ঢাকা, সোমবার ০৭ এপ্রিল ২০২৫
২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, সোমবার ০৭ এপ্রিল ২০২৫
২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৬

ভারতকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ

  • মাসুদ পারভেজ, পুনে থেকে
শেয়ার
ভারতকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ
ভারতের সঙ্গে ম্যাচের আগে কঠোর অনুশীলনের ফাঁকে নিজের ব্যাটে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। ছবি : মীর ফরিদ

সন্ধ্যা ৬টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা ক্রমাগত পেছাতে থাকে। একটু পরপরই আইসিসির মিডিয়া ম্যানেজার মাইক্রোফোনে ঘোষণা দিয়ে যেতে থাকেন, ‘বাংলাদেশ দল রাস্তায় আছে। তাদের পৌঁছাতে আরেকটু দেরি হবে।’ এদিকে ডেডলাইন ঘনিয়ে আসতে থাকায় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বিরক্তি যখন চরমে, তখনই এসে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে ঢোকেন চন্দিকা হাতুরাসিংহে।

বিনীত ভঙ্গিতে জানালেন ভারতকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশঅনিচ্ছাকৃত বিলম্বের কারণও, ‘আজ আমাদের গাড়ি শুধু ফার্স্ট গিয়ারেই চলছিল!’

অফিস ছুটির সময়ে পুনে শহরের তীব্র যানজট ঠেলে অনেক দূরের স্টেডিয়ামে আসার পথে টিম বাস বিকলও হয় একবার। সব মিলিয়ে যাত্রাপথে ঢিমেতাল থাকলেও বাংলাদেশ দলের হেড কোচ জানেন, পরদিনই তাঁর দলের জন্য ‘গিয়ার’ বাড়ানো একরকম বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। জয় দিয়ে শুরু করলেও টানা দুই হারে বাংলাদেশ এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে আরেকটি হারে বিশ্বকাপে টিকে থাকার লড়াই কঠিন থেকে কঠিনতম হয়ে যেতে পারে। নিজেদের মাটিতে টানা তিন ম্যাচ জিতে উড়তে থাকা ভারত আজকের প্রতিপক্ষ বলে নিজেদের ফিরে পাওয়ার লড়াই হয়ে উঠেছে আরো কঠিন।

বিশ্ব ক্রিকেটে অবস্থান এবং প্রভাব-প্রতিপত্তিতে দুই দলের ব্যবধান এত যে তাদের ম্যাচকে ঘিরে লড়াইয়ের আবহই তৈরি হওয়ার কথা নয়। রেকর্ড-পরিসংখ্যানও তা-ই তুলে ধরে। এখন পর্যন্ত ৪০ বারের দেখায় ভারতের জয় যেখানে ৩১ ম্যাচে, সেখানে বাংলাদেশের আটটি। বিশ্বকাপে চারবারের দেখায়ও ভারত এগিয়ে ৩-১ ব্যবধানে।

তবে এসব তথ্যের সাধ্য কী যে ভারত-বাংলাদেশ লড়াইয়ের গভীরতা বোঝায়। সেই ২০০৭ বিশ্বকাপে ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে প্রথমবারের দেখায় ভারতের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া জয়ের এমন মহিমা যে এর পর থেকে এই দুই দলের দেখা হওয়াটা জমজমাট ম্যাচের সম্ভাবনাই জাগিয়েছে।

সময়ে একে একে ভারতের বিপক্ষে আরো সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ভারতকে হারিয়েছে, এশিয়া কাপের মতো বহুজাতিক আসরেও জিতেছে সম্প্রতি। ২০১৬-র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিততে জিততেও হেরে যাওয়ার বেদনায় নীল হয়েছে।

এর আগে ২০১৫-র ওয়ানডে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের আম্পায়ারিং বিতর্ক এই দুই দলের লড়াইয়ের আবেদন তুঙ্গে পৌঁছে দিয়েছে। তাদের লড়াইপূর্ব আবহ জমে যাওয়ার রসদের তাই অভাব নেই কোনো। তবে এবার এর সবই উধাও। ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ চার ওয়ানডেতে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও আলোচনাটি এমন যে বাংলাদেশ আজ জিতলে সেটি অঘটনই হবে।

