ঢাকা, শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫
৬ চৈত্র ১৪৩১, ২০ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫
৬ চৈত্র ১৪৩১, ২০ রমজান ১৪৪৬
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস

পাইলট নিয়োগে জালিয়াতি: বিমান বলছে নিয়মনীতির ব্যত্যয় হয়নি

  • ► তদন্ত কমিটি সম্প্রতি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। আজ এর ওপর শুনানির দিন ধার্য আছে
  • ► বিমান বলছে নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় হয়নি
মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
পাইলট নিয়োগে জালিয়াতি: বিমান বলছে নিয়মনীতির ব্যত্যয় হয়নি

দুই বছর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর বিমান উড্ডয়নের জন্য চুক্তিভিত্তিক ১৪ জন পাইলট নিয়োগে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি।  

পাইলট নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত বছর ১ মার্চ একটি ইংরেজি দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে পরে গত বছর আগস্টে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। রিটের প্রাথমিক শুনানির পর অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।

কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) মুহম্মদ আশরাফ আলী ফারুককে। সদস্য হিসেবে ছিলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন তাসমিন দোজা ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. মুকিত-উল-আলম মিঞা। তদন্ত  কমিটি সম্প্রতি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। আজ ২৯ মে এর ওপর শুনানির দিন ধার্য আছে।

এ ছাড়া পাইলট নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে বিমান বাংলাদেশের নিজস্ব তদন্তেও ঘটনার বিশদ উঠে এসেছে। দুটি প্রতিবেদনই কালের কণ্ঠর হাতে এসেছে। 

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে পাইলটদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ছিল। বিমানের তৎকালীন চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদ পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তবে অনিয়মে জড়িত বিমানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

 

পাইলট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অনিয়ম

পাইলট নিয়োগের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোয়িং ৭৭৭ ইআর-এ পাইলট সংকট ছিল। যে কারণে বিমান বাংলাদেশের ককপিট/কেবিন ক্রু সংক্রান্ত বিমান পরিচালনা পর্ষদের বিশেষ সাবকমিটির ষষ্ঠ সভায় বিভিন্ন বিমানে প্রয়োজনীয় পদ প্লেসমেন্ট, পদোন্নতি বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে পূরণ করার সিদ্ধান্ত হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের অপারেশনাল ম্যানুয়াল অনুযায়ী পাইলটসংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ফ্লাইট অপারেশনাল পরিদপ্তরের প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং শাখার ওপর ন্যস্ত। কিন্তু পাইলটসংকট নিরূপণে এ শাখার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

আর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই তৎকালীন চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদ ই-মেইল ও অন্যান্য মাধ্যমে বোয়িং-৭৭৭ ইআর বিমানের পাইলট নিয়োগের বিষয়টি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি পাইলটদের জানান। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে এ ধরনের যোগাযোগ নৈতিকতা পরিপন্থী। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর। বিমান বাংলাদেশের নির্দেশে ক্যাপ্টেন এ বি এম ইসমাইল ও ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি চূড়ান্ত করেছিলেন।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নানা ত্রুটিবিচ্যুতি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বোয়িং-৩৭৩ বিমানের ক্ষেত্রে টাইপ রেটেড ফার্স্ট অফিসার চাওয়া হয়। এরপর ২৮ নভেম্বর আরেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বোয়িং-৭৮৭ বিমানের ক্ষেত্রেও টাইপ রেটেড ফার্স্ট অফিসার চাওয়া হলেও বোয়িং-৭৭৭ বিমানের জন্য টাইপ রেটেড শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। আর ক্যাপ্টেন হিসেবে ২০০০ উড্ডয়ন ঘণ্টার বিপরীতে বিজ্ঞপ্তিতে মাত্র ৫০০ উড্ডয়ন ঘণ্টার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের অপারেশনাল ম্যানুয়াল পার্ট-ডি-এর ৩.৪.৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে বোয়িং-৭৭৭ বিমানের কো-পাইলট বা ফার্স্ট অফিসার হতে হলে যোগ্যতা হিসেবে বিগত দুই বছরে একজন পাইলটের কমপক্ষে ৩০০ উড্ডয়ন ঘণ্টা থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিজ্ঞাপনে এই শর্ত দেওয়া ছিল না।

