<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমাজ সংস্কৃতির সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কৃতির যোগসূত্র অত্যন্ত নিবিড় এবং ঘনিষ্ঠ। রাষ্ট্র তার নীতি, আদর্শ এবং মতাদর্শ সমাজের মানুষকে মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। এই মেনে চলার মাধ্যমে মানুষ পরিশীলিত হয় এবং নিজেকে সুন্দরভাবে তৈরি করে, যার পরোক্ষ প্রভাব একটি সুন্দর রাষ্ট্র বা দেশ। যদি সঠিকভাবে কাজটি করা যায়, তাহলে রাষ্ট্রের প্রতি বহির্বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন আসে। একমাত্র মানুষের মধ্যে পরিবর্তন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মধ্য দিয়েই এই কাজটি করা সম্ভব। রাজনৈতিক পরিবর্তন অনিবার্য এ কারণে যে পাঁচ বছর পর পর একটি সরকারের পরিবর্তন হয়। আবার এর ব্যতিক্রমও লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে এবং আমরা একটি দেশ পেয়েছি। কিন্তু যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে দেশটি স্বাধীন হয়েছিল, তা আজও অর্জিত হয়নি। আমরা বারবার হোঁচট খেয়েছি। স্বাধীনতার কয়েক বছর পর বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। স্বৈরশাসন, বড় দুটি দলের পালাবদল করে ক্ষমতায় থাকা এবং দীর্ঘ দেড় দশক আওয়ামী লীগের একক ক্ষমতায় থাকা এবং চরমভাবে তাদের বিদায়েও আমাদের সংকট কাটেনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দীর্ঘ সময়ে সরকারে অনেক পরিবর্তন হয়েছে সত্য, কিন্তু রাষ্ট্রের মৌলিক পরিবর্তন এবং আমরা এখন যাকে সংস্কার বলছি, তা আদৌ হয়নি। আমরা বলতে পারি, সরকারের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা আবারও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের আশায় আছি। দলগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা যা করা দরকার, তারা তা করেছে। তা এরশাদের মতো স্বৈরাচার হোক কিংবা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হোক না কেন। আমরা বিভিন্ন সময়ে আশার আলো দেখেছি, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত হয়নি। আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম ১৯৯১ সালে, কিন্তু আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আবার ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালেও পরিবর্তনের আশায় এ দেশের সাধারণ মানুষ নিজের টাকা খরচ করে শহর থেকে গ্রামে গিয়ে ভোট দিয়েছে। এত স্বতঃস্ফূর্ত ভোট আমরা সব সময় লক্ষ করিনি। ২০০৮ সালের পরের ঘটনা আমাদের সবার জানা। সমাজের মানুষের পরিবর্তন না হলে এবং রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির কোনো পরিবর্তন না হলে আমরা সেই তিমিরেই রয়ে যাব। আমাদের একটি সুযোগ এসেছিল ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। তখন নির্বাচন ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল, কিন্তু আমরা সামনে এগোতে পারিনি। আবারও আমরা হোঁচট খেয়েছি। ২০২৪ সালে আমাদের আরেকটি সুযোগ এসেছে। আমরা কি এবারের সুযোগকে কাছে লাগাতে পারব, নাকি আগের মতোই অবস্থা হবে? এই প্রশ্ন আমাদের মনে প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="সমাজ ও রাষ্ট্র সংস্কৃতির পরিবর্তন কাম্য" height="268" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11. january/02-01-2025/4.jpg" style="float:left" width="321" />একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। কেননা পরিবর্তন ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। কিন্তু পরিবর্তনের ধারক ও বাহক