১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশে একনায়কতন্ত্র চেপে বসেছিল। গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটছিল। সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন শেখ হাসিনা।’
এম জে আকবর অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ এশিয়ার উদীয়মান শক্তি। বাংলাদেশ এখন কারো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয়। বাংলাদেশ এমন রাষ্ট্র নয় যে ভয় দেখালেই ভয় পাবে।
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সাত মাস আগে গত মে মাসেই লন্ডনভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে আবারও ক্ষমতায় আসতে পারেন শেখ হাসিনা।
এবারের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের আগ্রহের পাশাপাশি দৃষ্টি ছিল ভারত, চীন, রাশিয়ার। ভারতের ও.পি. জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্তর মতে, বাংলাদেশ-ভারত জোরালো সম্পর্কের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বেশ ভালো। এর আলোকে নির্বাচনে দিল্লির সমর্থন অপ্রত্যাশিত ছিল না। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারকে নিয়ে ভারতের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার কারণে ভারত শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করতে পারে।
শ্রীরাধা দত্ত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় বাংলাদেশ ভারতবিরোধী জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা, বাংলাদেশ থেকে ভারতে হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই বাংলাদেশের ভূখণ্ড ভারত বা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে না দেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয় এবং বাস্তবায়ন করে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনার এ ভূমিকাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বদলে দিয়েছে। অনাস্থা-অবিশ্বাসের বদলে গড়ে উঠেছে আস্থার সম্পর্ক। ভারসাম্যপূর্ণ নীতির কারণে ভারত, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি জাপানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়েছেন। ফ্রান্স, ইইউয়ের সঙ্গে সম্পর্কেও তিনি নতুন মাত্রা এনেছেন। বাংলাদেশ এখন কৌশলগত গুরুত্ব ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সম্ভাবনাময় দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারে দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান কালের কণ্ঠকে বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে উন্নয়নশীল বিশ্বের সুসম্পর্ক আছে। উন্নয়নশীল বিশ্ব শেখ হাসিনার আবারও ক্ষমতায় ফেরাকে ভালো বিষয় হিসেবে দেখবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার ধারাবাহিকতায় উন্নয়নশীল বিশ্ব খুশি।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের বিচারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সমালোচনা করলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে—এই বাস্তবতাকে আমলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, পশ্চিমা দেশগুলোও শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জেফরি ম্যাকডোনাল্ড বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় চারটি বিষয় থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো—আওয়ামী লীগের জয়কে স্বীকার, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সমালোচনা, সহিংসতার নিন্দা এবং অব্যাহত অংশীদারি এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতির পর এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা দেন কয়েকজন মার্কিন আইন প্রণেতা। তাঁরা বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতা ও অনিয়মের অভিযোগগুলো তদন্ত করার আহবান জানিয়েছেন।
চীন, রাশিয়া শেখ হাসিনার নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। পশ্চিমা কিছু দেশ যখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দোলাচল অবস্থায়, তখন ইইউ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখার কথা বলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বার্তা পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। শেখ হাসিনাকে তিনি লিখেছেন, ‘আমি খুব আনন্দের সঙ্গে পোশাক, অভিবাসন, নিরাপত্তা ও জ্বালানি শক্তি স্থানান্তরের মতো খাতগুলোতে আমাদের গঠনমূলক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা জোরদার করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখব।’
সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন গত ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে পাঠানো বার্তায় লিখেছেন, ‘আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে জোরালো অগ্রগতি হয়েছে।’
জ্বালানি, অবকাঠামো, লজিস্টিকস, বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহের কথা জানান তিনি।
শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। তারা শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট বিমসটেক এবং জাপানের নিপ্পন ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
এদিকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি শেখ হাসিনার নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদারের আশা প্রকাশ করেছে কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ। অভিনন্দন জানিয়ে আলাদাভাবে বার্তা পাঠিয়েছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য। বাংলাদেশ অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের সহসভাপতি বীরেন্দ্র শর্মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লিখেছেন, ‘এই জয় আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের দুর্দান্ত অগ্রগতি ও সম্মানের প্রমাণ।’
ব্রিটিশ এমপি পল বিস্ট্রো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নারী সরকারপ্রধান হওয়ার অবিশ্বাস্য রেকর্ডের জন্য আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের জন্য ভালো ফল আনছে এবং বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতি করছে—এটি স্পষ্ট।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতি এবং অবকাঠামো বিনিয়োগ অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে সঠিক পরিবেশ প্রদান, মিয়ানমারের ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া ও সহমর্মিতার উদাহরণ দেন পল বিস্ট্রো।
পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিশ্বে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুরুত্বের কথা স্বীকার করেছে। তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, নারীর অধিকার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য ও অসমতা মোকাবেলা, আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসার, শান্তি রক্ষা মিশনে সহায়তা, মানবিক সংকটে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেছে।
লেখক : সাংবাদিক