ঢাকা, বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫
১২ চৈত্র ১৪৩১, ২৫ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫
১২ চৈত্র ১৪৩১, ২৫ রমজান ১৪৪৬

ইসলামী শিল্পকলায় সুফিবাদের প্রভাব

আতাউর রহমান খসরু
আতাউর রহমান খসরু
শেয়ার
ইসলামী শিল্পকলায় সুফিবাদের প্রভাব
ছবি : সংগৃহীত

ইসলাম সৌন্দর্যের ধর্ম। ইসলাম মানুষকে জীবনের প্রতিটি স্তরে সৌন্দর্য ধারণ ও লালনের শিক্ষা দেয়। ইসলাম বলে, মুমিন তার বোধ, বিশ্বাস, আচরণ, কথা, কাজ ও জীবনযাপনে কদর্য পরিহার করবে এবং সৌন্দর্য অর্জন করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ সুন্দরতম, তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।

’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫১)

হাদিসবিশারদরা বলেন, এটি একটি ব্যাপকার্থক হাদিস, যা মুমিনকে সমগ্র জীবনে সৌন্দর্য ধারণে উৎসাহিত করে, যতক্ষণ না তা মানুষের অহংকার ও অহমিকার কারণ হয়।

সুফিবাদের পরিচয়

সুফিবাদের পরিচয় নির্ধারণে মনীষীরা ভিন্ন ভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন। যার মূলকথা হলো, আত্মিক পরিশুদ্ধি, দুনিয়াবিমুখতা ও ইবাদতে মগ্ন হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি লাভের সাধনা। আল্লামা কুশাইরি (রহ.) বলেন, ‘তাসাউফ হলো মানবীয় গুণাবলির ওপর দ্বিনি গুণাবলিকে প্রাধান্য দেওয়ার অনুশীলন।

(আর রিসালা, পৃষ্ঠা-১২৬)

আল্লামা আবুল আলা আফিফি (রহ.) বলেন, তাসাউফ হলো আল্লাহর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার এমন অবস্থা, যা বান্দার ধ্যান ও জ্ঞান থেকে গাইরুল্লাহর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়। (তাসাউফ : সাউরাতুন রুহিয়্যাতুন ফিল ইসলাম, পৃষ্ঠা-৩৮)

সুফিবাদের সঙ্গে শিল্পের সম্পর্ক

সুফিবাদের মূলকথা হলো সব কদর্য থেকে আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে চারিত্রিক সৌন্দর্য অর্জন করা, যা প্রস্ফুটিত হয় তার কথা, কাজে ও সব কর্মকাণ্ডে। ড. মাহদি সাইফুদ্দিন বলেন, সুফিবাদের সঙ্গে শিল্প-সাহিত্যের সুগভীর সম্পর্ক আছে। কেননা মননের সৌন্দর্য শিল্পে বিকশিত হয়।

এ জন্য আমরা দেখি সুফিবাদে প্রভাবিত অঞ্চলগুলোর শিল্পকর্মের ভেতর একটি গভীর সংযোগ ও সাদৃশ্য আছে। যেমন—নকশা, কারুকাজ, রঙের ব্যবহার, রঙের প্রতীকায়ন ইত্যাদি। আপনি বিশ্লেষণ করলে তুর্কি, মোগল ও পার্সিয়ান শিল্পকলার ভেতর যে অভিন্নতা খুঁজে পাবেন তা মূলত সুফিবাদেরই প্রভাব। (আসরু ফালসাফাতিল সুফিয়্যাতি ফিল ইসলাম, পৃষ্ঠা-৪৯৬)

ইসলামী শিল্পকলায় সুফিবাদের প্রভাব

মসজিদ, মাদরাসা, প্রাসাদসহ মুসলিম স্থাপত্যগুলোতে শিল্প ও কারুকাজ বিশ্লেষণ করলে মৌলিকভাবে পাঁচ ধরনের নকশা ও কারুকাজ পাওয়া যায়। তাহলো—১. লতাপাতা, ২. ফুল ও ফল, ৩. পানপাত্র, ৪. ঝরনা, ৫. ক্যালিগ্রাফি।

