ঢাকা, মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
৪ চৈত্র ১৪৩১, ১৭ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
৪ চৈত্র ১৪৩১, ১৭ রমজান ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনন্য শেখ হাসিনা

  • মেহেদী হাসান
শেয়ার
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনন্য শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধু নে বাংলাদেশ বানায়া, আউর উনকো বেটি নে বাংলাদেশ কো বাঁচায়া (বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন, আর তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন)। ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই বলেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই মাসেই নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে মোদি আবারও এ কথা বলেন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনন্য শেখ হাসিনা২০১৪ সালের জুনে ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের বিদায়ের পর ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার।

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে ভারতের বিজেপি সরকারের সম্পর্ক কেমন হয় তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জল্পনাকল্পনা ছিল। সব শঙ্কা পেছনে ফেলে গত এক দশকে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। এই সম্পর্ক এখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের রোল মডেল।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাতে টেলিফোন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি এবং সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে ঐতিহাসিক জয়ের জন্য তাঁকে আমি অভিনন্দন জানিয়েছি।

মোদি লিখেছেন, সফলভাবে নির্বাচনের জন্য আমি বাংলাদেশের জনগণকেও অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের জনগণকেন্দ্রিক ও স্থায়ী অংশীদারি জোরদারে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

ভোটের পরদিন সকালেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।

ঢাকায় বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে তিনিই সবার আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং অভিনন্দন জানান।

এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অবস্থান মূল্যায়ন করেন। এম জে আকবর বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। আর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে।

১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশে একনায়কতন্ত্র চেপে বসেছিল। গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটছিল। সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এম জে আকবর অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ এশিয়ার উদীয়মান শক্তি। বাংলাদেশ এখন কারো তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশ এমন রাষ্ট্র নয় যে ভয় দেখালেই ভয় পাবে।

বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সাত মাস আগে গত মে মাসেই লন্ডনভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে আবারও ক্ষমতায় আসতে পারেন শেখ হাসিনা।

এবারের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের আগ্রহের পাশাপাশি দৃষ্টি ছিল ভারত, চীন, রাশিয়ার। ভারতের ও.পি. জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্তর মতে, বাংলাদেশ-ভারত জোরালো সম্পর্কের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বেশ ভালো। এর আলোকে নির্বাচনে দিল্লির সমর্থন অপ্রত্যাশিত ছিল না। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারকে নিয়ে ভারতের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার কারণে ভারত শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করতে পারে।

শ্রীরাধা দত্ত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় বাংলাদেশ ভারতবিরোধী জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা, বাংলাদেশ থেকে ভারতে হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই বাংলাদেশের ভূখণ্ড ভারত বা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে না দেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয় এবং বাস্তবায়ন করে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনার এ ভূমিকাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বদলে দিয়েছে। অনাস্থা-অবিশ্বাসের বদলে গড়ে উঠেছে আস্থার সম্পর্ক। ভারসাম্যপূর্ণ নীতির কারণে ভারত, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি জাপানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়েছেন। ফ্রান্স, ইইউয়ের সঙ্গে সম্পর্কেও তিনি নতুন মাত্রা এনেছেন। বাংলাদেশ এখন কৌশলগত গুরুত্ব ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সম্ভাবনাময় দেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারে দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান কালের কণ্ঠকে বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে উন্নয়নশীল বিশ্বের সুসম্পর্ক আছে। উন্নয়নশীল বিশ্ব শেখ হাসিনার আবারও ক্ষমতায় ফেরাকে ভালো বিষয় হিসেবে দেখবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার ধারাবাহিকতায় উন্নয়নশীল বিশ্ব খুশি।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের বিচারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সমালোচনা করলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেএই বাস্তবতাকে আমলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, পশ্চিমা দেশগুলোও শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জেফরি ম্যাকডোনাল্ড বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় চারটি বিষয় থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলোআওয়ামী লীগের জয়কে স্বীকার, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সমালোচনা, সহিংসতার নিন্দা এবং অব্যাহত অংশীদারি এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতির পর এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা দেন কয়েকজন মার্কিন আইন প্রণেতা। তাঁরা বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতা ও অনিয়মের অভিযোগগুলো তদন্ত করার আহবান জানিয়েছেন।