ভারতীয় দলের ফাস্ট বোলিং কোচ পরশ মামব্রের গতকাল দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে তা নিয়ে প্রশ্নও হলো। ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের আগে-পরের কথায় বোঝা গেল, এই আসরে তাঁদের গত দুই ম্যাচের পারফরম্যান্সের নিক্তিতেই এখন সাকিব আল হাসানদের মাপা চলছে। তাতে দারুণ ছন্দে থাকা ভারতের সঙ্গে পার্থক্যটি এমন বড় হয়ে উঠেছে যে বাংলাদেশ যেন এক নিমেষেই নেমে গেছে আফগানিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের কাতারে। না হলে কেন সাকিবদের সম্ভাব্য জয়ে আগেই অঘটনের মোড়ক পরিয়ে দেওয়া হবে!

তবে এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দুটো অঘটনের নায়কদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার আছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ তা নিচ্ছেও। ভারতে আসার আগে টিম মিটিংয়ে নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড় বাস ডি লিড বলে এসেছিলেন, ‘চলো ভারত যাই এবং বিশ্বকে দেখিয়ে দিই যে আমরা ফেলে দেওয়ার মতো দল নই।’ সেটি তাঁরা দেখিয়েছেও। তবে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগ নামের বাছাই পর্ব তিনে থেকে শেষ করা বাংলাদেশের নতুন করে সে রকম কিছু দেখানোর নেই। আছে যা, সেটি কেবলই এই আসরে নিজেদের সামর্থ্য ও সক্ষমতা মেলে ধরার। পারবেন সাকিবরা?

হাতুরাসিংহে অন্তত পারার আশাই দেখালেন। সেই আশার পালে হাওয়া দিচ্ছে এই বিশ্বকাপের আফগান ও ডাচ রূপকথাও, ‘আমরা সবাই এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য অনুপ্রাণিত। গত সপ্তাহজুড়ে কী ঘটেছে, তা তো আপনারা জানেনই। বিশ্বকাপটি সত্যিই উন্মুক্ত হয়ে গেছে। ওদের (আফগানিস্তান ও নেদারল্যান্ডস) কাছ থেকে আমরাও অনুপ্রেরণা নিচ্ছি। এখনো আমাদের ছয়টি ম্যাচ বাকি। আমরা বিশ্বাস করি, এখান থেকে বাকি সব কয়টি ম্যাচই আমাদের পক্ষে জেতা সম্ভব। কালকের ম্যাচের জন্য এটিই আমাদের অনুপ্রেরণা।’

অবশ্য এই ম্যাচে সাকিব খেলবেনই, সংবাদ সম্মেলন থেকে সে নিশ্চয়তা দিয়ে বের হলেন না হাতুরাসিংহে। গতকাল বাংলাদেশ অধিনায়ক কেবল নিজের বাঁ ঊরুর এমআরআই স্ক্যান করানোর জন্য হোটেল থেকে বেরিয়েছিলেন। সন্ধ্যার অনুশীলনেও আসেননি। আজ সকালে তাঁর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার কথাও বলে গেলেন হেড কোচ। অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে নিয়ে প্রতিপক্ষকে অন্ধকারে রাখার রেওয়াজও ক্রিকেটে বহু পুরনো। হাতুরাসিংহেও সেই পথ অবলম্বন করলেন কি না, কে জানে। কারণ আগের দিন একই মাঠের অনুশীলনে লম্বা সময় ব্যাটিং করা সাকিবকে অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা যায়নি। হেড কোচ যদিও বললেন যে, ‘আমরা এখনো ওকে বোলিংটা করাইনি।’ চেন্নাইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের সময় চোট পাওয়া সাকিব কিন্তু পরে পুরো ১০ ওভারই বোলিং করেছিলেন!

