ঢাকা, সোমবার ০৭ এপ্রিল ২০২৫
২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, সোমবার ০৭ এপ্রিল ২০২৫
২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৬

শুল্ক কমাতে আলোচনা করুন

  • বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় শুল্কারোপ
শেয়ার
শুল্ক কমাতে আলোচনা করুন

এমনিতেই নানা সংকট মোকাবেলা করছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত। এর ওপর নতুন সংকট হয়ে এসেছে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি। বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং মার্কিন শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে গত বুধবার বাংলাদেশসহ কিছু দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে নেওয়া পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে।

এত দিন গড়ে এই হার ছিল ১৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং ভোক্তারা বাংলাদেশি পণ্য কেনা কমিয়ে দেবে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিও কমে যাবে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, বাংলাদেশ এবং অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই পরিবর্তন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এমন একটি অনিশ্চিত ব্যবস্থায় কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টিকে বিনা মেঘে বজ্রপাত বলে মন্তব্য করেছেন নিট পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেছেন, এর আগে অন্য দেশগুলোকে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের জন্য রপ্তানিতে যে বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, নতুন সিদ্ধান্তে সেটি বড় ধরনের ধাক্কা খেল।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, আকস্মিক এই শুল্ক আরোপের ফলে দেশের পণ্য রপ্তানি মন্থর হয়ে আসতে পারে। শুল্কজনিত চাপ সামলাতে না পারলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক, প্রায় ৯০ শতাংশ। আর তার প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৮ শতাংশই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।

নতুন করে শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির কী হবে, সেটি নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে এরই মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। পোশাক রপ্তানিতে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর ওপরও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। চীনে বাড়ছে ৩৪ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ, বাংলাদেশে ৩৭ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২ শতাংশ, ভারতে ২৬ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ইস্যু সমাধানে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে দৃঢ় আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছতে পারব। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুল্কহার বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্রের স্বার্থে দ্রুত করণীয় নির্ধারণ করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির দিকে জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। অনেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত কর কমিয়ে দেওয়া এবং টিকফাসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অবিলম্বে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প যেন কোনোভাবেই বড় ক্ষতির মুখোমুখি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে

    বোরোতে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা
শেয়ার
প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে

চালের প্রধান সরবরাহ আসে বোরো ধান থেকে। আর এই ধান সেচ, সার ও পোকা দমনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, দেশের অনেক জেলায় দিনে তীব্র গরম, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। আবার রাতে শীত অনুভূত হয়।

ভোরবেলা থাকছে কুয়াশাচ্ছন্ন। এক সপ্তাহ ধরে ৪০টি জেলায় মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আবহাওয়ার এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে দেশের ১৮টি জেলার ধানক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বোরোর উৎপাদন কমে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার বা ইউএসডিএ) বৈদেশিক কৃষিসেবা বিভাগের (এফএএস) ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রিকালচারাল প্রডাকশন শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধানের আবাদ কমে যাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে এবার চালের উৎপাদন চার লাখ টন কম হতে পারে। খবরটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর মধ্যে স্থানীয় কৃষিবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ার এবং উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়ার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জমিতে পানি না থাকলে এবং তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে ধানের পরাগায়ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এই অবস্থায় বোরো ধানে নিরবচ্ছিন্ন সেচের ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এবার ৫০ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে খরাপ্রবণ ১৮ জেলায় ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৭ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা মোট আবাদি জমির প্রায় ৩০ শতাংশ। ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশোর।
ফলে এসব এলাকায় ধানের ফলনে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

বোরো ধানের বিপর্যয় রোধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিতে হবে। সেচ, সার ও কীটনাশকের যেন কোনো সংকট না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

    বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ
শেয়ার
কার্যকর পদক্ষেপ নিন

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ঘাটতি বাণিজ্য আছে এমন দেশগুলো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নানা মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব পণ্য রপ্তানি হয় বা যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে, সেসবের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর গড়ে ৮৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শুধু তৈরি পোশাকই রপ্তানি হয় ৭৫০ কোটি ডলারের।

আর বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। তাই বিষয়টি সরকার, ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকদের কাছে বড় ভাবনার বিষয় হয়ে উঠেছে। অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে রীতিমতো বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সে পথে না হেঁটে উল্টো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫টি পণ্যে শুল্ক ছাড় দিতে পারে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বাংলাদেশ বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কহার কমানোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি প্রধান প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য আমদানি করে, সেসব পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

