ঢাকা, বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫
১২ চৈত্র ১৪৩১, ২৫ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫
১২ চৈত্র ১৪৩১, ২৫ রমজান ১৪৪৬
এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার

মহসিনের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে ছিলাম না

  • সোনালি সময়ে জাতীয় দল আর মোহামেডানের গোলরক্ষক ছিলেন প্রায় এক দশক। কিন্তু কেন যে তারপরও ছাইদ হাছান কানন ঠিক তারকাখ্যাতিটা সেভাবে পাননি। তাঁর কীর্তি অনেক, তবু দুয়েকটা ব্যর্থতার কথাই প্রচারিত হয়েছে বেশি করে। সেই ‘দুর্ভাগা’ মানুষটি খুললেন জীবনের খাতা, মাসুদ পারভেজ-এর সঙ্গে ঘুরে এলেন স্মৃতির সরণি থেকে।
notdefined
notdefined
শেয়ার
মহসিনের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে ছিলাম না

প্রশ্ন : মনের আনন্দে ফুটবল খেলে বেড়ানো ছোটবেলার সেই দিনগুলো থেকেই শুরু করতে চাই।

ছাইদ হাসান কানন : আগেই বলে রাখি আমি মনের আনন্দেই শুধু ফুটবল খেলিনি, মনের বেদনায়ও খেলেছি।

প্রশ্ন :  ঠিক বুঝলাম না! একটু যদি বুঝিয়ে...

কানন : আসলে সব মানুষেরই একান্ত ব্যক্তিগত কিছু ব্যাপার থাকে। আমার বেদনাও সে রকমই একটি।

অবস্থা ঘুরে গেলে কেউ সাধারণত এসব কথা বলতে চায় না। কিন্তু আমি বলি। বলি এ জন্য যে এখন অর্থনৈতিকভাবে খুব বাজে অবস্থায় থাকা কারো কাছে তা অনুপ্রেরণারও হতে পারে। তা ছাড়া এমনও তো নয় যে এটা গোপন করে আমি বড় হয়ে যাব!

প্রশ্ন :  প্রকাশ যখন করছেনই, তখন বিস্তারিতই শুনতে চাই।

কানন : যুদ্ধের সময় আমাদের পরিবার অভাবেই ছিল। স্বাধীনতার পর তো দেশে আরো অভাব-অনটন লেগে গেল। এখন যেটা বিজি প্রেস, তখন সেটি ছিল সেন্ট্রাল প্রেস। আমার বাবা চাকরি করতেন ওখানেই।

চাকরির টাকা দিয়ে আমাদের ছয় ভাইবোনের বিশাল সংসার চালাতে তাঁকে হিমশিমই খেতে হতো। বড় বোন ও ভাইকে ভালো স্কুলে পড়াশোনা করানোর খরচ জোগানোর পর অন্যদের জন্য খুব বেশি টাকা অবশিষ্ট থাকত না। তার ওপর যখন দেখলাম বিএ পাস করার পর বড় ভাইয়ের কোনো চাকরিই হচ্ছে না, তখন ব্যাপারটি আমার মধ্যে খুব প্রভাব ফেলল। চিন্তা করলাম পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি একটা কিছু করা দরকার। বলতে পারেন, সিরিয়াসলি ফুটবল খেলার শুরুটা তখন থেকেই।
তখনকার দিনে বিজেএমসি, কাস্টমস, কওমি জুট মিল ও বিভিন্ন স্পিনিং মিলে ফুটবলারদের চাকরি দেওয়া হতো। এতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ধুমসে ফুটবল খেলা শুরু করলাম। তা ছাড়া তখনকার দিনে ফুটবলাররা ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। সেই জনপ্রিয়তার টানেও ফুটবলে একটু বেশিই ঝুঁকে পড়েছিলাম।

প্রশ্ন :  কার জনপ্রিয়তা আপনাকে তখন সবচেয়ে বেশি টেনেছিল?