আর হাতুরাসিংহে আজ যে ‘কমপ্লিট পারফরম্যান্স’ চাইছেন, সে জন্য নিজে খেলতে চাওয়া অধিনায়ককে বাইরে রেখে নামার অসম্পূর্ণতার সম্ভাবনাও সামান্যই। ‘গিয়ার’ বাড়াতেও তো এই অলরাউন্ডারকে চাই-ই চাই!

 

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ইউনূস-মোদির বৈঠক

শেয়ার

এসএসএফের সাবেক ডিজি মুজিবুরের ফ্ল্যাট-জমি জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
এসএসএফের সাবেক ডিজি মুজিবুরের ফ্ল্যাট-জমি জব্দ
মো. মুজিবুর রহমান

স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী তাসরিন মুজিবের নামে থাকা ফ্ল্যাটসহ ৭৯ শতক জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের নামে থাকা ৩৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে এক কোটি ৪৪ লাখ ৯৯ হাজার ২০০ টাকা রয়েছে।

গতকাল রবিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছেন।

জব্দ হওয়া সম্পদের মধ্যে মুজিবুর রহমানের নিজ নামে থাকা মিরপুরের মাটিকাটায় চার হাজার ৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে থাকা একটি প্লটসহ চার দলিলে খিলক্ষেত, মিরপুর, সাভার ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের জমি এবং স্ত্রীর নামে থাকা ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের সাহারা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট, ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের বাউনিয়া এলাকায় সাত দলিলে জমি রয়েছে। এ ছাড়া অবরুদ্ধ ব্যাংক হিসাবের মধ্যে মুজিবুর রহমানের ২৪টি ও তাঁর স্ত্রীর ১০টি হিসাব রয়েছে।

এদিন দুদকের উপপরিচালক মো. সিরাজুল হক জব্দ ও অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন।

দুদকের পক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, মুজিবুর রহমানের সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রাখার অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন। তাঁর বিরুদ্ধে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে অপরাধমূলক অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসাধু উপায়ে নিজ নামে এবং তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকানা অর্জন করে দখলে রাখা এবং বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা ও উত্তোলনের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন করে মানি লন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ দুর্নীতি ও ঘুষ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে তা রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তর করার অভিযোগ রয়েছে।
তিনি অবৈধ পন্থায় অর্জিত সম্পদ অন্যত্র বিক্রয় বা হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রচেষ্টায় রয়েছেন। এ কারণে তাঁর নিজ নামে, তাঁর স্ত্রী ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। তাঁদের স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাবসমূহ অবরুদ্ধ করা না গেলে বিচারকালে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। এতে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত মুজিবুর রহমান এসএসএফের মহাপরিচালক ছিলেন।

এরপর তাঁকে ময়মনসিংহে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি পদ থেকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর মুজিবুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়। এর আগে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মুজিবুর রহমান সেনা সদর দপ্তরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক ছিলেন।

মন্তব্য

হাছান মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রীর ৬৫ অ্যাকাউন্টে ৭২২ কোটি টাকা লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হাছান মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রীর ৬৫ অ্যাকাউন্টে ৭২২ কোটি টাকা লেনদেন
হাছান মাহমুদ

প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৭২২ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রী নূরান ফাতেমার বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলা দুটি করা হয়েছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রথম মামলায় হাছান মাহমুদকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় জ্ঞাত আয়ের উৎসর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এক কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তা দখলে রাখা এবং ৯টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আর দ্বিতীয় মামলায় নূরান ফাতেমা ও তাঁর স্বামী হাছান মাহমুদকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় পরস্পর যোগসাজশে জ্ঞাত আয়ের উৎসর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ পাঁচ কোটি ৫২ লাখ ৭৬ হাজার ৯০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তা দখলে রাখা এবং ৫৬টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৬৮৩ কোটি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৪ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা; মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) (৩) ধারা; দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলা দুটি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হয়, তাতে তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর আগের সরকারে তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই  সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা হাছান মাহমুদ, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছিল আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