বিষয়টি তাদেরও বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে। জানা যায়, ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজেদের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ধরে রাখার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে বড় ধরনের শুল্ক ছাড় দিতে যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, তারা অনেক মার্কিন পণ্যে শতভাগ শুল্ক ছাড় দেবে। এরপর আলোচনা করে তাদের পণ্যে শুল্ক কমাবে। আর বাংলাদেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিযোগ্য কিছু পণ্যের ওপর শুল্কছাড়ের একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে।
এটি এখন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে রয়েছে অনুমোদনের জন্য। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের ঘোষণার পর শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পৃথক প্রস্তাব দিয়েছে এনবিআর ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এনবিআর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ১০ থেকে ১২টি পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া বিডার পক্ষ থেকেও কিছু প্রস্তাব এসেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সরকারি দুটি সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি পণ্যের ওপর শুল্কহার কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারে। শ্রমঘন এই শিল্পে কাজ করে ৪০ লাখের বেশি মানুষ, যাদের বেশির ভাগই নারী। তাই তৈরি পোশাক খাতের ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব পদক্ষেপই নিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছতে পারব। প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, আমরা শিগগিরই কিছু ব্যবস্থা নেব। ভয় পাওয়ার, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

আমরাও মনে করি, সরকার সময়মতো সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেবে, যাতে আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে এবং আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার ওপর আরো জোর দিতে হবে।

মন্তব্য

শুল্ক কমাতে আলোচনা করুন

    রপ্তানিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
শেয়ার
শুল্ক কমাতে আলোচনা করুন

বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে। আর এর একটি বড় অংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে বাংলাদেশ বছরে গড়ে ৮৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে শুধু তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৭৫০ কোটি ডলারের।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ আরো অনেক দেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৩৭ শতাংশ, চীনে ৩৪ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৪৪ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২ শতাংশ, ভারতে ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা খুবই বেকায়দায় পড়বে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য নেয় তার ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্কারোপের ফলে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প।

চাপ সামলাতে না পারলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের অধিকার ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই খাতে কাজ করে ৪০ লাখের বেশি মানুষ, যাদের বেশির ভাগই নারী। শ্রমিক নেতাদের মতে, অতিরিক্ত শুল্কারোপের ফলে এই শিল্পে সংকট তৈরি হলে প্রথমেই তার শিকার হবেন দরিদ্র শ্রমিকরা।
অতীতেও দেখা গেছে, যখনই সংকট সৃষ্টি হয়, তখনই শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়। শ্রমিকদের মজুরি কাটছাঁট করা হয়। মালিকরা হয়তো সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষি করে কিছু সুবিধা আদায় করে নিতে পারবেন, কিন্তু শ্রমিকদের দর-কষাকষির সুযোগও কমে যাবে। অবশ্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ইস্যু সমাধানে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে। তিনি বলেছেন, আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি।
যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছতে পারব।

আমরাও মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনীতির পাশাপাশি ৪০ লাখ সরাসরি শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোর স্বার্থে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে এবং আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার ওপর আরো জোর দিতে হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্ক আরো নিবিড় হোক

    ইউনূস-মোদি বৈঠক
শেয়ার
সম্পর্ক আরো নিবিড় হোক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে গত শুক্রবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককের সাংগ্রিলা হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি ছাড়াও সীমান্ত হত্যা বন্ধ, গঙ্গার পানিচুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি, তিস্তার পানিচুক্তিসহ আরো কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। দুই সরকারপ্রধানের মধ্যে ৪০ মিনিট স্থায়ী এই আলোচনা ছিল অত্যন্ত খোলামেলা, ফলপ্রসূ এবং গঠনমূলক।

বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে গঠিত হয় বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক)। বিমসটেকের সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটান। জোটের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলন গত ২ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিমসটেকের মন্ত্রী পর্যায়ের ২০তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে বঙ্গোপসাগরে বাণিজ্য ও ভ্রমণ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি সই করেছে সদস্য দেশগুলো। এর ফলে সাত দেশের মধ্যে সমুদ্র পরিবহনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার এক নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে মনে করছেন আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা।

দুই নেতার মধ্যকার বৈঠক প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের দুটি দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

১৯৭১ সালে আমাদের কঠিন সময়ে ভারত সরকার ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ। বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস সাত সদস্য দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের সমর্থন চান। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন জানান। নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। বৈঠকের পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও এক্সে পোস্ট করেছেন নরেন্দ্র মোদি।
সেখানে তিনি বলেছেন, আমি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি এবং গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম রোধে ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য আমাদের গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি অন্তর্ভুক্তিমূলক, প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

প্রতিবেশী দুই দেশের সরকারপ্রধানদের এই বৈঠক সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যে বৈঠক হয়েছে, তা দুই দেশের সম্পর্কে আশার আলো তৈরি করেছে। আমরাও মনে করি, প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমেই আরো নিবিড় হবে এবং পারস্পরিক কল্যাণে হাতে হাত মিলিয়ে দুই দেশের এগিয়ে যেতে হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