সুফি সাধকরা এর প্রতিটিকে বিশেষ অর্থে প্রতীকায়ন করে থাকেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো—

১. লতাপাতা ও উদ্ভিদ : মানুষের অন্তরে আল্লাহর স্মরণ ও ভালোবাসার সক্রিয় উপস্থিতিকে বুঝায়। কেননা আল্লাহর স্মরণ ও প্রেমশূন্য হৃদয় মৃত ভূমির মতো। বিপরীতে আল্লাহর স্মরণ ও ভালোবাসায় মগ্ন হৃদয় সবুজ ও সজীব প্রান্তরের মতো। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের জিকির করে এবং যে তার প্রতিপালকের জিকির করেন না, তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪০৭)

২. ফুল ও ফল : ফুল ও ফলকে সুফি আলেমরা নেক কাজের প্রতিফলের প্রতীক বলেন। আর তাহলো জান্নাত। কেননা মহান আল্লাহ কোরআনে একাধিক স্থানে জান্নাতের নিয়ামতগুলো বর্ণনায় ফলের উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এটাই জান্নাত, তোমাদেরকে যার অধিকারী করা হয়েছে, তোমাদের কাজের ফলস্বরূপ। সেখানে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফলমূল, যা থেকে তোমরা আহার করবে।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৭২-৭৩)

আবার কোনো সুফি ফলকে সাধারণ নিয়ামতের প্রতীক এবং ফুলকে জান্নাতি রমণীর প্রতীক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কেননা এটা স্বীকৃত যে উপমা হিসেবে নারীরা ফুলের মতোই।

৩. পানপাত্র : পানপাত্র দ্বারা সুফি আলেমরা আল্লাহ প্রেমের আধিক্য বা তাতে নিমগ্নতা বোঝায়, যা তাঁকে জগৎ-জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে। যেমন—আল্লামা রুমি তাঁর এক কবিতায় বলেছেন,

তিনি বললেন, আমা হতে তোমার কি প্রত্যাশা?

আমি বললাম, আপনার অপরিসীম অনুগ্রহ।

তিনি বললেন, যাত্রাপথটিতে কে ছিল তোমার সঙ্গী?

আমি বললাম, আপনার ধ্যান, হে আমার প্রভু!

তিনি বললেন, কে তোমায় এখানে প্রলোভিত করে এনেছে?

আমি বললাম, আপনার শরাবের ঘ্রাণ।

তিনি বললেন, কী বয়ে নিয়ে আসে তোমার মনে সবচেয়ে পরিপূর্ণতা?

আমি বললাম, প্রভুর সান্নিধ্যে। (মাসনবিয়ে রুমি)

৪. ঝরনা : সুফি আলেমদের কাছে ঝরনা বা পানির প্রবাহ আল্লাহভীতি ও বিনয়ের প্রতীক। কেননা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এর পরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল, তা পাষাণ কিংবা তার চেয়ে কঠিন। পাথরও কতক এমন যে তা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়, কতক এরূপ যে বিদীর্ণ হওয়ার পর তা থকে পানি নির্গত হয়, আবার কতক এমন যা আল্লাহর ভয়ে ধসে পড়ে এবং তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে অনবহিত নন।’

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৭৪)

আবার এটা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভেরও প্রতীক। কেননা আল্লাহর অনুগ্রহ বান্দার প্রতি অবিরাম বর্ষিত হতে থাকে।

৫. ক্যালিগ্রাফি : ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, যাতে মূলত কোরআন, হাদিস ও মনীষীদের বাণী উত্কীর্ণ হয়, তা জিকিরের উপকার দেয়। এর মাধ্যমে মানুষের অন্তরে আল্লাহর স্মরণ জাগ্রত হয়, মানুষ উপদেশ গ্রহণের মাধ্যমে সুপথের দিশা লাভ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি স্মরণ করুন! কেননা স্মরণ মুমিনদের উপকৃত করে।’

(সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৫)