ওই নির্দেশ সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিএফআইইউর নির্দেশে বলা হয়েছিল, মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, তাঁর স্ত্রী নূরান ফাতেমা ও মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদের ব্যক্তিগত ও ব্যাবসায়িক হিসাব জব্দ করতে হবে। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় ওই নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

মন্তব্য

ব্যাংক ও আর্থিক খাত ধ্বংসের হোতা লোটাস কামাল

জয়নাল আবেদীন
জয়নাল আবেদীন
শেয়ার
ব্যাংক ও আর্থিক খাত ধ্বংসের হোতা লোটাস কামাল

পতিত আওয়ামী সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল মাত্র পাঁচ বছরে ব্যাংক খাতকে গভীর খাদে নিক্ষেপ করেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মূল্যায়ন, তাঁর সময় ব্যাংকে নিয়ম-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে ব্যাংকঋণ প্রদানের ঘটনা ঘটেছে অহরহ। সেসব ঋণ এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা ছিল মোট ঋণের ১০.৩০ শতাংশ। আর তিনি যখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অবসরে যান তখন ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ গিয়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটিতে।

এর মধ্যে স্বল্প টাকায় ঋণ পুনঃ তফসিল, ঋণের টাকায় ঋণ পরিশোধ, ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত গ্রাহক থাকাসহ নানা রকম সুযোগ-সবিধা দিয়েছেন তিনি। তাঁর অর্থমন্ত্রী থাকার সময় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ৫১ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। সেই খেলাপি ঋণ এখন তিন লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি নিজ দপ্তরে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন, আর এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না।

কিন্তু নিজেই ঋণখেলাপি হয়ে বসে ছিলেন। ব্যাংকের তথ্য মতে, সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক লোটাস ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের মালিক আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল এবং স্ত্রী কাশমেরী কামাল। কিন্তু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ছিল মুস্তফা কামালের হাতে। সোনালী ব্যাংক থেকে কম্পানিটির ঋণের পরিমাণ এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর মাসিক কিস্তি ২৭ লাখ টাকা।
সে কিস্তি  নিয়মিত পরিশোধ না করায়  ঋণটি খেলাপি হয়ে পড়ে। তার পরও নিয়ম ভঙ্গ করেই কম্পানিটিকে ভালো গ্রাহক হিসেবে দেখিয়ে আসছিল সোনালী ব্যাংক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিষয়টি নজরে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিমের। শুধু লোটাস ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, খেলাপি হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত গ্রাহক বা আন-ক্লাসিফায়েড হিসেবে দেখানো হচ্ছিল আরো অনেক কম্পানিকে।

সূত্র জানায়, লোটাস কামালের বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা না নেওয়া হয় সে জন্য শাসানো হতো তদন্ত কর্মকর্তাদের। আওয়ামী লীগ  সরকারের পতনের পর গত ৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের এক অনুসন্ধানী দলের কর্মকর্তা শাজু এস হোসোইল ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ঘটনা ঠিক কভিডের আগে। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ইন্সপেকশনে গিয়েছিলাম ২০২০ সালের জানুয়ারির ১৯-২০ তারিখের দিকে। সেখানে লোন ক্লাসিফিকেশনের কনসোলিডেটেড সিএলের এক্সেল শিটে ফিল্টার করে দেখি অবজেক্টিভ ক্রাইটেরিয়ায় ক্লাসিফায়েড হওয়া লোন  আন-ক্লাসিফায়েড বানানো হয়েছে। প্রায় ১.৫-২ হাজার কোটি টাকার এই লিস্টে অনেক কম্পানির নাম। এই লিস্টের একটা কম্পানি ছিল লোটাস ইঞ্জিনিয়ারিং, যার অফিশিয়াল মালিক তখনকার অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের মেয়ে ও স্ত্রী। ঋণের বকেয়া  ১.৭৫ কোটি টাকা, আর  কিস্তি মাত্র ১৮ লাখ টাকার মতো। মাত্র ১৮ লাখের কিস্তি, তা-ও তিনি নিয়মিত পরিশোধ করেন না বলে সেটা সাব-স্ট্যান্ডার্ড বা অন্তত তিন মাস (অথবা ৯ মাস পরের সার্কুলার অনুযায়ী, মনে নেই) ধরে বকেয়া ছিল। মেমো দেওয়ার পর সোনালীর লোকজন অনেক হম্বিতম্বি করেছে, সময়ক্ষেপণ করেছে জবাব দেওয়ার। টিম লিডার বহলুল স্যারকেসহ আমাদের চেম্বারে ডেকে তখনকার এমডি ধমকের সুরে বলেছিলেন, এই বহলুল, এগুলা কি শুরু করলেন।