কানন : ১৯৭৫ সালে ক্লাস সেভেনে পড়ি। ওই বছরই আমার স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখার শুরু। ছিলাম মোহামেডানের পাঁড় সমর্থকও। আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডানের ৪-০ গোলে জয়ের পর মুহূর্তের ঘটনা এখনো চোখে ভাসে। তখন শান্টু ভাই (গোলরক্ষক শহীদুর রহমান), প্রতাপ দা (প্রতাপ শংকর হাজরা), টিপু ভাই (গোলাম সারোয়ার) ও রামা লুসাইদের ভিড়েও জনপ্রিয়তায় সবার চেয়ে এগিয়ে এনায়েত ভাই। তা খেলাশেষে আমি কাঁটাতারের বেড়া টপকে মাঠে নেমে পড়ি। দৌড়ে গিয়ে এনায়েত ভাইকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে তাঁর কনুইয়ের ঝাপটায় আমি ছিটকে পড়ি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পশ্চিম দিকের গেট পেরোলেই তখন মোহামেডান ক্লাব টেন্ট। এখন যেটাকে মশাল গেট বলা হয়। তা ছিটকে পড়ে ওখান দিয়ে বেরোতে গিয়েই বিপদে পড়ি। মোহামেডান সমর্থকরাও তখন দলে দলে সেদিকেই ছুটছেন। ছোট্ট আমার পদদলিত হয়ে প্রায় দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়! এনায়েত ভাইয়ের মতো সেলিব্রিটি এমন করায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। মনে দুঃখ নিয়ে বাসায় ফিরে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, একদিন খেলোয়াড় হয়েই স্টেডিয়ামে যাব। আমার নিরলস পরিশ্রমের শুরুও তখন থেকেই।

প্রশ্ন :  খেলোয়াড়ই হননি শুধু, তারকাও হয়েছিলেন। তা এনায়েত ভাইকে কখনো কনুইয়ের সেই ঝাপটার কথা বলার সুযোগ হয়েছিল?

কানন : তা তো হয়েছিলই। কিন্তু এনায়েত ভাই পাল্টা ক্রেডিট নিতে শুরু করেছিলেন (হাসি...)। তাঁর কথা, ‘আমি ও রকম করেছিলাম বলেই তো তুই আজ এই পর্যায়ে আসতে পেরেছিস।’

প্রশ্ন :  ওই পর্যায়ে যেতে কোথাও না কোথাও থেকে তো শুরু করতে হয়েছে। সেই শুরুর গল্পও সংক্ষেপে জেনে নিতে চাই।

কানন : আমার বেড়ে ওঠা বাড্ডা এলাকায়। যে এলাকা থেকে ফুটবলার তৈরি হওয়ার ঐতিহ্যও আছে। এই যেমন গোলরক্ষক আতিক, স্ট্রাইকার নকিব, বখতিয়ার ও মিন্টু—তাঁরা সবাই বাড্ডার। নবীন ক্রীড়া চক্র নামে এলাকার একটি দলও ছিল, যেটি এখন হয়েছে বাড্ডা জাগরণী। তা নবীনের হয়ে ১৯৭৯ সালে আমি পাইওনিয়ার লিগ খেলে শুরু করি। একই বছর মেট্রিকও পাস করি। নিশ্চিতভাবেই জানতে চাইবেন গোলরক্ষক হলাম কেন! তাই আগেই বলে রাখি। বেশ লম্বা ছিলাম বলে এলাকার বজলু ভাই, মনু ভাই ও লালা ভাইরা আমাকে গোলরক্ষক হতেই উৎসাহিত করে গেছেন সব সময়।

প্রশ্ন :  কিন্তু পাইওনিয়ার তো একজন ফুটবলারের জন্য প্লে গ্রুপ বা নার্সারি-কেজির পর্যায়ের টুর্নামেন্ট। সেখান থেকে উত্তরণের সিঁড়ি ভাঙার সংগ্রামের কথাও জানতে চাই।

কানন : ওই পর্বটা তো একেবারে রূপকথার মতো। বলি শুনুন। ১৯৭৫ সাল-পূর্ববর্তী সময়ে আবাহনীতে উইলিয়াম বিল হার্ট নামের এক ব্রিটিশ কোচ এসেছিলেন। ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে তাঁকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। এসেই তিনি তরুণদের জন্য উন্মুক্ত ট্রায়াল ডাকেন। মনে আছে, ডিসেম্বর মাসে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে হয়েছিল সেটি। নিয়ম ছিল ৩০ টাকা দিয়ে টোকেন কিনে ট্রায়াল দিতে হবে। কিন্তু আমি যাওয়ার আগেই টোকেন শেষ। তবু প্রায় ৩০০ জন গোলরক্ষকের লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। নেওয়া হবে মাত্র তিনজন! টোকেন ছাড়া দাঁড়ানোর জন্য কখন ধরা পড়ে যাই, এই ভয়ের মধ্যেই বিল হার্টের নজরে পড়ে যাই আমি। খুব স্বাভাবিক কারণ আমি সবার চেয়ে লম্বা। তিনি আমাকে ডেকে পোস্টের কাছে নিয়ে যান। এরপর দেখি তাঁর সামনে ৩০টির মতো বল। আমি পোস্টে দাঁড়াতেই দুমদাম মারা শুরু করে দেন। জান বাজি রেখে আমিও ঝাঁপিয়ে সেভ করতে থাকি। আবাহনীর তিন গোলরক্ষক মহসিন, মঈন ও সুহাসও তখন এর প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁদের উদ্দেশে আমার কিপিংয়ে মুগ্ধ বিল হার্টকে বলতে শুনলাম, ‘এই ছেলেকে আমি নিয়ে নিলাম। বাকি দুজনকে তোমরা ঠিক করো।’ এটি তো রূপকথার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বও আছে কিন্তু।

