একসময় গ্রামবাংলার কৃষিকাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল গরু-মহিষ দিয়ে হাল চাষ। কৃষকের কাঁধে লাঙল-জোয়াল, গরুর দড়ি ধরে জমিতে চাষ করার দৃশ্য ছিল চিরচেনা। তবে আধুনিক যান্ত্রিকীকরণের ফলে সেই ঐতিহ্যবাহী দৃশ্য এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের কৃষক সোহরাব আলী দীর্ঘদিন ধরে গরু দিয়ে হাল চাষ করে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আট কাঠা জমি চুক্তিতে ৮০০ টাকায় হাল চাষের কাজ নিয়েছি। এখন গরু দিয়ে হাল চাষের চাহিদা প্রায় নেই বললেই চলে। নিজের কোনো জমি নেই, তাই মানুষের ১০ কাঠা জমি চুক্তিতে নিয়ে আবাদ করি । অন্য কোনো কাজও পারি না। তাই বাধ্য হয়েই এই পেশা ধরে রেখেছি।’
তিনি আরো বলেন, গরু পালন করাও এখন ব্যয়বহুল। দুটি হালের গরুর দাম দুই লাখ টাকা। এর সঙ্গে ভুসি, ফিড, খড়, ঘাসের মতো খাদ্যসামগ্রীর দামও বেড়েছে।
যেখানে ট্রাক্টর দিয়ে এক বিঘা জমি আধা ঘণ্টায় ৬০০ টাকায় চাষ করা যায়, সেখানে গরু দিয়ে চাষ করতে ছয়-সাত ঘন্টা লাগে এবং খরচ পড়ে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা।
একই ইউনিয়নের জমি মালিক মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমার উঁচুনিচু জমি ও নদীর ধারের জমিতে ট্রাক্টর পৌঁছানো কঠিন, তাই গরু দিয়ে হাল চাষ করি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, যদিও যান্ত্রিক চাষে উৎপাদন দ্রুত হয়, তবু প্রাকৃতিক পদ্ধতির উপকারিতা উপেক্ষা করা যায় না। গরু দিয়ে চাষ করলে মাটির গভীর অংশ আলগা হয়, গরুর পায়ের চাপে কাদা তৈরি হয় এবং গোবর জমির উর্বরতা বাড়ায়।
সোহরাব আলীর মতো কিছু মানুষ এখনো জীবিকার তাগিদে এই ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হাল চাষ পদ্ধতি ধরে রেখেছেন, যা কৃষি ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।