নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়েই এবার উদযাপিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তার এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে ঈদের ছুটিতে দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গ্রহণ করা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ঈদ এবং ঈদের ছুটি নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ সারা দেশের মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯-কেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। সে অনুযায়ী দেশজুড়ে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবারের ঈদে মাত্র ২৫ শতাংশ পুলিশ সদস্য ঈদ ছুটি পাচ্ছেন।
আর ৭৫ শতাংশ পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। বিশেষ করে মেট্রোপলিটন এলাকায় সবচেয়ে কম ছুটি পাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে জেলা পর্যায়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পুলিশ সদস্যকে ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আবার এবারই প্রথম রাজধানীতে পুলিশের সঙ্গে অক্সিলিয়ারি ফোর্স কাজ করবে। এ ছাড়া রাজধানীতে ঈদের ছুটিতে সাত শতাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে জানান, এবার ঈদে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যদের কম ছুটি দেওয়া হচ্ছে। দেশবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী কী করতে হবে সে বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এরই মধ্যে সারা দেশে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে অপরাধীরা যাতে সক্রিয় হতে না পারে সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি থেকে শুরু করে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
অন্যদিকে পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সদস্যদেরও পবিত্র ঈদে বাড়তি সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোথাও থেকে কোনো ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন তাঁরা কার্যকর ব্যবস্থা নেন সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৯৯৯-এর প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মহিউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, ঈদের ছুটিতে মোট জনবলের ১৫ থেকে ২০ শতাংশকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য এরাও ৯ দিন ছুটি পাচ্ছেন না। দুই থেকে তিন দিন ছুটি কাটিয়ে এরাও দ্রুত কাজে যোগ দেবেন। মহিউল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদ যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রীদের জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ জরুরি পরিষেবা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সেবা দেবে। সড়কপথ সম্পর্কিত জরুরি প্রয়োজনে হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ, নৌপথে নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ড এবং রেলপথে রেল পুলিশের মাধ্যমে সেবা পাওয়া নিশ্চিত করা হবে।’
৯৯৯ পরিষেবা সূত্র জানায়, ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি কল আসে পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে। এ ছাড়া যানজটের খবরও আসে। খবর পাওয়ার পরপরই ৯৯৯ থেকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আবার চুরি-ডাকাতিসহ যেকোনো ধরনের অপরাধের তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সূত্র মতে, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাজধানীকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ডিএমপি থেকে পুলিশের ছুটি আরো কম দেওয়া হবে। পুলিশ সূত্র জানায়, ডিএমপিতে মোট জনবলের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশের সঙ্গে র্যাব কর্মকর্তারাও একইভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সিআইডি, এপিবিএন, সিটিটিসি, ডিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অন্য সদস্যরাও ঈদের ছুটিতে মাঠে থাকবেন।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদে জাতীয় ঈদগাহ থেকে শুরু করে শোলাকিয়াসহ বিভিন্ন ঈদ জামাতে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। রাজধানীতে বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলস্টেশনে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি করবে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি রোধে র্যাব সদস্যরা টহল দেবেন।’
সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী নগরবাসীকে সতর্ক করে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, আমাদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা করব।’
পুলিশ জানায়, ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর স্পর্শকাতর স্থান, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশজুড়ে কারা ডাকাতির মতো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের একটি তালিকা তৈরি করে অভিযান চালানো হচ্ছে। গত কদিনে যেসব ডাকাত ধরা পড়েছে এদের বেশির ভাগ আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিল। তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও একই অপরাধে জড়িয়েছে।
মহানগর উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি রোধে রাজধানীতে সাত শতাধিক চেকপোস্ট পরিচালনা করা হবে। দেওয়া হবে টহল। পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এলাকার নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্য থেকে ৪৩১ জনকে অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা কোনো তদন্ত করতে পারবেন না। কাউকে গ্রেপ্তারের পর দ্রুত পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।