এমনিতেই নানা সংকট মোকাবেলা করছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত। এর ওপর নতুন সংকট হয়ে এসেছে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি। বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং মার্কিন শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে গত বুধবার বাংলাদেশসহ কিছু দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে নেওয়া পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে।
শুল্ক কমাতে আলোচনা করুন
- বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় শুল্কারোপ

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ এবং অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই পরিবর্তন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এমন একটি অনিশ্চিত ব্যবস্থায় কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টিকে বিনা মেঘে বজ্রপাত বলে মন্তব্য করেছেন নিট পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেছেন, এর আগে অন্য দেশগুলোকে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের জন্য রপ্তানিতে যে বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, নতুন সিদ্ধান্তে সেটি বড় ধরনের ধাক্কা খেল।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক, প্রায় ৯০ শতাংশ। আর তার প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৮ শতাংশই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ইস্যু সমাধানে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে দৃঢ় আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছতে পারব।’ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুল্কহার বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্রের স্বার্থে দ্রুত করণীয় নির্ধারণ করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির দিকে জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। অনেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত কর কমিয়ে দেওয়া এবং টিকফাসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অবিলম্বে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প যেন কোনোভাবেই বড় ক্ষতির মুখোমুখি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
সম্পর্কিত খবর

প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে
- বোরোতে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

চালের প্রধান সরবরাহ আসে বোরো ধান থেকে। আর এই ধান সেচ, সার ও পোকা দমনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, দেশের অনেক জেলায় দিনে তীব্র গরম, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। আবার রাতে শীত অনুভূত হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার বা ইউএসডিএ) বৈদেশিক কৃষিসেবা বিভাগের (এফএএস) ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রিকালচারাল প্রডাকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধানের আবাদ কমে যাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে এবার চালের উৎপাদন চার লাখ টন কম হতে পারে। খবরটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর মধ্যে স্থানীয় কৃষিবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ার এবং উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়ার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জমিতে পানি না থাকলে এবং তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে ধানের পরাগায়ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বোরো ধানের বিপর্যয় রোধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিতে হবে। সেচ, সার ও কীটনাশকের যেন কোনো সংকট না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

কার্যকর পদক্ষেপ নিন
- বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ঘাটতি বাণিজ্য আছে এমন দেশগুলো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নানা মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব পণ্য রপ্তানি হয় বা যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে, সেসবের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর গড়ে ৮৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শুধু তৈরি পোশাকই রপ্তানি হয় ৭৫০ কোটি ডলারের।
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি প্রধান প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য আমদানি করে, সেসব পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারে। শ্রমঘন এই শিল্পে কাজ করে ৪০ লাখের বেশি মানুষ, যাদের বেশির ভাগই নারী। তাই তৈরি পোশাক খাতের ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব পদক্ষেপই নিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছতে পারব।’ প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা শিগগিরই কিছু ব্যবস্থা নেব। ভয় পাওয়ার, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
আমরাও মনে করি, সরকার সময়মতো সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেবে, যাতে আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে এবং আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার ওপর আরো জোর দিতে হবে।

শুল্ক কমাতে আলোচনা করুন
- রপ্তানিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে। আর এর একটি বড় অংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে বাংলাদেশ বছরে গড়ে ৮৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে শুধু তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৭৫০ কোটি ডলারের।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য নেয় তার ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্কারোপের ফলে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প।
আমরাও মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনীতির পাশাপাশি ৪০ লাখ সরাসরি শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোর স্বার্থে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে এবং আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার ওপর আরো জোর দিতে হবে।

সম্পর্ক আরো নিবিড় হোক
- ইউনূস-মোদি বৈঠক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে গত শুক্রবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককের সাংগ্রিলা হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি ছাড়াও সীমান্ত হত্যা বন্ধ, গঙ্গার পানিচুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি, তিস্তার পানিচুক্তিসহ আরো কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। দুই সরকারপ্রধানের মধ্যে ৪০ মিনিট স্থায়ী এই আলোচনা ছিল অত্যন্ত খোলামেলা, ফলপ্রসূ এবং গঠনমূলক।
বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে গঠিত হয় বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক)। বিমসটেকের সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটান। জোটের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলন গত ২ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিমসটেকের মন্ত্রী পর্যায়ের ২০তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দুই নেতার মধ্যকার বৈঠক প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের দুটি দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
প্রতিবেশী দুই দেশের সরকারপ্রধানদের এই বৈঠক সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যে বৈঠক হয়েছে, তা দুই দেশের সম্পর্কে আশার আলো তৈরি করেছে। আমরাও মনে করি, প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমেই আরো নিবিড় হবে এবং পারস্পরিক কল্যাণে হাতে হাত মিলিয়ে দুই দেশের এগিয়ে যেতে হবে।