এর মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেশি যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য কাজ করবে। তবে ৩৮ থেকে ৩৯টি সড়কের অবস্থা বেশ খারাপ। যেগুলো দ্রুত মেরামত করা দরকার।
ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে সম্প্রতি আয়োজিত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ঈদে এক কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ রাজধানী ছেড়ে যাবে আর ৩০ লাখের মতো মানুষ রাজধানীতে আসবে। এই দেড় কোটি মানুষের ঈদের আনন্দের যাতায়াত যানজটসহ নানা কারণে নিরানন্দের হয়ে যায়। এসব বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, ‘ভাঙ্গা সড়ক আর যানজট আমরা প্রত্যাশা করি না। যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি আমাদেরও ক্ষতি হয়। যানজট বেশি হলে ট্রিপ কমে যায়। ফলে শুরু থেকে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বলে আসছি সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে।’
উত্তরের পথে ১৩ কিলোমিটারের যানজটের আশঙ্কা
উত্তরের পথে ১৩ কিলোমিটারের যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত এবারও যানজট হতে পারে। কারণ, এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে উন্নয়নকাজ এখনো শেষ হয়নি। মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ফলে যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা থাকছেই। আবার উত্তরবঙ্গসহ ময়মনসিংহের প্রায় ২৩ জেলার পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করে এই মহাসড়কে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ১৮-২০ হাজার ছোট-বড় যান যমুনা সেতু দিয়ে পারাপার করে। তবে ঈদে যানবাহনের সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে ৫০ হাজার অতিক্রম করে। এতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, মহাসড়কে যান বিকল এবং দুর্ঘটনার কারণে ভোগান্তি তৈরি হয়।
তবে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ প্রশাসন ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত টাঙ্গাইল অংশে ৭ শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের যেসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা
ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, গোড়াই মিলগেট, যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর, ফেন্সিগেটের আগের অংশ, ফেন্সিগেট সার্ভিস লেন, মুলিবাড়ী আন্ডারপাসের আগে, কড্ডা ফ্লাইওভারের পশ্চিমে, কোনাবাড়ী আন্ডারপাসের আগে, হাটিকুমরুল পাঁচলিয়া বাসস্ট্যান্ড, হাটিকুমরুল ধোপাকান্দি ব্রিজ, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, হাটিকুমরুল বাজার, ঘুরকা বেলতলা, ভূঁইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ড, হোটেল হাইওয়ে অভি ভিলা, ষোলোমাইল, সিরাজগঞ্জ বাইপাস, জমজম দইঘর, বগুড়া বাজার থেকে সীমাবাড়ী কলেজ, পেন্টাগন হোটেল, ফুড ভিলেজ হোটেল, দাদপুর জামাই রোড, নিউ পাপিয়া হোটেল থেকে চাচা-ভাতিজা হোটেল, জোড়া ব্রিজ, চান্দাইকোনা গরুর হাট পর্যন্ত।
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের যেসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের কাচিকাটা টোলপ্লাজা, বনপাড়া বাইপাস, বনপাড়া বাজার, রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের বানেশ্বর বাজার, রাজশাহী, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা বটতলা থেকে মোনায়েম কন্সট্রাকশন, ছনকা বাজার, শেরপুর মডেল মসজিদের সামনে, নয়ামাইল বাজার, মাঝিরা বাজার, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানার বনানী বাসস্ট্যান্ড, শাকপালা, বগুড়া জেলার সদর থানার জিয়া মেডিক্যাল কলেজ গেটের সামনে, তিন মাথা রেল ক্রসিং, চার মাথা ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচে, বারোপুর বাসস্ট্যান্ড, মাটিডালি বিমানবন্দর মোড়, টিএমএসএসের সামনে, শিবগঞ্জ থানার মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মোকামতলা বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মায়ামনি চৌরাস্তা মোড় থেকে গোবিন্দগঞ্জ ব্র্যাক অফিস, গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী উপজেলা পোস্ট অফিস এবং শিল্পী রেস্তোরাঁ থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর পর্যন্ত পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা, পীরগঞ্জ উপজেলা বাস স্টপেজ থেকে সাসেক প্রকল্পের নির্মাণাধীন আন্ডারপাসের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত, বিশ মাইল, পীরগঞ্জ, রংপুর, বড় দরগাহ্ আন্ডারপাস, পীরগঞ্জ, রংপুর, শঠিবাড়ী আন্ডারপাস, শঠিবাড়ী বাজার এবং বাস স্টপেজ এলাকা, মিঠাপুকুর, রংপুরকে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের যানজটের গুরুত্বপূর্ণ স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভোগাবে সিঙ্গেল লেন
দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ১৮ কিলোমিটার এলাকা পড়েছে রূপগঞ্জ অংশে। এ ১৮ কিলোমিটার এলাকায় স্বাভাবিক সময়েও দীর্ঘ যানজট থাকে। ঈদ যাত্রা শুরু হলে যানবাহন চলাচল কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় যানজটও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এবারও সড়কের এই অংশের যানজটে ঈদ যাত্রায় চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সিঙ্গেল লেনের রাস্তা। চালকরা নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানোয় যানজট লেগে থাকে।’
অন্যদিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ অংশেও যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের গাড়িগুলো টার্মিনালে না রেখে রাস্তার ওপরে রেখে যাত্রী ওঠানামা করানোয় এবং তিন চাকার বাহন মহাসড়কে চলাচল করায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যস্ততম এই মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ থেকে দেবিদ্বার অংশে ঈদের সময় যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।
ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশেও যানজটে ভুগতে হতে পারে যাত্রীদের। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে কাজ বন্ধ থাকায় ভাঙাচুরা অংশে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে যানজট শুরু হয়েছে। তারাবো বিশ্বরোড, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, ভৈরব চৌরাস্তা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড, মাধবপুর, ওলিপুর রেলগেট, হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, দেবপাড়া বাজার, আউশকান্দি, শেরপুর ও গোয়ালাবাজার এবং শেরপুর টোলপ্লাজা এলাকায় প্রায় প্রতিদিন যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশে সাধারণত তুলনামূলক কম যানজট হয়। তবে এবার ছয় লেন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় মাধবদী, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, মরজাল ও বারৈচা—এই সাতটি পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ অংশের প্রায় ২২ কিলোমিটারজুড়ে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড, তারাবো বিশ্বরোড গোলচত্বর, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, বরপা, গার্মেন্টসের মোড় ও গাউছিয়া স্ট্যান্ডে যানজট পরিস্থিতির আরো জটিল হতে পারে।
ঈদ যাত্রায় যানজটের ভোগান্তির বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদ যাত্রায় যাতে মানুষের ভোগান্তি কম হয় সে চেষ্টা সব সময় আমাদের থাকে। এবারও আমরা সেই চেষ্টা করছি।’
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রূপগঞ্জ প্রতিনিধি।)