তবে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর বিমানের জন্য চুক্তিভিত্তিক আটজন ক্যাপ্টেন ও ছয়জন ফার্স্ট অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। এই ১৪ জনের মধ্যে সাতজন বাংলাদেশ বিমানের সাবেক পাইলট ছিলেন। এই সাতজনের মধ্যে কেবল একজনের বোয়িং ৭৭৭ বিমান উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা ছিল। অন্য সাতজনের মধ্যে তিনজন বৃহদাকার বিমানের ক্যাপ্টেন ছিলেন। বাকি চারজনের বৃহদাকার বিমানের (বোয়িং-৭৭৭/৭৮৭, এয়ারবাস ৩৩০) অভিজ্ঞতা থাকলেও ক্যাপ্টেন হিসেবে অভিজ্ঞতা ছিল না।

এ ছাড়া নিয়োগ পাওয়া ১৪ জন পাইলটের মধ্যে ছয়জন ক্যাপ্টেন ও তিনজন ফার্স্ট অফিসার প্রশিক্ষণ শেষ করে নিয়মিত বিমান উড্ডয়ন করেছেন। বাকি পাঁচজনের মধ্যে ক্যাপ্টেন নাসিম ইবনে আহমেদ নিরাপত্তা ছাড়পত্র পেতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রশিক্ষণ চলাকালে বিমান তাঁর সঙ্গে নিয়োগ চুক্তি বাতিল করে। ক্যাপ্টেন আজিজুল হক ও ফার্স্ট অফিসার রেজওয়ান আহমেদ খান প্রশিক্ষণ শুরুর আগেই বিমান ছেড়ে চলে যান। ফার্স্ট অফিসার সাদিয়া আহমেদের শিক্ষা সনদ এবং আল মেহেদী ইসলামের প্রশিক্ষণ সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় বিমান তাঁদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। ফার্স্ট অফিসার সাদিয়া আহমেদই তৎকালীন চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের স্ত্রী। ফার্স্ট অফিসার হিসেবে নির্বাচিত কারোরই নিয়োগের তারিখের আগের দুই বছরে ৩০০ ঘণ্টা উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা ছিল না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এর ফলে তুলনামূলক কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটদের ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। চুক্তিভিত্তিক পাইলট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত শিথিল করার বিষয়ে বিমান বাংলাদেশের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল বেবিচক। বিমান বাংলাদেশ যে ব্যাখ্যা দেয় তা সন্তোষজনক ছিল না।

 

ক্যাপ্টেন সাজিদের ভূমিকা

ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদ এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি চূড়ান্ত করেছিলেন এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তৎকালীন চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদ পদাধিকারবলে আবেদনপত্র বাচাই কমিটির আহ্বায়ক ও মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আবেদনকারীদের মধ্যে ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কোনো কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি এবং ক্যাপ্টেন সাজিদও বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাননি। তিনি কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য হিসেবে স্ত্রীসহ অন্য প্রার্থীদের মূল্যায়ন করেছেন। একই সঙ্গে ক্যাপ্টেন সাজিদ বোয়িং-৭৭৭-এর একজন প্রশিক্ষক হলেও তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককে ফার্স্ট অফিসার সাদিয়া আহমেদের সিমুলেটর প্রশিক্ষণ চলার সময় প্রশিক্ষণ পরিদর্শন করেন।

 

ফার্স্ট অফিসার সাদিয়া-মেহেদীর জালিয়াতি

প্রতিবেদনে সাজিদ আহমেদের স্ত্রী সাদিয়া আহমেদের বিষয়ে বলা হয়েছে, মানবিক বিভাগ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করলেও তিনি বিজ্ঞান বিভাগের সনদ দাখিল করেছিলেন। বেসামরিক বিমান নীতিমালা, ১৯৮৪ ২৬(১)(খ) অনুসারে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) পাওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হতে হবে। গত বছর ২ মার্চ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সাদিয়ার জাল সনদ শনাক্ত করে। ১৯ মার্চ তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হলেও ২২ মার্চ ই-মেইলে সাদিয়া জানান, তিনি দেশের বাইরে আছেন। তাঁর কাছে সব প্রমাণাদি আছে। দেশে ফিরে তিনি সেসব দাখিল করবেন। পরে সাদিয়া ওই প্রমাণাদি দাখিল করেছেন কি না তা প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।

