<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আধুনিক যুগের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকলো ম্যাকিয়াভেলির দ্য প্রিন্স গ্রন্থ থেকে একটা লম্বা ইংরেজি উদ্ধৃতি দিয়ে লেখাটি শুরু করতে হচ্ছে, যাতে প্রসঙ্গের মূলভাবটি পাঠক শুরুতে বুঝতে পারেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘For it is by foreseeing difficulties from afar that they are easily provided against; but awaiting their near approach, remedies are no longer in time, for the malady has become incurable. It happens in such cases, that in the early stages it is easy to cure, but difficult to recognise; whilst in the course of time, the desease not having been recognised and cured in the beginning, it becomes easy to know, but difficult to cure’. </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (দ্য প্রিন্স, পৃ: ১১)। একই সূত্রে রাষ্ট্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে ম্যাকিয়াভেলি বলেছেন, রাজা যদি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অপশক্তির জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং তাদের কর্মকাণ্ডের পরিণতি আগাম বুঝতে ভুল করেন, তাহলে এক সময়ে এসে ওই অপশক্তি থেকে মুক্ত হওয়াটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গৃহযুদ্ধ নিয়ে বলতেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাইফেলের প্রতিটি গুলি আমার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করছে। কিন্তু উদ্ভূত অপশক্তির কাছ থেকে এখনই রাষ্ট্রকে মুক্ত করা না গেলে আমেরিকার ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লিংকন তাঁর জীবন দিয়ে আমেরিকাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়ার পথটিকে খুলে দেন। লিংকনের দর্শনেই বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন সত্তর দশকেই পাকিস্তানি অপশক্তি থেকে মুক্ত হতে না পারলে বাংলাদেশ কখনো স্বাধীন হবে না। বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ চিরদিন অন্ধকারে থাকবে। লিংকন ও বঙ্গবন্ধুর যথা সময়ে যথা কাজের গুরুত্বটাকে যথার্থ প্রমাণ করার স্বার্থেই ম্যাকিয়াভেলির উদ্ধৃতিটি লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি। উপরোক্ত উক্তিটি কখনো পুরনো হওয়ার নয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাম্প্রতিক ঘটনায় আসি। কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে যা ঘটে গেল, তা ঘটার বহু লক্ষণ অনেক আগে থেকেই বহুবার বাংলাদেশের সব সচেতন ও চিন্তাশীল মানুষ দেখেছেন। রাষ্ট্র ও রাজনীতির ব্যাধি সারানোর দায়িত্ব এখন যে ডাক্তারদের হাতে রয়েছে, তাঁরা সেটা দেখে থাকলেও এর পরিণতি বুঝতে পেরেছেন কি না জানি না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঘটনার কথায় আসি। ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে তখন যা যা ঘটেছে, তার মধ্যে দুটি ঘটনার মাধ্যমে পেছনে থাকা অপশক্তির মূল উদ্দেশ্যটি প্রকাশ পায়। প্রথমত, সেই সময়ে একদিন সন্ধ্যার পর কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় আক্রমণ চালায় এবং ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। সরকারি চাকরিতে কোটা রাখা না রাখার ব্যাপারে উপাচার্যের তো সামান্যতম সম্পর্ক নেই। তাহলে সেখানে আক্রমণ কেন? এটাকে বলা হয় উদ্দেশ্যমূলক প্রভোকেশন বা উসকানি। আসল উদ্দেশ্য বোঝার দ্বিতীয় ঘটনাটি প্রকাশ পায় কয়েকজন আন্দোলনকারী ছাত্রের খালি গায়ে বুকে-পিঠে একটা লেখার মাধ্যমে। তাদের বুকে-পিঠে লেখা ছিল, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা রাজাকারের সন্তান।