রাজশাহীতে পদ্মা নদী দখলের মহোৎসব চলছে। নগরীর বেড়পাড়া থেকে তালাইমারী পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বিনোদনকেন্দ্র, রেস্তরাঁ, বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নিজেদের মতো করে স্থাপনা তৈরি করেছে দখলদাররা। কমপক্ষে ৬৫০ জন দখলদার পদ্মা নদীর পার ও চর দখলে রেখেছে।
রাজশাহী নগরীর ৭ কিলোমিটার
৬৫০ দখলদারের পেটে পদ্মা
- * কমপক্ষে ৬৫০ জন নদীর পার ও চর দখলে রেখেছে * বানানো হয়েছে রাস্তা, দখলে শহর রক্ষা বাঁধও * নদী গতিপথ হারাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

নগরীর আলুপট্টি এলাকায় পদ্মা নদীর উত্তর পারে ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে বেশ কিছু দোকান। ধর্মীয় এক সংগঠনের নেতাও একটি অংশ ভরাট করে রেখেছেন। আরো কয়েকজন ব্যক্তি ফাস্ট ফুডের দোকান দিয়েছে।
নগরীর পঞ্চবটি এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের নিচে গড়ে উঠেছে একাধিক বাড়ি।
এখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দোকানের আয়তনভেদে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে এখানে দোকান করা সম্ভব না।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নগরীর পাঠানপাড়া এলাকায় একটি পার্ক ও রেস্তরাঁ তৈরি করে সেটি ভাড়া দিয়েছে। লালনশাহ মঞ্চ এলাকায় প্রায় পাঁচ বিঘা আয়তনের জায়গাটি বছর তিনেক আগে ভাড়া দেওয়া হয় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ খালেদ মাসুদ পাইলটকে। শহর রক্ষা বাঁধের একটি অংশে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে সেখানে তৈরি করা হয়েছে পার্ক।
লালনশাহ মুক্তমঞ্চের পাশে তৈরি করা ‘নোঙর’ রেস্তরাঁয়ও প্রতিদিন শত শত মানুষ খেতে আসে।
নোঙরের পাশেই দুটি বিশাল আমবাগানে গড়ে তোলা হয়েছে সীমান্ত নোঙর এবং সীমান্ত অবকাশ নামের দুটি রেস্তরাঁ।
নোঙর রেস্তরাঁর ব্যবস্থাপক রিপন আলী বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ব্যবসা করছি। আগে এখানে মাদক কারবারিদের আস্তানা ছিল। এখন বিনোদনপ্রেমীরা ঘুরতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে।’
নোঙরের নিচেই পদ্মার চরের মধ্যে রাস্তা তৈরি করে দুই ধারে গড়ে উঠেছে শতাধিক দোকান। বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার, ফুচকা ও শিশুদের খেলনার এসব দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা তোলেন স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি।
হাবিল উদ্দিন নামের এক দোকানদার বলেন, দোকান করতে হলে কিছু টাকা তো দিতেই হবে। যাঁরা টাকা নেন তাঁরা স্থানীয়। টাকা না দিলে শৃঙ্খলা থাকবে না, যে যার মতো দোকান করবে।
ঘুরতে আসা নাদিয়া খাতুন নামের এক কলেজছাত্রী বলেন, নদীর চরে দোকান তৈরির কারণে পদ্মার সৌন্দর্য অনেকটা নষ্ট হয়েছে। জেগে ওঠা চরে ঘাস বা লতাপাতা জন্মালেও দেখতে সুন্দর লাগে। চর দখল করে দোকান গড়ে তোলার কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় নদীর চরে তৈরি করা হয়েছে শত শত বাড়ি। এসব বাড়িতে বছরের পর বছর বসবাস করে আসছে হাজার হাজার মানুষ। শহর রক্ষা বাঁধের নিচেই এসব বাড়ি তৈরি করা হয়েছে।
কথা হয় নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একসময় আমাদের রাজশাহীর পদ্মায় ইলিশ পাওয়া যেত। রাজশাহী শহরের সঙ্গে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল স্টিমার। কিন্তু নদী এখন মৃতপ্রায়। দখলে দখলে ধুঁকছে পদ্মা। বর্ষাকাল ছাড়া নদীর প্রায় বেশির ভাগ চরে পরিণত হয়। নদী রক্ষার কোনো ব্যবস্থা কোনো সরকারই করেনি। ফলে দখলদাররা আরো বেপরোয়া। আর নদী বদলাচ্ছে গতিপথ। ভাঙছে দুই পার। অনেক মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে।’
নদী দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, বেড়পাড়া থেকে তালাইমারী পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় নদী দখল করা হয়েছে। ৬০০ দখলদারের তালিকা করা হয়েছে। এদের উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘নদী দখলের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে দ্রুতই।’
সম্পর্কিত খবর

