জসীম-আহমেদ শরীফ
আশির দশকের মাঝামাঝি গড়ে ওঠে এই জুটি। পর্দায় দুজনের উপস্থিতি, মারপিট, হুমকি ভীষণ উপভোগ করত দর্শক। ‘লালু মাস্তান’, ‘লোভ লালসা’, ‘জিদ্দি’, ‘হিংসা’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘টাইগার’, ‘স্বামী কেন আসামী’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘রাজাবাবু’, ‘ঘাত প্রতিঘাত’সহ অনেক ব্যবসাসফল ছবির নায়ক-ভিলেন তাঁরা। আহমেদ শরীফ জানালেন, এই জুটির ছবি ৫০টিরও বেশি।
জসীম প্রয়াত হয়েছেন ১৯৯৮ সালে। আহমেদ শরীফ বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ার শুরু নায়ক হিসেবে আর জসীমের খলনায়ক হয়ে। পরে তিনি হলেন নায়ক আর আমি খলনায়ক। আমাদের নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালক ছিলেন। বছরে তিন-চারটি ছবি নির্মাণ করত সানফ্লাওয়ার মুভিজ, মেরিনা মুভিজ, পরিচালক মোতালেব হোসেন, এ জে মিন্টু, মনোয়ার খোকন—এঁদের ছবি মানেই আমাদের জুটি। আমাদের সঙ্গে আরো একজন কিন্তু ছায়ার মতো থাকতেন—জাম্বু। তিনজনের রসায়ন দারুণ উপভোগ করত দর্শক।’ অন্য পরিচালকদের ছবিতে একজন আরেকজনকে কাস্ট করার জন্য প্রযোজক-পরিচালককে বাধ্য করতেন কি না সে বিষয়ে বলেন, ‘জসীমের যে ভয়েস, শারীরিক গড়ন, তাতে আর কোনো খলনায়ক তাঁকে কাউন্টার দিতে পারত!’
রুবেল-হুমায়ুন ফরীদি
শহিদুল ইসলাম খোকনের ‘দিনমজুর’ ছবিতে দুজন প্রথম অভিনয় করেন।
সেই শুরু। এই পরিচালকের একে একে ২০টি ছবিতে অভিনয় করেন এই নায়ক-ভিলেন জুটি। উপহার দিয়েছেন ‘সতর্ক শয়তান’, ‘ঘাতক’, ‘অপহরণ’, ‘বীরপুরুষ’, ‘নরপিশাচ’, ‘বিশ্ব প্রেমিক’, ‘সন্ত্রাস’, ‘আজকের হিটলার’, ‘ভণ্ড’, ‘রাক্ষস’, ‘লম্পট’, ‘চারদিকে শত্রু’র মতো ব্যবসাসফল ছবি। অন্য নির্মাতাদের ছবি মিলিয়ে এই জুটির ছবির সংখ্যাও পঞ্চাশের বেশি। ২০১২ সালে প্রয়াত হন ফরীদি। রুবেল বলেন, “ফরীদি ভাই আমাকে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। কতবার যে তাঁকে অনুরোধ করেছি আমাকে ‘তুমি’ করে বলতে, কিন্তু তিনি সেটা কোনো দিন করেননি। একটা সময় আমি আর ড্যানি সিডাক মানেই ছবি হিট। ড্যানির পর ফরীদি ভাইয়ের সঙ্গে আমার জুটি গড়ে উঠল। এমনও হয়েছে, ফরীদি ভাইকে সাইন করিয়ে পরিচালক আমার কাছে এসে বলতেন, এবার আপনাকে সাইন করাতে পারলেই ঝুঁকিমুক্ত হই।” রুবেল নিজে পরিচালনায় এসেও ফরীদিকেই নিয়েছেন খলনায়ক—‘বিচ্ছু বাহিনী’, ‘মায়ের জন্য যুদ্ধ’ ও ‘প্রবেশ নিষেধ’।
সালমান শাহ-ডন
সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এ দুজনেরই অভিষেক। শুটিংয়ের প্রথম দিন থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব। আর সেই গভীরতা বোঝা যায় পরিসংখ্যান থেকে, সালমান তাঁর সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে মাত্র ২৭টি ছবি করেছেন, ২০টিতেই আছেন ডন। রাজীব, হুমায়ুন ফরীদি, আহমেদ শরীফ, মিশা সওদাগর ছবিতে থাকলেও একই ছবিতে আছেন ডন। তার মানে ডনকে ছবিতে নেওয়ার জন্য পরিচালকদের অনুরোধ করতেন সালমান? ‘না। আমরা শুধু বন্ধু ছিলাম। সুপারস্টার হতে হবে, এমন কোনো টার্গেট ছিল না আমার। সালমান আমার কলিজা, সারাক্ষণ একসঙ্গে থাকতাম। পরিচালকরাও সালমানের সঙ্গে আমাকে রাখতে চাইতেন যে করেই হোক। সালমানও আমাকে চাইত। ও মনে করত, ওর আর আমার বয়স সমান। তাই পর্দায় কাউন্টারটাও দেখতে ভালো লাগে’—বললেন ডন। ১৯৯৬ সালে সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে ছিলেন ডন। এখন যদিও অভিনয় করছেন, তবে খুব একটা সিরিয়াস নন। বলেন, ‘সালমান চলে যাওয়ার পর চলচ্চিত্রই ভালো লাগে না আমার। এমন বন্ধু আর সহকর্মী পাব কই!’