রঙের প্রতীকায়নে সুফিবাদের প্রভাব

ইসলামী শিল্পকলায় রঙের প্রতীকায়নে সুফিবাদের দৃশ্যমান প্রভাব রয়েছে। যেমন—সুফি সাধকদের কাছে নীল রং আধ্যাত্মিকতা ও জান্নাতের প্রতীক। নীল আধ্যাত্মিক মগ্নতা ও ধ্যানের প্রতি ইঙ্গিত করে। ইসলামী স্থাপত্যে টালি, গম্বুজ ও ছাদের অভ্যন্তর ভাগের কারুকাজে ব্যবহৃত হয়। নীল রংটি মহাবিশ্বের অন্তহীন গভীরতাকেও ধারণ করে। গাঢ় নীল জলের রহস্যময় জগতের প্রতি ইঙ্গিত করে। নীল আকাশ বা আসমানেরর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যেখানে আল্লাহর আরশ অবস্থিত। সাধকদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য ও কাঙ্ক্ষিত জ্ঞানের দূরতম গন্তব্যের অনুস্মারক নীল।

হিজরি একাদশ শতকে এই অঞ্চলে সুফি মতবাদের প্রভাব প্রবল হয়ে ওঠে। ফলে শিল্প-সাহিত্যে স্রষ্টার প্রেম ও তাঁর বিরহ নানাভাবে প্রস্ফুটিত হয়। স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে কালো রং এবং স্রষ্টার প্রতাপ বোঝাতে লাল রঙের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। উসমানীয় আমলের শিল্পীরা হালকা ও উজ্জ্বল রং বেশি ব্যবহার করত। তারা সুফি মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। রঙের প্রতীকী ব্যবহারে তারা অত্যন্ত সচেতন ছিল। যেমন—তারা শক্তি ও বিজয় বোঝাতে লাল রং, পার্থিব ও পরকালীন সুখ-সমৃদ্ধি বোঝাতে সবুজ, আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতা বোঝাতে নীল, পবিত্রতা বোঝাতে সাদা, আলো ও সুপথ বোঝাতে হলদে সোনালি রং ব্যবহার করত। উসমানীয় শিল্পীরা সচেতনভাবে কালো রং এড়িয়ে চলত।

তথ্যঋণ—প্রবন্ধ : দ্য ইম্প্যাক্ট অব সুফিজম ইন ইসলামিক আর্ট এবং সিগনিফিকেন্স অব কালারস ইন ইসলামিক আর্ট হিস্টোরি

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭৩২
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ :  ‘সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। যাতে তারা যে কাজ করে তজ্জন্য আল্লাহ তাদেরকে উত্তম পুরস্কার দেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদের প্রাপ্যের অধিক দেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন।’

(সুরা : নুর, আয়াত : ৩৭-৩৮)

আয়াতদ্বয়ে মুমিন ব্যক্তি ও সৎ ব্যবসায়ীর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. নামাজ থেকে বিরত রাখে এমন বিষয়গুলোর মধ্যে ব্যবসাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে আল্লাহ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছেন। কেননা ব্যবসা ইবাদতবিমুখতার বড় কারণ।

২. ফিকহের সব ইমাম এই বিষয়ে একমত যে নারীদের জন্য মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিস থেকে এমনটিই বোঝা যায়।

৩. পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেননা মসজিদই মুসলমানের ধর্মীয়, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের প্রাণকেন্দ্র।

৪. আশ্রয়হীন পথিকের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েজ। শর্ত হলো মসজিদের সব শিষ্টাচার রক্ষা করা।

৫. আয়াত দ্বারা দ্বিনদার ব্যবসায়ীর মর্যাদা প্রমাণিত হয়। কেননা আল্লাহ তাদের জন্য পুরস্কার ও অনুগ্রহ ঘোষণা করেছেন।

(তাফসিরে মুনির : ৯/৫৮৭)

মন্তব্য
পর্ব : ২৫

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা আশ-শুরা

ওহি সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে সুরাটি শুরু হয়েছে। এরপর ফেরেশতাদের কর্মযজ্ঞ নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। পরে মুসলমানদের মধ্যকার বিরোধ নিরসনে কোরআনের নির্দেশনা অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সুরায় রাসুল (সা.)-এর রিসালত ও মুমিনদের সম্পর্কেও কিছু আলোচনা আনা হয়েছে।

