।
সম্পর্কিত খবর
‘আমরা ১৬ জন। উচ্চপদস্থ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা, জেলা দায়রা জজ, শিক্ষকও রয়েছেন। ২০১০ সালে জমি কিনেছিলাম। মাটি ভরাট করে ঘর তুলে বাউন্ডারি ওয়ালও দিই।
ওরা কারা—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওদের নেতা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের ভাই রফিকুল আলম। সঙ্গে আরো আছে কুষ্টিয়া এলাকার সাবেক এক উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, কসাই খলিল, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহীউদ্দিন, সাদিক অ্যাগ্রোর মালিকের কয়েকজন নিকটাত্মীয়সহ অনেকে। মাহবুবউল আলম হানিফ নেপথ্যে থেকে এই দখলবাজির দেখভাল করতেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাও তাঁদের সঙ্গে জড়িত বলে শুনেছি।
ভুক্তভোগী অনেক জুলুম-নির্যাতনের কথা জানিয়ে বললেন, ‘আপনারা হয়তো আমার কথাগুলো রেকর্ড করে রাখছেন। কিন্তু অনুরোধ, আমার নাম-ঠিকানা প্রকাশ করবেন না। তাহলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’
এ ধরনের অভিযোগ রাজধানীর কালশী, মাটিকাটা, পল্লবী ও ক্যান্টনমেন্টসংলগ্ন এলাকার অনেকের। তাঁদের দাবি, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সাধারণ মানুষের ও সরকারি জমি, খাল জবরদখল করে নেওয়া আর্টিকেল স্ট্রাকচারের বিরুদ্ধে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি জবরদখল : অভিযোগকারীদের বক্তব্য এবং প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় জানা যায়, হত্যাসহ সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি এবং সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি জবরদখলের সঙ্গে জড়িত অনেককে সঙ্গে নিয়ে ওই সব এলাকায় একটি সংঘবদ্ধচক্র দীর্ঘদিন ধরে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ‘আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেড’ নামের একটি কম্পানির হর্তাকর্তা ওরা। ‘আরজেড বিল্ডার্স লিমিটেড’ নামের আরেকটি কম্পানিতেও রয়েছে তারা। এরই মধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি জবরদখল করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ নেতা আওলাদ হোসেন সাক্কুর জমি দখল করার জন্য আর্টিকেলের লোকজন তাঁর জমির ওপর সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় এবং চারপাশের বাউন্ডারি ভাঙচুর করে বলে খবর পাওয়া যায়। এ ধরনের জবরদখলের অভিযোগ অনেক।
‘আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেড’ ও ‘আরজেড বিল্ডার্স লিমিটেড’ মাটি ভরাট করে প্লট বিক্রির পাশাপাশি ভবন নির্মাণের কাজও করে থাকে। প্রধান অফিস বনানীর ১৭ নম্বর রোডের রূপসা টাওয়ারে। আর সাইড অফিস ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ইসিবি-কালশী মেইন রোডের পাশে। রূপসা টাওয়ারের অফিসে গত সপ্তাহে দুই কর্মদিবসে গিয়েও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেখা মেলেনি।
কম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ৬০ থেকে ৭০ ফুট চওড়া কালশী খালের একাংশ এবং সরকারি রাস্তা ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্রায় ৩০ বিঘা সরকারি জমি দখল ও ভরাট করে তা প্লট আকারে বিক্রির অপচেষ্টা চলছে। এই সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। খালটি দখল ও ভরাট করায় ভাসানটেক, মিরপুর-১০, ১১, ১৪, পল্লবী ক্যান্টনমেন্ট, মানিকদী, মাটিকাটাসহ বিশাল এলাকার স্যুয়ারেজের এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন বাধার মুখে। দখলদারদের প্রচারণা—এই খাল উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বসবাসের জন্য কালশী খালের পাশে সরকারিভাবে তিনটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ও বস্তিবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই খালটির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেড সরকারি এই খালের দুই পাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে ভরাটের কাজ শুরু করে। এ কাজ গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত চালু ছিল। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, খালটির প্রস্থ ছিল ৭০ ফুট। কিন্তু ভরাটের ফলে বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ ফুট রয়েছে। আর্টিকেল স্ট্রাকচারকে সিটি করপোরেশন খাল ভরাট করতে নিষেধ করলেও তা অগ্রাহ্য করা হয়। এলাকাবাসী গত বছর শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের কাছে এই খাল ও সরকারি জমি দখলমুক্ত করার জন্য লিখিত আবেদন জানায়। এর অনুলিপি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পরও একই অবস্থা বহাল।
এসব বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, এনডিসি গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুধু কালশী সরকারি খাল নয়, সব খাল সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। আগামীকাল (রবিবার) উত্তরের ১২টি খাল নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক আছে। আমরা আপাতত বৃষ্টির পানি যাতে সহজে সরতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে চাচ্ছি। বর্ষা মৌসুমকে মাথায় রেখে আগে খালগুলো পরিষ্কার করব। পরে দখলমুক্ত করার বিষয়ে কাজ করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘খাল যেটুকু দখলমুক্ত আছে, তা পরিষ্কার করতে আমাদের কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। কিন্তু দখলমুক্ত করতে গেলে আইনের অনেক বিষয় থাকে। অনেক রকম জটিলতা পার করে সেটি করতে হয়। তাই আমরা পরিষ্কার করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
কম্পানির হর্তাকর্তা যাঁরা : আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল আলম চুন্নু আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বড় ভাই। কম্পানিতে তাঁর শেয়ার দুই হাজার ৭০০টি। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের ধারণা, কাগজে-কলমে না থাকলেও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফই আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেডের মূল নিয়ন্ত্রক ও সুবিধাভোগী। তাঁর সঙ্গে সরকারের সাবেক ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাও রয়েছেন।
কম্পানির পরিচালক (সেলস) তরিকুল ইসলাম গত ২০ ফেব্রুয়ারি কালের কণ্ঠের কাছে দাবি করেন, ‘রফিকুল আলম মাঝেমধ্যে সাইড অফিসে আসেন। তবে বনানীর রূপসা টাওয়ারের অফিসে এখন কেউ যাচ্ছেন না।’ কম্পানির লোকজন কালের কণ্ঠকে জানান, তরিকুল ইসলামই কম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডির সঙ্গে যোগাযোগ মাধ্যম। কম্পানির এমডির সঙ্গে কম্পানিসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে কথা বলতে বা দেখা করতে চাইলে তরিকুল ইসলাম জানান, তিনি চেষ্টা করবেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি হোয়াটসঅ্যাপে ‘আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেড’ ও ‘আরজেড বিল্ডার্স লিমিটেড’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করে এ সম্পর্কে কম্পানির এমডি বা তরিকুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে তরিকুল ইসলাম মেসেজ পাঠান, ‘আমি কালকে (২২-০২-২৫) আপডেট দিচ্ছি।’ কিন্তু সে আপডেট আর পাওয়া যায়নি।
কম্পানির এমডির দায়িত্বে রয়েছেন মো. তারেক আল মামুন। কম্পানিতে তাঁর শেয়ার দুই হাজার ৫০০টি। তিনি কুষ্টিয়া দৌলতপুরের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। বর্তমানে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সহযোগী একটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টায় রয়েছেন বলে জানা যায়। হঠাৎ বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া তারেকের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান সাদিক অ্যাগ্রোর সঙ্গে ব্যবসা এবং তাঁর ব্যবসায় আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের ছেলে বিপ্লবের বিনিয়োগ রয়েছে বলেও জানা যায়। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতির ছবি দেখা যায়। সূত্র জানায়, একসময় তারেক আল মামুন দুজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার সন্তানদের গৃহশিক্ষক ছিলেন। ওই পরিচয় ব্যবহার করে এবং সে সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার মদদপুষ্ট হয়ে রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান। প্রাথমিকভাবে মো. তারেক আল মামুনের বিপুল সম্পদের যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা বিস্ময়কর।
কম্পানির অন্যতম পরিচালক হচ্ছেন কসাই খলিল খ্যাত মো. খলিলুর রহমান। জানা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত খলিল বাউনিয়া বাঁধ বাজারে নিজ দোকানে কসাইয়ের কাজ করতেন। ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক। জন্ম শরীয়তপুরে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁর পিতা ইউনূস ভাণ্ডারী তেজগাঁও রেললাইন বস্তি ও ভাসানটেক বস্তিতে বসবাস করেন। পরে বাউনিয়া বাঁধ দুই হাজার ৬০০ বাস্তুহারা পরিবার পুনর্বাসন প্রকল্পে ব্লক-বিতে পৌনে এক কাঠার বাসা বরাদ্দ পায়। দরিদ্র পিতার সন্তান খলিলুর রহমানের উত্থান ১৬ বছর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। বর্তমানে তিনি শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক। পল্লবী থানায় কর্মরত ছিলেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, খলিল ওই থানার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তিনি মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবেও পরিচিত এবং প্রতারণা, মারামারি, ধর্ষণসহ অনেক মামলার আসামি। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কিছু মামলার ফাইনাল রিপোর্ট করিয়ে নিয়েছেন। খলিলের বিরুদ্ধে মামলার মধ্যে আছে বা ছিল, বাউনিয়া বাঁধ ডি-ব্লকের হাজেরা খাতুনকে জোর করে উচ্ছেদ করা। এ নিয়ে পল্লবী থানায় মামলা হয়, কলাবাগান বস্তির মো. আবুল কাশেমের বোনের ঘর দখল করতে গিয়ে ওই বোনের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে পল্লবী থানায় মামলা হয়; খালেকুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি তাঁর জমিতে মাটি ভরাট করতে গেলে তাঁকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে পল্লবী থানায় খলিলের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়; বাউনিয়া বাঁধের ই-ব্লকের বাসিন্দা মো. আসলামের ছেলেকে চাঁদা না দেওয়ায় গুরুতর জখম করা হয়। এ বিষয়েও পল্লবী থানায় খলিলের বিরুদ্ধে মামলা হয়; খলিলের নেতৃত্বে কৃষক লীগের সভাপতি মাকসুদুল আলমের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে খলিলের সন্ত্রাসী দল দখল করে নেয় মাকসুদুল আলমের জমি। এ বিষয়ে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পল্লবী থানায় মামলা হয় (মামলা নম্বর-৮২/৮৮৯)। সেনপাড়া ও বাউনিয়া মৌজায় অনেক জমির মালিক খলিলের দাপটের কাছে জিম্মি। রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। খলিল সর্বশেষ বাউনিয়া মৌজার বৈশাখী খামারের ভেতর বিভিন্ন মালিকের জমি জোরজবরদস্তি দখলে নিয়ে মাটি ভরাট করে বিক্রির পাঁয়তারা করছিলে বলে অভিযোগ রয়েছে। খলিলের বিরুদ্ধে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অন্যের জমি নিজের দাবি করে বিক্রির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সেনপাড়া মৌজায় এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। সেনপাড়া