তবে বেবিচক গত বছর ৩০ মার্চ সাদিয়ার সিপিএল স্থগিত করে এবং ১৭ সেপ্টেম্বর বিমান বাংলাদেশ বেবিচককে জানায়, শিক্ষা সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় সাদিয়ার চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বেবিচকের তদন্তে সাদিয়া আহমেদ দোষী সাব্যস্ত হলে ২২ নভেম্বর তাঁর প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স (পিপিএল) ও কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) বাতিল করে। ২৬ নভেম্বর সাদিয়া আহমেদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের বেসামরিক বিমান চলাচল আইনে বিমানবন্দর থানায় মামলা করা হয়। ফার্স্ট অফিসার হিসেবে সাদিয়া আহমেদ থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককে সিমুলেটর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সে প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ বিমানের কত টাকা খরচ হয়েছিল এই প্রতিবেদনে তার উল্লেখ করা হয়নি।

ফার্স্ট অফিসার আল মেহেদী ইসলামের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেবিচকের সহকারী পরিচালক শিরিন সুলতানার স্বাক্ষর জাল করে মেহেদী এটিপিল গ্রাউন্ড সাবজেক্ট পরীক্ষার সনদ দাখিল করেন। পরে যাচাই করে দেখা যায় যে বেবিচক থেকে আল মেহেদী ইসলামের অনুকূলে সনদ ইস্যু করা হয়নি। নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৫ সাল থেকে এটিপিএল গ্রাউন্ড সাবজেক্টের ৯টি বিষয়ের মধ্যে শুধু একটি বিষয়ে তিনি কৃতকার্য হয়েছেন। গত বছর ১৯ মার্চ বেবিচক এ বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা চায়। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাঁকে ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়। পরে ই-মেইলে মেহেদী তাঁর কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা দেন। সেখানে তিনি বলেন, আর্থিক সংকট এবং চাকরির নিশ্চয়তার জন্য জাল সনদ জমা দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থী। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর বিমান বাংলাদেশ চিঠি দিয়ে বেবিচককে জানায়, আল মেহেদী ইসলামের নিয়োগ চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।

 

বিমান বাংলাদেশের বক্তব্য

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে বক্তব্য নিতে গত ৭ মে দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমানের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিমের কার্যালয়ে গিয়ে অপেক্ষা করেও তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। অপেক্ষার এক পর্যায়ে শফিউল আজিমের ব্যক্তিগত সচিব জানান, বিচারাধীন বিষয়ে তিনি কথা বলবেন না। (এদিকে, গত ২১ মে শফিউল আজিমকে পদোন্নতি দিয়ে ইসির সচিব করা হয়েছে)। 

তবে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে বিমান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি ব্যাখ্যা দাখিল করা হয়েছে। আট পৃষ্ঠার ব্যাখ্যায় বিমান বাংলাদেশ বলেছে, নিয়োগকৃত পাইলটরা বিশ্বমানের হওয়া সত্ত্বেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অনুমাননির্ভর অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশ করায় জনমনে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া নিয়োগ কার্যক্রমে নিয়মনীতির কোনো ব্যত্যয় হয়নি।

 

পাইলটদের সঙ্গে ক্যাপ্টেন সাজিদের যোগাযোগের ব্যাখ্যা

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে পাইলট নিয়োগ নিয়ে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি পাইলটদের সঙ্গে ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের যোগাযোগের বিষয়ে বিমান বাংলাদেশের বক্তব্য হচ্ছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটির বিস্তৃত প্রচারে এবং দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি পাইলটরা যাতে আবেদন করতে পারেন, সে জন্য বিমান ব্যবস্থাপনার নির্দেশে ক্যাপ্টেন সাজিদ ই-মেইলে যোগাযোগ করেছেন। এখানে অসৎ কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।

 

টাইপ রেটেড না চাওয়ার ব্যাখ্যা

বোয়িং-৭৭৭ বিমানের পাইলট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে টাইপ রেটেড না চাওয়ার ব্যাখ্যায় বিমান বাংলাদেশ বলেছে, বিমানের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখানে টাইপ রেটেড পাইলটদের আবেদনে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। ১৮ জন প্রার্থীর মধ্যে দুজন টাইপ রেটেড পাইলট ছিল।

 