এ কথার মাধ্যমে সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে যে আসমান ও জমিনের রাজত্ব একমাত্র মহান আল্লাহর।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. জাতি-বৈচিত্র্য আল্লাহর ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ।

(আয়াত : ৮)

২. বিদ্বেষবশত বিবাদ কোরো না। (আয়াত : ১৪)

৩. কিয়ামত আসন্ন, তা বেশি দূরে নয়।

(আয়াত : ১৭)

৪. জান্নাতিদের সব প্রত্যাশা পূরণ করা হবে।

(আয়াত : ২২)

৫. আত্মীয়দের প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করো।

(আয়াত : ২৩)

৬. সম্পদের অবাধ প্রাচুর্য বিপর্যয় ডেকে আনে।

(আয়াত : ২৭)

৭. অশ্লীলতা পরিহারকারীদের জন্য জান্নাত।

(আয়াত : ৩৭)

৮. মীমাংসাকারীদের জন্য পুরস্কার। (আয়াত : ৪০)

৯. অত্যাচারের প্রতিবিধান করো। (আয়াত : ৪১)

১০. বিপদেও অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (আয়াত : ৪৮)

১১. ছেলেমেয়ে উভয়ই আল্লাহর দান। (আয়াত : ৪৯-৫০)

সুরা জুখরুফ

আলোচ্য সুরায় কুরাইশ ও আরববাসীদের জাহেলি আকিদা-বিশ্বাস ও কুসংস্কারের সমালোচনা করা হয়েছে।

কোরআনের কসমের মাধ্যমে সুরাটি শুরু হয়েছে। এতে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে এই শিরকের সপক্ষে তোমাদের কাছে কোনো যুক্তি-প্রমাণ আছে? তারা বলে, আমাদের বাপ-দাদার সময় থেকে এ কাজ এভাবেই হয়ে আসছে। অথচ ইবরাহিম (আ.) পূর্বপুরুষদের এমন অন্ধ অনুসরণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আর আরবরা তো তাঁরই বংশধর।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. পূর্বসূরিদের অন্ধ অনুকরণ কোরো না। (আয়াত : ২২)

২. জীবিকার তারতম্য আল্লাহই করেন। (আয়াত : ৩২)

৩. কোরআন মুসলিম উম্মাহর জন্য সম্মানের বিষয়। (আয়াত : ৪৪)

৪. নবীদের নিয়ে উপহাস কাফিরদের অভ্যাস।

(আয়াত : ৪৭)

৫. ভালো কাজ থেকে বিমুখ হয়ো না। (আয়াত : ৬২)

৬. তোমরা পরস্পরের সঙ্গে মতবিরোধ কোরো না।

(আয়াত : ৬৫)

৭. জান্নাতে মনের সব ইচ্ছা পূর্ণ হবে। (আয়াত : ৭১)

৮. অবাধ্য পাপীদের উপেক্ষা করো। (আয়াত : ৮৯)

সুরা দুখান

আলোচ্য সুরা শুরু হয়েছে কোরআন নাজিলের ইতিহাস বর্ণনার মাধ্যমে। কোরআন নাজিল হয়েছে রমজান মাসের কদরের রাতে। এরপর অবিশ্বাসীদের ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে। সুরার শেষের দিকে নেককার ও বদকারদের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। (আয়াত : ৮)

২. সংশয়গ্রস্ত লোকেরাই দ্বিন নিয়ে বিদ্রুপ করে।

(আয়াত : ৯)

৩. আল্লাহ পাপীদের কঠোরভাবে পাকড়াও করেন।

(আয়াত : ১৬)

সুরা জাসিয়া

এই সুরায় তাওহিদ ও আখিরাত সম্পর্কে মক্কার কাফিরদের সন্দেহ, সংশয় ও আপত্তির জবাব দেওয়া হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে যে পৃথিবীর সব কিছু আল্লাহর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেয়। এই পৃথিবীতে মানুষ যত জিনিসের সাহায্য গ্রহণ করছে এবং বিশ্বে যে অসংখ্য বস্তু ও শক্তি মানুষের সেবা করছে তা আল্লাহই নিজের পক্ষ থেকে দান করেছেন। এরপর মক্কার কাফিরদের হঠকারিতা, অহংকার, ঠাট্টা-বিদ্রুপ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. মিথ্যাবাদীদের জন্য দুর্ভোগ। (আয়াত : ৭)