মৌজায় ১৩ কাঠা জমির জাল কাগজ তৈরি করে দখলে রেখেছেন। প্রকৃত মালিকদের দাম দিয়েছেন ৪০ লাখ টাকা। আর পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রির চেষ্টা করছেন। বাউনিয়া মৌজায় বৈশাখী খামারের ভেতর বিভিন্ন মালিকের জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে মাটি ভরাটের পর জাল কাগজ তৈরি করে জমি বিক্রির পাঁয়তারা করছেন বলে সূত্র জানায়। কোনো মালিক তাঁর জমির কাছে গেলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন খলিল। মালিকরা থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয় না। বর্তমানে ১০০ কোটি টাকার মালিক তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতেও সাহস করে না অনেকে। পুলিশকে ম্যানেজ করে কিছু মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, থানা থেকে এসব বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ করা হয় না। বলা হয়, জমির মামলা কোর্টে, আমাদের কাছে না। ৫ আগস্টের পর থেকে খলিলুর রহমানকে তাঁর নিজ এলাকায় এবং কম্পানির অফিসে দেখা যায়নি। কিন্তু তাঁর সহযোগীরা এলাকায় সক্রিয়।
কম্পানির আরেক ডিরেক্টর ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মহীউদ্দিন আহমেদ। আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেডে তাঁর শেয়ারের সংখ্যা দুই হাজার ২০০টি। মহীউদ্দিনের বিরুদ্ধে গত বছর ২৭ মে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের জমি দখল করে কবলাসূত্রে মালিক হিসেবে মেজর জেনারেল পদবির একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার শাশুড়ির নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর ছোট ভাই পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে মহীউদ্দিন আহমেদও লাপাত্তা।
বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণসহ ছয় দফা দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে পোশাক প্রস্তুতকারী মজুরি বৃদ্ধি সংগ্রাম পরিষদ। ছবি : কালের কণ্ঠ
।সম্ভাব্য নতুন দলের আসল পরীক্ষা ভোটের মাঠে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। গতকাল শনিবার ঢাকায় ব্র্যাক সেন্টারে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।
রেহমান সোবহান বলেন, ‘কেবল সাইনবোর্ড থাকলেই রাজনৈতিক দল হয়ে যায় না। প্রকৃত রাজনৈতিক দলের গণভিত্তি থাকে।
তিনি বলেন, ‘দাবি আদায়ের জন্য কিছু লোক জোগাড় করে রাস্তা বন্ধ করা এখন রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। সত্য-অসত্য অভিযোগ তুলে মব দ্বারা মানুষকে আক্রমণ করা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় সভ্য রাজনৈতিক বিতর্ক করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রেহমান সোবহান বলেন, ‘টাকার ক্ষমতা এখন রাজনীতিকে বেঁধে ফেলেছে। জাতীয় সংসদের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রত্যেকের আর্থিক স্বার্থ আছে। আওয়ামী লীগের ছেড়ে যাওয়া ব্যবসার জায়গাগুলো এখন অন্যরা দখল করেছে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্র চর্চার জন্য সংস্কার কমিশনগুলো কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত করার মধ্য দিয়ে আমলাতন্ত্রকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে।
সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভোটে যাঁরা জেতেন, তাঁরা সব কিছু নিয়ে নেন। এরপর আর্থিক সুবিধা হারানোর পাশাপাশি জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কায় তাঁরা ক্ষমতা ছাড়তে চান না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দূরে সরিয়ে রাখতে বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। দলগুলোর যাঁরা ক্ষমতায় আসার কথা ভাবছেন, তাঁরা কী বিচার বিভাগকে স্বাধীনতা দেবেন?’