উড্ডয়ন ঘণ্টা না চাওয়ার ব্যাখ্যা

এয়ার নেভিগেশন আদেশ (এএনও) (ওপিএস) এ-৩ এর ৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কো-পাইলট বা ফার্স্ট অফিসার পদে আবেদনের আগে বিগত দুই বছরে ৩০০ উড্ডয়ন ঘণ্টা থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। করোনাভাইরাস মহামারির জন্য বিশ্বব্যাপী ফ্লাইট বন্ধ থাকায় কোনো পাইলটের ৩০০ উড্ডয়ন ঘণ্টার অভিজ্ঞতা ছিল না। এমনকি করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বেবিচক অতি জরুরি সিমুলেটর প্রশিক্ষণের আবশ্যকতাও শিথিল করেছিল। ৩০০ উড্ডয়ন ঘণ্টার শর্ত দেওয়া হলে কোনো প্রার্থী পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। এতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হতো।

তবে বাংলাদেশ বিমানের চিফ ফিন্যানশিয়াল অফিসার নওশাদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মন্তব্য অংশে বলা হয়েছে, ১৪ জন পাইলট নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও সরকারি তহবিল তছরুপ করা হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থায় অদক্ষ, অপেশাদার বৈমানিক নিয়োগের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট সেফটিকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

এসব কর্মকাণ্ডে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক ফ্লাইট ক্যাপ্টেন মো. সিদ্দিকুর রহমান, চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদ, হেড অব শিডিউলিং ক্যাপ্টেন শাহাদাত হোসাইনসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

জানতে চাইলে রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে পাইলট নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির সত্যতা উঠে এলেও বেশ কিছু অসংগতি রয়েছে। ক্যাপ্টেন সাজিদসহ যাঁরা এই কর্মকাণ্ডে জড়িত তাঁদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা আদৌ নেওয়া হবে কি না তা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। এই বিষয়গুলো এরই মধ্যে আদালতের নজরে এনেছি। পরবর্তী শুনানিতে আদালতের মাধ্যমে লিখিতভাবে এ বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা চাইব। এর মধ্যে বিচারাধীন এই রিটে ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদ পক্ষভুক্ত হয়েছেন বলে জানান আইনজীবী তানভীর আহমেদ।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ভোট বিলম্বিত হবে না : ড. ইউনূস

    বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর : উপদেষ্টা পরিষদ
বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
ভোট বিলম্বিত হবে না : ড. ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং কোনো দাবির কারণে ভোট বিলম্বিত হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার  ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ড. কমফোর্ট ইরো।

প্রতিনিধিদলকে অধ্যাপক ইউনূস নিশ্চিত করেছেন সরকার নির্বাচনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময়সূচি নির্ধারণ করেছে।

এই তারিখ পরিবর্তন করা হবে না।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে সীমিতসংখ্যক সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন এই বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি বৃহত্তর সংস্কার কার্যক্রম প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই।

আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দলটিকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে যাঁরা হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত, তাঁদের বাংলাদেশের আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

ঐকমত্য কমিশন বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারের নীতিগুলো নির্ধারণে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করে স্বাক্ষরের পরিকল্পনা রয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের কর্মকর্তারা এই সপ্তাহে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নেতা আতাউল্লাহর গ্রেপ্তারের প্রশংসা করেন এবং এটিকে শরণার্থী ক্যাম্পে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসেবে দেখেছেন।

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর : বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলায় সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর নির্ধারণ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি পাস হয়।

পরে রাজধানীর হেয়ার রোডে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব তথ্য জানান।

শফিকুল আলম বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ মামলাগুলোর ক্ষেত্রে নতুন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আগের আইনে নতুন কিছু সেকশন সংযুক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর করা হয়েছে। এ ছাড়া এই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আরো যেসব পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব ছিল, সেগুলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনী পাস করেছে। এই বিষয়ে আইন উপদেষ্টা সম্প্রতি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এরপর আমরা নারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলাপ করেছি এবং তাদের মতামত আইনে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই আলোচনার ভিত্তিতে আজকের বৈঠকে সংশোধনী পাস হয়েছে।

প্রেস সচিব জানান, আইনে বলাত্কার-এর নতুন সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের মামলাগুলোর জন্য ডিএনএ টেস্টের বিলম্ব একটি বড় সমস্যা ছিল, সেই বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় থাকবে। তবে এটি একটি পৃথক সেকশনে বিচার হবে। এটি আলাদা অপরাধ নয়, একই অপরাধের আওতায় পৃথকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডিএনএ টেস্ট দ্রুত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশের সংশোধনী অনুমোদন : প্রেস সচিব জানান, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশের সংশোধনী অনুমোদন পেয়েছে। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এবং সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য এই সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ শতাংশের কম হলে টেন্ডার বাতিলের যে বিধান ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। আগের কাজের মূল্যায়নের জন্য যে ম্যাট্রিক্স ছিল, যা একই প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ পেতে সহায়তা করছিল, তা পরিবর্তন করে নতুন সক্ষমতা ম্যাট্রিক্স চালু করা হবে। এতে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে।