২. পাপের পথ থেকে সরে এসো। (আয়াত : ৮)

৩. সমুদ্রে আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করো।

(আয়াত : ১২)

৪. অবিশ্বাসীদেরও ক্ষমা করো। (আয়াত : ১৪)

৫. মূর্খদের অনুসরণ কোরো না। (আয়াত : ১৮)

৬. কোরআন মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ।

(আয়াত : ২০)

৭. পার্থিব জীবনকেই শেষ মনে কোরো না। (আয়াত : ২৪)

৮. গৌরব-গরিমা কেবল আল্লাহর। (আয়াত : ৩৭)

সুরা আহকাফ

কোরআনের প্রশংসার মাধ্যমে আলোচ্য সুরা শুরু হয়েছে। কাফিরদের কাছে দুনিয়াটা একটি উদ্দেশ্যহীন খেলার বস্তু। তারা এখানে নিজেদের দায়িত্বহীন সৃষ্টি মনে করে। এ কথার মাধ্যমে সুরা শেষ হয়েছে যে কিয়ামত অনিবার্য সত্য।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. মা-বাবার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞতা। (আয়াত : ১৫)

২. মানুষ ইহকালে ও পরকালে তাদের কাজ অনুযায়ী সম্মান লাভ করবে। (আয়াত : ১৯)

৩. দুনিয়ার জীবন এক দিনের চেয়েও ক্ষুদ্র। (আয়াত : ৩৫)

সুরা মুহাম্মাদ

এই সুরায় যুদ্ধ, বন্দি, গনিমত এবং বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। উভয় দলের পরিণতিও বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি মুরতাদ ও মুনাফিকের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। সুরাটি কোনো ভূমিকা ছাড়াই এ কথার মাধ্যমে শুরু হয়েছে যে যারা কাফির এবং যারা মানুষকে আল্লাহর পথে বাধা দেয়, তারা আল্লাহর শত্রু। সুরাটি শেষ হয়েছে যুদ্ধের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে। এখানে ঈমানদারদের ভীরুতা ও হীনম্মন্যতা দূর করতে বলা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. অবিশ্বাসীদের ভালো কাজও নিষ্ফল হয়ে যায়। (আয়াত : ৮)

২. কিয়ামতের আলামত প্রকাশ পেয়েছে এবং পাচ্ছে। (আয়াত : ১৮)

৩. মানুষ ক্ষমতা পেলে আত্মীয়তা ছিন্ন করে।

(আয়াত : ২২-২৩)

৪. কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা জরুরি। (আয়াত : ২৪)

৫. দ্বিনবিমুখ মানুষের আনুগত্য কোরো না। (আয়াত : ২৬)

৬. পাপীদের শাস্তি মৃত্যুর সময় থেকে শুরু। (আয়াত : ২৭)

৭. বাকভঙ্গিতে অন্তরের ভাব প্রকাশ পায়। (আয়াত : ৩০)

৮. সত্য জেনেও বিমুখ হয়ো না। (আয়াত : ৩২)

৯. নিজের কাজকে অর্থহীন কোরো না। (আয়াত : ৩৩)

১০. অবিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ কোরো না। (আয়াত : ৩৪)

১১. নিজের ও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করো না। (আয়াত : ৩৮)

 

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

মন্তব্য

প্রশ্ন-উত্তর

    সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
শেয়ার
প্রশ্ন-উত্তর

নাবালক শিশুকে জাকাত দেওয়া

প্রশ্ন : কেউ যদি জাকাত দেওয়ার সময় এমন কিছু শিশুকে জাকাত দেয়, যারা এখনো সাবালক হয়নি। তাহলে কি তার জাকাত আদায় হবে? আমাদের দেশে দেখা যায়, জাকাতের জন্য অনেকেই সঙ্গে তাদের নাবালকদের নিয়ে আসে। মানুষজনও সেই নাবালকদের জাকাত দেয়।

