<p>ইসলামী রাষ্ট্র হলো—ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত রাষ্টব্যবস্থা। যে রাষ্ট্রের জনসমষ্টি ইসলামী অনুশাসনের অনুসারী এবং এর ভূখণ্ডগত অবস্থান, সরকারব্যবস্থা ও সার্বভৌমত্ব ইসলামের বিধি-বিধানের অনুসরণে গড়ে ওঠে অর্থাৎ যে রাষ্ট্রের পরিচালনা, নীতিনির্ধারণ, প্রশাসন ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শ ও রীতি-নীতির পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করা হয় তাকে ইসলামী রাষ্ট্র বলা হয়। </p> <p>ইসলামী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ইসলামী রাষ্টকে বলা হয় ‘দারুল ইসলাম’। ফিকহবিদরা দারুল ইসলামের সংজ্ঞায় বলেছেন—‘দারুল ইসলাম তথা ইসলামী রাষ্ট্র হলো এমন ভৌগোলিক অঞ্চলের নাম, যা মুসলমানদের কর্তৃত্বাধীনে আছে।’ </p> <p>ইবনে খালদুনের মতে, ‘ইসলামী শরিয়তের দাবি অনুযায়ী নাগরিকদের ইহজাগতিক ও পরকালীন কল্যাণ সাধনের সর্বাধিক দায়িত্ব গ্রহণকারী রাজনৈতিক সংগঠনই হলো ইসলামী রাষ্ট্র।’ ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘ইসলামী রাষ্ট্র হলো ধর্মভিত্তিক এমন প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে সব আইন প্রয়োগ করা যায়।’</p> <p><strong>ইসলামী রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা</strong></p> <p>ইসলামের মূল স্তম্ভ ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ অন্যান্য ফরজ-নফল ইবাদত পালনই মুমিনজীবনের মূল উদ্দেশ্য। রাষ্ট্রে বা নির্জন প্রান্তরে, সমাজে বা একাকী, মুসলিম দেশে বা অমুসলিম দেশে সর্বাবস্থায় ও স্থানে মুমিন ব্যক্তির ইবাদত-বন্দেগি পালন অপরিহার্য। রাষ্ট্রক্ষমতা ইবাদতের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রক্ষার মাধ্যম বা উপকরণ। রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের মাধ্যমে ইসলামের পূর্ণতা অর্জন হয়। অর্থ, বিচার, জিহাদ ও রাষ্ট্রসংক্রান্ত ইসলামের বিধি-বিধান কার্যকর করা যায়। বল প্রয়োগের মাধ্যমে নেহি আনিল মুনকার তথা অসৎ কাজ থেকে ফিরিয়ে আনা যায়।</p> <p>মুমিনজীবনের মূল উদ্দেশ্য যে ইবাদত, সে বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)</p> <p>আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বিধিগত ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছেন, যা তিনি ভালোবাসেন ও চান। তাহলো সব মানুষ ও জিন কেবল এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করবে।</p> <p><strong>ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য</strong></p> <p>ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো—এমন একটি সমাজ গঠন করা, যেখানে সব মানুষ জীবনের সর্বক্ষেত্রে মহান আল্লাহর বিধানের একনিষ্ঠ অনুগামী হবে, নামাজ কায়েম করবে, জাকাত প্রদান করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। এ বিষয় সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে—‘আমি এদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা নামাজ কায়েম করবে, জাকাত প্রদান করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৪১)</p> <p>এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক লক্ষ্য হলো—নামাজ কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, সৎ কাজ তথা ন্যায় ও কল্যাণকর কাজের আদেশ করা ও তা প্রতিষ্ঠা করা এবং অসৎ কাজ তথা সব অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখা।</p> <p><strong>ইসলামী রাষ্ট্রের পথ ও পাথেয়</strong></p> <p>ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিশ্রুত বিষয়। দুটি কাজের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (১) প্রকৃত ও পরীক্ষিত ঈমান, যার মাপকাঠি সাহাবায়ে কিরাম। (২) আমলে সালেহ তথা কোরআন ও সুন্নাহ মাফিক জীবনযাপন। অর্থাৎ নিজের জীবন, পরিবার ও অধীনদের মধ্যে ব্যাবহারিক জীবনে দ্বিনের অনুশীলন এবং ইসলামের সৌন্দর্যময় শ্রেষ্ঠত্ব সমাজে সবার মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হলে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে এবং ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা টেকসই হবে। যেমন—আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সত্কর্ম করে আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি অবশ্যই তাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বিনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্য নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। আর এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারাই সত্যত্যাগী।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৫)</p> <p>এখানে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলকে তিনটি বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (১) তাঁর উম্মতকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব ও শাসনকর্তা করা হবে, (২) আল্লাহর মনোনীত দ্বিন ইসলামকে বিজয়ী করা হবে এবং (৩) মুসলিমদের এমন শক্তি ও শৌর্যবীর্য দান করা হবে, তাদের অন্তরে শত্রুর কোনো ভয়ভীতি থাকবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও খুলাফায়ে রাশেদার যুগে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে তাঁদের বিজয়ী করেছিলেন। তাঁর মনোনীত ধর্ম ইসলামকে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। মুসলিমদের ভয়কে নিরাপত্তায় পরিণত করেছিলেন। আয়াতে বর্ণিত কোরআনের শব্দাবলি ব্যাপক এবং ঈমান ও নেক আমলের সঙ্গে শর্তযুক্ত। কাজেই শর্ত পূরণ হলে মহান আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইসলামকে বিজয়ী করবেন।</p>