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সেই সময়ে সরকার তড়িঘড়ি করে সব কোটা বাতিল করে দেওয়ায় কোটাবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারের আড়ালে এবং তার ওপর ভর করে যে অপশক্তি সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে বসেছিল, তারা আর এগোনোর সুযোগ পায়নি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="অশুভ শক্তির কবল থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করতে হবে" height="288" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/07.July/25-07-2024/Untitled-1 (1).jpg" style="float:left" width="319" />এবার হাইকোর্ট থেকে কোটা পূর্বের মতো পুনর্বহাল করার আদেশ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই আদেশের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ কোটা বাতিল বহাল রাখার পক্ষে সরকার আপিল করে। তাতে স্পষ্ট বোঝা যায়, দুই পক্ষের মধ্যে তো কোনো দ্বান্দ্বিক অবস্থান ছিল না। তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের যৌক্তিকতা কোথায়? রাস্তায় পেশি প্রদর্শন করে আদালত মানি না, আইনের প্রক্রিয়া মানি না, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা নয়, আমরা যা বলছি তা এখনই করতে হবে। এটা কি শুভ বোধসম্পন্ন মেধার পরিচয়? এটা চরম প্রভোকেশন বা উসকানি এবং রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তার পরও বিপরীতে সব পক্ষ ধৈর্য ধরেছে। মানুষের সহানুভূতিও তাদের দিকে ছিল। পূর্বনির্ধারিত ৭ আগস্ট আপিল বিভাগে শুনানি হলে এখন যে রায় হয়েছে তেমনটাই হতো বলে অনুমান করা যায়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সেটুকু ধৈর্যও ধরতে চাইল না। সড়ক, জনপথ ও রেলপথ অবরোধ করে সাধারণ মানুষের স্বাধীনভাবে চলাফেরার গণতান্তিক অধিকারের ওপর আঘাত ও আক্রমণ চালাল। এটা স্রেফ প্রভোকেশন ও উসকানি। বোঝা যায় পেছনের অপশক্তি এটাই চেয়েছে। তাহলে আমরা কি ধরে নেব, আমাদের মেধাবী ছাত্ররা পেছনের অপশক্তির আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারেনি, নাকি জেনেশুনে তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অপশক্তি কারা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তা এখন সবাই জানেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অপশক্তির মোকাবেলায় রাষ্ট্রযন্ত্র ও জনকল্যাণকামী রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন উপযুক্ত পন্থা ও কৌশল নির্ধারণ করে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী-নেতাদের অসংলগ্ন কথার ফলে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাই ডিফল্ট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> জনমত বিপরীত দিকে চলে যায়। আন্দোলনটির চাবিকাঠি ছাত্রদের কাছ থেকে পেছনের অপশক্তি নিয়ে নিল, নাকি শুরু থেকে তারা অপশক্তির হাতের পুতুল হিসেবে কাজ করেছে, তার উত্তর পরিষ্কার নয়। সেতু ভবন, সেখানে থাকা অর্ধশতেরও বেশি গাড়ি, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, সেখানকার বঙ্গবন্ধু কর্নার, মেট্রো রেল, পদ্মা সেতুর টোল প্লাজাসহ সারা দেশের অন্যান্য জায়গায় যে আগুন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তার কিছুই কোনো মন্ত্রী-নেতার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, রাষ্ট্রের অমূল্য সম্পদ এবং রাষ্ট্রের প্রতীক ও গর্ব। এটা শুধু সন্ত্রাস নয়, রাষ্ট্রদ্রোহ। এটা যারা করেছে, তাদের আর কোনো পরিচয় থাকতে পারে না, তারা দেশ ও জাতির শত্রু।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেক প্রশ্ন। সব প্রশ্নের বিশ্লেষণ এক লেখায় সম্ভব নয়। যে মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি, সমন্বয়, পরিকল্পনা, নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং অর্থের লেনদেন হয়েছে। এর জন্য যে সময় লেগেছে, তাতে রাষ্ট্রের চোখ-কান যদি দৃষ্টিহীন ও শ্রবণহীন না হয়ে থাকে, তাহলে এর পূর্বাভাস যথেষ্ট সময় থাকতেই পাওয়ার কথা। রাষ্ট্রযন্ত্রের জবাবদিহি না থাকলে বড় বিপদ। ২০০৯ সালে সংঘটিত পিলখানা হত্যাযজ্ঞের সময় পূর্বাভাস প্রদানের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের চরম ব্যর্থতার পরও জবাবদিহির সামান্য লেশমাত্র দেখা যায়নি। এটা রাষ্ট্রব্যবস্থার ভেতরের বড় ব্যাধি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের কথা আসি। তাঁরা বলেছেন, সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও এবং ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন এবং তাঁরা এটা