চলতি মৌসুমে আলুর ফলন খুবই ভালো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর উৎপাদন ছাড়িয়েছে এক কোটি ৯ লাখ টন। অন্যদিকে দেশে এক বছরে আলুর মোট চাহিদা ৯০ লাখ টন। ফলে চাহিদার চেয়েও ১৯ লাখ টন বা ২২ শতাংশ আলু বেশি উৎপাদিত হয়েছে।
আলু চাষিদের রক্ষা করুন
- হিমাগারে স্লিপ কারসাজি

আলু পচনশীল পণ্য। যে দামই পান, কৃষককে বিক্রি করে দিতেই হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আলু চাষিদের রক্ষায় সরকারকে আলু রপ্তানি বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে এবং তা করতে হবে অত্যন্ত দ্রুত। হিমাগারগুলোর ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে। যেকোনো কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে দেশে হিমাগারের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
সম্পর্কিত খবর

বেতন-বোনাস পরিশোধ করুন
- উত্তপ্ত শিল্পাঞ্চল

নানামুখী সংকটে নিমজ্জিত দেশের শিল্প খাত। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রয়েছে ডলার সংকট।
গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঈদে বেতন-বোনাস, ছুটি ও বিভিন্ন দাবিতে শিল্পাঞ্চলগুলোতে রীতিমতো উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। বরং প্রতিদিনই আন্দোলন, বিক্ষোভ, কর্মবিরতিতে সোচ্চার আছেন কর্মীরা। সরকারের ত্রিপক্ষীয় কমিটির (মালিক-শ্রমিক এবং সরকারের) বৈঠকে সমন্বিত উদ্যোগের ফলে মজুরি ও বোনাস নিয়ে সংকট কিছুটা প্রশমন হলেও এখনো কয়েকটি কারখানা ঝুঁকিতে রয়েছে। এ নিয়ে গত শনিবার কয়েকটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষও ছিল।
গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম কালের কণ্ঠকে বলেন, শনিবার ছিল তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ঈদ বোনাস ও মজুরি প্রদানের শেষ দিন। কিন্তু শনিবার বন্ধের দিন হওয়ায় কিছু সমস্যা হয়েছে। তাঁদের ধারণা, এরই মধ্যে ৬০ শতাংশ শ্রমিকের মজুরি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মজুরি হয়েছে ৮০ শতাংশ আর মার্চের বেতন খুব একটা পাননি শ্রমিকরা। বিজিএমইএর সাবেক জ্যেষ্ঠ সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০ রোজার মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও বোনাস ৮০ শতাংশের বেশি কারখানার মালিকরা পরিশোধ করেছেন। বাকিগুলো নিয়েও সংকটের আশঙ্কা করছেন না তিনি।
আমরা চাই না সারা বছর কাজ করার পর ঈদের আগে শ্রমিকরা বেতন-বোনাসের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসুন। এর আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত।

সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে
- নির্বাচনের দাবি জোরালো হচ্ছে

অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রতিদিন মিটিং, মিছিল, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ আরো কিছু রাজনৈতিক দল দ্রুত সাধারণ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে।
মানুষ দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বিশেষ করে আগের তিনটি নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা আছে। দিনের ভোট রাতে হয়েছে, একজনের ভোট আরেকজন দিয়েছে—এমন অনেক অভিযোগ ছিল। কাজেই দেশের মানুষ, বিশেষ করে গত ১৫ বছরে যারা নতুন ভোটার হয়েছে, তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে উন্মুখ হয়ে আছে।
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনী প্রস্তুতি ও রাষ্ট্রের সংস্কারপ্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে চলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ বাস্তবায়নের দিকে যাবে, নাকি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে এগোবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপরই নির্ভর করছে। তবে সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ বাস্তবায়ন করে দ্রুত নির্বাচনে যেতে পারে সরকার। কারণ রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যেসব প্রস্তাব রেখেছে, তাতে ইতিবাচক জবাবের সঙ্গে ভিন্নমতেরও প্রকাশ ঘটছে। সে ক্ষেত্রে সংস্কার প্যাকেজ সংক্ষিপ্ত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন করার সময়সীমা অতিক্রম করতে চায় না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। গত ১০ মার্চ ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই সময়সীমা যাতে পার না হয় সে জন্য ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরাও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
দেশের মানুষ চায়, দ্রুত গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসুক। আবার অস্থিতিশীলতাও কাম্য নয়। এই অবস্থায় অতি জরুরি সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

সহিংসতা কাম্য নয়
- হঠাৎ উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ

দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রেখে এসেছে। এখনো তারা একই ভূমিকায় রয়েছে। তারা চায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আগামী নির্বাচন হোক সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিটি পদক্ষেপে যেন জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ অনেক রাজনৈতিক দলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মানুষ চায় গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশ এগিয়ে যাক। সহিংসতা কারোই কাম্য নয়। এই অবস্থায় সবারই উচিত সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। যেকোনো মূল্যে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে।

কঠোর অভিযান চালাতে হবে
- রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ছড়িয়ে পড়ছে

রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, সংকট নানামুখী ডালপালা বিস্তার করছে। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের তৎপরতা ক্রমেই প্রকাশ্য হচ্ছে। খুনাখুনি লেগেই আছে।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পৃথক অভিযান চালিয়ে আরসা নেতা আতাউল্লাহসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লে. কর্নেল আশিকুর রহমান গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, আরসার রয়েছে বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার।
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র তৎপরতায় সাধারণ রোহিঙ্গারা সব সময় তটস্থ থাকে।
আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে আরো সক্রিয় হতে হবে। ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে হবে। সশস্ত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতা সর্বোচ্চ কঠোরতায় দমন করতে হবে। প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে। চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে সর্বোচ্চ কড়াকড়ি আরোপ করা প্রয়োজন।