<p>পর্তুগীজরা কেউ তাকে ডাকেন 'অভিবাসীদের কণ্ঠস্বর' নামে। কোনো পর্তুগীজদের কাছে তিনি 'অভিবাসীদের সেতু'। অভিবাসীদের সুবিধা-অসুবিধা পর্তুগাল সরকারের কাছে তুলে ধরা, সংস্কৃতির অমিলকে দূর করে মেলবন্ধন করানোই তার কাজ। তার জন্য পর্তুগালের একটি রাজনৈতিক দল তাদের উইং হিসেবে গড়ে তুলেছে 'অভিবাসীদের পার্লামেন্ট'। অভিবাসীদের জন্য কোনো রাজনৈতিক দল এরকম পৃথক কোনো উইং এর আগে খোলেনি। তিনি সাজিন আহম্মেদ কৌশিক। বয়স মাত্র ২৭ বছর। তিনিই প্রথম কনিষ্ঠ অভিবাসী এবং বাংলাদেশি হিসেবে স্থানীয় পার্টি ইয়ুথ সোশ্যালিস্ট অব পর্তুগাল (জেএস), লিসবনের সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছেন।</p> <p>চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বাসিন্দা সাজিন ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির প্রতি বিশেষ আকর্ষণ  ছিল। তার বাবা এম এ কুদ্দুস একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মতলব উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। কোভিড মহামারির পর সাজিন পর্তুগালে আসেন। এখানে এসে অভিবাসীদের সাথে স্থানীয় লোকজনের দূরত্ব বিশেষত সাংস্কৃতিক দূরত্ব অনুধাবন করেন তিনি। হাসপাতালে, মেট্রো রেলে কিংবা সরকারি অফিসে পর্তুগীজ ছাড়া অন্য কোনো ভাষা না থাকার কারণে অভিবাসীদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে দেখেন সাজিন। এ ছাড়া অভিবাসীরা পর্তুগালে থাকার সময় যেসব সমস্যায় পড়ছেন তা সমাধানে কেউ এগিয়ে না আসার বিষয়টিও লক্ষ্য করেন। এসব নিয়ে কাজ করতে ২০২২ সালে তিনি জেএস-এ যোগ দেন এবং এর যুব শাখার অংশ হয়ে ওঠেন। ভালো বক্তা হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়েছে। </p> <p>জেএস-এ যোগদানের বিষয়ে সাজিন বলেন, অভিবাসন পর্তুগালের সবচেয়ে বড় আর্শীবাদ এবং সমস্যা দুটোই। পর্তুগীজদের মধ্যে অভিবাসীদের সংস্কৃতি নিয়ে তেমন কোনো ধারণা নেই। তাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। একজন অভিবাসী হিসেবে এটি নিয়ে কাজ করার আমার আগ্রহ তৈরি হয়। পাশাপাশি এদেশের রাজনীতি নিয়ে আমার আগ্রহ আগে থেকেই ছিল। সবমিলিয়ে আমি জেএস-এ যোগ দিই।</p> <p>অভিবাসীদের জন্য এ পর্যন্ত কী কী করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডানপন্থীরা সবসময় প্রচার চালায়, অভিবাসীরা পর্তুগালের ক্ষতির কারণ। আমরা এ গুজব বা ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর করার জন্য কাজ করছি। আমরা কলামিস্টসহ মিডিয়ার মাধ্যমে অভিবাসীদের কারণে পর্তুগাল অর্থনৈতিকভাবে কতটা উন্নতি করছে তা তুলে ধরছি।</p> <p>সাজিন বলেন, সম্প্রতি ডানপন্থী সরকার বাংলাদেশিসহ পর্তুগালে আসা সব নতুন অভিবাসী প্রত্যাশীদের 'সেইফ এন্ট্রি' বন্ধ করে দিয়েছে। এসব অভিবাসী প্রত্যাশীরা অনেক টাকা খরচ করে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এ দেশে এসেছে। কিন্তু সরকারের হঠাৎ সিদ্ধান্তের কারণে তারা সেইফ এন্ট্রি করতে পারেনি। এসব মানুষ যাতে এ সুবিধাটা পায় সেজন্য আমরা বিভিন্ন মাধ্যম নিয়ে সরকারের সাথে কাজ করছি। পর্তুগালে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করাকে সেইফ এন্ট্রি' বলা হয়। </p> <p>তরুণ এ রাজনীতিবিদ আরো বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সরকারি বিভিন্ন জায়গায় পর্তুগীজ ভাষার পাশাপাশি ইংরেজী ভাষার প্রচলন করেছি। সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এ দেশের ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষা প্রচলনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও চলতি বছরের মধ্যে আমরা যুব অভিবাসীদের বিনামূল্যে যেকোনো আইনি সেবা ও তথ্য দেওয়ার সুবিধা চালু করব। </p> <p>যেহেতু সাজিন এখনো সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হননি, তাই অভিবাসীদের কোনো সমস্যা হলে তিনি নিজ দলের মাধ্যমে সমস্যাগুলো পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেন। </p> <p>নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে সাজিন বলেন, রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে আরো সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি অবশ্যই পর্তুগালের সাংসদ হতে চাই। তবে সেজন্য আমাকে আগে এদেশের নাগরিকত্ব পেতে হবে। </p> <p>সাজিন একজন তরুণ উদ্যোক্তাও বটে। লিসবনের প্রাণকেন্দ্রে তার দুটি রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। মজার ব্যাপার হলো, আমরা যখন কথা বলছি, তখন একজন তরুণ পর্তুগীজকে দেখলাম অতিথিদের খাবার পরিবেশন করছেন। সাজিন ওই তরুণকে দেখিয়ে বললেন, ওনার নাম জোয়াও পেরেইরা। উনি আমাদের জেএস-এর সভাপতি। উনি এখানে কাজ করেন না। আমাকে সাহায্য করার জন্য আজকে আমার রেস্টুরেন্টে এসেছেন। </p> <p>সাজিনের ব্যাপারে জেএস এর প্রেসিডেন্ট জোয়াও পেরেইরার কাছে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, সাজিন অভিবাসীদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। রাজনীতিবিদ হিসেবে সে অনন্য।</p> <p>জেএসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াতরিজ পেরেইরা কালের কণ্ঠকে বলেন, সাজিন অভিবাসী এবং পর্তুগীজদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধনের কাজ করেন। তিনি অভিবাসী কমিউনিটিকে পর্তুগীজ কমিউনিটির কাছাকাছি নিয়ে এসেছেন। </p>