মোখলেসুর রহমান, ময়মনসিংহ

 

উত্তর : জাকাত আদায় হওয়ার জন্য জাকাতের টাকা যাকে দেওয়া হবে সে সাবালক হওয়া শর্ত নয়, বরং স্বেচ্ছায় খরচ করার বুঝ রাখে—এমন হলেই তাকে জাকাত আদায় করা যাবে।

উল্লেখ্য যে নাবালক ছেলের বাবা ধনী হলে ছেলেকে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না। তাই নাবালককে জাকাত দেওয়ার সময় এ বিষয়টি খেয়াল করতে হবে।

(রাদ্দুল মুহতার : ২/৩৪৯, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল

মিল্লাত : ৫/৩৭৬)

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

যেসব আমলে সদকার সওয়াব মেলে

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
যেসব আমলে সদকার সওয়াব মেলে

মহান আল্লাহকে খুশি করার অন্যতম মাধ্যম সদকা। সাধারণত আমরা সদকা বলতে বুঝি, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সওয়াবের আশায় কাউকে অর্থ-সম্পদ, খাবার কিংবা পোশাক ইত্যাদি দান করা। সদকাকে এই সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা হলে মনে হবে সদকার সম্পর্ক শুধু অর্থ-সম্পদের সঙ্গে। যার কাছে অর্থ-সম্পদ আছে, সেই শুধু সদকা করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে।

যার কাছে নেই, তার সদকার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের কোনো ব্যবস্থা নেই; কিন্তু বিষয়টি আসলে এ রকম নয়। রাসুল (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, যারা অসচ্ছল, যাদের কাছে সদকাযোগ্য অর্থ-কড়ি নেই, তাদের জন্যও সদকা করার রাস্তা খোলা আছে। সদকা মূলত দুই প্রকার১. অর্থ-সম্পদের মাধ্যমে সদকা। ২. আমলের মাধ্যমে সদকা।
নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে আমলের মাধ্যমে সদকার ব্যাখ্যা দেওয়া হলো।

আমলের মাধ্যমে সদকা

তাসবিহ, জিকির ইত্যাদি : আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-এর কিছুসংখ্যক সাহাবি তাঁর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, ধন-সম্পদের মালিকরা তো সব সওয়াব নিয়ে নিচ্ছে। কেননা আমরা যেভাবে নামাজ আদায় করি তারাও সেভাবে আদায় করে। আমরা যেভাবে সিয়াম পালন করি তারাও সেভাবে সিয়াম পালন করে।

কিন্তু তারা তাদের অতিরিক্ত সম্পদ দান করে সওয়াব লাভ করছে অথচ আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা কি তোমাদের এমন কিছু দান করেননি, যা সদকা করে তোমরা সওয়াব পেতে পার? আর তা হলো প্রত্যেক তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) একটি সদকা, প্রত্যেক তাকবির (আল্লাহু আকবার) একটি সদকা, প্রত্যেক তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ) বলা একটি সদকা, প্রত্যেক লাইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা একটি সদকা। (মুসলিম, হাদিস : ২২১৯)

সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে

নিষেধ : মানুষকে সৎ কাজের আহ্বান করা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য উৎসাহী করাও সদকা সমতুল্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক ভালো কাজের আদেশ দেওয়া এবং মন্দ কাজ করতে দেখলে নিষেধ করা ও বাধা দেওয়া একটি সদকা।

(মুসলিম, হাদিস : ২২১৯)

নম্র ব্যবহারও ভালো কাজ : মহান আল্লাহ প্রতিটি পুণ্যের কাজকেই সদকা হিসেবে গণ্য করেন।

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতিটি পুণ্যই

দান-খয়রাতস্বরূপ। তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাৎ এবং তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের পাত্রে একটু পানি ঢেলে দেওয়াও সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত।

(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩০৪)

উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, সদকা শুধু ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আমল নয়, অসচ্ছল দরিদ্র ব্যক্তিরাও কিছু কিছু কাজের মাধ্যমে সদকার সওয়াব পেতে পারে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