লা-রিবা ইসলামিক ক্রেডিট কার্ডের বিশেষ সুবিধা কী?
লা-রিবা ইসলামিক ক্রেডিট কার্ডের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো ডায়নামিক কারেন্সি কনভার্সন সুবিধা, যেখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য আলাদা কোনো লিমিট নির্ধারণের প্রয়োজন নেই বরং একক লিমিটের অধীনে উভয় মুদ্রায় নির্বিঘ্নে লেনদেন করা যায়। আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে ইউএসডি লিমিট কনভার্ট করার প্রয়োজন হয় না, পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট সাপেক্ষে বৈদেশিক লেনদেন কার্যকর হয়। ভ্রমণপিপাসু গ্রাহকদের জন্য এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা বিশেষভাবে আকর্ষণীয়, যেখানে প্লাটিনাম কার্ডধারীরা বছরে ছয়বার পর্যন্ত বিনামূল্যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া বিশ্বের ১৫০০+ মাস্টারকার্ড লাউঞ্জকি লাউঞ্জ, যার মধ্যে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বলাকা লাউঞ্জও অন্তর্ভুক্ত, সেগুলোতে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে আরো আরামদায়ক করে তোলে।
আপনাদের ইসলামিক ক্রেডিট কার্ডে খরচ কেমন?
প্রচলিত ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় আমাদের কার্ডের খরচ অনেক কম। বেশির ভাগ কার্ডে বকেয়ার ওপর বার্ষিক ২৫ শতাংশ হারে সুদ চার্জ করা হয়। পক্ষান্তরে লা-রিবা ইসলামিক ক্রেডিট কার্ডে নির্দিষ্ট চার্জভিত্তিক হওয়ায় প্রচলিত কার্ড থেকে ৫০ শতাংশ খরচ কম। এই কার্ডটি সম্পূর্ণ ফ্রিতে ইস্যু করা হয়, যেখানে গ্রাহকদের কোনো প্রসেসিং ফি বা সিআইবি ফি দিতে হয় না।
ফলে এটি অন্যান্য কার্ডের তুলনায় আরো লাভজনক। এক বছরে যেকোনো অ্যামাউন্টের ১৮টি ট্রানজেকশন করলে বার্ষিক ফি মওকুফ করা হয়।
এই কার্ডের মাধ্যমে আর কী কী সেবা পাওয়া যাবে?
আমাদের কার্ডে অতিরিক্ত সুবিধার মধ্যে রয়েছে একটি সম্পূর্ণ ফ্রি সাপ্লিমেন্টারি কার্ড, নির্দিষ্ট মার্চেন্টে শূন্য শতাংশ ইএমআই সুবিধা, ৬,৫০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ ডিসকাউন্ট সুবিধা, সর্বনিম্ন এটিএম মেইনটেন্যান্স ফিতে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশ উইথড্রয়াল সুবিধা। যাতে কোনো অতিরিক্ত দৈনিক চার্জ ছাড়াই এটিএম থেকে নগদ উত্তোলনের সুযোগ থাকে এবং সর্বোচ্চ ৪৫ দিন থেকে সর্বনিম্ন ১৫ দিন পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ ও মেইনটেন্যান্স ফিমুক্ত লেনদেনের সুবিধা।
এই কার্ডে লেনদেনে গ্রাহক নিরাপত্তায় কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন?
গ্রাহক নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয় ইএমভি চিপভিত্তিক সিকিউরিটি কার্ড, কন্টাক্টলেস পেমেন্ট সুবিধা এবং অনলাইন লেনদেনের জন্য এসএমএস ও ই-মেইলভিত্তিক ওটিপি নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে, যা প্রতিটি লেনদেনকে সর্বোচ্চ নিরাপদ করে তোলে।
এবার রোজা ও ঈদ উপলক্ষে গ্রাহকদের কী সুবিধা দিচ্ছেন?
