ঢাকা, সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫
৩ চৈত্র ১৪৩১, ১৬ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫
৩ চৈত্র ১৪৩১, ১৬ রমজান ১৪৪৬

পাহাড়ে অপহরণ চাঁদাবাজি চলছেই

মোবারক আজাদ
মোবারক আজাদ
শেয়ার
পাহাড়ে অপহরণ চাঁদাবাজি চলছেই

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৭ বছর পার হলেও পাহাড়ের তিন জেলায় এখনো পূর্ণ শান্তি ফেরেনি। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এখনো অপহরণ, বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও দখল নিয়ে তৎপর। গত সাড়ে তিন মাসে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এ তিন জেলায় অন্তত ৫৫ জনকে অপহরণ করা হয়।

এ ছাড়া মোবাইল কম্পানির কাছ থেকে চাঁদা না পেয়ে চাঁদাবাজরা অন্তত ১৪টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারে ভাঙচুরসহ বিদ্যুৎ ও কেবল সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত করে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, অপহরণকৃতদের মধ্যে অনেককেই মুক্তিপণ দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্তি পেয়েছে।

সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনে সেনাবাহিনী ভূমিকা রাখছে।

সর্বশেষ গত ৭ মার্চ রাঙামাটির কাউখালীতে ইউপিডিএফের (মূল) শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একটি গোপন আস্তানার সন্ধান পায় সেনাবাহিনী। সেখানে অভিযানে গেলে টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে আস্তানা থেকে ১৭ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, একটি বাইনোকুলার, একটি ওয়াকিটকি সেট, একটি হার্ডডিস্ক, সন্ত্রাসীদের ইউনিফর্ম, চাঁদা আদায়ের রসিদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় সূত্র, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, জেএসএস (মূল), জেএসএস (সংস্কার), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-সংস্কার), ইউপিডিএফ (মূল),  মগ লিবারেশন পার্টিসহ (এমএলপি) কয়েকটি সংগঠন এসব ঘটনায় জড়িত।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার (এসপি) আরেফিন জুয়েল বলেন, যেগুলো আমাদের আওতার ভেতর সেগুলোতে নজরদারি রাখার চেষ্টা করছি। পাহাড়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সেনাবাহিনী ও বিজিবির সঙ্গে কাজ করছি।

উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা : ২ ফেব্রুয়ারি আলীকদম জোনের লামা উপজেলার কমলা বাগানপাড়া এলাকা থেকে অজ্ঞাতপচিয় সন্ত্রাসীরা সাতজন বাঙালি কাঠ সংগ্রহকারী শ্রমিককে অপহরণ করে। পরে মোবাইল ফোনে সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলে তিন লাখ টাকা দিলে অপহৃত ব্যক্তিদের ছাড়িয়ে আনা হয়।

৫ ফেব্রুয়ারি রামগড় জোনের যৌথ খামার এলাকা থেকে ট্রাকচালক চাঁদ মিয়াকে অপহরণ করে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

১১ ফেব্রুয়ারি গুইমারা উপজেলার তৈকর্মা এলাকা থেকে সৃষ্টি কুমার ত্রিপুরাকে অপহরণ করে তাঁর বাবার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় মুক্তিপণ ছাড়াই অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়।

এ ছাড়া ২ ফেব্রুয়ারি ইউপিডিএফের সদস্যরা খাগড়াছড়ির সিন্দুকছড়ির মায়ারখিল এবং সুদুরখিলে রবির দুটি মোবাইল টাওয়ারে আগুন দেয়। ৬ জানুয়ারি কংচাইউ মারমা মগ লিবারেশন পার্টির (এমএলপি) নেতা পরিচয়ে মানিকছড়ির রবি মোবাইল টাওয়ার ব্যবস্থাপকের কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। ২১ জানুয়ারি সুদুরখিল এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীরা চাঁদা না পাওয়ায় রবি মোবাইল টাওয়ার ভাঙচুর করে। ২২ জানুয়ারি ইউপিডিএফ (মূল) দলের সন্ত্রাসীরা নানিয়ারচরের বেতছড়িপাড়ায় একটি টেলিটক ও একটি রবি টাওয়ার এবং গিলাছড়িতে একটি রবি টাওয়ারের মোবাইল নেটওয়ার্কের কেবল বিচ্ছিন্ন করে।