চীন, রাশিয়া শেখ হাসিনার নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। পশ্চিমা কিছু দেশ যখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দোলাচল অবস্থায়, তখন ইইউ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখার কথা বলেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বার্তা পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। শেখ হাসিনাকে তিনি লিখেছেন, আমি খুব আনন্দের সঙ্গে পোশাক, অভিবাসন, নিরাপত্তা ও জ্বালানি শক্তি স্থানান্তরের মতো খাতগুলোতে আমাদের গঠনমূলক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা জোরদার করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখব।

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন গত ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে পাঠানো বার্তায় লিখেছেন, আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে জোরালো অগ্রগতি হয়েছে।

জ্বালানি, অবকাঠামো, লজিস্টিকস, বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহের কথা জানান তিনি।

শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। তারা শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট বিমসটেক এবং জাপানের নিপ্পন ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।

এদিকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি শেখ হাসিনার নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদারের আশা প্রকাশ করেছে কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ। অভিনন্দন জানিয়ে আলাদাভাবে বার্তা পাঠিয়েছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য। বাংলাদেশ অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের সহসভাপতি বীরেন্দ্র শর্মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লিখেছেন, এই জয় আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের দুর্দান্ত অগ্রগতি ও সম্মানের প্রমাণ।

ব্রিটিশ এমপি পল বিস্ট্রো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লিখেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নারী সরকারপ্রধান হওয়ার অবিশ্বাস্য রেকর্ডের জন্য আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের জন্য ভালো ফল আনছে এবং বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতি করছেএটি স্পষ্ট।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতি এবং অবকাঠামো বিনিয়োগ অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে সঠিক পরিবেশ প্রদান, মিয়ানমারের ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া ও সহমর্মিতার উদাহরণ দেন পল বিস্ট্রো।

পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিশ্বে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুরুত্বের কথা স্বীকার করেছে। তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, নারীর অধিকার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য ও অসমতা মোকাবেলা, আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসার, শান্তি রক্ষা মিশনে সহায়তা, মানবিক সংকটে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেছে।

লেখক : সাংবাদিক

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

প্রকল্পে বিনিয়োগ কাটছাঁট, রাজস্ব ও কর্মসংস্থানে প্রভাব

    এডিপির আকার কমল ৪৯ হাজার কোটি টাকা
এম আর মাসফি
এম আর মাসফি
শেয়ার
প্রকল্পে বিনিয়োগ কাটছাঁট, রাজস্ব ও কর্মসংস্থানে প্রভাব

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা নেই। এটিও গতানুগতিক ধারায় চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন প্ল্যান অনুযায়ী বরাদ্দ দিলেও তারা খরচ করতে পারে না। এর ফলে দফায় দফায় বাড়ে প্রকল্পের খরচ ও মেয়াদ, যার কারণে প্রতিবছরই মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম বাস্তবায়ন হয়।

এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়নের নেতিবাচক প্রভাব রাজস্ব আয় ও কর্মসংস্থানে। প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে উৎস করসহ বিভিন্ন মালপত্র আমদানি থেকে সরকার রাজস্ব পায়। সেখানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আর কাটছাঁট করার ফলে মানুষের কাজের সুযোগ কমে যায়। অনেক মানুষ বেকার হয়ে যায়। তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট হচ্ছে।

এর মধ্যে সরকারের অংশ থেকে ৩০ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক বরাদ্দ থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত বেশি পরিমাণ অর্থ এডিপি থেকে কাটছাঁট করা হয়নি। শুধু সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ থেকেই ১১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা কাটছাঁটের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ধরা হয় দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের এক অতিরিক্ত সচিব জানান, চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে প্রায় অর্ধলক্ষ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হচ্ছে।

