<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মূলে এটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে সংস্কার চাই। যদি আমরা স্বাধীনতা-পরবর্তী সংস্কারের দিকে তাকাই, ১৯৯১, ১৯৯৬-সহ কয়েকবারই গণ-আন্দোলনে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে অস্থিতিশীলভাবে। লক্ষ্য ছিল, রাষ্ট্রের সংস্কার হবে। কিন্তু সংস্কারের ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে বারবার একই ফাঁকফোকর চোখে পড়ে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চব্বিশের আন্দোলন আপাতদৃষ্টিতে পুরোপুরি গণ-আন্দোলন বলে মনে হলেও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী কৌশল অনুযায়ী এতে সাড়া দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যদি পরবর্তী নির্বাচনেও এইসব দল পূর্ববর্তী সমস্যার সমাধান না করে এবং ক্ষমতায় এসে আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে থাকে, তাহলে জনগণ ও সরকারের মধ্যে একটি পাওয়ার ভ্যাকুয়াম তৈরি হবে, যা চব্বিশের আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। আগের সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে ক্রমাগত অবিশ্বাস ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাষ্ট্রের অস্থিতিশীলতা সংস্কারের জন্য প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="গণ-আন্দোলনে " height="522" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1.january/10-01-2025/mk/kk-M-10-06a.jpg" style="float:right" width="350" />১৯৯৬ সালে জনগণের চাহিদায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়। তবে ২০০১ সালের পর ক্ষমতাসীন দলগুলো এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শুরু করে। বিশেষ করে আওয়াামী লীগ সরকার ২০১১ সালে ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাপক আলোচিত বিষয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা এবং এই ব্যবস্থা বহাল রাখতে এর স্থায়ী রূপ প্রয়োজন, যাতে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকাকালে এটি পরিবর্তন বা বিলুপ্ত করতে না পারে। এ জন্য একটি শক্তিশালী আইনগত কাঠামো এবং রাজনৈতিক সমর্থনের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও জরুরি। যাঁরা এই সরকারের দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা কোন যোগ্যতায় এই দায়িত্ব পেয়েছেন তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হওয়া উচিত। এ ছাড়া একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়াও জরুরি। এ সরকার যাতে কোনোভাবেই দীর্ঘস্থায়ী বা পক্ষপাতদুষ্ট না হয় সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা দরকার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা তথা একটি পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে রাষ্ট্রটি পরিচালিত হতে  পারেনি। ক্ষমতাসীন দলগুলো প্রায়ই গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল করেছে এবং বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সুরক্ষা সীমিত করেছে। ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলো সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার সুযোগ পায় না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্ষমতাসীন প্রতিটি দল বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা, রাজনৈতিক গ্রেপ্তার এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এক ধরনের একপেশে শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির ও একচেটিয়া হয়ে উঠেছে, জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে এবং সরকারের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যথাযথ সুযোগ পায়নি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আসনকেন্দ্রিক নির্বাচনপদ্ধতি প্রার্থীদের নির্দিষ্ট এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দেয় বলে ক্ষমতার অপব্যবহারও বৃদ্ধি পায়। নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ অর্থের ব্যবহার এবং ভোটারদের উেকাচ দেওয়ার প্রবণতা ভোটের মূল্য নষ্ট করে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও বারবার প্রশ্ন উঠেছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে। প্রধানমন্ত্রী পদে কোনো ব্যক্তির দুইয়ের অধিকবার নির্বাচিত হতে পারাও  কর্তৃত্ববাদী শাসনের পথ প্রসারিত করে। সার্বিক এই অবস্থায় দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ শুধু নামেই টিকে আছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে ক্ষমতাকেন্দ্রিক মানসিকতা শুধু রাজনীতি ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়ই সীমাবদ্ধ নয়; সমাজের  ছোট থেকে বড় পরিসরেও এটি বহাল। ক্ষমতাকেন্দ্রিক মানসিকতা ও ঘুষের সংস্কৃতি একটি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুগ্রহপ্রাপ্তি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র কালচারে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি বা বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে বা সবখানেই ক্ষমতাকে মুখ্য করে দেখছে, যা মাঝে মাঝে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে। এ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বের প্রতি অতিরিক্ত ঝোঁক, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ঘুষের প্রবণতা বাড়ছে। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় সহায়তা বা সেবা পেতে ঘুষ দিতে বাধ্য হচ্ছে। ক্ষমতা অর্জনের জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং নৈতিকতাবিচ্যুতি শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, পুরো সমাজে বিভাজন ও দুর্বলতা তৈরি করছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে একটি দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।</span></span></span></span></p>