সংস্কার একটি জটিল প্রক্রিয়া, এমনটি উল্লেখ করে সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, কী করে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
সম্মেলনের আরেকটি অধিবেশনে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক দল ও সরকারগুলোর নীতিনির্ধারকদের কথা ও কাজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মিল না থাকার কারণে দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশিরাও বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, ‘নাগরিকদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে টেকসই রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রাজনীতিকরা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতায় গিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন, নাগরিকদের কাছ থেকে এমন আস্থা পাওয়া রাজনীতিকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ সবাই ক্ষমতায় গেলে নিজেদের করা প্রতিশ্রুতিগুলোর কথা ভুলে যান।’
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা ও ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ না করে রাষ্ট্রপতি আসলে কিছু করতে পারেন না। এতে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি অংশে পরিণত হন।’
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, “নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থায় তরুণদের স্থান দেওয়ার বিষয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু বয়সের বাইরেও ‘প্রান্তিক’ জনগোষ্ঠীকে স্থান করে দিতে হলে অন্য অনেক কিছু বিবেচনায় নেওয়ার আছে। যেমন—নারী, জাতিসত্তা, ধর্ম, জন্মস্থানসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অংশীদারত্বমূলক করা যেতে পারে।”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে মানুষ বিরক্ত। মানুষ শান্তি চায়। ন্যূনতম মর্যাদা চায়। আর কিছু করার আগে যেন তার মত নেওয়া হয়—এটি চায়। এই মত তারা ভোটসহ বিভিন্ন উপায়ে দিতে চায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ এম সাহান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আপসে পৌঁছার সুযোগ থাকা দরকার। এ কারণে সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী আইনসভার উচ্চকক্ষ গঠিত হলে সেই কক্ষকে কিছু ক্ষমতা ও এখতিয়ার দেওয়া দরকার।’
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে একটি অধিবেশনে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা যা বলে থাকেন, তা বলতে হয় বলে বলেন। কথার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল থাকে না।’
‘কৃষি প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক অধিবেশনে আলোচকরা বলেন, দেশের আয় প্রবৃদ্ধির বড় উৎস কৃষি খাত। কিন্তু কৃষিপণ্য উৎপাদনে দেশে আশানুরূপ বহুমুখীকরণ হয়নি। তাই লাভজনক না হওয়া সত্ত্বেও দেশের ৫৫ শতাংশ কৃষক শুধু ধান চাষ করেন। এ অধিবেশন সঞ্চালনা করেন আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) দারিদ্র্য, জেন্ডার ও অন্তর্ভুক্তিবিষয়ক পরিচালক ড্যানিয়াল গিলিগান।
মূল প্রবন্ধে গবেষক আখতার আহমেদ বলেন, ‘কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির ওপর দেশের আয় প্রবৃদ্ধির বড় ধরনের যোগসাজশ রয়েছে। কারণ কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক খাত। তাই এ খাতের প্রবৃদ্ধি হলে সার, সেচ যন্ত্রপাতি, কীটনাশক, প্যাকেজিং, পণ্য পরিবহন, প্রক্রিয়াকরণ, গুদামজাতকরণ, বিপণন ইত্যাদি খাতেও প্রবৃদ্ধি হয়; বিশেষ করে গরিব মানুষের আয় বৃদ্ধিতে কৃষি প্রবৃদ্ধি সরাসরি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ খাতের প্রবৃদ্ধির সম্প্রসারণ হবে কিভাবে।’
প্রবন্ধে কৃষি প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণের জন্য তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন আখতার আহমেদ। এগুলো হলো ব্যাংকঋণ তথা অর্থায়নের অভাব, প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন করতে না পারা। এ কারণে লাভজনক না হওয়া সত্ত্বেও ৫৫ শতাংশ কৃষক ধান চাষ করেন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং পতিত ফ্যাসিস্টের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন দাবিতে সারা দেশে বিএনপির সমাবেশ চলছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা সংস্কারের নামে সময় নষ্ট না করে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানান। তাঁদের মতে, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ সংস্কার হয়ে গেছে।
বিভিন্ন জেলা থেকে কালের কণ্ঠের সংশ্লিষ্ট অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
জয়পুরহাট : বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ সংস্কার হয়ে গেছে। এরপর আবার কিসের সংস্কার? মানুষ অনেক ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষায় আছে একটি সুন্দর ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখার জন্য। কাজেই রমজানের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা না দিলে আগামী দিনে আরো বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
গতকাল বিকেলে শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলজার হোসেন। বক্তব্য দেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফাসহ অন্য নেতারা।