তিনি আরো লেখেন, কামাল সাহেবকে এর পরে খেলাপি ঋণ নিয়ে মিডিয়াতে বড় বড় কথা বলতে দেখতাম। এমনকি খেলাপি আর এক টাকাও বাড়বে না এমন বক্তব্যও দিতে শুনতাম। ওই সময়টায় আমি বলতাম, যে দেশের অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের টাকা দেন না, সে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমার কথা সত্যি হতে বেশি সময় নেয়নি। পালানোর তালিকায় উনার নাম সবার আগে দেখলাম। কেন? আপনারা এখন জানেন।

শেয়ারবাজার কারসাজি : ২০১০ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় লোটাস কামালের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ওঠে। তিনি তখন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। নানা অভিযোগ থাকার পরও শেখ হাসিনা সরকারের আমলে কোনো ধরনের শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি লোটাস কামালকে। অনেকের অভিযোগ, তাঁর সিন্ডিকেটের কারসাজিতে নিঃস্ব হয়েছেন শেয়ারবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। লোপাট করে নেওয়া হয়েছে তাঁদের পুঁজি।

২০১০ সালের শেয়ারবাজার কারসাজিতে তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামালের পকেটে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা গেছে বলে বিভিন্ন তদন্তে জানা যায়। শেয়ার জালিয়াতি করে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সালের ওই কেলেঙ্কারির পর কৃষি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে প্রধান করে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।

ব্যাংক হিসাব জব্দের আগেই সরানো হয় টাকা : গত ২২ আগস্ট আ হ ম মুস্তফা কামাল, তাঁর স্ত্রী কাশমেরী কামাল ও মেয়ে নাফিসা কামালের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে তাঁদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়। সূত্রের দাবি, দেশে-বিদেশে মুস্তফা কামাল ও তাঁর স্বজনের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। সরকার পতনের আগেই কামাল ব্যাংক, রাজধানীর বাসা-অফিস থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার সরিয়ে নিয়েছেন।

লোটাস কামালের বর্তমান দায় :  জানা যায়, এখনো সোনালী, পদ্মা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকে দায়-দেনা পরিশোধ বকেয়া রয়েছে মুস্তফা কামালের। দেনা পরিশোধ না করার পরও তাঁকে খেলাপি দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের এখনো লোটাস ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাঁচ হাজার ১৯৩ টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু এই তথ্য মানতে নারাজ সোনালী ব্যাংক লোকাল অফিস। ব্যাংক জানায়,  ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখায় এখনো ৯৯ লাখ টাকার এলসি বকেয়া রয়েছে মুস্তফা কামালের। ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর এলসি পরিশোধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ঋণটি বকেয়া রয়েছে। পদ্মা ব্যাংকে পর পর দুটি এলসি করে কোনো টাকা পরিশোধ করেননি সাবেক এই অর্থমন্ত্রী। প্রথম এলসিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ। যেখানে বকেয়ার পরিমাণ চার কোটি ৫০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় এলসি পরিশোধের শেষ তারিখ ছিল ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল। এখানেও চার কোটি ৫০ লাখ টাকা বকেয়া রেখেছেন কামাল। বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য চলতি দায়িত্বে থাকা পদ্মা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কাজী মো. তালহা জানান, তাঁদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা ছিল অনেক আগে। এখন কোনো ব্যবসাও নেই, আর বকেয়াও নেই। হয়তো কোথাও কোনো তথ্যগত ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