আন্দোলনের মুখে ঈদের আগে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের তিন কোটি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। তবে তা মানেননি সাধারণ শ্রমিকরা। গতকাল শনিবারও শ্রম ভবনের সামনে শ্রমিকরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাঁদের প্রাপ্য বেতন-বোনাসের দাবি জানাতে থাকেন। কিন্তু গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে আগামী ৮ এপ্রিল আবারও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শ্রমসচিব।
এদিকে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় শতভাগ কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছেন। আর টিএনজেডসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে সরকার। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রমসচিব জানিয়েছেন, শ্রমিকদের বেতন-বোনাস সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত টিএনজেডের তিন মালিক শ্রম ভবনে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকবেন।
এই সংকট সমাধানের পর তাঁরা ছাড়া পাবেন।
বিজিএমইএর তথ্যানুসারে ঈদের আগেই প্রায় শতভাগ কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিজিএমইএর সদস্য কারখানা দুই হাজার ১০৭টির মধ্যে দুই হাজার ৯৮টি কারখানা ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে, যা প্রায় ৯৯.৫৭ শতাংশ। এ ছাড়া মার্চ মাসের বেতন (১৫-৩০ দিনের) পরিশোধ করেছে—এমন কারখানা দুই হাজার ৭৯টি, যা ৯৮ শংতাশের বেশি।
এদিকে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের বোনাস, মার্চ মাসের বেতন বিজিএমইএসহ অন্য সংগঠনের প্রায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করেছে।
তবে টিএনজেডসহ সাতটি কারখানা বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারেনি। এই বেতন-বোনাস পরিশোধে বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয় ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিএনজেডসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা দরকার। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান ঈদের আগে তিন কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সেটা মানেননি।
ফলে এর কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা আশা করছি সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।’
এ প্রসঙ্গে শ্রমসচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মালিকপক্ষের তিনজনকে হেফাজতে রাখা হচ্ছে। কারখানার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে আপাতত শ্রমিকদের পাওনা তিন কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। আগামী ৮ এপ্রিল অফিস খোলার পর এ বিষয়ে পূর্ণ সমাধান দেওয়া হবে।’
বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘টিএনজেড ও এসসেইন অ্যাপারেলস—এ দুই কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। টিএনজেডের পরিচালক শনিবার বিকেলের মধ্যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসসেইন অ্যাপারেলসের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এর বাইরে যেসব কারখানা বেতন বা বোনাস দেয়নি, তারা ছুটির আগেই দেবে।’
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দুটি কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। ৯০ শতাংশ কারখানা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। বাকিরা বেতন-ভাতা পরিশোধ করে শনিবার ছুটি দিয়ে দেবে।’
গাজীপুরে বেতন-বোনাস পাননি ৫ কারখানার শ্রমিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর জানান, গাজীপুরে বেতন-বোনাস পাননি পাঁচ কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক। ফলে এই শ্রমিকদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের জারা কম্পোজিট, মোগরখাল এলাকার এএনজেড অ্যাপারেলস, তিন সড়ক এলাকার স্টাইল ক্রাফট, শ্রীপুরের জৈনা বাজার এলাকার এইচডিএফ অ্যাপারেলস এবং কালিয়াকৈর উপজেলার কামরাঙ্গাচালা এলাকার হ্যাগ নিটওয়্যার গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, জারা নিট কম্পোজিট ও হ্যাগ নিটওয়্যার কারখানার মালিক লাপাত্তা। এতে বেতন ও ঈদ বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জারার ৪০০ এবং হ্যাগ নিটওয়্যারের ৩০০ শ্রমিক। এইচডিএফ অ্যাপারেলসের দুই হাজার ৩০০ শ্রমিকও বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছে, ঈদের পর বেতন-বোনাস পরিশোধ করবে। শ্রমিকরা বিষয়টি মেনে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।