জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারকে সহায়তা, আহতদের পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের সার্বিক বিষয়ে কাজ করতে গঠিত হচ্ছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক, পরিচালক ও উপপরিচালকসহ ৩৩ জনবল কাঠামোর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এসংক্রান্ত প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের সম্মতি মিললেই প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রায় আর কোনো বাধা থাকবে না।
খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী। রবিবার নিজ দপ্তরে কালের কণ্ঠকে বলেন, “অধিদপ্তর গঠন করতে এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ সংশোধন করা হয়েছে। সচিব কমিটিও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনে ৩৩ জনের একটি জনবল কাঠামোর (অর্গানোগ্রাম) অনুমোদন দিয়েছে।
বিষয়টির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সম্মতি সাপেক্ষে শিগগিরই অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়, সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার এই ত্যাগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সব পর্যায়ে বৈষম্য দূর করতে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পাশে দাঁড়াতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ অভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে জরুরি ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের নিমিত্ত ও মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত ১৬ ডিসেম্বর একটি আন্ত মন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ সংশোধনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাপের পরামর্শ গ্রহণপূর্বক প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিপ গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই অধিদপ্তর গঠনের নিমিত্ত ৬৩টি পদ সৃজনের প্রস্তাব পাঠানো হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪১টি পদের সম্মতি দেয়। পরবর্তী সময়ে অর্থ বিভাগ ৪০টি পদের সম্মতি দিয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠায়।
পরে ৩৩টি পদের বেতন গ্রেড নির্ধারণ করে অবশিষ্ট সাতটি পদ আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ কর্তৃক সম্মতি গ্রহণ করা হয়। এ অবস্থায় জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ, শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ, আহতদের চিকিৎসা এবং তাদের পরিবারবর্গকে সহায়তা দিতে প্রধান উপদেষ্টার সাগ্রহ অনুমোদন প্রয়োজন বলে সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘জুলাই অধিদপ্তরের কাজ শেষ পর্যায়ে। অধিদপ্তর হওয়ার একটা নীতিমালাও হয়েছে। সেটা চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ সপ্তাহেই অধিদপ্তরটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে। জুলাই অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁরা জুলাই শহীদ ও যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁরা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। এ নিরিখে তাঁরা সনদ ও পরিচয়পত্র পাবেন। অন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা, চিকিৎসা ও ভাতাও পাবেন।’
জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের ৬৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পর্যায়ক্রমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতি শহীদ পরিবার ৩০ লাখ করে টাকা পাবে। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা এফডিআর। বাকি ২০ লাখ আগামী অর্থবছরে দেওয়া হবে। আহতদের মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির (গুরুতর) যাঁরা তারা এককালীন পাঁচ লাখ টাকা করে পাবেন, এর বাইরে ২০ হাজার করে মাসিক ভাতা পাবেন। ‘বি’ ক্যাটাগরির যাঁদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাঁরা এককালীন তিন লাখ টাকা করে পাবেন, সঙ্গে ১৫ হাজার করে টাকা মাসিক ভাতা পাবেন। সরকারের বিভিন্ন মাত্রায় তাঁরা প্রশিক্ষণ পাবেন। তাঁরা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি পাবেন। কোটার ভিত্তিতে নয়, অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে।