জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে খুলনা অঞ্চলের চিংড়ি উত্পাদনে। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে নতুন ও পরিবেশবান্ধব চাষপদ্ধতিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন মৎস্য দপ্তর, রপ্তানিকারক ও চাষিরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, খুলনা অঞ্চলে চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা ৪৮টি, ডিপো ও কালেকশন সেন্টার এক হাজার ৫৯১টি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক লাখ ২৬ হাজার ৫৩৯টি খামারে গলদা চিংড়ি উত্পাদন হয়েছে ৫১ হাজার ১১৬ মেট্রিক টন এবং এক লাখ ১২ হাজার ৪৫০টি বাগদা খামারে চিংড়ি উত্পাদন হয়েছে ৫২ হাজার ৪৭২ মেট্রিন টন।
এই সময়ে আধানিবিড় ১৫২টি খামারে উত্পাদন ছিল দুই হাজার ২৩৩ মেট্রিক টন। আর একটি খামারে ভেনামি হয়েছে ১৩ মেট্রিন টন।
খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল, যা থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১৯ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন, আয় ছিল দুই হাজার ৪১২ কোটি টাকা।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এক বছর আগে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পটির মাধ্যমে খুলনা ও বাগেরহাটের ঘেরে সিনোবায়োটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিংড়ি উত্পাদনের গবেষণায় আশাব্যঞ্জক সফলতা এসেছে বলে দাবি করছে মৎস্য বিভাগ।
সিনোবায়োটিক প্রযুক্তিটি হলো বিশেষ উপায়ে তৈরি প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিকের সংমিশ্রণ, যা খাদ্যের সঙ্গে চিংড়িকে খাওয়ানো হয়। পাশাপাশি চিংড়ি খামারের পানিতেও প্রয়োগ করা হয়।
এটি ব্যবহারের ফলে চিংড়ি চাষের পরিবেশ উন্নত হয়, ক্ষতিকর রোগজীবাণু মারা যায়, পানির গুণগত মান বজায় থাকে, চিংড়ির অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়, ফলে চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, উত্পাদনও বাড়ে।
মৎস্য দপ্তরের সাসটেইনবেল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রী জানান, এই প্রযুক্তিতে প্রিবায়োটিক ও প্রবায়োটিক (উপকারী ব্যাকটেরিয়া) একত্রে ব্যবহারের ফলে চিংড়ি চাষের পরিবেশ উন্নত হয়, ক্ষতিকর রোগজীবাণু মারা যায়, পানির গুণগত মান বজায় থাকে। ফলে চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, উত্পাদনও বাড়ে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ‘ক্লাস্টার ও সিনোবায়োটিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে এরই মধ্যে চিংড়ি উত্পাদন বৃদ্ধি ও উত্পাদন ব্যয় কমানো সম্ভব হচ্ছে।’
তবে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) পরিচালক এম এ হাসান পান্না চিংড়ি উত্পাদনে মানসম্মত পুকুর ও পোনা (রেণু) ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন বড় সমস্য। তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পানি গরম হয়। এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ ফুট গভীরতায় চিংড়ি চাষ করতে হবে। ভাইরাসমুক্ত পানির ব্যবহার জরুরি। না হলে কোনো প্রযুক্তির সুফল পাওয়া যাবে না।’