মান্না-ডিপজল
দীপুর চলচ্চিত্রে অভিষেক নায়ক হিসেবে, মনতাজুর রহমান আকবের ‘টাকার পাহাড়’-এ। মান্না এসেছেন নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। কাজী হায়াতের ‘দাঙ্গা’, ‘ত্রাস’, ‘দেশদ্রোহী’, ‘লুটতরাজ’ করে তারকা বনে গেছেন। এসব ছবিতে মান্নার সঙ্গে খলনায়ক মিজু আহমেদ কিংবা রাজীব। ১৯৯৭ সালে কাজী হায়াৎ সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘তেজী’তে মান্নার সঙ্গে খলনায়ক করবেন দীপুকে। এই ছবিতেই নাম বদলে দীপু হয়ে গেলেন ডিপজল। সুপারডুপার হিট ‘তেজী’। শুরু হলো এই নায়ক-খলনায়ক জুটিকে নিয়ে একের পর এক ছবি নির্মাণ। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘আম্মাজান’, ‘কুখ্যাত খুনী’, ‘বর্তমান’, ‘ভাইয়ের শত্রু ভাই’, ‘ধর’, ‘ঢাকাইয়া মাস্তান’, ‘মেজর সাহেব’, ‘কঠিন সীমার’, ‘গুণ্ডা নাম্বার ওয়ান’। এই জুটিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ছবি নির্মাণ করা মনতাজুর রহমান আকবর বলেন, ‘মান্না-ডিপজল রসায়ন যেকোনো নায়ক-নায়িকা জুটির চেয়েও বেশি। পোস্টারে এই দুজনের ছবি দেখলে দর্শক হলে না ঢুকে পারত না।’
শাকিব খান-মিশা সওদাগর
ঢালিউডের সবচেয়ে বেশি ছবির নায়ক-ভিলেন জুটি। শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন দুজন। বিশেষ করে ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ মুক্তি পাওয়ার পর রীতিই হয়ে গিয়েছিল, শাকিব মানে মিশা আর মিশা মানেই শাকিব। শাকিব খান প্রযোজিত একটি ছবিই মুক্তি পেয়েছে—‘হিরো দ্য সুপারস্টার’। সেখানেও আছেন মিশা। এই জুটির ব্যবসাসফল ছবির তালিকায় রয়েছে ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘লাভ ম্যারেজ’, ‘নাম্বার ওয়ান শাকিব খান’, ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’, ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’। শাকিব বলেন, ‘মিশা ভাই আর আমাকে দর্শক দারুণভাবে গ্রহণ করেছিলেন। আমরা কেউ কখনো কারো জন্য সুপারিশ করিনি। ছবি সাইন করার সময় হয়তো জানতামও না খলচরিত্রে কে থাকছেন! শুটিং করতে গিয়েই দেখা মিলত দুজনের।’ চলচ্চিত্রাঙ্গনে একটা কথা শোনা যায়, শাকিবের নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পেছনে মিশার হাত রয়েছে। সরাসরি অভিযোগ অস্বীকার করেন মিশা, “শাকিবের মতো ভালো অভিনেতা খুব কম আছে। নিজের যোগ্যতায় সে এত দূর এসেছে। ও যখন ক্যারিয়ার শুরু করে তখন কিন্তু নায়কের অভাব ছিল না। তাকে আমি আদর করে ছোট বলে ডাকি।”