<p>কাকডাকা ভোরে খেজুরের রস সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন গাছিরা। গাছ থেকে নামিয়ে আনেন রসভর্তি হাঁড়ি। এরপর তা নিয়ে ছোটেন চুলার কাছে। টিনের বড় পাত্রে রস ঢেলে জ্বাল দিলে শুরু হয় গুড় তৈরির প্রক্রিয়া। আস্তে আস্তে রস শুকিয়ে রূপ নেয় সুস্বাদু গুড়ে।</p> <p>সরেজমিনে দেখা যায়, ফরিদপুর সদরপুর ও চরভদ্রাসনে গ্রামীণ জনপদে থাকা খেজুরগাছের সুস্বাদু রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। এবার ফরিদপুরে অন্তত ১০ হাজার খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ করছেন সহস্রাধিক গাছি। ফরিদপুরে এক হাঁড়ি রস ৫০০ টাকা ও এক কেজি গুড় ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।</p> <p>সদরপুর উপজেলার চরবিষ্ণপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৪০ ফিট লম্বা খেজুর গাছে উঠে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে আনছেন গাছিরা। পরে সেই রস জ্বালিয়ে সুস্বাদু পাটালি গুড় তৈরি শেষে বাজারে বিক্রি করা হয়। ভালো দাম পাওয়ায় গাছিরা এবার বেশ খুশি।</p> <p>রাজশাহী থেকে আশা গাছি শেখ শরীফ জানান, এই এলাকায় অন্তত শতাধিক খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি। শীতের প্রথম থেকেই আমরা দুজন রস সংগ্রহের কাজে যুক্ত আছি। অনেক কষ্ট হয় খেজুরের রস সংগ্রহ করতে। তবে দাম ভালো হওয়ায় কষ্ট আর গায়ে লাগে না। শীত মৌসুমে এই কাজ করে ছয় মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারব।</p> <p>গুড় ক্রেতা মুন্সি আলিমুজ্জামান বলেন, এখনকার সময়ে ভেজালমুক্ত জিনিস পাওয়াই দুষ্কর। খোঁজ পেলাম এখানে ভেজালমুক্ত রস ও গুড় তৈরি হয়, তাই নেওয়ার জন্য গাছি ও উৎপাদনকারীদের কাছে ছুটে আসা।</p> <p>খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিজ উদ্যোগে ৬০০ গাছ কিনেছেন তরুণ উদ্যোক্তা এনামুল হাসান গিয়াস। তিনি জানান, রাজশাহী ও যশোরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গাছিদের আনতে হয়। এতে খরচ অনেকটা বেড়ে যায়, তা ছাড়া খেজুরগাছে ওঠার ঝুঁকি বেশি থাকায় দিন দিন গাছির সংকট দেখা দিচ্ছে।</p> <p>ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘দেশের অনেক জায়গাতেই ভেজাল গুড় তৈরি হয়। তবে ফরিদপুরের তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই প্রবণতা নেই। তাই খেজুরগাছ লাগানোর পাশাপাশি তাঁদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’</p>