যদিও মন্ত্রণালয়গুলোর চাহিদা আরো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কম। মূলত প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দে সঠিক পরিকল্পনার অভাব এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অদক্ষতায় প্রতিবছরই এডিপি বাস্তবায়ন কম হচ্ছে।

আইএমইডির সর্বশেষ এডিপি বাস্তবায়নের তথ্যে দেখা যায়, ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১৭.৯৭ শতাংশ। এর চেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য সংস্থাটির ওয়েবসাইটে নেই। সেই আলোকে গত এক যুগে এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে ছয় মাসে ৫০ হাজার দুই কোটি টাকা অর্থছাড় হয়েছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। গত অর্থবছরে ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল এই সময়ে। শুধু গত ডিসেম্বর মাসে অর্থছাড় হয়েছে ১৫ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা, যেখানে আগের অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে ছাড় হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা।

এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, আগের সরকারের সময়ে নেওয়া চলমান সব প্রকল্পই সরকার পর্যালোচনা করেছে। অগুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া অনেক প্রকল্প বা স্কিম বাদ যাচ্ছে। এতে অর্থ ব্যয়ের চাহিদা কমেছে। আবার জুলাই অভ্যুত্থানের পর অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক চলে গেছেন। অনেক প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ফলে এডিপি বাস্তবায়নের হারও কমে গেছে। অনেক দেশি ঠিকাদারও প্রকল্প এলাকায় এখনো ফিরে আসেননি। একইভাবে বৈদেশিক অর্থায়নের অনেক প্রকল্পে বিদেশি ঠিকাদার অনুপস্থিত রয়েছেন। এই বাস্তবতায় এডিপিতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাস্তবায়ন গতি কম থাকায় সরকারি তহবিলের চাহিদাও অনেক কমেছে। সাধারণত অন্যান্য অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সরকারি তহবিল থেকে চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এডিপিতে যে পরিমাণ সিলিং বেঁধে দেওয়া হয়েছে, চাহিদা তার চেয়ে কম রয়েছে। তবে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে চলতি অর্থবছরে চাহিদার চেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে ৭০-৭৫ হাজার কোটি টাকা চাহিদা দিয়েছিল। কিন্তু সরকার বৈদেশিক অর্থায়ন ব্যবহারের গুরুত্ব দেওয়ায় বরাদ্দ বাড়িয়ে ৮১ হাজার কোটি টাকার সিলিং দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সচিব মামুন আল রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রকল্প পরিচালকদের কখন কোন কাজ করতে হবে সেই পরিকল্পনা দেওয়া থাকে। কিন্তু সে অনুযায়ী তাঁরা সময়মতো কাজ করতে পারেন না। বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করায় অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। প্রকল্প বাস্তবায়নে এটি প্রথম বাধা। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, যাঁরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন, সেই প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তৃতীয়ত, প্রকল্পে কেনাকাটার ক্ষেত্রেও তাঁদের কারিগরি জ্ঞান খুবই সীমিত।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রকল্পের কাটছাঁটে টাকা বাঁচে ঠিক। তবে সরকারি কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হলে রাজস্ব আয় হয় না। আবার মানুষেরও কাজের সুযোগ কমে যায়। এগুলো আবার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। এদিকে সরকারকে ট্রেড অফ করতে হবে।

মন্তব্য

উচ্চ সুদহারে বিপাকে ব্যবসা ও কর্মসংস্থান

    ► ঋণের সুদহার ছাড়িয়েছে ১৫% ► নভেম্বরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭.৬৬%-এ নেমেছে ► উৎপাদন কমেছে ৪০% পর্যন্ত ► দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে ২৬ লাখ ৬০ হাজার ► নীতি সুদহার আরো বাড়িয়ে ১১ শতাংশ করার পরিকল্পনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
উচ্চ সুদহারে বিপাকে ব্যবসা ও কর্মসংস্থান