২৮ জানুয়ারি ইউপিডিএফ (মূল) দলের সন্ত্রাসীরা নানিয়ারচরের বেতছড়ি জেনারেল ওসমানী উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় একটি রবি ও একটি টেলিটক টাওয়ার এবং বুড়িঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাপমারা এলাকায় একটি রবি টাওয়ারের মোবাইল নেটওয়ার্কের কেবল ও বৈদ্যুতিক সংযোগ কেবল বিচ্ছিন্ন করে। ২৯ জানুয়ারি সিন্দুকছড়ি জোনের আসালংপাড়ায় ইউপিডিএফ (মূল) দলের সন্ত্রাসীরা রবি মোবাইল নেটওয়ার্কের কেবল ও বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।

৩ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির কুতুকছড়ি ইউনিয়নের মধ্যপাড়া থেকে ইউপিডিএফ (মূল) দলের সন্ত্রাসীরা বিটিসিএল কম্পানির লাইনম্যানের কাছ থেকে স্পাইসিক মেশিন ছিনিয়ে নেয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি একই দলের সন্ত্রাসীরা রাঙামাটির সাপছড়ি ইউনিয়নসংলগ্ন মনজুরানি রেস্টুরেন্ট এলাকায় চাঁদার দাবিতে রবি ও এয়ারটেল টাওয়ারের ইন্টারনেট কেবল কেটে দেয়।

এর আগে ১১ ডিসেম্বর মাটিরাঙ্গার জারিচন্দ্রাপাড়ায় ইউপিডিএফ (মূল) দলের সন্ত্রাসীরা একজন বাঙালি এনজিওকর্মীকে অপহরণের চেষ্টা করে। পরে সেনা টহলদল ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ২০ ডিসেম্বর জেএসএস (মূল) দলের সন্ত্রাসীরা লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লামা রাবারবাগান ইন্ডাস্ট্রিজের সুপারভাইজার জসিম উদ্দিনকে অপহরণ করে বাগান ম্যানেজারের কাছে আট লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ঘটনা জেনে সেনা টহলদল অভিযান চালিয়ে অপহৃত ব্যক্তিকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে।

৪ জানুয়ারি লামা উপজেলার চালপাড়ায় হিলটা অ্যাগ্রো লিমিটেড বাগানের ম্যানেজার হাসমত আলীকে অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে। বাগান মালিকের কাছে ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করার পর দুই লাখ ২৫ হাজার টাকায় তাঁকে ছাড়িয়ে আনা হয়। ৮ জানুয়ারি দীঘিনালার জামতলী থেকে তিনজন বাঙালি পর্যটককে অপহরণ করে অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীরা। পরদিন অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৫ জানুয়ারি লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের তিনটি তামাকের খামার থেকে সাত বাঙালি ব্যক্তিকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। পরে খামারের মালিকদের কাছ থেকে মোট সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টাকায় অপহৃত ব্যক্তিরা ছাড়া পান। এ ছাড়া ২৮ নভেম্বর দীঘিনালার বাবুছড়া নতুন বাজার এলাকা থেকে ইউপিডিএফ (মূল) দলের সন্ত্রাসীরা বেসরকারি সংস্থা আশার ম্যানেজার ফজলুর রহমানকে অপহরণ করে এবং চাঁদা আদায়ের পর ওই দিনই তাঁকে ছেড়ে দেয়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সবিশেষ

বায়োহাইব্রিড প্রযুক্তি মেশিনকে অনুভূতির পরশ দেবে এবার

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বায়োহাইব্রিড প্রযুক্তি মেশিনকে অনুভূতির পরশ দেবে এবার