বর্তমানে ৬৫ শতাংশ কাজের দরপত্র বা টেন্ডার অনলাইনে হয় এবং এটি শতভাগে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্তরা আগে নিজ নামে নামজারি করতে পারতেন না, সেই অসুবিধা দূর করতে আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।

সরকারি ছুটি ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত : শফিকুল আলম জানান, জনসাধারণের সুবিধার্থে ৩ এপ্রিল এক দিন ঈদের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ফলে এবার ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চৈত্রসংক্রান্তিতে নির্বাহী আদেশে তিন পার্বত্য জেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সাঁওতাল, গারো, খাসিয়া, জৈন্তাসহ সমতলের বাঙালি ছাড়া অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীও এই ছুটির আওতায় থাকবে।

ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো : প্রেস সচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সাত মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আরো বেড়েছে। আমাদের সম্পর্ক ভালো, তবে ভিসার বিষয়ে কিছু জটিলতা আছে, যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাতে পারে। তবে আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই এবং সেটি অবশ্যই ন্যায্যতা, সমতা ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক হতে হবে।

চীনে প্রধান উপদেষ্টার সফর ঐতিহাসিক হতে যাচ্ছে : শফিকুল আলম বলেন, চীনে প্রধান উপদেষ্টার সফর একটি ঐতিহাসিক সফর হতে যাচ্ছে। চীন আমাদের তিনটি কৃষিপণ্য আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করতে চায়। আমরা আশা করছি, চীনে রপ্তানির জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

তিনি বলেন, আমের মান নিশ্চিত করতে এফএও বাংলাদেশকে চার মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে। রপ্তানির জন্য কিছু স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখতে তারা আমাদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের আম চীনে ব্যাপকভাবে রপ্তানি করা যাবে।

শফিকুল আলম বলেন, প্রফেসর ইউনূস চাচ্ছেন চীনের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে এসে বিনিয়োগ করুক, যাতে আমাদের দেশে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়।

বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্ট : সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, শনিবার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন তাদের রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেবে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট আশা করছি এই মাসেই অথবা প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর শেষে জমা হবে।

 

মন্তব্য

ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগের শঙ্কা

জহিরুল ইসলাম
জহিরুল ইসলাম
শেয়ার
ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগের শঙ্কা

ঈদের আনন্দ উদযাপনে রাজধানীবাসী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রিয়জনের কাছে ছুটে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরে এক কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ রাজধানী ছেড়ে প্রিয়জনের কাছে যেতে পারে। তবে এবারের ঈদ যাত্রায়ও সড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার একদিকে রয়েছে যানজটের ভোগান্তি, অন্যদিকে নিরাপত্তাঝুঁকি তো আছেই।

    

বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেটসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ১৫৯টি স্পটে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর বাইপাইল ও চন্দ্রা মোড়ে যানবাহনের প্রচণ্ড  চাপে রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে তীব্র যানজটে ঈদ যাত্রার ভোগান্তি আরো বাড়তে পারে।

তবে যানজট নিরসনে জননিরাপত্তা বিভাগ ঈদের আগে ও পরে  চিহ্নিত স্পটগুলোয় বিশেষ নজরদারি রাখতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ করিডরগুলোর সড়ক ঈদের সাত দিন আগেই মেরামত কিংবা সংস্কার করতে বলা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা-বাইপাস (মদনপুর-ভুলতা-ভোগড়া-এন-১০৫), নবীনগর-চন্দ্রা (এন-৪৫০), ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ (এন-৩), ঢাকা-জয়দেবপুর (এন-৩), ঢাকা (ভোগড়া)-চন্দ্রা-এলেঙ্গা, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনা, ভাঙ্গা-বরিশাল। একই সঙ্গে রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটির আওতায় থাকা সড়কগুলো।

জননিরাপত্তা বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩৮ থেকে ৩৯টি সড়কের অবস্থা যথেষ্ট খারাপ, যা দ্রুত মেরামত প্রয়োজন। প্রতিবছর ঈদুল ফিতরে এক কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ রাজধানী ছাড়ে, আর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করে।

এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এবারের ঈদ যাত্রায়ও দুর্ভোগের শিকার হতে পারে যাত্রীসাধারণ।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সূত্র জানায়, যানজটের আশঙ্কা করা চিহ্নিত ১৫৯টি স্পটের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে রয়েছে ৪৯টি স্পট। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে রয়েছে ৫৪টি স্পট। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রয়েছে ছয়টি স্পট। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রয়েছে ৪২টি স্পট এবং ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কে রয়েছে আটটি স্পট।

এর মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেশি যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য কাজ করবে। তবে ৩৮ থেকে ৩৯টি সড়কের অবস্থা বেশ খারাপ। যেগুলো দ্রুত মেরামত করা দরকার।

ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে সম্প্রতি আয়োজিত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ঈদে এক কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ রাজধানী ছেড়ে যাবে আর ৩০ লাখের মতো মানুষ রাজধানীতে আসবে। এই দেড় কোটি মানুষের ঈদের আনন্দের যাতায়াত যানজটসহ নানা কারণে নিরানন্দের হয়ে যায়। এসব বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, ভাঙ্গা সড়ক আর যানজট আমরা প্রত্যাশা করি না। যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি আমাদেরও ক্ষতি হয়। যানজট বেশি হলে ট্রিপ কমে যায়। ফলে শুরু থেকে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বলে আসছি সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে।

 

 

 

উত্তরের পথে ১৩ কিলোমিটারের যানজটের আশঙ্কা

উত্তরের পথে ১৩ কিলোমিটারের যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত এবারও যানজট হতে পারে। কারণ, এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে উন্নয়নকাজ এখনো শেষ হয়নি। মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ফলে যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা থাকছেই। আবার উত্তরবঙ্গসহ ময়মনসিংহের প্রায় ২৩ জেলার পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করে এই মহাসড়কে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ১৮-২০ হাজার ছোট-বড় যান যমুনা সেতু দিয়ে পারাপার করে। তবে ঈদে যানবাহনের সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে ৫০ হাজার অতিক্রম করে। এতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, মহাসড়কে যান বিকল এবং দুর্ঘটনার কারণে ভোগান্তি তৈরি হয়।

তবে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ প্রশাসন ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত টাঙ্গাইল অংশে ৭ শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

 

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের যেসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, গোড়াই মিলগেট, যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর, ফেন্সিগেটের আগের অংশ, ফেন্সিগেট সার্ভিস লেন, মুলিবাড়ী আন্ডারপাসের আগে, কড্ডা ফ্লাইওভারের পশ্চিমে, কোনাবাড়ী আন্ডারপাসের আগে, হাটিকুমরুল পাঁচলিয়া বাসস্ট্যান্ড, হাটিকুমরুল ধোপাকান্দি ব্রিজ, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, হাটিকুমরুল বাজার, ঘুরকা বেলতলা, ভূঁইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ড, হোটেল হাইওয়ে অভি ভিলা, ষোলোমাইল, সিরাজগঞ্জ বাইপাস, জমজম দইঘর, বগুড়া বাজার থেকে সীমাবাড়ী কলেজ, পেন্টাগন হোটেল, ফুড ভিলেজ হোটেল, দাদপুর জামাই রোড, নিউ পাপিয়া হোটেল থেকে চাচা-ভাতিজা হোটেল, জোড়া ব্রিজ, চান্দাইকোনা গরুর হাট পর্যন্ত।

 

