<p>পরিবেশ ও মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ সুপারশপে নিষিদ্ধ হলেও তা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কারণ পলিথিনের বিকল্প পাটের ব্যাগ ও কাগজের ব্যাগের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও এই ব্যাগ কিনতে হচ্ছে। আর পলিথিনের ব্যাগ দোকান থেকে পণ্য কিনলে বিনা মূল্যে পাওয়া যেত। ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এদিন থেকেই কাঁচাবাজারের পাশাপাশি পলিথিন উৎপাদন কারখানাগুলোতে অভিযান চালানো হবে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পরিবেশ সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে অনেক আগেই অভিযান শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে ২০০২ সালে পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন পাস করা হয়। কিন্তু বাস্তবে আইনটি পুরোপুরি কার্যকর হয়নি, বরং পলিথিনের অপরিকল্পিত ও অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। শহর থেকে গ্রাম, নদী, খাল, বিল, জলাশয়, এমনকি সাগর দূষিত হচ্ছে। এই দূষণ মোকাবেলায় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো আন্দোলন করে আসছে। সর্বশেষ গত ১ অক্টোবর সুপারশপে পলিথিন বন্ধ ও বিকল্প ব্যাগ ব্যবহার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।</p> <p>মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, নিষিদ্ধ পলিথিন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সারা দেশে কাঁচাবাজারে ও পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানায় অভিযান পরিচালনা করবে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ডিসেম্বরের মধ্যে নিষিদ্ধ পলিথিনমুক্ত বাজারগুলোকে পুরস্কৃত করবে মন্ত্রণালয়।</p> <p>উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, প্লাস্টিক দূষণ শুধু পরিবেশের জন্য নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি। তাই সরকার নিষিদ্ধ পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধের কার্যক্রম কঠোরভাবে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে সুপারশপে পরিবেশবান্ধব পাট, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিবেশের সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের এই কাজে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।</p> <p>সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পলিথিনের ব্যাগ বন্ধের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে মানুষ। তবে সুপারশপে ক্রেতাদের অনেকের দাবি, আগে সুপারশপে যেভাবে ফ্রি পলিথিন ব্যাগ দেওয়া হতো, এখন একইভাবে পাট বা কাগজের ব্যাগ দেওয়া হোক। কিন্তু সুপারশপে পলিথিনের বিকল্প রাখা হলেও তা ক্রেতাদের টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটছে। অবশ্য খরচ বাঁচাতে কেউ কেউ এখন বাসা থেকে কাপড়ের ব্যাগ সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন। এদিকে সরকারের পাশাপাশি পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো পলিথিনের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। রাজধানীর বিভিন্ন সুপারশপে দেখা গেছে, সেখানে পলিথিনের ব্যবহার নিরুৎসাহ করতে সচেতনতামূলক পোস্টার ও ফেস্টুন ঝোলানো হয়েছে। ক্যাশ কাউন্টারে রয়েছে পাট ও কাগজের ব্যাগ। বিক্রীত পণ্য কোন ব্যাগে দেওয়া হবে তা ক্রেতাদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া হচ্ছে। পণ্যমূল্যের সঙ্গে ব্যাগের মূল্য যোগ করা হচ্ছে। সেখানে সর্বনিম্ন ছয় টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মূল্যের ব্যাগ রয়েছে। তবে স্বল্প বাজারেও ১০ থেকে ২০ টাকা মূল্যের ব্যাগ লাগছে বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন। মোহাম্মদপুর কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকার স্বপ্ন বাজারের বিক্রয়কর্মী শাহীনুর ইসলাম জানান, আগে পলিথিন ব্যাগ দেওয়া হলেও ১ অক্টোবর থেকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পলিথিনের ব্যাগ বন্ধ করা হয়েছে। এখন ক্রেতাদের জন্য পাটসহ পরিবেশবান্ধব ব্যাগ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য ও একাধিকবার ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ রয়েছে। ক্রেতারা পছন্দ অনুযায়ী ব্যাগ কিনে নিচ্ছেন। তবে অনেকেই ব্যাগের জন্য বাড়তি দাম দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি করেন। অবশ্য কেউ কেউ ব্যাগ নিয়ে বাজার করতে আসেন। আবার ব্যাগ কিনতে হবে জেনে অনেকেই বাইরের দোকান থেকে বাজার করছেন।</p> <p> </p>