প্রশ্ন :  সেটি আবার কোনটি?

কানন : সেটি বাসার ঘটনা। ফুটবল খেলার জন্য বাবার কত মার যে খেয়েছি! স্কুল পালিয়ে খেলতে যেতাম বলে আব্বা অফিস থেকে ফেরা মাত্রই আম্মা নালিশ দিতেন। আর অমনি আব্বা বেল্ট খুলে মারা শুরু করতেন। অথচ আমার আবাহনীর ট্রায়ালে টিকে যাওয়ার কথা শুনে আব্বা কী করে যেন বদলে গেলেন! সেই সময়ে বাড্ডা থেকে ধানমণ্ডিতে যাওয়াও তো কম খরচের ব্যাপার নয়। তবু কত কষ্ট করেই না এক হাজার ২০০ টাকা দিয়ে একটি ফিনিক্স সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন আমাকে! ওই সাইকেলটি ফুটবলার কাননকে দেওয়া তার বাবার প্রথম স্বীকৃতিও।

প্রশ্ন :  কিন্তু আবাহনীর সঙ্গে তো বেশি দিন থাকা হয়নি আপনার!

কানন : হ্যাঁ, ১৯৮০ সালের ফেডারেশন কাপ শেষ হওয়ার পর আবাহনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। তত দিনে হার্টও চলে গেছেন। ক্যাম্পও তাই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তাই বিকল্পের সন্ধানে নেমে পড়ি। খবর পেলাম যে অফ সিজনে আলী ইমাম ভাই জুনিয়র ফুটবলারদের অনুশীলন করান আর বিভিন্ন ক্লাবে খেলার সুযোগ করে দেন। কলাবাগান লেক সার্কাস মাঠে তাঁর কাছেই ছুটে যাই। আমাকে দেখেই তাঁর প্রথম কথা, ‘তুই তো তারের খাম্বা রে!’ তিনি দিয়ে বসলেন অন্য চ্যালেঞ্জ। আমার সাইকেল আছে শুনে তিনি বললেন, ‘বাড্ডা থেকে দৌড়ে আসতে পারবি? যদি পারিস, তাহলেই তোকে নেব।’ সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি জিতলাম এবং সেখান থেকে পেলাম পরের ব্রেকটিও।

প্রশ্ন :  সেটি কিভাবে?

কানন : আমার ওস্তাদ ইমাম ভাইয়ের অধীনে একবছর অনুশীলন করলাম। ১৯৮১ সালে ফরাশগঞ্জও দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে ওঠার পর ওস্তাদের কাছে দ্বিতীয় গোলরক্ষক চাইল। তিনি আমাকে মহসিন হলের মাঠে ট্রায়াল দিতে পাঠালেন, দিয়ে এসেই পর দিন শুনি আমাকে ক্লাবে যেতে বলা হয়েছে। সেখানে গিয়ে কথাবার্তা চূড়ান্ত হওয়ার পর আমাকে একটি ভাউচারে সই করতে বলা হলো। টাকার অঙ্ক দেখে তো আমার লোম দাঁড়িয়ে যায়! ৩০ হাজার টাকা! ক্যাশ নিয়ে বাসায় আসতেই আরেক বিপত্তি। ডাকাতি করা ছাড়া আমি এত টাকা নিয়ে যেতে পারি বলে আব্বার বিশ্বাসই হচ্ছিল না! (হাসি...) পরে ওস্তাদকে ডেকে নিয়ে আব্বাকে বুঝ দিতে সক্ষম হই। 

প্রশ্ন :  সেই থেকে আপনার বেদনার উপশমেরও শুরু, তাই না?