উদ্ভিদ ও ছত্রাকের সহায়তায় রোবটদের সামগ্রিক সামর্থ্যের মাত্রা আগামী দিনগুলোতে আরো অনেক বেশি বাড়বে। গবেষকরা দাবি করেছেন, বায়োহাইব্রিড প্রযুক্তি রোবট বা মেশিনের অনুভূতিকে বেশ খানিকটা শাণিত করতে পারবে। এতে রোবট তথা মেশিনরা আহত হলে নিজেরাই তা সারিয়ে নিতে পারবে। গবেষকরা বলছেন, রোবটে যদি জীবন্ত টিস্যুর প্রয়োগ ঘটানো যায়, তাহলে এসব রোবট পরিবেশের সঙ্গে আরো সহজভাবে ইন্টারেক্ট করার সুযোগ পাবে।

গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, এমন একটি রোবট উদ্ভাবন করতে, যে রোবট দেখতে হবে প্রাণবন্ত। তবে তারা এটা ভালো করেই জানেন, সিনথেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি রোবট তেমন হতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষক আনন্দ মিশ্র বলেন, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা এখনো সিনথেটিক উপাদান দিয়ে প্রাণবন্ত রোবট বানাতে পারছি না।

পরিবেশের উপযোগী করে রোবট বানানোর কর্মযজ্ঞ চলমান থাকলেও নিশ্চিত কোনো তথ্য আমাদের হাতে এত দিন ছিল না।

গবেষকরা বলছেন, এমন রোবট বানাতে যে হবে, যে রোবট সব ধরনের পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে। এরা যেমন আলো শনাক্ত করতে পারবে, গরম লাগলেও তা ধরতে পারবে। খাবারের স্বাদও নিতে পারবে। গবেষক আনন্দ মিশ্র জানালেন, রোবট তৈরিতে যদি ছত্রাক-টিস্যু ব্যবহার করা যায়, তাহলে সমস্যার বেশ খানিটা সমাধান হয়ে যাবে।

ছত্রাক উদ্ভিদ নয়। তবে ছত্রাকের মাঝে উদ্ভিদের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশেষ করে মাইসেলিয়াম। উল্লেখ্য, মাইসেলিয়াম ​​হলো একটি ছত্রাকের শিকড়সদৃশ গঠন যাতে একটি ভরের শাখা, থ্রেডসদৃশ হাইফাই থাকে। এর স্বাভাবিক রূপ হলো শাখাযুক্ত, সরু, আটকানো, অ্যানাস্টোমোসিং, হাইলাইন থ্রেড।

মাইসেলিয়াম দ্বারা গঠিত ছত্রাকের উপনিবেশগুলো মাটি এবং অন্যান্য অনেক স্তরে পাওয়া যায়। গবেষক মিশ্র জানান, এই ছত্রাক টিস্যু আলো, তাপ ও রাসায়নিক শনাক্ত করতে সক্ষম। মিশ্র ও তাঁর গবেষক দল দুটি রোবটে ইলেকট্রোডের সহায়তায় মাইসেলিয়াম টিস্যু সংযুক্ত করেছেন, যা এখন ইলেকট্রনিক সিগন্যাল পয়দা করতে পারছে, যা হার্ট ও নার্ভ সেল হিসেবে কাজ করছে। গবেষকরা মনে করছেন, তাঁরা এখন প্রাণবন্ত রোবট তৈরির পথে বেশ খানিকটা এগিয়ে যেতে পেরেছেন। সূত্র : সায়েন্স ডটঅর্গ

 

 

 

 

মন্তব্য

বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীরা

শেয়ার
বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর খামারবাড়ি মোড়ে গতকাল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেকে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য
রংপুর

হিমাগারগুলো আলু নিচ্ছে না, বিপাকে চাষিরা

রফিকুল ইসলাম, রংপুর
রফিকুল ইসলাম, রংপুর
শেয়ার
হিমাগারগুলো আলু নিচ্ছে না, বিপাকে চাষিরা

রংপুরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি জমিতে আলু উৎপাদন হওয়ায় সেই আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা। জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণ দেখিয়ে বেশির ভাগ হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে জমিতে-রাস্তায় হাজার হাজার বস্তা আলু রেখে কৃষকরা দুশ্চিন্তায়।

