<p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নজিরবিহীন সংকটে পড়তে যাচ্ছে প্রতিবেশী মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য। খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতির সম্ভাবনা না থাকায় রাখাইন রাজ্য বর্তমানে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। এমন প্রেক্ষাপটে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয়প্রার্থীদের ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ রাখাইন রাজ্যের ৯৫ শতাংশ বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় খাদ্য কেনার মতো সামর্থ্য তাদের থাকবে না। নিকট ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি উত্তরণের কোনো সম্ভাবনাও সেখানে নেই। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাখাইনের জনগোষ্ঠী খাদ্যের জন্য মায়ানমারের অন্যান্য অঞ্চল ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল। আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ রাখাইনে যে ধান উৎপাদন হবে তাতে তাদের চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পূরণ হতে পারে। মায়ানমারের অন্য রাজ্য ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এখন রাখাইন রাজ্যের পর্যাপ্ত বাণিজ্য নেই। ওষুধ, সারসহ নিত্যপণ্যের ঘাটতির পাশাপাশি দাম বেড়েছে বহুগুণ। উৎপাদন খাতও সচল নয়। এর ফলে রাখাইন রাজ্যের অর্থনৈতিক ধস অনিবার্য হয়ে উঠেছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউএনডিপি বলছে, রাখাইন রাজ্যে এরই মধ্যে ভঙ্গুর সামাজিক বন্ধনের আরো অবনতি হতে পারে অর্থনীতিতে ধস নামার পর। এর ফলে রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনা ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউএনডিপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও বাণিজ্যের ওপর অবরোধের কারণে মানবপাচারসহ অবৈধ তৎপরতা বাড়তে পারে। এতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউএনডিপি বলছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিভিন্ন মহল গত কয়েক বছরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগের অভাবে প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশমুখী আরেক দফা অনিয়ন্ত্রিত ঢলের পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিতে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মি ও অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে। আঞ্চলিক মহাসড়কসহ অন্য রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চলাচল, পরিবহনের ওপর বিধি-নিষেধও চলছে। অবনতিশীল পরিস্থিতির কারণে প্রাণ বাঁচাতে রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দারা অন্যত্র আশ্রয়ের সুযোগ খুঁজছে। এ ক্ষেত্রে রাখাইন রাজ্যের সবচেয়ে কাছে বাংলাদেশ। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর সেখানে আরো পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা অত্যন্ত মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, অন্য গোষ্ঠী বিশেষ করে রাখাইনদেরও খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য অন্যত্র ছুটতে হতে পারে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বব্যাপী সংঘাত পর্যালোচনাকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) গত আগস্টেই জানিয়েছিল, বিদ্রোহী আরাকান আর্মি রাখাইনের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেখানে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠার পর বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়েছে। রাখাইনে নিত্যপণ্য সরবরাহে মায়ানমারের জান্তা কর্তৃপক্ষের অবরোধ থাকার কারণে বেসামরিক জনগণকে ভুগতে হচ্ছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস সম্পর্কে ক্রাইসিস গ্রুপের মায়ানমার ও বাংলাদেশ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিয়ান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউএনডিপির প্রতিবেদনে যে তথ্যগুলো উঠে এসেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। রাখাইনে প্রবেশাধিকার ও যোগাযোগে বিধি-নিষেধের কারণে সেখানের পরিস্থিতি যাচাই করা কঠিন। তবে এটি স্পষ্ট যে রাখাইনে নাজুক পরিস্থিতির প্রভাব সেখানে সব জাতিগোষ্ঠীর ওপর পড়ছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">থমাস কিয়ান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ নিজেই অনেক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। প্রতিবেশী রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশকে অবশ্যই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। গত বছর রাখাইনে নতুন করে সংঘাত শুরুর পর প্রায় অর্ধলক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করার তথ্য পাওয়া যায়। ওই রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগ বাংলাদেশে ঢুকেছে গত কয়েক মাসে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাখাইনে যাতে আরো সহায়তা পৌঁছতে পারে সে জন্য মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কাজ করার ওপর জোর দিয়েছেন ক্রাইসিস গ্রুপের মায়ানমার ও বাংলাদেশ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক। এ ক্ষেত্রে রাখাইনের অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় এবং সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা জোরদারের কথাও বলেছেন তিনি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">থমাস কিয়ান বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাখাইনে অবনতিশীল পরিস্থিতি ঠেকাতে না পারলে মায়ানমার থেকে আশ্রয়প্রার্থীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসবে। ঢাকা নিশ্চয়ই তা চাইবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মায়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ : পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন গত ১০ নভেম্বর ঢাকায় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত ইউ কিয়াও সোয়ে মোয়ের সঙ্গে এক বৈঠকে ইউএনডিপির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করেছেন। পররাষ্ট্রসচিব আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করেন এবং প্রত্যাবাসন শুরুর ওপর জোর দেন। তিনি মায়ানমার থেকে বাংলাদেশের দিকে আরো বাস্তুচ্যুতি রোধ করতে এই উদ্বেগ মোকাবেলায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>