বাংলাদেশের জনগণকে গুরুত্ব দিয়ে এবং জনগণকে নিয়ে এ দেশের সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায় ভারত। এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করবে ভারত সরকার। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গতকাল সোমবার ঢাকা সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এই বার্তা দিয়েছেন। সফর শেষে গতকাল সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক
ইতিবাচক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় ভারত
কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনায় অংশ নিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিশেষ ফ্লাইটে গতকাল সকালে ঢাকায় আসেন। সফরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল সন্ধ্যায় তিনি ঢাকা ছাড়েন।
দুপুরে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিবদের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিনের আমন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মুহূর্তে আমি ঢাকায় এসেছি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এ বছর আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আমাদের উভয় দেশের নেতাদের মধ্যে প্রথম কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে টেলিফোন আলাপ হয়েছে। নিউ ইয়র্কে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘আমার এ সফর তারই অংশ। নতুন সরকারের সঙ্গে এটা প্রথম পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক। এই আলোচনা আমাদের উভয় পক্ষকে এই সুযোগ করে দিয়েছে।’
ভারতেন পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমাদের মধ্যে খোলামেলা এবং গঠনমূলক মতবিনিময় হয়েছে। আমাদের আকাঙ্ক্ষা ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক ও লাভজনক সম্পর্ক, যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমরা অতীতে দেখেছি এবং আমরা ভবিষ্যতেও এটা দেখতে চাই।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উভয় দেশের মানুষকেন্দ্রিক হবে জানিয়ে বিক্রম মিশ্রি বলেন, এটা উভয় দেশের জনগণের উপকারে আসবে এবং এর প্রতিফলন আমাদের প্রাত্যহিক ঘটনার মধ্যে পাচ্ছি। যার মধ্যে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, পানি, এনার্জি, উন্নয়ন সহযোগিতা, কনস্যুলার সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রয়েছে। এই বিষয়গুলোর ওপর আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, ‘ভারতের ইচ্ছা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করা। একই সঙ্গে আমরা সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আলোচনা করেছি। সংখ্যালঘু ইস্যুতে আমি আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। সংখ্যালঘুর বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিষয়টি দেখবে।’
বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক বিষয়ে আক্রমণের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সার্বিকভাবে উভয় পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক মনোভাব চাই। অপেক্ষায় আছি, আমাদের সম্পর্ক একটা ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব যা বললেন
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য পছন্দ করছে না অন্তর্বর্তী সরকার। এই বার্তা পৌঁছে দিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন।
বাংলাদেশ ও ভারতের ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরানোর প্রশ্নে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাকে ফেরানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ আসার বিষয় আর এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত যখন হবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন ব্যবস্থা নেবে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে অবস্থান করে যে বক্তব্য দিচ্ছেন, এই বক্তব্যের প্রতি আমরা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আপনারা গতকাল (রবিবার) শুনেছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) একটি বক্তব্য দিয়েছেন, এটা এই সরকার পছন্দ করছে না এবং তারা যে কথাটা বলেছে, তার উপস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে আমাদের বিদ্যমান সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ব্যপারে তার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
জসীম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব এবং বিপ্লব-পরবর্তী সংখ্যালঘুদের প্রতি কথিত বৈরী আচরণ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর বয়ান রয়েছে, সে বিষয়ে আমরা ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা জোর দিয়ে বলেছি, বাংলাদেশে বসবাসরত সব মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করে আসছে এবং এ বিষয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের সুযোগ নেই।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা আমাদের অগ্রাধিকার। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি জীবন মূল্যবান। এই লক্ষ্যে ভারত সরকারকে দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা অনুরোধ করেছি।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আলোচনায় আন্ত নদীর বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। আমি তিস্তা নদীর পানি চুক্তি সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিই।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমরা ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছি।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এক যোগে কাজ করার বিষয়ে ভারত সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।’
সচিব বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠক একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। গত বছর নভেম্বর মাসে নয়াদিল্লিতে এই বৈঠক হয়েছিল।
সম্পর্কের মধ্যকার মেঘ দূর করার প্রত্যাশা
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের মাঝে মেঘ এসেছে, দুই পক্ষই তা দূর করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। একই সঙ্গে তিনি বলন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে এবং আরো জোরদার করতে ভারত আগ্রহী। গতকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাংবাদিকদের এসব কথা জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বিকেলে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ১৯ কূটনীতিক প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। দুটি বৈঠকের বিষয়ে যমুনার গেটে ব্রিফ করেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির বৈঠকের বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে এবং আরো জোরদার করতে আগ্রহী। আমাদের বিষয়ে যে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, সেটার বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব যে শঙ্কার কথা বলেছেন এবং অপপ্রচারের জবাব বাংলাদেশ কিভাবে দিয়েছে—এমন প্রশ্নে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রপাগান্ডার জবাব লিখিত ও মৌখিক বহুভাবে বলেছি। যত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোকে সামপ্রদায়িক দেখানোর সুযোগ কম। সেগুলো ব্যক্তিগত এবং বেশির ভাগ রাজনৈতিক। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ এলে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সচিবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে যে মেঘ এসেছে, এ মেঘটা দূর করতে হবে। আমরাও বলেছি এই মেঘটা দূর করতে হবে। একই সঙ্গে দুই পক্ষ একমত হয়েছি, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরো অনেক বিষয় আছে, সেগুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।’
শেখ হাসিনা সেখান থেকে এখানে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা বিভিন্ন কথাবার্তা বলে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন এবং বিষয়টি নিয়ে আমাদের উদ্বেগের বিষয় ভারতকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় এবং সম্পর্ক আরো জোরদার করতে আগ্রহী।
ভিসা বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে ভারত
বাংলাদেশিদের জন্য ভারত ভিসা বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি।
সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।
— সম্পাদক

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ
।
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।
গত বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে’ (‘হোয়াট’স অন বাংলাদেশ’স আর্মি চিফ’স মাইন্ড?’) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।
তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।
সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।
এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।
আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।’
তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, ‘যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।’
ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না।’ এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।
রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল।
এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।
গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।
বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।
এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।