এদিকে জমি থেকে দেরিতে ওঠা বীজ আলু হিমাগারে রাখতে না পারলে পরের বছর বীজ আলু নিয়ে হাহাকার পড়ে যাবে, সংকটে পড়বে দেশ।

এ কারণে অন্তত বীজ আলুগুলো হিমাগারে রাখার জোর দাবি তুলেছেন আলু চাষিরা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, একদিকে দাম নেই, অন্যদিকে হিমাগার মালিকরা মাইকে ঘোষণা করছেন তাঁদের হিমাগারে আলু রাখতে পারবে না। এই অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে রাস্তায় বসা ছাড়া উপায় নেই।

গতকাল রবিবার রংপুরের কাউনিয়া, নব্দিগঞ্জ পীরগাছা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠে চাষিরা আলু তুলছেন।

কেউ কেউ আলু বস্তায় ভরে জমিতেই ফেলে রাখছেন, আবার অনেকে মহাসড়কের পাশে রাখছেন।

কৃষকরা বলছেন, অনুরোধ করার পরও আলু নিচ্ছে না হিমাগার কর্তৃপক্ষ। এমনকি দালাল ফড়িয়াদের বাকিতে আলু দিতে চাইলেও তাঁরা নিচ্ছেন না। উৎপাদন প্রতি কেজি ২০ টাকা হলেও ৮-৯ টাকা কেজি দরে গ্র্যানুলা আলু পাইকারদের দিতে চাইলেও জায়গা না থাকার অজুহাতে তাঁরাও নিচ্ছেন না।

জানা গেছে, রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় এক লাখ ১৯ হাজার ৮৭৯ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু এর এক-তৃতীয়াংশ বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। কৃষকদের ভাষ্য, ২০১১ সালের পর এবারই এমন রেকর্ড আলু চাষ হয়েছে। চরাঞ্চলে যাঁরা আলু চাষ করেছেন, তাঁরা আগে তুলতে পারায় হিমাগারে রেখেছেন। কিন্তু সমতল জমিতে যাঁরা পরে আবাদ করেছেন তাঁরা আলু রাখতে পারছেন না।

কৃষকরা জানান, মূলত বীজ আলু দেরিতে ওঠে। এই বীজ আলু স্টোরে রাখতে না পারলে আগামী মৌসুমে আলু বীজের চরম সংকট দেখা দেবে।

নব্দিগঞ্জের মকবুল হোসেন বলেন, ১০০ বস্তা আলু নিয়ে গত শনিবার এসেছি অপু মুনশি হিমাগারের সামনে। এসে শুনি জায়গা নেই। কর্তৃপক্ষ আলু নেবে না বলে মাইকে ঘোষণা করছে। আমার সেই আলু এখন রাস্তায়। কাউনিয়ার মীরবাগে এমন কয়েক লাখ বস্তা আলু রাস্তায় পড়ে আছে।

অপু মুনশি হিমাগারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আলু নেওয়ার অনুমতি নেই। তাই নেওয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের আহ্বায়ক আহসানুল আরেফিন তিতু হিমাগারে আলু নেওয়া বন্ধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অবিলম্বে আলু চাষিদের জন্য কোল্ড স্টোর খুলতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

 

 

 

মন্তব্য
শু ভ কা জে স বা র পা শে

বসুন্ধরার সেলাই মেশিনে দুঃখ ঘুচবে তাঁদের

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বসুন্ধরার সেলাই মেশিনে দুঃখ ঘুচবে তাঁদের
নীলফামারীতে বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে গতকাল ২০ নারীর হাতে তুলে দেওয়া হয় সেলাই মেশিন। জেলা সদরের পূর্ব খোকসাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে। ছবি : কালের কণ্ঠ

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়ার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় নীলফামারীর ২০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার এই নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়। অন্যদিকে বসুন্ধরা শুভসংঘ রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার নতুন কমিটির পরিচিতিসভা ও ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : 

বসুন্ধরার সেলাই মেশিনে দুঃখ ঘুচবে তাঁদেরনীলফামারী : স্বামীর দিনমজুরির আয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। অর্ধাহার-অনাহার নিত্যদিনের সঙ্গী। এমন দুর্দশায় স্বামীকে সহযোগিতার প্রবল ইচ্ছা মনিরা আক্তারের (২৭)। এ জন্য কাজের সন্ধান করেছিলেন বিভিন্ন স্থানে।