হলো আমাদের জনগণ। আমরা যদি নিজেরা পরিবর্তিত না হই, তাহলে রাষ্ট্র বা সরকার যতই পরিবর্তন করুক না কেন, তার ফল কখনো সমাজে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। আর সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আমাদের রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলগুলো মানুষ দ্বারা গঠিত। যারা সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত, তারা একটি গোষ্ঠী আর অন্যরা একটি পক্ষ। দ্বিতীয় পক্ষ রাজনৈতিক দলের নীতি ও আদর্শের মাধ্যমে নিজে লাভবান হয় এবং ভালো থাকার চেষ্টা করে। কাজেই সাধারণ জনগণকেও পরিবর্তন হতে হয়। তাদের নিজেদের ভালো-মন্দ সম্পর্কে সচেতন হতে হয় এবং তাদের ইতিবাচক গুণাবলির চর্চা করতে হয়। সচেতনতা, গঠনমূলক সমালোচনা এবং নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধাচরণ করার মাধ্যমে একটি দেশ স্বেচ্ছাচারী মনোভাব থেকে রক্ষা পেতে পারে। সমাজ সংস্কৃতির পরিবর্তনে মানুষের ভূমিকাকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে তাই বিবেচনা করা হয়। কিন্তু তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি দেশের পেশাদার বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা-চেতনার মানুষ বেশি প্রয়োজন। সাধারণ স্বল্পশিক্ষিত মানুষের সচেতনতার স্তর একটু নিচে। কিন্তু শিক্ষিত মানুষের মধ্যে যদি লেজুড়ভিত্তিক চেতনা থাকে, তাহলে এই কাজটি করা দুরূহ। ফলে জনগণের সঙ্গে সরকার ও রাষ্ট্রের একটি গ্যাপ তৈরি হয়। কথা বলার জায়গা বন্ধ হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে কি, আমরা অতীতে এমনটিই দেখে আসছি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারের মূল কাজ হলো মানুষের জন্য সুশাসন নিশ্চিত করা। এই কাজটি গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। যখন আপনি এই কাজটি করতে পারবেন, তখন আপনা-আপনি জবাবদিহি অর্জিত হবে। মানুষের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে মানুষ সজাগ থাকবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করবে। তখন একটি সুন্দর সমাজ সংস্কৃতি আপনা-আপনি তৈরি হবে। আর এর জন্যই দরকার পরিবর্তন। সরকারের পরিবর্তন যেমন একটি আদর্শ নীতি ও পরিকল্পনা এবং সেবার সঙ্গে যুক্ত, তেমনি মানুষের দায়িত্ব সহযোগিতা করা। কিন্তু দুটির সঙ্গে ম্যাচ না হলে কোনো ফল আশা করা যায় না। আমরা দীর্ঘ সময়ে এখানেই আটকে আছি। আমাদের গণজাগরণ অতীতেও হয়েছে, তবে ২০২৪ সালের মতো জাগরণ অতীতে দেখা যায়নি। আমরা এ থেকে যদি শিক্ষা নিতে না পারি, তাহলে আর কি নিজেদের শুধরাতে পারব? না পারলে কবে পারব? আবার কি আমরা হোঁচট খাব? কাজেই সমাজ সংস্কৃতির পরিবর্তনের জন্য আমাদের প্রত্যেককে পরিবর্তন করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে আমাদের পরিবর্তন করতে পারবে না। অন্য কোনো দেশ আমাদের পরিবর্তন করতে পারবে না। আমাদের পরিবর্তন আমাদের নিজেদেরই করতে হবে। কেননা সমাজ যদি রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তার পরিণতি কখনো ভালো হয় না। আমরা যত কথাই বলি না কেন, আমরা যত কাজই করি না কেন, নিজেকে পরিবর্তন করতে না পারলে সমাজ কখনো বদলাবে না। কেননা মানুষ ও সমাজ একই সূত্রে গাঁথা। আসুন, আমরা নিজেকে পরিবর্তন করি। তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্র এমনিতেই সঠিক জায়গায় চলে আসবে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><a href="mailto:nahmed1973@gmail.com" style="color:blue; text-decoration:underline">nahmed1973@gmail.com</a></span></span></span></span></p>