বিশ্বজুড়ে নানা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয় পবিত্র রমজান মাস, যা রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের পয়গাম নিয়ে আসে প্রতিবছর। এ মাসে মুসলমানদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। তবে নানা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত কারণে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানদের মধ্যে রমজানের আমেজটা একটু বেশি পরিলক্ষিত হয়। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে আরববিশ্বের কয়েকটি ব্যতিক্রমী রামাদানি ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরা হলো :
নাফার : নাফার মানে সাহরিতে সুরেলা ডাক।
রমজানে সাহরির সময় রোজাদারদের জাগানোর জন্য আরব দেশগুলোতে প্রচলিত রয়েছে ‘নাফার’। এই প্রথায় কিছু লোক দলবদ্ধভাবে ঘুরে ঘুরে গান, কবিতা ও ইসলামী সংগীত আবৃত্তি করে মানুষকে সাহরির জন্য জাগায়। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, সাংস্কৃতিকভাবে একটি আনন্দঘন আয়োজন হিসেবেও বিবেচিত হয়।
মুসাহারাতি : মুসাহারাতি মানে ঢোল পিটিয়ে জাগানো।
মুসাহারাতি বলা হয় এমন এক ব্যক্তিকে, যিনি রমজানে সাহরির সময় আবাসিক এলাকাগুলোতে হেঁটে হেঁটে ঢোল পেটান এবং মানুষকে সাহরির জন্য জাগিয়ে তোলেন। সৌদি আরব, ইরাক ও সিরিয়ায় এই সংস্কৃতি রয়েছে।
কামানের গর্জন : কামানের গোলা নিক্ষেপের মাধ্যমে ইফতারের ঘোষণা দেওয়ার রীতি একসময় আরববিশ্বে বেশ প্রচলিত ছিল। এখনো রমজান মাসে ইফতারের সময় ঘোষণা দেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে কামান দাগার রীতি রয়েছে।
মিসর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও লেবাননের মতো দেশগুলোতে বহু বছর ধরে এই ঐতিহ্য পালিত হয়ে আসছে।
ফানুস : ফানুসের আলোয় রমজানের আনন্দ উদযাপন মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিশেষ রীতি। বিশেষ করে মিসরে রমজানে এক বিশেষ ঐতিহ্য হলো রঙিন ফানুস ও লণ্ঠন জ্বালানো। শহরের রাস্তা, বাজার, শপিং মল ও বাড়িঘর রঙিন আলোয় আলোকিত করা হয়, যা রমজানের আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করে। নানা রকম ইসলামিক প্যাটার্নের এসব বাতি রমজানে আলাদা আমেজ তৈরি করে।
মাহিবেস : মাহিবেস হচ্ছ ইফতারের পর একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। অথবা বলা যেতে পারে ইরাকে রমজানের আরেকটি মজার ঐতিহ্য হলো ‘মাহিবেস’ নামের খেলা। এই খেলায় দুটি দল অংশ নেয়, যেখানে একটি আংটি লুকিয়ে রেখে অন্য দলকে তা খুঁজে বের করতে হয়। ইফতারের পর সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতে এটি বেশ জনপ্রিয়।
মোকাবিলা : মোকাবিলা হচ্ছে কোরআন তিলাওয়াতের অনন্য পদ্ধতি। অথবা রমজানে কোরআন তিলাওয়াতের বিশেষ এক রীতি হলো ‘মোকাবিলা’। এটি হলো একাধিক ব্যক্তি একে অন্যকে কোরআন তিলাওয়াত শোনানোর একটি পদ্ধতি। ইসলামের ইতিহাস অনুসারে প্রথম মোকাবিলা সম্পন্ন হয়েছিল মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর মধ্যে। এই ঐতিহ্য এখনো এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন মসজিদে পালিত হয়। সূত্র : অ্যারাব নিউজ