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে কমছে সাধারণ মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান। এর অন্যতম কারণ ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এবং উৎপাদন হ্রাস। সুদের হার বাড়ার কারণে আমানতকারীরা কিছুটা লাভবান হলেও ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। একদিকে উচ্চ সুদ দিতে চেয়েও আমানত পাচ্ছে না ব্যাংক, অন্যদিকে ঋণসংকটে পড়ছে বেসরকারি খাত।

বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে ধীরগতি এবং কর্মসংস্থান ঘাটতি দেশের অর্থনৈতিক সংকট বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য ব্যাংকঋণের সুদের হার ক্রমাগতভাবে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর একমাত্র উপাদান সুদহার বৃদ্ধি নয়; আরো অনেক উপায় রয়েছে। তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার বা রেপো রেট আরো ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে ব্যাংকঋণের সুদ।

এতে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এলসি খোলার হার কমেছে ৭ শতাংশ আর উৎপাদন কমেছে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।

দফায় দফায় ঋণের সুদহার বাড়ানোয় চরম সংকটে পড়েছে বেসরকারি খাত। ফলে ব্যবসা প্রসারসহ থমকে রয়েছে বিনিয়োগ।

ব্যবসা ও বিনিয়োগে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে রয়েছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, দেশে এখন বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। বরং ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার লড়াই করছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে চলমান অস্থিরতায় অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যের চাহিদা কমে গেছে। এতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতে ধস নেমেছে।

এমন পরিস্থিতিতে ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। সুদহার অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা সম্প্রসারণ ও নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা আপাতত তুলে রাখছেন অনেক উদ্যোক্তা।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালের কণ্ঠকে বলেন, এমনিতেই ব্যবসায়ীরা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ বেশি সুদ দিয়ে আসছিল। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে সেটা আরো বেড়ে গেছে। এখন নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা, টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত ব্যবসায়ীসমাজ। কোথায় কত টাকা খরচ হবে এবং কতটা মুনাফা হতে পারে, সেটা হিসাব করে আমরা বিনিয়োগ করি। কিন্তু মাঝপথে যখন ব্যাংকের সুদহার বেড়ে যায় তখন সব হিসাব ওলটপালট হয়ে যায়। কারণ কিস্তির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং মুনাফার হার কমে আসে।

সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি আর অর্থনীতির ধীরগতিতে বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণের প্রবৃদ্ধি কমে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমেছে। নভেম্বরে এই হার দাঁড়িয়েছে ৭.৬৬ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে কভিড মহামারির মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭.৫৫ শতাংশে নেমেছিল।

সরকার পতনের পর নতুন নতুন নীতিমালা, শ্রমিক অসন্তোষ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনীতিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মামলায় আসামি করা, মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতিসহ নানা কারণে বিনিয়োগে নিম্নমুখী প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছিল।

সূত্র জানায়, সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর পথে হাঁটছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরও। এবার ১০০ বেসিস পয়েন্ট বা ১ শতাংশ সুদ বাড়ানো হতে পারে। বিষয়টি আগাম আঁচ করতে পেরে ব্যবসায়ী নেতারা গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে বিদ্যমান সুদহার কমাতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

দেশের কর্মে নিয়োজিত বা শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ( বিবিএস)। সেখানে বলা হয়, কৃষি, সেবা ও শিল্পসব খাতেই কমেছে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী। নারীর চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেশি বেড়েছে।

গেল বছরের শুরুতে দেশে বেকারের সংখ্যা কম থাকলেও বছর শেষে ধারাবাহিকভাবে এই সংখ্যা বেড়েছে। মূলত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের প্রভাবে বছরের শেষ সময়ে বেড়েছে বেকারের সংখ্যা। বর্তমানে দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৬০ হাজার। ২০২৩ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৭০ হাজার।

মন্তব্য

টাকা জোগাড়ে করের বোঝা

    ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি
মো. জাহিদুল ইসলাম
মো. জাহিদুল ইসলাম
শেয়ার
টাকা জোগাড়ে করের বোঝা

