প্রতিহত করতে হবে

  • সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা
শেয়ার
প্রতিহত করতে হবে

সেনাবাহিনী একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করা থেকে শুরু করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার যেকোনো প্রচেষ্টায় নিজেদের জীবন বাজি রেখে সেনা সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশের অভ্যন্তরীণ যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতেও একটি সংঘবদ্ধ বাহিনী হিসেবে সেনাবাহিনীর ভূমিকা থাকে সবার আগে। তাই কোনো দেশকে অস্থিতিশীল করতে হলে সে দেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার চেষ্টা চালায় শত্রুপক্ষ।

আমাদের মনে রাখতে হবে, সেনাবাহিনী দুর্বল হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রধান প্রতিবেদনে তেমনই কিছু অপচেষ্টার উল্লেখ পাওয়া যায়, যা জাতির জন্য, দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো, বিতর্ক সৃষ্টির অপচেষ্টার অনেক খবর সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এসেছে। দুরভিসন্ধিমূলক অপচেষ্টার সমালোচনাও করেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নিজেও বলেছেন, একটা কমন জিনিস আমি দেখতে পাচ্ছি, সেনাবাহিনী এবং সেনাপ্রধানের প্রতি বিদ্বেষ কারো কারো। কিন্তু কী কারণে, আজ পর্যন্ত আমি এটা খুঁজে পাইনি। ওই দিন সেনাপ্রধান আরো বলেন, আমরা হচ্ছি একমাত্র ফোর্স, যেটা আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, দাঁড়িয়ে আছি প্ল্যাটফর্মে। অবকোর্স নেভি অ্যান্ড এয়ারফোর্স।
নেভি, এয়ারফোর্স উই অল। আমাদের সাহায্য করেন, আমাদের আক্রমণ করবেন না। আমাদের অনুপ্রাণিত করেন, আমাদের উপদেশ দেন। আমাদের প্রতি আক্রমণ করবেন না। উপদেশ দেন, আমরা অবশ্যই ভালো উপদেশ গ্রহণ করব।
আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই এবং দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

দুঃখজনক যে সেনাপ্রধানের অনুরোধেও ঐক্য বিনষ্টকারীদের সেই সব অপচেষ্টা থামেনি। কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বেশ কিছুদিন ধরেই সেনাপ্রধান সম্পর্কে কটূক্তি ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বিস্ময়করভাবে নিজের ফেসবুক পোস্টে  ক্যান্টনমেন্টের চাপ-এর কথা বলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন। তবে হাসনাতের এই বক্তব্য তাঁর দলের অনেকেই সমর্থন করতে পারেননি। এদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার রেখে যাওয়া প্রেতাত্মারা দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি পাল্টে ফেলতে চাচ্ছে। বিভিন্নভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে জনগণকে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনী বিরোধী আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেশে বিভাজন তৈরি করতে পারে এবং কৌশলগতভাবে রাষ্ট্রকেই দুর্বল করতে পারে। ফলে দেশ এখন এক কঠিন ও জটিল সময় পার করছে।

সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে একটি পক্ষের আক্রমণাত্মক বক্তব্য ও বিষোদগার অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত ঘটনা। আমরা চাই, দেশের স্বার্থে এ ধরনের অপচেষ্টার দ্রুত অবসান হবে। সেনাবাহিনীকে সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এই ধারা অব্যাহত থাক

    প্রবাস আয়ের রেকর্ড
শেয়ার
এই ধারা অব্যাহত থাক

অর্থনীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য একটি বড় সুখবর হচ্ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়ের ক্রমাগত বৃদ্ধি। রেমিট্যান্সযোদ্ধারা বৈধ পথে ক্রমেই বেশি করে অর্থ পাঠাচ্ছেন। ফলে প্রতি মাসেই বাড়ছে প্রবাস আয়ের পরিমাণ। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঈদের আগে চলতি মাসের প্রথম ২৬ দিনে ২৯৪ কোটি ডলারের প্রবাস আয় এসেছে।

