তাঁরা সবাই শিক্ষার্থী। শুক্রবার এলেই বেরিয়ে পড়েন কিছু মানুষের খোঁজে। পথে-প্রান্তরে, সড়ক-মহাসড়কে, হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট এলাকায় ঘুরতে থাকেন। সমাজে চরম অবহেলায় যাদের দিন কাটে, সেই সব অজ্ঞাতপরিচয় মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে খুঁজে বের করেন তাঁরা।
পরিবার-বাস্তুচ্যুত এই মানুষগুলো কারো মমতা পায় না। যে মানুষদের দিকে একবারের বেশি কেউ তাকায় না, যাদের কেউ চায় না, সেই সব ভবঘুরেকে পরম যত্নে ঘরে তুলে নেওয়াই এসব শিক্ষার্থীর নেশা।
বরিশাল নগরীর চরবাড়িয়া ইউনিয়নের তালতলীর একটি ভাড়া বাসায় শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলেছেন ‘আদর্শ নিবাস বৃদ্ধাশ্রম’ নামের একটি আশ্রয়কেন্দ্র। ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বৃদ্ধাশ্রমের কার্যক্রম শুরু হয়।
এই পরিবারে এখন সদস্যসংখ্যা ১১।
নেপথ্যে নায়ক যাঁরা : বিভিন্ন স্থান থেকে ১১ জন বেওয়ারিশ মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধকে আশ্রয় দিয়েছেন তাঁরা। নগরীর বাজার রোডের জামিয়া আরাবিয়া খাজা মঈন উদ্দিন মাদরাসার হাফেজি শেষ করা মো. তাজুল ইসলাম আশ্রাফী, মো. হেদায়েতুল্লাহ, মো. হুজাইফা তামিমী ও মো. রহমতুল্লাহ নামের চার শিক্ষার্থী এই উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করেছেন। টিউশনির টাকা আর টিফিনের অর্থ বাঁচিয়ে তাঁরা বেওয়ারিশদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
তাঁদের সহযোগী হয়েছেন একই মাদরাসার আরো পাঁচজনসহ অন্যান্য মাদরাসার ১৭ জন শিক্ষার্থী। তাঁদের টিউশনি আর টিফিনের টাকায় পরিচালিত হচ্ছে এই বৃদ্ধাশ্রম।
কিন্তু দিন দিন বেওয়ারিশদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা বৃদ্ধাশ্রমটি পরিচালনা করতে গিয়ে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন। তাই এখানকার পরিচালনা পর্ষদ বাড়িয়ে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট করা হয়। সেখানে দুই গৃহিণীসহ অন্য আটজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
যাঁরা প্রতিষ্ঠানটি চালানোর জন্য আর্থিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বরিশাল জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বিভিন্ন সংকট মুহূর্তে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে দাঁড়ান।
শিক্ষার্থী হুজাইফা তামিমী বলেন, খাবার খরচ মিলিয়ে কম করে প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা প্রায় ৩০ হাজার টাকা দেন। বাকিটা পরিষদের নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, শিক্ষার্থীরা টিউশনির টাকায় বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।