<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবাসিক সরবরাহ ছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা, শিল্পসহ সব খাতে বেড়েছে গ্যাসের চাহিদা। এতে ঘাটতি মেটানোর নামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির দিকে ঝোঁকে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে অন্তর্বর্তী নতুন সরকার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে জোর দিয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টানা বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় দেশের বেশির ভাগ কারখানায় দিন দিন গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে দ্বিগুণ হয়েছে এই চাহিদা। কিন্তু গ্যাস উৎপাদন সেভাবে নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আমদানি কমাতে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে জোর দিচ্ছে সরকার। সোমবার অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গ্যাস উত্তোলনের তিনটি প্রকল্প তোলা হচ্ছে। সর্বশেষ একনেক সভায় একটি নতুন ও একটি সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। আরো পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, যা পর্যালোচনা করছে পরিকল্পনা কমিশন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, দেশে চলমান জ্বালানিসংকটের মধ্যে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ১৫টি খনন করে ১৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট প্রতিদিন উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মিলেছে। তবে পাইপলাইন না থাকায় এখন ৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট দেওয়া হয়েছে জাতীয় গ্রিডে। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে আরো ৩৫টি কূপ খনন করা হবে। ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি গ্যাসকূপ খনন করা হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একনেকে তোলা হচ্ছে যে তিন প্রকল্প</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রের জন্য ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেস প্লান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন প্রকল্প একনেক সভায় তোলা হচ্ছে, যা বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। প্রকল্পটিতে সরকার দিচ্ছে ১৯০ কোটি টাকা। আর বাপেক্সের নিজস্ব অর্থায়ন ৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রশিদপুর-১১ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন প্রকল্প একনেকে তোলা হচ্ছে ২৭১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৯৩ কোটি ২২ লাখ টাকা দেবে সরকার। সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের নিজস্ব অর্থায়ন ১৭৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টু-ডি সিসমিক সার্ভে ওভার এক্সপ্লোরেশন ব্লক ৭ এন্ড ৯ প্রকল্পও তোলা হচ্ছে একনেকে। এতে মোট খরচ হবে ৩০০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। বাস্তবায়ন করবে বাপেক্স। প্রকল্পটি চারটি বিভাগের ১৭টি জেলার ৭৮টি উপজেলা বাস্তবায়িত হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, আমদানি ব্যয় কমাতে সরকার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে জোর দিচ্ছে। এ জন্য গ্যাস উত্তোলনের প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী একনেকে তিনটি প্রকল্প তোলা হচ্ছে। আরো কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে সেগুলোও একনেকের জন্য সুপারিশ করা হবে।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যে কারণে গ্যাস উত্তোলনে ঝুঁকছে সরকার</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ছয় অর্থবছরে এক লাখ ৬৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার ৫৭.৮২ মিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ১০.১৫ মিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। করোনার ধাক্কার পর মাত্র এক মিলিয়ন বেশি এলএনজি আমদানিতে তিন গুণ বেশি সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত অর্থবছরে ১১.৬৭ মিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে ৪২ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ শুধু এলএনজি আমদানিতেই চলে যাচ্ছে। এর বোঝা বইতে হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগণকে। বাসাবাড়িতে ব্যবহারের যেই ১২ লিটারের গ্যাসের সিলিন্ডার আগে ৭০০ টাকায় কিনতে পারত ভোক্তারা। এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে । </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ছয় বছরে ২৬ হাজার ২১৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে এ খাতে। বাকি এক লাখ ৩৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা ব্যয় মেটানো হয়েছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অতি ব্যয়বহুল এই এলএনজিনির্ভরতা দেশকে বড় বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ দেশে গ্যাস সরবরাহের বেশির ভাগই আসে স্থানীয়ভাবে উত্তোলনের মাধ্যমে। এর মধ্যে শুধু মার্কিন কম্পানি শেভরন উত্তোলন করছে মোট গ্যাসের ৫০ শতাংশ আর স্থানীয় কম্পানিগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে ২৬ শতাংশ। শেভরনের গ্যাস ক্রয়ে বছরে ব্যয় মাত্র ১৭.৩৫ শতাংশ অর্থ। আর স্থানীয় কম্পানিগুলোর পেছনে বছরে ব্যয় হয় ৫ শতাংশের কিছু বেশি। এর  পরও জ্বালানি বিভাগ দৌড়াচ্ছে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির দিকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যয়বহুল জ্বালানি আমদানির চুক্তি</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পতিত হাসিনা সরকার এলএনজি আমদানিতেই বেশি ঝোঁকে। দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের দিকে নজর দেয় যৎসামান্যই। কাতার এনার্জি কম্পানির সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তি করে। প্রতিবছর অতিরিক্ত ২৪ কার্গো এলএনজি আমদানিতে এই চুক্তি করা হয়। ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড থেকে ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি করে। এলএনজি আনতে মহেশখালীতে তৃতীয় এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) করার উদ্যোগ নেয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির স্থাপিত এফএরআরইউর ক্ষমতা আরো ১০০ এমএমসিএফডি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। মালয়েশিয়া থেকেও ২৫০ এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানির বিষয়ে নেগোসিয়েশন শুরু করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, সরবরাহে স্বল্প অবদান রাখা এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে জ্বালানি বিভাগ। যে পরিমাণ অর্থ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় করা হচ্ছে, তা দেশে বিনিয়োগ করা হলে দুই বছরের মধ্যে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদনে ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইএফএ) জানায়, বড় শিল্প-কারখানায় নিজস্ব উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন অনেকে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি দক্ষ জেনারেটর ব্যবহার করা গেলে বছরে ৪৬ কোটি ডলার এলএনজি আমদানি খরচ কমতে পারে।</span></span></span></span></p>