শেষ দুই দিনে এসেছে ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এতে প্রথমবারের মতো তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার যে প্রবাস আয় এসেছে, তা এই হিসাবে ধরা হয়নি।

নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্রমেই বেশি করে রেমিট্যান্স আসছে।

সরকার রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। এসব কারণে প্রবাসীরাও বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। একই সঙ্গে কমেছে হুন্ডি ব্যবসা ও অর্থপাচার। খোলাবাজারের মতোই এখন ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে।
আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও পাচ্ছেন প্রবাসীরা। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আরো বেশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ। কারণ এ সময় প্রবাসীরা দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের কাছে কিছুটা বেশি পরিমাণে অর্থ পাঠান। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সব মিলিয়ে প্রবাস আয় এসেছিল ২৫২ কোটি ডলার। এ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৩২ লাখ ডলার এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাস আয় এসেছে ১৬৬ কোটি ডলার। চার দিন পর অর্থাৎ ১৯ মার্চে প্রবাস আয় দাঁড়ায় ২২৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু ১৯ মার্চ এক দিনেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার। আবার ১ থেকে ২২ মার্চ তথা মাসের প্রথম ২২ দিনে প্রবাস আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪৩ কোটি ডলার, যা ২৪ মার্চে বেড়ে ২৭০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ২৬ দিনে আয় বেড়ে হয় ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার করে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১৯৭ কোটি ডলার; বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৯.৪৯ শতাংশ।

আমরা মনে করি, বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসাকে আরো নানাভাবে উৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি হুন্ডি ব্যবসার দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও দক্ষ জনশক্তি প্রেরণে আরো বেশি জোর দিতে হবে।

মন্তব্য

দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিন

    থেমে নেই মুদ্রাপাচার
শেয়ার
দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিন

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে একটি প্রধান বাধা হচ্ছে বিদেশে মুদ্রাপাচার। মুদ্রাপাচার রোধে অনেক আলোচনা হলেও কাজের কাজ প্রায় কিছুই হয় না। ফলে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে মুদ্রাপাচারের পরিমাণ। মুদ্রাপাচার রোধের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৭৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পাচার হয়। পাচার হয় আরো অনেক উপায়ে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেটের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ফকর ব্রাদার্সের দুই কর্ণধারের বিরুদ্ধে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থপাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়লা ও পাথর আমদানির আড়ালে প্রথমে টাকা পাচার করেছেন, পরে সেই টাকায় কিনেছেন লোভনীয় গোল্ডেন ভিসা
জুমেইরাহ ভিলেজ সিটিতে যৌথভাবে গড়েছেন ৩৩ তলার বিশাল অট্টালিকা। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩৯৪ কোটি টাকা। এই সম্পদের প্রকৃত তথ্য আয়কর নথিতে গোপন করে কর ফাঁকিও দিয়েছেন অর্ধশত কোটি টাকা।

জানা যায়, অর্থপাচারে অভিযুক্তরা হলেন ফকর ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ ও তাঁর ছেলে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান।

অনুসন্ধান বলছে, দুবাইয়ের জুমেইরাহ ভিলেজ সিটিতে (প্লট নম্বর ৬৮১৬৪৮১) প্রায় ২৯ কাঠা জায়গার ওপর ৩৩ তলাবিশিষ্ট সাফায়া ৩২ নামের একটি ভবন নির্মাণ করে দার আল কারামা নামের একটি রিয়েল এস্টেট কম্পানি। যৌথ অংশীদারির ভিত্তিতে এই কম্পানির মালিকানায় আছেন ফকর উদ্দিন ও ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান। এই ভবনে ২২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার সিঙ্গল বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের দামই বাংলাদেশি মুদ্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা থেকে শুরু। আছে দুই ও তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটও। অর্থপাচারের প্রমাণ পাওয়ায় এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) পিতা-পুত্রের কর ফাঁকি এবং দেশের সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ফকর ব্রাদার্স সংশ্লিষ্ট ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান বলেন, দুবাইয়ে সাফায়া ৩২ নামের প্রোপার্টি আমাদের বলা হচ্ছে। সেটি আসলে ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি। এই ভবন নির্মাণে বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। আমরা শুধু অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির পার্টনার হয়েছি, যে চুক্তি ২০২৪ সালের ২ জুলাই করা হয়েছে। সেই চুক্তিনামা আমাদের কাছে আছে। অর্থাৎ আয়কর আইন অনুযায়ী এখনো প্রোপার্টির বিস্তারিত আয়কর আইনে দেখানোর সুযোগ আছে। তাই এটিকে এখনই কর ফাঁকি বলা যাবে না।

বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত অর্থ পাচার করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, গত দেড় দশকেই প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। অতীতে পাচারবিরোধী বিভিন্ন সংস্থার তদন্তেও অনেকের নাম এসেছে। মুদ্রাপাচারে জড়িত অনেকের নাম পানামা পেপারসসহ আরো অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। কিন্তু পাচারের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ নেই বললেই চলে। আমাদের বিশ্বাস, মুদ্রাপাচার বিরোধী সব সংস্থা সমন্বিতভাবে উদ্যোগী হলে এ ধরনের আরো অনেক ঘটনাই বেরিয়ে আসবে। ফকর ব্রাদার্সের মুদ্রাপাচারের অভিযোগগুলোর দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি মুদ্রাপাচারের জমে থাকা মামলাগুলোর বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

 

মন্তব্য

তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

    মাটি মেশানো কয়লা খালাসের অপচেষ্টা
শেয়ার
তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

গরমের দিন এসে গেছে। তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। সরকার সেই চাহিদা পূরণ করবে কিভাবে, যদি প্রতিনিয়ত এমন ভয়ংকর জালিয়াতির ঘটনা ঘটতেই থাকে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সম্প্রতি কক্সবাজারের মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে দুটি জাহাজে বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানি করা হয়েছে। দুটি জাহাজেই কয়লার সঙ্গে মাটি মেশানো রয়েছে। কয়লা আনলোড করার সময় কয়লার সঙ্গে মাটি মেশানো থাকার বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে আনলোডে নিয়োজিত শ্রমিকদের। পরে একটি জাহাজের কয়লা আনলোডিং বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জানা যায়, কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত শ্রমিক লাগিয়ে অপর জাহাজের সব কয়লা আনলোড করে ফেলেছে। এখন আটকে দেওয়া জাহাজের কয়লা আনলোডের ব্যাপারেও জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছে।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় উন্নতমানের কয়লা। এর স্থলে মাটি মেশানো কয়লা দেওয়া হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে।

দেশে বিদ্যুতের সংকট তৈরি হবে। মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। সরকারও বিপাকে পড়বে। তার পরও এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটে কী করে? জানা যায়, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বন্দরে অবস্থান করছেন। তাঁরা ওরিয়েন্ট অর্কিড নামের জাহাজে থাকা মাটি মেশানো আরো ৪০ হাজার ৬৫০ টন কয়লা তদবির করে আনলোড করার কৌশল আঁটছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
গত ১৭ মার্চ ৬৩ হাজার টন মাটি মেশানো কয়লার চালান নিয়ে বন্দরের জেটিতে ভেড়ে ওরিয়েন্ট অর্কিড জাহাজ। বাকি কয়লা আগেই আনলোড করা হয়ে গেছে।

মেঘনা গ্রুপের এ ধরনের কর্মকাণ্ড নতুন নয়। অতীতেও তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অনেক অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, গত ২০ বছরে গ্রুপটির কর্ণধার অন্তত এক লাখ কোটি টাকা পাচার করেছেন, যার মধ্যে অন্তত ৮০ হাজার কোটি টাকাই আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। আর হাজার হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর ও ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ তো রয়েছেই। টাকা পাচারের বিষয়টি উচ্চতর তদন্তের জন্য একটি অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। একটি গোয়েন্দা সংস্থা, দুদক ও এনবিআরের তৈরি নথিপত্র থেকেও এসব তথ্য জানা গেছে।

