যুক্তরাষ্ট্রে শনিবার প্রায় এক হাজার ২০০টি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আয়োজকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী, এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ধনকুবের উপদেষ্টা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে এক দিনে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হবে।
এদিকে ‘হ্যান্ডস অফ!’ শিরোনামের এ বিক্ষোভ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ইউরোপে বসবাসকারী শত শত ট্রাম্পবিরোধী মার্কিন নাগরিক বার্লিন, ফ্রাংকফুর্ট, প্যারিস ও লন্ডনের রাস্তায় জড়ো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে ট্রাম্পের ব্যাপক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। প্যারিসের রিপাবলিক স্কয়ারে প্রায় ২০০ মানুষ নানা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে জড়ো হন, যাদের অধিকাংশই মার্কিন।
ব্যানারগুলোর মধ্যে ছিল, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করো’, ‘আইনের শাসন চাই’, ‘ফ্যাসিবাদ নয়, স্বাধীনতার পক্ষে নারীবাদী’ এবং ‘গণতন্ত্র রক্ষা করো’।
ফ্রাংকফুর্টে ডেমোক্র্যাটস অ্যাব্রড সংগঠনের মুখপাত্র টিমোথি কাউটজ বলেন, ‘আমাদের আজ যুক্তরাষ্ট্রের হাজারো শহরে অনুষ্ঠিতব্য বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতেই হবে।’
বিক্ষোভকারী হোসে সানচেজ বলেন, ‘ট্রাম্প একজন প্রতারক, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ধ্বংস করছেন।’
এই আন্দোলনের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে একের পর এক রক্ষণশীল পরিবর্তনের বিরুদ্ধে গণ-অসন্তোষ প্রকাশের সুযোগ পাবেন বিরোধীরা।
আন্দোলন সংগঠন ইনডিভিসিবলের সহপ্রতিষ্ঠাতা আজরা লেভিন বলেন, ‘এটি একটি বিশাল প্রতিবাদ, যা ট্রাম্প, মাস্ক, কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্য ও মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন (ম্যাগা) ঘরানার সব অনুসারীদের স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—আমরা চাই না তারা আমাদের গণতন্ত্র, সমাজ, শিক্ষা ও জীবনে হস্তক্ষেপ করুক।’
হোয়াইট হাউস ট্রাম্প বা মাস্কের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য দেয়নি।
প্রতিবাদে অংশগ্রহণের জন্য প্রায় ১৫০টি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ নিবন্ধন করেছে। প্রতিবাদগুলো ৫০টি অঙ্গরাজ্য ছাড়াও কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, মেক্সিকো ও পর্তুগালে অনুষ্ঠিত হবে।
সবচেয়ে বড় প্রতিবাদটি ওয়াশিংটন ন্যাশনাল মলে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি ফের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর নির্বাহী আদেশ ও অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছেন, যাকে অনেক সমালোচক ‘প্রজেক্ট ২০২৫’ নামে গভীর রক্ষণশীল রাজনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন, যার লক্ষ্য সরকারকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা শক্তিশালী করা। তবে বিভিন্ন মামলা ও আইনি বাধায় তার অনেক উদ্যোগই আটকে আছে, যার মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্মীদের বরখাস্ত করা, অভিবাসীদের বিতাড়নের চেষ্টা এবং রূপান্তরকামী ব্যক্তিদের অধিকার প্রত্যাহার।
প্রতিবাদকারীরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, তিনি সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবামূলক কর্মসূচি কাটছাঁট করতে চাইছেন। তবে হোয়াইট হাউসের সহকারী প্রেসসচিব লিজ হিউস্টন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, তিনি সব সময় উপযুক্ত নাগরিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা, মেডিকেয়ার ও মেডিকেইড সুরক্ষিত রাখবেন।
বরং ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান হলো অবৈধ অভিবাসীদের এসব সুবিধা দেওয়া, যা এই কর্মসূচিগুলোকে দেউলিয়া করে তুলবে এবং প্রবীণ মার্কিনদের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ দমন নিয়েও ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচকরা প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন। তারা ওয়াশিংটনে পৃথক মিছিলের পরিকল্পনা করছেন।
২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নারীদের বিশাল সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়েছিল। এবারের প্রতিবাদ কিছুটা ছোট হলেও সংগঠকরা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরেই বড় পরিসরে একটি অভিন্ন প্রতিবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রথম নির্বাচনের পর গঠিত ইনডিভিজিবল এবার আরো কয়েকটি প্রগতিশীল সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে, যার মধ্যে রয়েছে মুভঅন, ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টি, সার্ভিস এমপ্লয়িজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন (যা প্রায় ২০ লাখ কর্মীকে প্রতিনিধিত্ব করে), মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ক্যাম্পেইন ও পরিবেশবাদী গ্রিনপিস।