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের যেসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের কাচিকাটা টোলপ্লাজা, বনপাড়া বাইপাস, বনপাড়া বাজার, রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের বানেশ্বর বাজার, রাজশাহী, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা বটতলা থেকে মোনায়েম কন্সট্রাকশন, ছনকা বাজার, শেরপুর মডেল মসজিদের সামনে, নয়ামাইল বাজার, মাঝিরা বাজার, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানার বনানী বাসস্ট্যান্ড, শাকপালা, বগুড়া জেলার সদর থানার জিয়া মেডিক্যাল কলেজ গেটের সামনে, তিন মাথা রেল ক্রসিং, চার মাথা ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচে, বারোপুর বাসস্ট্যান্ড, মাটিডালি বিমানবন্দর মোড়, টিএমএসএসের সামনে, শিবগঞ্জ থানার মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মোকামতলা বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মায়ামনি চৌরাস্তা মোড় থেকে গোবিন্দগঞ্জ ব্র্যাক অফিস, গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী উপজেলা পোস্ট অফিস এবং শিল্পী রেস্তোরাঁ থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর পর্যন্ত পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা, পীরগঞ্জ উপজেলা বাস স্টপেজ থেকে সাসেক প্রকল্পের নির্মাণাধীন আন্ডারপাসের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত, বিশ মাইল, পীরগঞ্জ, রংপুর, বড় দরগাহ্ আন্ডারপাস, পীরগঞ্জ, রংপুর, শঠিবাড়ী আন্ডারপাস, শঠিবাড়ী বাজার এবং বাস স্টপেজ এলাকা, মিঠাপুকুর, রংপুরকে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের যানজটের গুরুত্বপূর্ণ স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভোগাবে সিঙ্গেল লেন

দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ১৮ কিলোমিটার এলাকা পড়েছে রূপগঞ্জ অংশে। এ ১৮ কিলোমিটার এলাকায় স্বাভাবিক সময়েও দীর্ঘ যানজট থাকে। ঈদ যাত্রা শুরু হলে যানবাহন চলাচল কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় যানজটও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এবারও সড়কের এই অংশের যানজটে ঈদ যাত্রায় চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সিঙ্গেল লেনের রাস্তা। চালকরা নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানোয় যানজট লেগে থাকে।

অন্যদিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ অংশেও যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের গাড়িগুলো টার্মিনালে না রেখে রাস্তার ওপরে রেখে যাত্রী ওঠানামা করানোয় এবং তিন চাকার বাহন মহাসড়কে চলাচল করায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যস্ততম এই মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ থেকে দেবিদ্বার অংশে ঈদের সময় যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।

ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশেও যানজটে ভুগতে হতে পারে যাত্রীদের। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে কাজ বন্ধ থাকায় ভাঙাচুরা অংশে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে যানজট শুরু হয়েছে। তারাবো বিশ্বরোড, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, ভৈরব চৌরাস্তা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড, মাধবপুর, ওলিপুর রেলগেট, হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, দেবপাড়া বাজার, আউশকান্দি, শেরপুর ও গোয়ালাবাজার এবং শেরপুর টোলপ্লাজা এলাকায় প্রায় প্রতিদিন যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশে সাধারণত তুলনামূলক কম যানজট হয়। তবে এবার ছয় লেন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় মাধবদী, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, মরজাল ও বারৈচাএই সাতটি পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ অংশের প্রায় ২২ কিলোমিটারজুড়ে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড, তারাবো বিশ্বরোড গোলচত্বর, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, বরপা, গার্মেন্টসের মোড় ও গাউছিয়া স্ট্যান্ডে যানজট পরিস্থিতির আরো জটিল হতে পারে।

ঈদ যাত্রায় যানজটের ভোগান্তির বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদ যাত্রায় যাতে মানুষের ভোগান্তি কম হয় সে চেষ্টা সব সময় আমাদের থাকে। এবারও আমরা সেই চেষ্টা করছি।

 

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রূপগঞ্জ প্রতিনিধি।)

মন্তব্য

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশের পদক্ষেপে আশ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্র

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশের পদক্ষেপে আশ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র আস্থায় নিতে পেরেছে। ওয়াশিংটনে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। 

উল্লেখ্য, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ফের বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।

দেশটির স্থানীয় সময় বুধবার ব্রিফিংয়ের সময় এক সাংবাদিক বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের সাম্প্রতিক মন্তব্য ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি নাএসব বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন।

ওই প্রশ্নকারী বলেন, মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থার ক্রমবর্ধমান হুমকি ও একটি ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে তিনি (তুলসী) মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি দায়ী করেননি, ইউনূস সরকারও এসব উদ্বেগকে তীব্রভাবে অস্বীকার করেছেএগুলোকে অসত্য বলেও অভিহিত করেছে। এ ছাড়া বুধবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাফতপন্থী বিশাল একটি শোভাযাত্রা  হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রশ্নকারী।

ওই সাংবাদিক আরো বলেন, মার্কিন সরকারের চলমান উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে, যুক্তরাষ্ট্র কি ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বিবেচনা করছে?

