পর্যটন শহর কক্সবাজার, পার্বত্য জেলা বান্দরবানসহ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে রাত-দিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। ১৫০ কিলোমিটারের ব্যস্ততম এ মহাসড়কে পথে পথে বাঁক, সরু রাস্তা, বেপরোয়া গতিতে যান চলাচল, লবণবাহী গাড়ি থেকে পড়া পানিতে পিচ্ছিল সড়কসহ বিভিন্ন কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত তিন দিনে ওই মহাসড়কের চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় পৃথক পৃথক দুর্ঘটনায় শিশুসহ ১৫ জনের প্রাণহানি এবং প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পটিয়ার মইজ্জার টেক থেকে মনসার টেক, বাদামতল, গৈড়লার টেক, আমজুর হাট টেক, পটিয়া পোস্ট অফিস মোড়, আদালত গেট মোড়, থানার মোড়, ডাকবাংলোর মোড়, কমল মুন্সির হাট মিলে ৩০টি পয়েন্টে এবং চন্দনাইশ উপজেলার ২০ পয়েন্টে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।
সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, পটিয়া মনসা থেকে দোহাজারী শঙ্খ ব্রিজ পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে কক্সবাজারে চকরিয়ার ফাসিয়াখালী, ইনানি রিসোর্ট, বানিয়ারছড়া, পৌরসভার ভেণ্ডিবাজার, ইসলামপুর, জিগদাবাজার, ডুলাহাজারাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনাপ্রবণ বাঁকসহ শতাধিক দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ, চট্টগ্রাম দক্ষিণের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে (জাঙ্গালিয়া), সেখানে ওভারটেকিং নিষেধ থাকলেও তা মানা হয়নি।’
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি শুভরঞ্জন চাকমা বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অনেক বাঁক আছে।
এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০টি বাঁক অতি ভয়ংকর। লোহাগাড়ার যে এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বাঁক তো আছেই, তার ওপর সড়কটি পাহাড়ি এলাকা। রাস্তার পশ্চিম পাশ উঁচু ও পূর্ব পাশ নিচু।’
তিনি আরো বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে সওজ একটু নড়েচড়ে বসে।
আজ ওই স্থানে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। স্পিড ব্রেকার (গতি নিরোধক) দেওয়া হচ্ছে।’
কক্সবাজারের চকরিয়ার কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করে জানান, ‘তিন চাকার টমটম, ইজি বাইকসহ ধীরগতির বিভিন্ন যানবাহন অবাধে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে।’
গত সোমবার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে দেখা যায়, পটিয়া বাইপাসের পর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটারের বেশির ভাগ সড়ক সরু।
এমনই কিছু কিছু সড়কে এক বাঁক থেকে অন্য বাঁকের দূরত্ব কম থাকার কারণে যানবাহন দেখা দুরূহ হয়ে যায়। বেশির ভাগ এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের টহল টিম দেখা যায়নি। যানবাহন চলছে নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা জানান, শুধু পর্যটনশিল্প নয়, কক্সবাজারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এসব কারণে অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখনো চার লেন করা হয়নি।