স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হালনাগাদ হচ্ছে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ বিবেচনায় নিয়ে তিন ধাপে এই নীতিমালার কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্প, ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম ও ২০৪১ সালের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হবে।
খসড়া নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত নতুন এ নীতিমালায় একটি রূপকল্প, ৯টি উদ্দেশ্য, ৭৩টি কৌশলগত বিষয়বস্তু ও ৩৩০টি করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে।
রূপকল্প ও উদ্দেশ্যকে জাতীয় লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। বৃহত্তর উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে কৌশলগত বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে, যার সুফল ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সমপ্রসারণ, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদার বাড়াতে এই নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমান নীতিমালায় উদ্দেশ্য আটটি, কৌশলগত বিষয়বস্তু ৫৫টি ও ৩০৬টি করণীয় রয়েছে। ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদনের জন্য আজ বুধবার সচিবালয়ে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে উঠতে যাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সচিব কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পর প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিন কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে।
সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা হালনাগাদ করা হচ্ছে।
২০০৯ সালে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছিল। এরপর ২০১৫ ও ২০১৮ সালে দুই দফায় হালনাগাদ করা হয়। এবার ছয় বছর পর আবার হালনাগাদ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সরকার যখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে।
আর এ বিপ্লবের গতি দ্রুততর করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), রোবটিকস, ব্লকচেইন, অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর), ভার্চুয়াল রিয়ালিটির (ভিআর) মতো অগ্রসর প্রযুক্তি। এমন এক বাস্তবতায় সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পাশাপাশি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে শুধু তাল মেলানো নয়, নেতৃত্ব দিতে চায়। এ দুটি লক্ষ্য পূরণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা সংশোধন করা খুবই জরুরি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি শুম্ভ—স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজব্যবস্থা। প্রতিটি স্তম্ভের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন—স্মার্ট বাংলাদেশের একজন স্মার্ট নাগরিক হবে বুদ্ধিদীপ্ত, দক্ষ, উদ্ভাবনী, সৃজনশীল, প্রগতিশীল, অসামপ্রদায়িক চেতনায় জাগ্রত দেশপ্রেমিক এবং সমস্যা সমাধানের মানসিকতাসম্পন্ন নাগরিক। স্মার্ট অর্থনীতি হবে ক্যাশলেস, সার্কুলার, উদ্যোক্তামুখী, গবেষণা ও উদ্ভাবননির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমন্বয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি। স্মার্ট সরকার হবে নাগরিককেন্দ্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারব্যবস্থা, যা হবে কাগজবিহীন, উপাত্তনির্ভর, আন্ত সংযুক্ত, আন্ত চালিত, সমন্বিত ও স্বয়ংক্রিয়। স্মার্ট সমাজ হবে বৈষম্যমুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, যা হবে সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ সহনশীল সমাজ, যা নিরাপদ ও টেকসই। এই চারটি স্তম্ভের ভিত্তিতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, যা উচ্চ আয়ের একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।