বিপুল ব্যয়ে নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাতীয় সম্পদ। মাটি মেশানো ভেজাল কয়লা ব্যবহার করে এর ক্ষতি করা কোনোমতেই কাম্য নয়। কয়লা সরবরাহে জালিয়াতির যে অভিযোগ উঠেছে, তার দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। জনগণের অর্থে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির স্থায়িত্বের প্রয়োজনে ভেজাল কয়লার ব্যবহার বন্ধ রাখা জরুরি। আর এর নেপথ্যে যারা জড়িত, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

মন্তব্য

গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে

    ঈদ ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রাণসঞ্চার
শেয়ার
গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে

রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছিল। অনেক প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখে পড়েছিল। অনেকে ঠিকমতো কর্মচারীদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারেনি। প্রায় স্থবির অর্থনীতিতে অনেকটাই গতি এনে দিয়েছে ঈদের কেনাকাটা।

গতকাল কালের কণ্ঠে ঈদ উৎসব ঘিরে রাজধানীর বাজার ও শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে চলমান কেনাকাটার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জানা যায়, রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ক্রেতার উপস্থিতি বেড়েছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের ঈদে ক্রেতাসমাগম বাড়লেও বিক্রি এখনো গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম।

ঈদ যত নিকটবর্তী হচ্ছে, মার্কেটগুলোতে মানুষের ভিড় তত বাড়ছে।

কাপড়, জুতা, কসমেটিকস কিংবা গয়নার দোকানসবখানেই দেখা গেছে ক্রেতার চাপ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের বাজারে মূলত বিক্রি হয় নতুন পোশাক। পাশাপাশি জুতা, অর্নামেন্টস, প্রসাধনী, ঘর সাজানোর জিনিস এবং কিছু আসবাবও বিক্রি হয়। ঈদকেন্দ্রিক ক্রেতারা যে অর্থ ব্যয় করে, তার ৮০ শতাংশই যায় পোশাকের জন্য।
বাকি ২০ শতাংশ অর্থ অন্য পণ্যে ব্যয় হয়। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এক লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যবসা হয়েছিল। এর আগের বছর হয়েছিল এক লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। এবার তাদের অনুমান, ঈদকেন্দ্রিক বাণিজ্য দুই লাখ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।
কারণ শেষ দিকে কেনাকাটায় বেশ গতি এসেছে।

বর্তমানে দোকান, শপিং মল ছাড়াও ঈদের কেনাকাটা হচ্ছে ই-কমার্সে। সেখানেও গতি এখন পর্যন্ত অনেকটাই কম বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকের ডিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণ মানুষের হাতে টাকা কম। খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পোশাকে খরচ কমে গেছে। অনেকের চাকরি চলে যাওয়ায় তাঁদের পরিবার সংকটে আছে। এর প্রভাব পড়ছে ঈদের কোনাকাটায়। অনলাইনে এবার বেচাকেনা তুলনামূলকভাবে কম।

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, ধানমণ্ডি এলাকাসহ বেশ কয়েকটি শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে, ব্র্যান্ডের দোকানে ক্রেতার ভিড় বেশি ছিল। সাধারণত অভিজাত শপিং মল ও ব্র্যান্ডের দোকানগুলো থেকে পণ্য কেনে  বিত্তশালীরা। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে ছিল ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। ইয়োলো, জেন্টেল পার্ক, আড়ংসহ ব্র্যান্ডের দোকানগুলোর প্রতিটির কাউন্টারে বিল দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ফুটপাত বা ছোটখাটো মার্কেটগুলোতেও ক্রেতাদের উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেড়েছে। অনেকে ক্রেতা টানতে মূল্যছাড় দিচ্ছে। কোথাও কোথাও তা দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

আমরা আশা করি, ঈদ ঘিরে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে গতি এসেছে, তা স্থায়ী হবে। ঈদের ছুটিতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও গতি আসবে। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ সরকারকে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