”
তিনি আরো বলেন, “আমি এখানে এসে জেনেছি, আমার আগে যে গৃহকর্মী ছিলেন, তিনিও বাচ্চাটা কান্না করলে মাঝেমধ্যে দুধ দিতেন তাকে। এ কথা বলে আমি বাচ্চাটার জন্য দুধ রেডি করছিলাম। এরই মধ্যে পরীমনি মেকআপরুম থেকে বের হয়ে আমাকে তুই-তোকারি করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন, আমি কেন বাচ্চার জন্য দুধ নিয়েছি। আমি তখন তাঁকে বললাম, যেহেতু সলিড খাবার দেওয়ার সময় এখনো হয়নি, তাই আমি দুধ নিয়েছি। তখন পরীমনি আমাকে গালি দিয়ে বলেন, ‘বাচ্চাটা কি তোর না আমার?’ এর পরই তিনি আমাকে ক্রমাগত থাপ্পড় এবং মাথায় জোরে জোরে আঘাত করতে থাকেন। উনার মারধরে আমি তিনবার ফ্লোরে পড়ে যাই। এরপর তিনি আমার বাঁ চোখে অনেক জোরে একটি থাপ্পড় মারেন। এই থাপ্পড়ের কারণে আমি এখনো বাঁ চোখে কিছু দেখতে পাই না।”
পিংকি বলেন, “ভয়ংকর এই মারধরের পর আমি জোরে কান্না করতে থাকি এবং তাঁকে বলি, আমি আর পারছি না, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, ‘তুই এখান থেকে কোথাও যেতে পারবি না। তোকে এখানেই মারব এবং এখানেই চিকিৎসা করাব।’ এরপর তিনি আবার আমাকে মারতে আসেন। তখন সৌরভ তাঁকে বাধা দেন। এ কারণে সৌরভকেও গালাগাল করেন পরীমনি। এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। প্রায় এক ঘণ্টা পর আমার জ্ঞান ফেরে। তখন বাসায় থাকা আরেকজন গৃহকর্মী, বৃষ্টিকে আমি বলি, আমাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। তখন বৃষ্টি আমাকে বলে, ‘পরীমনি ঘুমিয়েছেন, তাঁকে এখন ডিস্টার্ব করা যাবে না।’”
পিংকি বলেন, “তখন আমি কাদের ভাইকে লুকিয়ে বাথরুমে গিয়ে ফোন দিই, তাঁকে ঘটনা জানাই এবং সাহায্য চাই, তিনি যেন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তিনিও আমাকে বলেন, ‘পরীমনি এখন যদি ঘুমিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে ডিস্টার্ব করা যাবে না।’ আর কোনো উপায় না দেখে আমি জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করি এবং পুলিশকে জানাই, তারা যেন আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।”
তিনি আরো বলেন, ‘এরই মধ্যে আমি আমার এক কাজিনকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। তিনি পরীমনির বাসার সামনে আসেন। তখন পুলিশও সেখানে আসে। পরীমনি এসব জানার পর গৃহকর্মী বৃষ্টিকে বলেন আমাকে বাসার নিচে নামিয়ে দিতে। বৃষ্টি আমাকে বাসার নিচে নামিয়ে দেয়। আমি তখন রিকশা নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। তাঁর মারধরের কারণে আমি এখনো অসুস্থ।’ তিনি বলেন, ‘আমি প্রাথমিকভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পরে আমি আরো আইনি পদক্ষেপ নেব।’
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে পরীমনি বলেন, ওই তরুণী তাঁর গৃহকর্মী নন। অসহায়ত্বের কথা বলে কাজের জন্য এসেছিলেন। কাজ করার সক্ষমতা না থাকায় মাসখানেক পর তাঁকে বেতন-বোনাসসহ বিদায় জানানো হয়েছে। অভিনেত্রীর সন্দেহ, ওই তরুণী একজন গুপ্তচর হয়ে থাকতে পারেন।
পরীমনি জানান, একটি এজেন্সি মারফত ওই তরুণীকে পেয়েছিলেন তিনি। ওই এজেন্সির অনুরোধে তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন পরই তাঁর ওপর সন্দেহ তৈরি হয় অভিনেত্রীর। কারণ তরুণীটি বেশির ভাগ সময় ফোনে ব্যস্ত থাকতেন। কোথায় যেন ছবি ও ভিডিও পাঠাতেন। পরীমনি গণমাধ্যমকে বলেন, “মেয়েটা চাকরির জন্য এসেছিল। খুব কান্নাকাটি করল। বলল, ‘বের করে দিয়েন না, যেকোনো কাজ করে দেব, আমার কেউ নেই, বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে আছি। অন্তত একটা মাস থাকি।’ এ কথা শুনে আমার দয়া হলো। কিন্তু সে ছিল প্রতিবন্ধী। কাজ করার সক্ষমতা ওর ছিল না। তবু আমি তাকে বললাম, কাজ করতে হবে না, আমার বাচ্চাদের সঙ্গে খেলবে।”
পরীমনি আরো বলেন, ‘ওর কর্মকাণ্ডে আমার সন্দেহ হলো। দুই দিন পর পর এ সমস্যা, সে সমস্যা, শুধু টাকা চায়। ভেবেছিলাম, এসেছে যখন এক মাস থাকুক। পরে যার মাধ্যমে এসেছে, তাদের জানালাম। ওকে যখনই বিদায় হতে বললাম, কান্নাকাটি শুরু করল। পরে এক মাসের বেতন ২০ হাজার টাকা, ঈদের বোনাস, সালামি, নতুন কাপড় দিয়ে বিদায় হতে বললাম। ভারী কিছু তুলতে পারে না, আমার ছেলেকে কোলে নিতে পারে না। এক মাসও হয়নি, ব্ল্যাকমেইল শুরু করেছে।’
নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে পরীমনি বলেন, “আমার সংসার চলে গৃহকর্মীদের ওপরে। তাদের সঙ্গেই আমার সব কিছু। আমি তাদের ‘আপনি’, ‘আন্টি’ ছাড়া কথা বলি না। এত বছর ঢাকা শহরে থাকি, আমার গৃহকর্মী, গাড়িচালক কাউকে বদলাতে হয়নি। কারো পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। চার-পাঁচ দিনের জন্য একজন এসে অভিযোগ করা তো সন্দেহজনক। সে অসহায়ত্ব দেখাল বটে, কিন্তু সে খুব স্মার্ট। নিশ্চয়ই ওর পেছনে কেউ আছে। কারা ওকে আমার বাসায় পাঠিয়েছে, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। কার কার সঙ্গে ফোনে কথা বলত, কাকে কাকে ছবি পাঠাত, এসব তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।”