জবাবে ট্যামি ব্রুস বলেন, আমরা যেকোনো দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা বা বৈষম্যের ঘটনাকে জোরালোভাবে নিন্দা করি। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। আমরা পরিস্থিতি নজরদারি করছি, এবং আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার এই প্রচেষ্টা যেন অব্যাহত থাকে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে দাবি করেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং দেশটিতে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদের হুমকি ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার আদর্শ ও লক্ষ্য থেকে উৎসারিত।

মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান আরো বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে আলোচনা মাত্র শুরু হয়েছে, তবে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি এখনো মূল উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু

গ্যাবার্ডের এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে এই মন্তব্যগুলো দেশের ভাবমূর্তি এবং সুনামের জন্য বিভ্রান্তিকর ও ক্ষতিকারক।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সামাজিক সংস্কার ও অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। সূত্র : এপি

 

 

মন্তব্য

কাগজ আমদানিতে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কাগজ আমদানিতে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব

মিথ্যা ঘোষণা ও চোরাচালানের মাধ্যমে আমদানি এবং বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের কারণে দেশীয় কাগজশিল্পে অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। ৮০টি কাগজ মিল বন্ধ হয়ে গেছে, বাকি ২৬টি ধুঁকছে। এমন প্রেক্ষাপটে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক মওকুফের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, বন্ডের অপব্যবহার রোধ ও বিভিন্ন ধরনের কাগজ আমদানিতে সর্বোচ্চ হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের আগে অংশীজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।

বিপিএমএ জানায়, দেশের অর্থনীতিতে কাগজশিল্প এখন আমদানি বিকল্প, রপ্তানিমুখী ও পরিবেশবান্ধব শিল্পে পরিণত হয়েছে। দেশের পেপার মিলগুলো বছরে ১৬ লাখ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদনে সক্ষম। ৯ লাখ মেট্রিক টন কাগজ দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিশ্বের ৪০টি দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রতিবছর সরকারকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দেওয়ার পাশাপাশি এর ফলে সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা।

এই খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৩০০টি সংযোগ শিল্প। এই খাতের সুরক্ষায় কাগজ আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ককাঠামো বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে বিপিএমএ। দাবিতে আরো বলা হয়েছে, বন্ড সুবিধায় আমদানি করা কাগজ ও বোর্ড খোলাবাজারে বিক্রি হওয়ায় কাগজ উৎপাদনকারীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি শিল্প খাত বিপর্যস্ত হচ্ছে।

তাই প্রাপ্যতার অতিরিক্ত আমদানি বন্ধ করা ও খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধে তদারকি করতে হবে।

মাইক্রো ক্যাপসুল, কালার ডেভেলপার, থেমাল কোটিং স্লারি, কাওলিন ক্লে আমদানিতে সিডি ও আরডি প্রত্যাহারের দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেসপ্রুফ পেপার, গ্লাসিনি পেপার, থেমাল পেপার ও লিনার পেপার আমদানিতে সর্বোচ্চ হারে সিডি, আরডি ও ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি জানানো হয়েছে।

একই দিনে উচ্চ করহার নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করে উল্লেখ করে কোনো শর্ত ছাড়া করহার ২.৫০ শতাংশ হারে কমিয়ে প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানির জন্য ২৫ শতাংশ করা ও পাবলিক ট্রেডেড কম্পানির জন্য ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। এ ছাড়া সংগঠনটি  করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ টাকা করা, সরবরাহ পর্যায়ে উৎস কর কমানো, রপ্তানি আয়ের উৎস কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করা, রপ্তানির ক্ষেত্রে এইচএস কোড-সংক্রান্ত জটিলতা দূর করার প্রস্তাব করেছে।

সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, গ্রস প্রফিট খাতভিত্তিক নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যা যুক্তিসংগত নয়। আবার গ্রস প্রফিট কমে গেলে বা ব্যবসায় লস হলে বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এমনকি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিক্রি কম হলেও কর কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনায় নেয় না। এটি নিষ্পত্তি প্রয়োজন। ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও টার্নওভার কর নির্ধারণ করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য বোঝা।

সংগঠনগুলোর প্রস্তাব শুনে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ভ্যাট আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করে না। তারা প্রকৃত তথ্য লুকায়, আমরাও চেপে ধরি। এভাবে চলতে পারে না। পোশাক খাত দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ কর সুবিধা পেয়ে আসছে। এখন তাদের রেগুলার রেটে আসা উচিত।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