দেশের রাজনীতির অনিশ্চয়তা ভর করেছে দেশের অর্থনীতিতে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আস্থাহীনতায় ব্যবসা-বিনিয়োগে ভাটা। উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণনে ধীরগতি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ।

ব্যবসার প্রসার কিংবা নতুন বিনিয়োগ করা না করা নিয়ে শঙ্কা থাকায় গতি নেই অর্থনীতিতে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কাছে ঋণ পেতে মরিয়া সরকার। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানোর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ সংগ্রহেরও চেষ্টা চলছে। তবে সাফল্য নেই কোথাও।
সার্বিকভাবে এর প্রভাব পড়েছে দেশের রাজস্ব আয়ে। টাকা জোগাড়ের সহজ পন্থা হিসেবে জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে করের বোঝা।

অর্থবছরের মাঝপথে চলতি বছরের শুরুতেই আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে অধ্যাদেশ জারি করে অর্ধশতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরবর্তী সময়ে আন্দোলনে নামে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও ভোক্তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হঠকারী, অপরিণামদর্শী ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে আংশিক ইউ টার্ন নিতে বাধ্য হয়েছে সংস্থাটি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ন্যুব্জ গণতান্ত্রিক একটি দেশে এমন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়াকে সরকারের স্ববিরোধী নীতির সঙ্গে তুলনা করছেন ব্যবসায়ীরা।

ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকার উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে গণ-অভ্যুত্থানে গদিছাড়া হলেও তাদের রেখে যাওয়া টার্গেট অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আসছে না। বরং রাজস্ব আয় বড় ধরনের ঘাটতির পথে। অর্থবছরের ছয় মাসেই রাজস্ব আয়ে টানাটানি চলছে।

ঘাটতি ছাড়িয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে করজাল সম্প্রসারণ না করে উল্টো করের হার বাড়িয়ে আবার কিছু পণ্যে করের হার কমিয়ে অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আইএমএফ বাংলাদেশকে কর-জিডিপি অনুপাত ০.২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে। বাড়তি এই টাকা চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার সঙ্গে যুক্ত হবে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা সংকটে রাজস্ব আদায়ে ধস। প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা। এমন অবস্থায় তৃতীয় কিস্তির টাকা পেতেই এই পদক্ষেপ। যদিও এর ফলে আগে থেকেই অস্থির থাকা বাজার আরো অস্থির হয়েছে। বেড়েছে ভ্যাটের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি পণ্য ও সেবার দাম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দেশের খেটে খাওয়া কোটি মানুষ।

নতুন বছরে বিস্কুট, ওষুধ, আমদানি করা ফল, ফলের রস, সাবান, সাবানজাতীয় পণ্য, পোশাক কেনাকাটা, মিষ্টি, বেশ কয়েক ধরনের টিস্যু, মোটরগাড়ির গ্যারেজ, রেস্তোরাঁ, এলপি গ্যাসের মতো পণ্যে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। সিগারেটে আরেক দফা দাম ও কর বাড়ানো হয়েছে। মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা বা আইএসপির ওপর প্রথমবারের মতো ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে।

পরে আন্দোলনের মুখে রেস্তোরাঁ, মোবাইল ফোন, ওয়ার্কশপ, ওষুধসহ ৯ পণ্য ও সেবার বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এনবিআর। যদিও আন্দোলনের জেরে এই ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, আইএমএফ সরকারকে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের শর্ত দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফের সঙ্গে বসেই আমরা নীতি প্রণয়ন করেছি। সরকার তাতে সম্মত হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ থেকেও কিছু সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনের কারণেই ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। বিভিন্ন কারণে সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সরকারের মনে হয়েছে যে কয়েকটি পণ্যের ওপর ভ্যাট সমন্বয় করা প্রয়োজন। তখন এই কাজগুলো করা হয়েছে।

