলেন। তাদের ডেটিংও বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে বেরশা পারিবারিক কারণ দেখিয়ে সেখান থেকে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে যান। এরপর খাওয়া শেষে বিল দেখে হতবাক হয়ে যান ওই যুবক। সামান্য খাবারের জন্য এক লাখ ২১ হাজার ৯১৭ ভারতীয় রুপি দাম ধরা হয়েছে। কিন্তু এসব খাবারের দাম সব মিলিয়ে মাত্র কয়েক হাজার রুপির বেশি হওয়ার কথা না।</p> <p style="text-align: justify;">ভুক্তভোগী ওই যুবক খাবারের দামের বিরোধিতা করলে তাকে হুমকি দিয়ে দাম পরিশোধ করতে বাধ্য করেন ক্যাফের মালিকদের একজন অক্ষয় পাহওয়া (৩২)। তখন ওই যুবক অনলাইনে বিল পরিশোধ করেন। অক্ষয় পূর্ব দিল্লির শাহদারার বাসিন্দা। তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ওই যুবক ক্যাফে থেকে বের হয়ে সরাসরি থানায় গিয়ে মামলা করেন। পরে পুলিশ তদন্ত করতে পরিদর্শক সঞ্জয় গুপ্তের নেতৃত্বে চার সদস্যের দল নিয়ে ক্যাফেতে যায়। সে সময় অক্ষয়কে আটক করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">অক্ষয় পুলিশকে জানান, ক্যাফেটির মালিকানায় তার সঙ্গে রয়েছেন বানশ পাহওয়া ও আনশ গ্রোভার। বানশ তার খালাতো ভাই এবং আনশ তাদের বন্ধু। ক্যাফেতে বেশ কয়েকজন টেবিল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। তাদের ব্যাবস্থাপনার দায়িত্ব রয়েছে দিগ্রাংশুর ওপর। ম্যানেজারদের মধ্যে আরিয়ান নামের একজন ছিলেন, যিনি সপ্তম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করেননি এবং বর্তমানে বেকার। </p> <p style="text-align: justify;">বেরশা সম্পর্কে অক্ষয় বলেন, মেয়েটির নাম মূলত আফসান পারভীন। তিনি আয়েশা ও নূর নামেও পরিচিত। পুলিশ যখন তার খোঁজ করে করে, তখন তিনি অন্য একটি ক্যাফেতে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে ডেটিংয়ে ছিলেন। ওই ব্যক্তি মুম্বাই থেকে এসেছিলেন। তাদের শাদি ডট কম নামের একটি অ্যাপে পরিচয় হয়েছিল। এ সময় পারভীন তাদের কর্মপরিকল্পনা পুলিশের কাছে প্রকাশ করেন।</p> <p style="text-align: justify;">ভুক্তোভোগী ওই যুবকের সঙ্গে মূলত বেরশা সেজে আরিয়ান যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি ওই যুবককে পারভীনের ছবি দেখিয়েছেন। পরে ২৩ জুন পারভীনের জন্মদিন পালনের জন্য লক্ষ্মী নগরে আমন্ত্রণ জানান আরিয়ান। পরে ডেটিংয়ের সময় পারভীন পারিবারিক কারণ দেখিয়ে পরিকল্পনা অনুসারে ক্যাফে থেকে বের হয়ে যান। তখন খাবারের জাল বিলটি যুবকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align: justify;">এভাবে আদায় করা বিলের ভাগ দলটির সবার কাছে যায়। তারা ভুক্তভোগীদের থেকে যে অর্থ নেন তার ১৫ শতাংশ পারভীন, ৪৫ শতাংশ টেবিল ম্যানেজার ও ক্যাফে পরিচালক এবং ৪০ শতাংশ ক্যাফের মালিক নিয়ে থাকেন।</p> <p style="text-align: justify;">পুলিশ জানিয়েছে, এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের জন্য দিল্লি-এনসিআর, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদসহ বড় মেট্রো শহরগুলোতে চক্রটির এ রকম বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পরিকল্পনায় ক্যাফের মালিক, ম্যানেজার ও অন্যরা জড়িত।</p> <p style="text-align: justify;">টেবিল ম্যানেজাররা এই অ্যাপগুলোতে প্রথমে ভুয়া প্রফাইল তৈরি করে পুরুষদের ক্যাফেতে আমন্ত্রণ জানান। পরে তাদের কাছ থেকে খাবার ও পানীয়র জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। যদি বাড়তি দাম পরিশোধে তারা অস্বীকৃতি জানান, তবে তাদের হুমকি ও মারধর করা হয়। বিল পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাদের আটকে রাখা হয়। পুলিশের মতে, সামাজিক কারণে ভুক্তোভোগীরা এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ জানান না।</p> <p style="text-align: justify;">এ ঘটনায় পুলিশ পারভীন ও অক্ষয়কে গ্রেপ্তার এবং তাদের মোবাইল ও ক্যাফের রেজিষ্ট্রেশন জব্দ করে। এসব বিষয়ে আরো তদন্ত এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">সূত্র : এনডিটিভি</p>