<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের বেশির ভাগ শারীরিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আহতদের ৬৫ শতাংশের ট্রমা-পরবর্তী পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেসে ডিস-অর্ডার দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ তাঁরা বারবার সহিংসতার স্মৃতিতে আতঙ্কিত বোধ করেন। মনে করেন, তাঁর জীবনে আবার সেই ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানসিক এমন অসুস্থতায় কাউন্সেলিংয়ের সুপারিশ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চোখের সামনে সহপাঠীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা, রক্তে ভিজে যাওয়ার মতো ঘটনা দেখেছে মানুষ। এমন আক্রমণ ও আগ্রাসনের সময় যত মানুষ শারীরিকভাবে আহত হয়, মানসিকভাবে আহত হয় তার চেয়ে বহুগুণ বেশি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু আহতরাই যে এই সমস্যায় ভুগছেন, তা নয়। আন্দোলনে সহিংস ঘটনা যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এঁদের একজন কমল চন্দ্র দাশ (৩৪)। জুলাইয়ে আন্দোলনের সময় ঢাকায় তিনি আহতদের অনেককে হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তাঁর কোলে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পেশায় চিত্রগ্রাহক (ক্যামেরাম্যান) কমল চন্দ্র নাটক, তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম তৈরির কাজ করেন। থাকেন রামপুরা এলকায়। বর্তমানে তাঁর চিকিৎসা চলছে রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কমল চন্দ্রের মা কল্পনা রানী কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চোখ বন্ধ করলে ছেলেটা এখনো বীভৎস দৃশ্য দেখতে পায়। গুলি আর সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ এখনো কানে বাজে, টিয়ার শেলের ধোঁয়া, বড় বড় ধারালো অস্ত্র তার চোখে ভেসে ওঠে। ঘুমের মধ্যে প্রায়ই ও আঁতকে ওঠে। রাস্তায় পড়ে থাকা আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের আর্তনাদ-গোঙানি এখনো শুনতে পায়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কল্পনা রানী আরো বলেন, কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে প্রচণ্ড বিরক্তি বোধ করে ছেলেটা। ঘুমাতে পারে না। কোনো কাজে মন লাগাতে পারে না।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে রানা প্লাজা ভবন ধসে আহত এবং ভবনের নিচে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের অনেকে পরবর্তী সময়ে পিটিএসডিতে আক্রান্ত হন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের একদল চিকিৎসক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলির আঘাত নিয়ে চিকিৎসা নেওয়া ৩১ জন রোগীর ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৬৫ শতাংশের পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার, যেটাকে সংক্ষেপে পিটিএসডি বলা হয়। অর্থাৎ যে ঘটনা বা অভিজ্ঞতা ব্যক্তির মনে আঘাত সৃষ্টি করেছে তা বারবার ফিরে আসছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মেন্টাল হেলথ ইমপ্যাক্ট অ্যামাং দ্য রেসপন্ডেন্টস অব জুলাই ম্যাসাকার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">  নামের এই সমীক্ষার নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল আহসান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, সাধারণত পিটিএসডি প্রকাশ পায় এক মাস পর থেকে। ছোট আকারে করা এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬৫ শতাংশের তীব্র আঘাত উত্তর মানসিক চাপ বা পিটিএসডি উপসর্গ রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে চালানো এই সমীক্ষার প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন কেউ দুর্ঘটনা, সহিংসতা, দুর্যোগের শিকার বা মর্মান্তিকভাবে প্রিয় মানুষকে হারানোর মতো ঘটনা দেখার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান, তখন পিটিএসডিতে আক্রান্ত হন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল আহসান বলেন, এসব উপসর্গ থাকলেও বেশির ভাগ মানুষ এটাকে রোগ মনে করছে না। তারা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, চিকিৎসার খরচ, কর্মজীবনে ফেরা, পরিবার ও  সংসার কে দেখবে বা কিভাবে চলবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ নিয়ে এক ধরনের অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে আছে। মূলত এসব কারণে ঘুমের মধ্যে আঁতকে ওঠা, ঘুম না হওয়া বা মানসিক উদ্বেগের কারণ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিএসএমএমইউয়ের সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঘুমের সমস্যায় ভুগছে ৫৩ শতাংশ রোগী। অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগজনিত সমস্যা ছিল ৪২ শতাংশের এবং ডিপ্রেশন বা তীব্র মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিল ১১ শতাংশ রোগী। হাইপার অ্যারাউজাল ডিপ্রেশন বা আঘাতমূলক আক্রান্তরা সহজেই চমকে ওঠার সমস্যায় এবং সাধারণ সমস্যা ছিল ৮ শতাংশ রোগীর।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুই পদ্ধতিতে এই সমীক্ষাটি করা হয়। একটি হলো তীব্র আঘাতপ্রাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, অন্যটি রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য ও বিষণ্নতার মাত্রা নির্ণয় করা। এতে অংশ নেওয়া ২৭ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে পাঁচজন ছিলেন অন্ধ। একজন রোগীর সাতবার সবচেয়ে বেশি অপারেশন করা হয়েছে। আর একাধিক সার্জারি হয়েছে সাতজনের। তিনবার সার্জারি তিনজনের এবং চারবার সার্জারি হয়েছে দুজনের।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের খসড়া তালিকা অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ৭৩৫। আহত ১৯ হাজার ২০০ জনের বেশি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছে, যারা হাতহত হয়েছে, এদের পরিবার, চিকিৎসক যারা আহতদের চিকিৎসা দিয়েছে, সাংবাদিক যারা মাঠ পর্যায়ে প্রত্যক্ষ করেছে, তাদের সবাই এক ধরনের মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে গেছে, যেটাকে চিকিৎসকের ভাষায় ট্রমা বলা হয়। এই ট্রমা-পরবর্তী মানসিক সমস্যা পিটিএসডি দেখা দিয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, পিটিএসডি প্রতিরোধে করণীয় হলো ট্রমা-পরবর্তী মানসিক বিপর্যয়ের ধরন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা প্রদান। এসব রোগীর দুইভাবে সেবা দেওয়া যায়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১. মনঃসামাজিক সেবা, ২. ওষুধভিত্তিক সেবা। মনঃসামাজিক সেবার একটি হলো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। চিকিৎসা সংকট যেন না থাকে। কারণ এতে রোগীর মানসিক ট্রমা বাড়বে।</span></span></span></span></span></p>