বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে এক লাখ ৬০ হাজার ৩০৩ জন কর্মী বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। এর মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ জন কর্মী সৌদি আরব পাড়ি দিয়েছেন। অর্থাত্ বিভিন্ন শ্রমবাজারে যাওয়া মূল কর্মীর ৭৫.৪০ শতাংশই সৌদি আরব গেছে। এমনকি এই বাজারে গত বছরের প্রথম দুই মাসের যাওয়া কর্মীর চেয়ে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২২.৭৭ শতাংশ কর্মী বেশি গেছে।
বিএমইটির তথ্য বলছে, গত বছরের প্রথম দুই মাসে সৌদি আরব গিয়েছিল ৯৩ হাজার ৩৪৫ জন। অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ওমান, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কিছু শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলতি বছর সৌদি শ্রমবাজারে কর্মী যাওয়ার চাপ অনেক বেশি। কিন্তু একটি বাজারের ওপর ভরসা করেই জনশক্তি খাত বেশিদূর এগোতে পারবে না। আর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, সৌদি আরবে কর্মী সব সময় বেশি যায়।
বন্ধ থাকা শ্রমবাজারগুলোও চালু করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া কাতার ও সিঙ্গাপুরের বাজারেও কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে।
মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত ও ওমান বন্ধের প্রভাব সৌদিতে
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ হয়ে যায় ওমানের শ্রমবাজার। তার সাত মাস পর একই অভিযোগে গত বছরের ৩১ মে বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।
আর আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বন্ধ না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশি কর্মীদের পছন্দের এই তিনটি শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৌদি শ্রমবাজারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
বিএমইটির তথ্য বলছে, গত বছরের প্রথম দুই মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিল ১৮ হাজার ৪২ জন কর্মী। সেই জায়গায় চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে মাত্র এক হাজার ১৫০ জন কর্মী সংযুক্ত আরব আমিরাত গেছে। অর্থাত্ গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ৯৩.৬২ শতাংশ কর্মী কম গেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ওমান ও মালয়েশিয়ার বাজার বন্ধ হয়ে যায়। তার পরও এই দুই দেশে গত বছরের দুই মাসের চেয়ে চলতি বছরের দুই মাসে কর্মী কম গেছে।
সৌদিতেও চলছে একক ভিসার সমস্যা
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যাওয়া এক লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ জন কর্মীর মধ্যে গত জানুয়ারি মাসে গেছে ৭৬ হাজার ৬১৮ জন কর্মী। আর ফেব্রুয়ারি মাসে গেছে ৪৪ হাজার ২৫৮ জন কর্মী। অর্থাত্ জানুয়ারি মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৭.৭৬ জন কর্মী কম গেছে।
প্রথম মাসের চেয়ে দ্বিতীয় মাসে অর্ধ শতাংশের বেশি কর্মী কমে যাওয়ার পেছনে একক ভিসার সত্যায়নকে দায়ী করছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের ভাষ্য মতে, ‘একজন, দুজন কিংবা পাঁচজন কর্মীর ভিসার জন্য সত্যায়ন করা সৌদি আরবে প্রায় অসম্ভব। কারণ বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী একক ভিসায় সৌদি আরব যায়। এত কর্মীর জন্য সত্যায়ন করার সক্ষমতা আমাদের দূতাবাসের নেই। আর সৌদি আরবের মালিকরা সব শহর থেকে দূর-দূরান্তে অবস্থান করেন। সেখান থেকে দূতাবাসে এসে সত্যায়ন করাও তাঁদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। যার কারণেই সৌদি আরবে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেনসিজের (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন সৌদি আরব বাদে অন্যান্য শ্রমবাজার প্রায় বন্ধ। তাই সৌদিতে আগের নিয়মেই কর্মী পাঠানো হোক। যদি কর্মীর নিরাপত্তার স্বার্থে মালিকপক্ষের কোনো তথ্য-প্রমাণের প্রয়োজন হয়, তবে সেটি আমরা মালিকপক্ষের থেকে সংগ্রহ করে এনে বিএমইটিতে জমা দেব। এখানে আমরা দূতাবাসকে রাখতে চাচ্ছি না। কারণ, এই প্রক্রিয়ায় সৌদি শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হবে। সেখান থেকে কর্মীর চাহিদা আসা কমে যাবে। আর কর্মী পাঠাতে সময় বেশি লেগে যাবে।’
কাতার, সিঙ্গাপুর, ইতালি ও জাপানে কর্মী যাওয়া বেড়েছে
বিএমইটির তথ্য বলছে, চলতি বছর কাতার গেছে ১৪ হাজার ৩৭ জন কর্মী। সেই জায়গায় গত বছরের প্রথম দুই মাসে কাতার গিয়েছিল ছয় হাজার ৭৭৯ জন কর্মী। চলতি বছর সিঙ্গাপুর গেছে আট হাজার ৫৮২ জন কর্মী। গত বছরের প্রথম দুই মাসে সিঙ্গাপুর গিয়েছিল ছয় হাজার ৩৪৯ জন কর্মী। চলতি বছর ইতালির বাজারেও কর্মী যাওয়া বেড়েছে। চলতি বছর প্রথম দুই মাসে ৫৫৭ জন কর্মী ইতালি গেছে। কিন্তু গত বছর প্রথম দুই মাসে গিয়েছিল ৪২ জন কর্মী।
প্রভাব পড়েনি শ্রমবাজারে
মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, ওমান বন্ধ ও কুয়েত, জর্দান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে কর্মী যাওয়া কমা এবং সৌদির ওপর চাপ পড়লেও বিএমইটির গত বছরের প্রথম দুই মাসের পরিসংখ্যান ও চলতি বছরের প্রথম দুই মাসের পরিসংখ্যান বলে গত বছরের প্রথম দুই মাসের চেয়ে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে তেমন প্রভাব পড়েনি।