ফরিদপুর হিমাগারে আলু রাখতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। তারা গরমে আলু নষ্টের আশঙ্কা করছেন। বাইরে ট্রাকের দীর্ঘ সারি নিয়ে অপেক্ষার কারণেই আলু নষ্টের এ আশঙ্কা তাদের।
হিমাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, অধিক ফলন ও একইসঙ্গে সবাই আলু নিয়ে আসার কারণে এ বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে।
ইতিমধ্যে ৬০ হাজারের বেশি বস্তা আলু হিমাগারে নেওয়া হয়েছে। এখনো যারা অপেক্ষমান রয়েছেন তাদের আলুও নেওয়া হবে।
জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী হিমাগারে আলু রাখার জন্য প্রতিবছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বুকিং দিতে হয়। আলু রাখার মৌসুম মার্চ মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত।
ফরিদপুর ছাড়াও এ হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেন গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, দিনাজপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।
আলু ছাড়াও ফল ব্যবসায়ীরা সারা বছরই কিছুদিনের জন্য বিভিন্ন ফল সংরক্ষণ করেন। সুবিধামতো সময়ে আবার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু ও ফল বিক্রির জন্য নিয়ে যান।
হিমাগার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে গোয়ালচামট এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৯৯৫ সালে ‘ফরিদপুর হিমাগার লিমিটেড’ নামে হিমাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই হিমাগারটির ধারণক্ষমতা রয়েছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার বস্তা। প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি করে আলু রাখতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবসায়ীরা বস্তাপ্রতি ৪০৫ টাকা হারে ভাড়া প্রদান করেন।
সোমবার (১৭ মার্চ) বিকেলে হিমাগার ঘুরে দেখা যায়, ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে হিমাগার ফটকের সামনে ট্রাক্টর, ভটভটি, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে আলু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী ও কৃৃষকরা। হিমাগারে রাখার জন্য সেখানে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
কেউ কেউ তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন। আগতদের অধিকাংশ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে এসেছেন। পাঁচ-ছয়দিন ধরে অপেক্ষা করেও আলু সংরক্ষণ করতে না পেরে হতাশায় পড়ছেন তারা।
এ বছর বুকিং দিয়েও আলু রাখতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাদের আশঙ্কা, প্রচণ্ড গরমে ট্রাকবোঝাই আলু নিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকায় নষ্ট হতে পারে ট্রাকে রাখা আলু।
ফরিদপুর হিমাগারে আলু রাখার জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে আসা সেলিম মোল্লা নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘পাঁচদিন আগে ১৩ টন আলু নিয়ে ফরিদপুর এসেছি। অপেক্ষা করতে করতে এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এখন ভয় পাচ্ছি ট্রাকে রাখা আলু প্রচণ্ড গরমে পচন না ধরে যায়।’
ফরিদপুর হিমাগারের ম্যানেজার রুস্তুম মোল্লা জানান, ব্যবসায়ী ও কৃষকরা বছরের মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে আলু সংরক্ষণ করেন। আলু ছাড়াও ফল ব্যবসায়ীরা সারা বছরই অল্পদিনের জন্য বিভিন্ন ফল সংরক্ষণ করে রাখেন। সুবিধামতো সময়ে আবার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু ও ফল বিক্রির জন্য নিয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আনলোডের শ্রমিক সংখ্যা কম। যে কারণে দূর থেকে আসা ট্রাকগুলো থেকে আমরা পর্যাপ্ত আলু আনলোড করতে পারছি না। তবে আশা করছি, আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে যে গাড়িগুলো অপেক্ষায় রয়েছে সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করতে পারব।’