<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সামনে রেখে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কষ্ট লাঘব করা। একজন শিক্ষার্থীকে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ছুটতে হতো। কিন্তু এই পদ্ধতি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এক জায়গায় আনতে সক্ষম হয়নি। যদি তা-ই হতো, তাহলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তেমন বিতর্ক হতো না। দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় যারা ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত, বুয়েট, কয়েকটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় ও উন্মুক্ত  বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। বাকিগুলো তিনটি গুচ্ছে গত চারটি শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নামে শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত না হলেও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে আসছে। এতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট  দূর হচ্ছে। কিন্তু অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা-ও করছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের কষ্ট কোনোভাবেই কমছে না। গুচ্ছের শুরু থেকে বিবিধ সমস্যা দেখা দেয় এবং সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টাও করা হয়। মোটাদাগে সমস্যা সমন্বয়ের অভাব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা। ফলে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি কার্যক্রম সমাপ্ত হয়, তখনো গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয় না। একটি কথা মনে রাখতে হবে, একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাপদ্ধতি একেক রকম। যখন একটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়, তখন তাদের মধ্যে কয়েকটি বিষয় কাজ করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, দায়িত্বশীলতা, প্রতিযোগিতা এবং সর্বোপরি নিজস্বতা। এর সঙ্গে কাজ করে দ্রুততা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কাজ করে। এক ধরনের প্রতিযোগিতা কাজ করে, যেখানে আমি দ্রুততার সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ে সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থীটিকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারি। একজন শিক্ষার্থী পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগে ভর্তি হতে পারলে আর কোথাও যাবে না বলে বিশ্বাস করি। আবার এমনও হয় যে দ্রুত ভর্তি হয়ে গেলে অন্য কোথাও জাম্প করার মানসিকতা থাকে না। মোটাদাগে শিক্ষকদের দায়িত্বশীল আচরণ ভর্তি কার্যক্রমকে সহজ করে দেয় এবং যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অন্য কারো ওপর নির্ভরশীলতা কমে যায়।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন এ কারণে যে আমাদের মতো ছোট দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫ এবং আরো ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাস হয়ে আছে। হয়তো আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমও শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে সংখ্যাটি দাঁড়াবে ৬১। একজন শিক্ষার্থীকে অন্তত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলে কত কষ্টই না করতে হবে। প্রথম বছর গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে তেমন সমস্যা হয়নি, যতক্ষণ না সমস্যাগুলো শনাক্ত হয়েছে। ক্রমান্বয়ে অনেকেই গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড চাপের কারণে কারো পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। এমনকি গত শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটিও গঠন করেছিল, কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এ ক্ষেত্রে অনেক নমনীয়। ফলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে গেছে এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েকটি যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইবি, যবিপ্রবি, বশেমুরবিপ্রবি, শাবিপ্রবি, শেকৃবি গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে গুচ্ছ পদ্ধতি হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যাবে। এতে এই পদ্ধতি টিকিয়ে রাখা যাবে কি না সন্দেহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বিচারে সবার পক্ষে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া দুরূহ বটে, তবে অসম্ভব নয়। সবাই যদি আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়, সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করবে। কিন্তু তাদের কষ্ট, তা শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক যা-ই হোক না কেন, তা লাঘব করা কঠিন হবে। আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ হিসেবে বলতে পারি, গুচ্ছে থাকা বা না থাকা আমার নিজস্ব পছন্দ। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু একটি চালু করা পদ্ধতি একেবারে বাদ দেওয়া নিয়ে একটু চিন্তা করা সমীচীন নয় কি? বর্তমান পদ্ধতি থাকুক কিংবা না থাকুক, সে ক্ষেত্রে সরকার এবং ইউজিসিকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেননা বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এরই মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে। আমরা যদি কাছাকাছি সময়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারি, তাহলে একই সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রমও শুরু করতে পারি, যা সবার প্রত্যাশা। এখানে তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। প্রথমত, ভবিষ্যতে সব বিশ্ববিদ্যালয় এক হয়ে যদি গুচ্ছের মতো ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায়, তাহলে কোনো বৈষম্য থাকার কথা নয়। বর্তমান নিয়মে সাধারণ,  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং কৃষি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা হলে সমস্যা আর থাকবে না। আর সরকারিভাবে মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা যথানিয়মে চলবে। দ্বিতীয়ত, যারা গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাবে, তারা মনে করলে বিভাগীয় শহরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে। তৃতীয়ত, গুচ্ছ পদ্ধতি একেবারে বাদ না দিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে গুচ্ছ চালু রাখা যেতে পারে। ইউজিসি কিংবা মধ্যম সারির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করা যায়। একেবারে বাদ দিলে আর কখনো এই পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না কিংবা নতুন করে এই পদ্ধতি প্রবর্তন করা কঠিন হবে। পদ্ধতিটি রেখে একে কিভাবে উন্নত ও মানসম্মত করা যায়, তার ব্যবস্থা করা আমরা শ্রেয় মনে করি। তবে আমরা যা-ই করি না কেন, সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নইলে আমাদের শিক্ষার্থীরা আবারও পিছিয়ে পড়বে। আমরা চাই একটি উন্নত ও মানসম্মত ভর্তি পরীক্ষা, যেখানে মেধাবী শিক্ষার্থীটি তার পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগে ভর্তির সুযোগ পায়। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার আশু সহায়তা কামনা করছি।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif"">   </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">neazahmed_2002@yahoo.com</span></span></span></span></p> <p> </p>