সমর্থনও করেন না। ভালো কথা। কিন্তু ওই ধ্বংসযজ্ঞের সরাসরি নিন্দা জানালেন না, তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে ওই জাতীয় শত্রুদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং শাস্তির দাবিও তাঁরা করলেন না। ফলে তাঁদের অবস্থানটি অপরিষ্কার রয়ে গেল। সে কারণেই একটু আগে আমি উল্লেখ করেছি, আন্দোলনকারীরা কি অপশক্তির হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, নাকি অপশক্তি তাদের আন্দোলন ছিনতাই করে নিয়েছে। আমাদের মেধাবী ছাত্রদের তো ২০১২ সালে মিসরে সংঘটিত আরব বসন্তের উৎপত্তি ও তার পরিণতির সব কিছুই জানা থাকার কথা। মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে আন্দোলনটি শুরু করে বাম ঘরানার উদার গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলো। ফলে দ্রুতই তারা সাধারণ মানুষের সমর্থন পায়। কিন্তু সুযোগ বুঝে আন্দোলনের মধ্যে উগ্রবাদী ধর্মান্ধ ব্রাদারহুড কিভাবে ঢুকে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং শেষ পর্যন্ত তার কী বিপজ্জনক পরিণতি হয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেটাও তো আমাদের মেধাবী ছাত্রদের মনে আছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ কারা ধ্বংস করেছে, তার সঠিক উত্তর পেতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে বর্তমানে যা ঘটে তার সঙ্গে একই রকম অতীতের ঘটনার সম্পর্ক বা যোগসূত্র থাকাটাকে ধরে নেওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃদ্ধি। অতীতে এই ধরনের ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, তার অনেক উদাহরণ আছে। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা সাঈদীর ফাঁসির দণ্ড ঘোষণা করেন। ওই দিন বিকেল থেকেই জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও তাণ্ডব শুরু করে। গাইবান্ধার একটি পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ ও আগুন দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা পুলিশ সদস্যদের পুড়িয়ে মারা হয়। কোনো কোনো জায়গায় জাতীয় পতাকায় আগুন দেওয়া হয় এবং শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়। এক জায়গায় পুলিশের ওপর সরাসরি আক্রমণ চালালে পুলিশের আত্মরক্ষামূলক গুলিতে শিবিরকর্মী নিহত হয়। পরের দিন ১ মার্চ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব হুকুম দেন, বিএনপির সব সংগঠন ও পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যেন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যথার্থই বিএনপি নেতাকর্মীদের দ্বারা সেটা হলো। দেশব্যাপী রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুৎকেন্দ্রে আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং কর্তব্যরত একজন ইঞ্জিনিয়ারকে পুড়িয়ে মারা হয়, ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের সমাবেশ ও ধ্বংসযজ্ঞের কথাটি মনে করুন। তারা বায়তুল মোকাররম মসজিদে আগুন দেয়। কোরআন শরিফ পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে। রাস্তার গাছ পর্যন্ত কেটে ফেলে। হাউস বিল্ডিং ভবনে আগুন দেয়। সেদিন হেফাজতের মঞ্চে উঠে বিএনপির বড় বড় নেতারা এবং জামায়াত একাত্মতা ঘোষণা করেন। জাতীয় পার্টি হেফাজতের সেবায় নেমে পড়ে। সব ধ্বংসযজ্ঞ দেখার পরও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে ওই রাতেই হুকুম দেওয়া হয়, বিএনপি নেতাকর্মীরা যেন হেফাজতের সঙ্গে যোগ দেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাঝখানে বিএনপির সিনিয়র নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়রের সঙ্গে রাজনীতিতে বহু ঘাটের পানি খাওয়া ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত একজন সুপরিচিত সিনিয়র নেতার দুরভিসন্ধিমূলক ফোনালাপ ফাঁস হয়ে পড়ে (কালের কণ্ঠ, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)। তাতে বোঝা যায়, দুজন বলছেন যেকোনো মূল্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চাঙ্গা এবং কয়েকটি হল দখল করতে হবে। তাতে যদি দু-তিনটি লাশ হয়ে যায়, তাতে কিছু করার নেই। ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী জামায়াত নেতা মুজাহিদ বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ দেশে কখনোই কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। সুতরাং কান টানলে মাথা আসার মতো অতীত টানলেই বর্তমানের কালপ্রিটদের সন্ধান পাওয়া যাবে। এরা একাত্তরের এ দেশীয় পরাজিত পক্ষ ও তাদের মিত্র পক্ষ, যারা পারস্পরিকভাবে রাজনৈতিক আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ, যে কথা তাদের শীর্ষ নেতারাই প্রকাশ্যে বলেছেন। এরা সম্মিলিতভাবে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিহিংসায় রাষ্ট্র, দেশ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস এবং সব গৌরব ও অর্জনকে পুড়িয়ে ফেলার জন্য বদ্ধপরিকর, যার উদাহরণ পূর্বে বহুবার দেখা গেছে, তার দু-একটা মাত্র ওপরে উল্লেখ করেছি। এরা সুযোগ পেয়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এই সুযোগটি কিভাবে তৈরি হলো, ক্ষেত্রটি কিভাবে সৃষ্টি হলো, কারা বিভীষণের ভূমিকায় থেকেও এখন পর্যন্ত আড়ালে রয়ে গেছে, তার নির্মোহ মূল্যায়ন কেউ করেছেন কি না জানি না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার অপশক্তি তো শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য বহুবার চেষ্টা করেছে, এখনো সুযোগের সন্ধানে আছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুতরাং রাষ্ট্রের বড় রোগ আজ মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক আদর্শবিরোধী রাজনীতি। এর সূত্রেই রাজনীতি কলুষিত ও সহিংস হয়েছে এবং জাতীয় সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। আরেক বড় ব্যাধি ধর্মান্ধতা, যেটি ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লেবেল লাগিয়ে যাঁরা বড় বড় ক্ষমতাধর হয়েছেন, তার মধ্য থেকেও বড়সংখ্যক ব্যক্তি ধর্মান্ধতার ব্যাধিতে ভীষণভাবে আক্রান্ত। বড় ভয়টা ওখানে। এর প্রতিটি অত্যন্ত কঠিন রোগ। কিন্তু এসব থেকে মুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা আরেক রোগ দুর্নীতি। ডায়াবেটিসের মতো এটা এখন মাদার অব অল ডিজিজ। দুর্নীতি রাষ্ট্র, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসহ সব কিছুকে দুর্বল ও ক্রিয়াহীন করে ফেলে। আর এই সুযোগটাই নিতে চাইছে রাষ্ট্রের শত্রুরা। তা না হলে তারা এত বড় সাহস ও সুযোগ পায় কী করে। এক ব্যাংক লুটেরার বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিশদ দলিলপত্রের প্রমাণাদিসহ চার পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ছাপা হলো। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির সঙ্গে ওই পত্রিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিএনপি-জামায়াতকে মানুষ ভালো করে চেনে। ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি ওয়াশিংটনে তারবার্তা পাঠান এই মর্মে যে তারেক রহমান হচ্ছে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বরপুত্র (জনকণ্ঠ, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪)। বিএনপির সময় একটানা চারবার বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতির দেশ হয়েছি আমরা। সুতরাং জামায়াত-বিএনপির প্রতি মানুষের কোনো সহানুভূতি এবং গ্রহণযোগ্যতা নেই। কিন্তু বিধির নিয়ম এই, অতীত থেকে বর্তমানের ওপরই মানুষের দৃষ্টি বেশি থাকে। সুতরাং আজকে যে দুর্নীতি হচ্ছে, তার ফলে তৈরি জন-অসন্তোষের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাই ডিফল্ট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে জামায়াত-বিএনপি। তারা হয়তো ভাবছে, ধ্বংসযজ্ঞ এবং জ্বালাও-পোড়াওয়ের ব্যাপারে জনগণ নিষ্ক্রিয় থাকলেই তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারবে। দুর্নীতি এখনো অনিরাময়যোগ্য হয়ে যায়নি। সে কারণেই আজকের লেখার শুরুতে ম্যাকিয়াভেলির উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করেছি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অশুভ শক্তির কবল থেকে রাষ্ট্র ও রাজনীতিকে মুক্ত করার জন্য এটা এখন সবচেয়ে বড় জরুরি কাজ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">sikder52@gmail.com</span></span></span></span></p> <p> </p>