কাজ জুটেছিলও পাশের গ্রামের একটি কারখানায়। কিন্তু প্রতিবন্ধী সন্তানকে রেখে কাজে যেতে পারেননি তিনি। কারণ, দুজনের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার একমাত্র ভরসা মা মনিরা। তাই তিনি বাড়িতেই কোনো কাজ করে টাকা উপার্জনের পথ খুঁজছিলেন।
কিন্তু দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও কোনো উপায় করতে পারছিলেন না। ফিকে হতে শুরু করে সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন। অবশেষে তাঁর সেই স্বপ্নপূরণে এগিয়ে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তিন মাস সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে গ্রুপের পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয়েছে সেলাই মেশিন।

গতকাল রবিবার জেলা সদরের পূর্ব খোকসাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে এক অনুষ্ঠানে ২০ জন নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নপূরণে সেলাই মেশিন পেয়ে আনন্দিত মনিরা। অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সংসারোত খুব কষ্ট। স্বামীর কিষান খাটার কামাই দিয়া ছয়টা মানষির খাবার জুটে না। কষ্টের কারণে মনটা চায় কোনো কাম-কাজ করি কামাই করিবার। কিন্তু ছাওয়া দুইটাক থুইয়া বাড়ি থাকি কোনঠে যাবার পারো না। এলা বসুন্ধরার মেশিন দিয়া বাড়িত বসি সেলাইর কাজ করি কামাই করির পারিম। এলা কামাই সংসারোত সহযোগিতা করির পারিমো।’

একই অনুষ্ঠানে সেলাই মেশিন পেয়েছেন আঁখি আক্তার (১৯)। খলিশাপচা গ্রামের আঁখি আক্তার দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁর বাবা অলিয়ার রহমানের দিনমজুরির আয়ে চলে তাঁদের সাত সদস্যের পরিবার। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আঁখি সবার বড়। অভাব-অনটনের সংসারে এসএসসি পাসের আগেই বিয়ে দিতে চেয়েছিল পরিবার। কিন্তু আঁখি তাতে রাজি না হয়ে লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। এমন প্রবল ইচ্ছায় এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন কলেজে। কিন্তু পরিবারের অর্থাভাবে লেখাপড়া প্রায় বন্ধের পথে। এ অবস্থায় আঁখি গ্রামে টিউশনি করে লেখাপড়া চালানোর উদ্যোগ নিয়েও হয়েছেন ব্যর্থ। এ জন্য খুঁজতে শুরু করেন সহজ কাজ করে নিজেরসহ ভাই-বোনদের লেখাপড়া চালাতে। সেই আঁখি আক্তারকে সেলাই মেশিন দিয়ে স্বপ্নপূরণ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছ্বাস রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মো. মনিরুজ্জামান মন্টু।

পূর্ব খোকসাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. মামুন, কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি ভুবন রায় নিখিল, শুভসংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছির আরাফাত রাফি, সদস্য ফরিদ মিয়া, আমিনুর রহমান, মো. গোলাম হোসেন, নিউজ-২৪-এর জেলা প্রতিনিধি আব্দুর রশীদ শাহ, বসুন্ধরা শুভসংঘ জেলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক দীপু রায় প্রমুখ।

রংপুর : বসুন্ধরা শুভসংঘ রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার উদ্যোগে গত শনিবার নতুন কমিটির পরিচিতিসভা, ইফতার মাহফিল ও দুস্থদের মধ্যে ইফতারি বিতরণ করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের উপদেষ্টা ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

বসুন্ধরা শুভসংঘ রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার নব গঠিত কমিটির সভাপতি আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক সজীব সরকার, সহসভাপতি সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরাফাত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক  মুশফিকুর রহমান সজীব, অর্থবিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার, সাবেকুন নাহার শিমলা, আইনুল হক, আসিফ, মানিক, হাসান হাবিব, ইসমাইল প্রমুখ।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