যদিও ব্যবসায়ীদের অভিযোগের তীর এনবিআরের দিকে। এনবিআরের সমালোচনা করে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, সব সময়ই এনবিআর এ ধরনের কাজগুলো করে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করার কোনো প্রয়োজন তারা অনুভব করে না। এসি চেয়ারে বসে যদি তারা একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয় তাহলে সেটা ব্রিটিশ জমিদারি প্রথার মতোই হয়ে গেল। গণতান্ত্রিক দেশে এটা হওয়ার কথা নয়। আমলাতন্ত্রের কালো থাবা ও চরম অব্যবস্থাপনার কোনো সীমারেখা নেই, তা আবারও স্পষ্ট হলো। এই সরকারকে একটা জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেওয়ার জন্যই এসব করা হয়েছে।

টাকা জোগাড়ে ভ্যাট বাড়িয়ে পরে আবার চাপের মুখে ভ্যাট কমানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, কোনো ধরনের প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়নি। খুবই তড়িঘড়ি করে এসব করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হলে সেটার যে একটা পুশব্যাক আসবে তা বোঝার জন্য কোনো বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা তো সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করেই বোঝা যায়। এই অর্থবছরেই রাজস্ব আদায় বাড়ানোর একটা চাপ ছিল আইএমএফের পক্ষ থেকে, কিন্তু এখানে আরো নেগোসিয়েশন করা যেত।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি দুটি বিষয়কে আলাদা করা যাবে না। একটা দেশে যদি রাজনীতি ভালো না হয়, সেই দেশে কখনোই অর্থনীতি ভালো হয় না। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি তথা সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতির উন্নতির জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। সবাই সামনে তাকিয়ে আছে, সামনে যে দেশের রাজনীতির কী হবে।

তিনি বলেন, অর্থনীতির এই নাজুক পরিস্থিতিতে নতুন করে ভ্যাট ও কর চাপিয়ে দেওয়া অনুচিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে হলে ব্যবসায়ীদের ওপরে নতুন করে কোনো বোঝা চাপানোর সুযোগ নেই। মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার যে নীতিতে চলছিল সেখান থেকে ভ্যাট আরোপ করা স্ববিরোধী।

মন্তব্য

আস্থাহীনতা ও বাড়তি খরচে ধুঁকছে শিল্প

মিরাজ শামস
মিরাজ শামস
শেয়ার
আস্থাহীনতা ও বাড়তি খরচে ধুঁকছে শিল্প

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির দৈন্যদশা কাটাতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকারও। বেসরকারি খাতে নানা সমস্যার কারণে সৃষ্ট সংকটের সঙ্গে আরো নতুন করে যোগ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে চরম আস্থাহীনতা ও বাড়তি উৎপাদন ব্যয়ের চাপে আছে শিল্প। এতে বরং ঝুঁকি আরো বাড়ছে।

 

দেশের রাজনৈতিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার পরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো দুরবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় দিনে দিনে দায়-দেনা ভারী হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট কাটেনি।

দফায় দফায় করকাঠামোর পরিবর্তন। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, তবু ঘাটতি আছে। উচ্চ সুদের হারে ব্যয়ের চাপ বেড়েছে। কমে যাচ্ছে রপ্তানি আয়, শিল্পের উৎপাদন।
এমন পরিস্থিতিতে বাড়ছে শ্রমিকের বেতন। বৃদ্ধি পেয়েছে সব ধরনের কাঁচামালের দাম। এসব কারণে বেড়ে যাচ্ছে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যয়, যার সরাসরি চাপ পড়ছে ভোক্তার ওপরে। এসব সমস্যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে। প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বিনিয়োগ প্রসারের পথ রুদ্ধ। এমনকি চলমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন, বলছেন ব্যবসায়ীরা।

শিল্প খাতে এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। সব মিলিয়ে শিল্প খাতের আকাশে অমানিশার অন্ধকার দেখতে পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছে, কিন্তু তেমন সুফল দেখা যাচ্ছে না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ও সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজিএস বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে কোনো সংশোধিত বাজেট দিতে পারেনি। এটা না থাকার কারণে প্রবৃদ্ধির ধারা কমেছে, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমেছে এবং কর্মসংস্থানে সমস্যা রয়ে গেছে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধির ধারা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষা যদি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে যাঁরা সংস্কারকে গতিশীল করতে চান তাঁরা ধৈর্যহারা হয়ে যাবেন। 