পদযাত্রা


আন্দোলন ছেড়ে বেতন-বোনাসের অপেক্ষায় পোশাক শ্রমিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক

বেতন-বোনাসের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। রাস্তা অবরোধ করে টানা কয়েক দিন আন্দোলনের পর এক ঘোষণায় রাস্তা ছাড়তে বাধ্য হন ঢাকার আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানার আন্দোলনরত কর্মীরা। সেদিন এক সেনা কর্মকর্তা হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিলেন, ‘আপনাদের জন্য সময় হচ্ছে সাত মিনিট। সাত মিনিটের ভেতরে আপনারা সাইডে গিয়ে দাঁড়াবেন।
সেনা কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘সাত মিনিট পরে এখানে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা আমার ডিরেক্ট আদেশ ভঙ্গ করছেন এবং জনভোগান্তি ক্রিয়েট করেছেন। এই পানিশেবল ক্রাইমের আন্ডারে আপনারা জেলে যাবেন।
ঈদ বোনাস, ২৫ শতাংশ উৎপাদন বোনাস, নাইট বিল, টিফিন বিলসহ আরো কয়েকটি দাবিতে গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় ইস্মোগ সোয়েটার নামের একটি কারখানার শ্রমিকরা গত শুক্রবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন।
শ্রমিকরা বলছেন, ইস্মোগ সোয়েটার কারখানায় এক হাজার ২০০-এরও বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। দীর্ঘদিন কাজ করলেও তাঁদের ওভারটাইম বিল, নাইট বিল, মাতৃত্বকালীন ছুটি, বার্ষিক প্রণোদনার টাকা পান না বলে দাবি তাঁদের। এ ছাড়া তাঁদের প্রডাকশন রেট সঠিকভাবে দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই মোট ১৪ দফা দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছিলেন তাঁরা।

তিন কম্পানির শেয়ার কারসাজিতে ৮০ কোটি টাকা জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজারে তিনটি তালিকাভুক্ত কম্পানি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস, ফাইন ফুডস ও ফরচুন শুজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম কারসাজির অভিযোগে ১২ ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে মোট ৭৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
যাঁদের জরিমানা করা হয়েছে, তাঁরা হলেন মো. আবুল খায়ের ১১ কোটি এক লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবর সাত কোটি ২১ লাখ টাকা, কাজী সাদিয়া হাসান ২৫ কোটি দুই লাখ টাকা, কনিকা আফরোজ ১৯ কোটি এক লাখ টাকা, কাজী ফরিদ হাসান ৩৫ লাখ টাকা, কাজী ফুয়াদ হাসান ৩৫ লাখ টাকা, ডিআইটি কো-অপারেটিভ পাঁচ কোটি টাকা, মোহাম্মদ শামসুল আলম ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এক লাখ টাকা, সাজিয়া জেসমিন ৪৯ লাখ টাকা, সুলতানা পারভীন ১১ লাখ টাকা, এএএ অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজ ৭৫ লাখ টাকা, আরবিম টেকনো ২৩ লাখ টাকা এবং মো. ফরিদ আহমেদ এক লাখ টাকা।
।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ
জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক
- ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় দুর্নীতির অভিযোগ’
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির নিয়মিত বৈঠকে এই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিশনের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, জি এম কাদের ১৯৯৬ সাল থেকে বিভিন্ন আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, জি এম কাদের জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হন এবং দলীয় পদ বাণিজ্য ও মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেন।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী জি এম কাদেরের নামে নগদ ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। তাঁর স্ত্রী শরিফা কাদেরের নামে নগদ ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, ব্যাংকে ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা এবং ৮০ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে।
এদিকে জি এম কাদের বলেছেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করায়, আমার মুখ বন্ধ করতেই দুর্নীতি ও হত্যা মামলা করা হয়েছে। এটি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল।
গতকাল ঢাকার কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এম কাদের এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষে এই মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
জি এম কাদের বলেন, ‘দেশে নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান হচ্ছে। এ কারণে সম্প্রতি বারবার জাতীয় পার্টির কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে একটি মহল। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বলা হচ্ছে, আমি নাকি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছি। এ জন্যই আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। অথচ এটা আমার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ, এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্ট ছিল না।’
জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আহ্বায়ক আব্দুস সবুর আসুদের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম জহির, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান খলিল প্রমুখ।