পঞ্চগড় : এ বছরেই সরকারকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে এবং এ বছরেই তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। গতকাল বিকেলে পঞ্চগড় জেলা শহরের সড়ক ও জনপথের মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘আমি ডক্টর ইউনূসকে বলব, ভাই, আপনি ভালো লোক, এদের পাল্লায় পড়বেন না। বিএনপিকে রাস্তায় নামাইয়েন না। তারেক সাহেবের ১৭ বছর চেষ্টা উদ্যোগ সংগ্রাম কম কথা নয়। সে তো প্রধানমন্ত্রী হবে। এ বছরের মধ্যে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবে।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আসবেন, বরণ করব। বিচার হবে, ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলবেন। একটা দুটো মারেন নাই তো, হাজার হাজার গণহত্যা করেছেন। একটা ব্যাংকেও টাকা নেই। এত বড় চোর পরিবার।’
সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির, রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহবায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু প্রমুখ।
নরসিংদী : গতকাল বিকেলে শহরের কাউরিয়াপাড়া পৌর ঈদগাহ মাঠের সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা যে-ই রাজনীতি করি না কেন রাজনীতি করতে হবে জিয়ার মতবাদের ওপরে। শহীদ জিয়া এই দেশে ইসলামী মূল্যবোধ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও সাম্য শিখিয়ে গেছেন। এই দেশে যদি সংস্কার হতে হয় এই তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে হতে হবে।’
কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন এখনো শেষ হয়ে যায়নি, আপনারা প্রস্তুত থাকুন। আমাদের আরো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সীমান্তের ওপার থেকে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ওই বজ্জাত মহিলাকে আশ্রয় দিয়ে হিন্দুস্তান যেই অপরাধ করেছে সেই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকনের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল।
ঝালকাঠি : কোনো অবস্থায়ই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। গতকাল দুপুরে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব দাবি জানান।
জয়নুল আবেদীন জামায়াতকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘একদিকে তারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছে, অন্যদিকে আবার সারা দেশে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা দিচ্ছে। ফ্যাসিবাদী সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু তাতেও তাদের হুঁশ হয়নি। জামায়াতের কাজই হচ্ছে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা।’
জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মো. সৈয়দ হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহাবুবুল হক নান্নু, সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো প্রমুখ।
চান্দিনা (কুমিল্লা) : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, ‘ড. ইউনূস সরকার সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করে দিনের পর দিন সরকারে থাকায় প্রমাণ হচ্ছে, এই সরকারের মধ্যে আওয়ামী লীগের ভূত ঢুকেছে।’
গতকাল বিকেলে উপজেলার ছয়ঘড়িয়া খেলার মাঠে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
সংস্কার কমিটিতে থাকা ব্যক্তিদের উদ্দেশ করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন বলেন, ‘আপনারা গাড়িটারি চেপে যথেষ্ট আরাম-আয়েসেই আছেন। আর সংস্কার লাগবে না, অনেক হয়েছে। তারেক রহমানের ৩১ দফায় মনোযোগ দিলেই সব সমস্যার সমাধান ও সংস্কার সম্পন্ন হবে।’
কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. আকতারুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তার বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগ সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূইয়া, বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় বিএনপি কুমিল্লা বিভাগ সহসাংগঠনিক সম্পাদক হাজি মোস্তাক মিয়া।
ময়মনসিংহ : গতকাল বিকেলে তারাকান্দা উপজেলা সদরে আয়োজিত জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেছেন, বিএনপি যেন নির্বাচনে আসতে না পারে, নির্বাচন যেন না হয়, সেই লক্ষ্যে বিএনপিকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র চলছে।
একটি দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তারা আজ স্লোগান দেয়—দুই সাপের এক বিষ, নৌকা আর ধানের শীষ। এখন নির্বাচন হলে বিএনপি ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ ভোট পাবে। আপনারা ১০ পার্সেন্ট ভোট পেলে স্যালুট দেব। আপনারা ব্যাংক দখল করে বলেন বিএনপি চাঁদাবাজ।’
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক এ কে এম এনায়েত উল্লাহ কালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ্ ওয়ারেস আলী মামুন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ প্রমুখ।
রংপুর : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের বলেছেন, ‘এই সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। কিন্তু এই সরকার দীর্ঘদিনের জন্য নয়। তাই আমরা দাবি করছি, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’
গতকাল বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠের সভায় আবুল খায়ের এসব কথা বলেন। সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, জেলা বিএনপির আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু প্রমুখ।