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেছেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে অসংগত নীতি। প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা ভয়ভীতির মধ্যে থাকে যে ট্যাক্স বাড়ল কি কমল। তিনি বলেন, এরপর আছে ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউয়ের হয়রানি। যারা ভালো ট্যাক্স দিচ্ছে তাদের আবার দিচ্ছে। পরের বছর আবার অডিট করছে। লজিস্টিক ঘাটতি রয়েছে। সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে একটা পণ্যের ওপর ডেমারেজ দিয়ে, আরবিটারি ট্যাক্স বসিয়ে দিচ্ছে। ফলে যে দামে পণ্য আনছেন তার দ্বিগুণ বা তিন গুণ দামে কস্ট বেড়ে যাচ্ছে। কে দেখছে? কেউ দেখছে না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

দেশের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে একের পর এক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো। পরিস্থিতি উত্তরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ দিলেও সঙ্গে আছে কঠিন শর্ত। এই শর্ত বাস্তবায়নে জনভোগান্তি বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সরকার। এর প্রভাবে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে ব্যবসা খরচ, টাকার মান কমে যাচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ না কমে বরং আরো বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ভোক্তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় হচ্ছে না। ফলে পণ্যের বিক্রি কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। তাই এখন শিল্প টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যয়ের চাপ সামলাতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা, পাশাপাশি সাধারণ মানুষও। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষা এবং জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরির দাবি করেছেন তাঁরা।

আইএমএফের শর্তের মধ্যে রয়েছে ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, টাকার প্রবাহ হ্রাস, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পদক্ষেপ, ভ্যাটের আওতা ও হার বৃদ্ধি, ভর্তুকি কমানো। এসব বাস্তবায়নে গেছে সরকার, যা সংকট আরো ঘনীভূত করেছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জনজীবনে।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো নিয়মিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার কিছু খাত থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে ইতিবাচক পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার শর্ত বাস্তবায়ন না করে দেশের বাস্তবতায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। 

আওয়ামী লীগ সরকার মূল্যস্ফীতি কমাতে তিন অর্থবছর ধরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করে আসছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর মুদ্রানীতিকে আরো কঠোর করা হয়েছে। ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে প্রবৃদ্ধি মাত্র দেড় শতাংশে নেমেছে। ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সৃষ্ট অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ, উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থাহীনতা, ডলারের সংকট, গ্যাস ও বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে ঘাটতিএসব কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমেছে, ফলে ঋণের প্রবাহও কমে গেছে। অথচ কর্মসংস্থানের ৯৫ শতাংশই হচ্ছে বেসরকারি খাতে। মাত্র ৫ শতাংশ হচ্ছে সরকারি খাতে। ফলে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

নতুন সরকার আসার পর প্রথমে ডলারের দাম বাড়িয়ে ১২০ টাকা করে। গত ১ জানুয়ারি থেকে তা আরো বাড়িয়ে ১২২ টাকা করা হয়। কিন্তু ব্যাংকে আমদানির জন্য আগাম ডলার আরো বেশি দামে বেচাকেনা হচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি খরচ বেড়েছে। এতে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে। টাকার মান কমেছে। এর প্রভাবে অন্য পণ্য ও সেবার দামও বেড়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে, ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এদিকে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে না। এ কারণে আমদানি খাতেও স্থবিরতা বিরাজ করছে।

ব্যবসায়ীরা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে দেখা করে ঋণের সুদের হার কমানোর জোর দাবি করেছেন। কারণ বাড়তি সুদের কারণে শিল্পের খরচ বেড়ে গেছে। এ কারণে তাঁরা শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতি আগামী দিনে শিল্পকে আরো ঝুঁকিতে ফেলবে। এটি উত্তরণে সরকারের সহযোগিতা চান তাঁরা। 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