এবারে রোজা ও ঈদ উপলক্ষে লা-রিবা ইসলামিক ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার রয়েছে, যা ইফতার, সাহরি ও কেনাকাটায় অতিরিক্ত সুবিধা দেবে। এই বিশেষ রমজান অফারের আওতায় গ্রাহকরা দেশের স্বনামধন্য পাঁচ তারকা এবং বিলাসবহুল হোটেলে বাই-ওয়ান গেট ওয়ান, বাই-ওয়ান গেট টু, বাই-ওয়ান গেট থ্রি অফার উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া রমজান মাসব্যাপী কেনাকাটার আনন্দ আরো বাড়িয়ে তুলতে আড়ংয়ে লা-রিবা ইসলামিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করলে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার উপভোগ করা যাবে, যা গ্রাহকদের জন্য বিশাল সুবিধা নিয়ে আসবে। ঈদ শপিং ও প্রয়োজনীয় কেনাকাটার ক্ষেত্রে এই বিশেষ ক্যাশব্যাক অফার গ্রাহকদের জন্য আরো লাভজনক হবে।
এই কার্ডের ফি কতটা শরিয়াহসম্মত ও ন্যায্য?
এই কার্ডের ফিসংক্রান্ত সব কিছুই স্বচ্ছ ও শরিয়াহসম্মতভাবে নির্ধারিত, যাতে গ্রাহকরা সুদমুক্ত আর্থিক সুবিধা উপভোগ করতে পারেন এবং নির্ভরযোগ্য ইসলামী ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। ফিসংক্রান্ত কাঠামোও সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও ন্যায্য, যাতে গ্রাহকদের জন্য বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি না হয়। এই কার্ডের ক্ষেত্রে কোনো ইস্যুয়েন্স ফি, প্রসেসিং ফি বা সিআইবি ফি নেই, ফলে গ্রাহকরা অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই সহজে কার্ড পেতে পারেন। তবে নির্দিষ্ট কিছু পরিষেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য, যা শুধু লেনদেন ও পরিচালনাগত খরচ নির্বাহ করার জন্য নির্ধারিত এবং শরিয়াহ পরামর্শক কমিটির অনুমোদিত। উদাহরণস্বরূপ, নগদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন এটিএম মেইনটেন্যান্স ফি প্রযোজ্য। ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উত্তোলনের ক্ষেত্রে উত্তোলন ফি ১৫০ টাকা (ভ্যাট ২২.৫০ টাকা)। অর্থাৎ এই কার্ড দিয়ে এটিএম থেকে ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে ডিউ ডেটে ২০ হাজার ১৭২.৫০ টাকা পরিশোধ করলেই হয়। নগদ উত্তোলনের জন্য প্রচলিত কার্ডের মতো দৈনিকভিত্তিক কোনো অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয় না। যদি বকেয়া অবশিষ্ট থাকে, তাহলে প্রডাক্ট অনুযায়ী সার্ভিস চার্জ, যেমন—গোল্ড কার্ডের লিমিট এক লাখ টাকা পর্যন্ত। এই ক্ষেত্রে গ্রাহকদের বকেয়া থাকলে ৯৭০ টাকা ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।
আপনাদের ইসলামিক ক্রেডিট কার্ডের সাফল্য কেমন পাচ্ছেন, বাংলাদেশে এই কার্ডের প্রবৃদ্ধি ও সম্ভাবনা কেমন?
আমাদের লা-রিবা ইসলামিক ক্রেডিট কার্ড বাংলাদেশের বাজারে ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, বিশেষ করে যাঁরা সুদমুক্ত ও শরিয়াহসম্মত ব্যাংকিং খুঁজছেন, তাঁদের মধ্যে এই কার্ডের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বাড়ছে। বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলামিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সুদমুক্ত লেনদেনের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ও আগ্রহের প্রমাণ।
আপনাদের ইসলামী ব্যাংকিং সেবা কতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে?
আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইসলামী আর্থিক ব্যবস্থা অনুসরণ করে তার সেবাগুলো তৈরি করেছে, যা সুদমুক্ত এবং শরিয়াহসম্মত। এই ব্যাংক ১৯৯৫ সাল থেকে দেশব্যাপী বর্তমানে ২২৬টি শাখা, ৮৭টি উপশাখা, ৭৪৫টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট, ২৪৫টি এটিএমের মাধ্যমে ৩০ বছর ধরে ৩৬ লাখ গ্রাহককে আস্থার সঙ্গে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা এবং আগ্রহ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।