কানন : হ্যাঁ, তাই। ১৯৮২ সালে ফরাশগঞ্জের এক নম্বর গোলরক্ষক হিসেবে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাই। ওই বছরের পারফরমেন্স দিয়ে ১৯৮৩ সালে জায়গা করে নিই ব্রাদার্সে। সেই থেকে তিন লাখ-চার লাখ করে টাকা আসার শুরু। একই সঙ্গে ফুটবল দিয়ে শুরু আমাদের পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাওয়ারও। বোনদের বিয়ে দিলাম, ভাইদের পাঠালাম বিদেশে। বড় ভাইকে আমেরিকায়, ছোট ভাইকে জাপানে। কখনো কখনো টাকার জন্য ঝুঁকিও নিয়েছি আমি।

প্রশ্ন :  কখন, কিভাবে?

কানন : ব্রাদার্সের পারফরমেন্সে ১৯৮৪ সালে ডাক আসে মোহামেডান থেকে। ওদের তখন মহসিন আছে, আমাকে দ্বিতীয় গোলরক্ষক হিসেবে চাইল। দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাওয়ায় ওস্তাদের শরণাপন্ন হই। তিনি শুধু বললেন, ‘লড়াই করলে জাতীয় দলের গোলরক্ষকের সঙ্গে গিয়েই কর।’ খালি মোহামেডানকে শর্ত দিলাম ছয় লাখ টাকা চুক্তির চার লাখ ক্যাশ দিতে হবে। টাকাটা ক্যাশ করে সারা বছর বসে থাকার ঝুঁকিও নিলাম। বুঝতেই পারছেন, তখন টাকার দরকারও ছিল।

প্রশ্ন :  মহসিনের ছায়ায় সেই আপনার বেড়ে ওঠার শুরু। যদিও দ্বিতীয় গোলরক্ষক হিসেবে প্রথম প্রথম আপনার খেলার সুযোগই হতো না মোহামেডানে। অথচ ওই সময়ও জাতীয় দলের মূল গোলরক্ষক মহসিনের বিকল্প হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন। কেউ আপনার খেলা না দেখার পরও কিভাবে সেটি সম্ভব হয়েছিল?

কানন : মোহামেডানে তখনো খেলিনি, তবে এর আগে অন্য দলে তো কয়েক বছরই খেলেছি। তাই প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় হিসেবেই ১৯৮৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলাম। তবে ক্যাম্প থেকে দলে সুযোগ পাওয়ার গল্পটিও বেশ চমকপ্রদ।

প্রশ্ন :  বলুন না শুনি।

কানন : কোচ আব্দুর রহিম ভাইয়ের ক্যাম্পে আমি ভালোই করেছিলাম। তবে চূড়ান্ত নির্বাচনে দেশসেরা গোলরক্ষক মহসিনের সঙ্গে দলে সুযোগ পেয়ে গেল কিনা আনফিট মঈন। যে কিনা ওই বছরই আবাহনী ছেড়ে রহমতগঞ্জে গেছে। এ ঘটনায় স্টেডিয়াম এলাকায় আলোড়ন পড়ে যায়। খবর পৌঁছায় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি মেজর হাফিজের কানেও। তিনিই শুধু গোলরক্ষকদের জন্য বিশেষ ট্রায়ালের ব্যবস্থা করতে বলেন সংশ্লিষ্টদের। সকাল ১১টার সেই ট্রায়ালে গিয়ে দেখি তিনি নিজেও উপস্থিত। ফেডারেশন প্রধানের সামনেও আমি যথারীতি ভালো করি। আর ফ্লাইং করে একটি বল সেভ করতে গিয়ে মঈন এমন ব্যথা পায় যে আর উঠতেই পারেনি! সেই আমি দ্বিতীয় গোলরক্ষক হিসেবে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে গেলাম।

প্রশ্ন :  জাতীয় দলের মতো ক্লাব দলেও তো আপনাকে এক নম্বর হতে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে?

কানন : তা হয়েছে। ১৯৮৫ সালেও মোহামেডানে সেভাবে খেলার সুযোগ হয়নি। ১৯৮৬ সালে তাই ক্লাবকে জানিয়ে দিলাম যে আমি আর নেই। কিন্তু ক্লাবও আমাকে ছাড়বে না। বলা হলো, ‘তুমিই এক নম্বর গোলরক্ষক। মহসিন থাকলে থাকবে, না হলে নেই।’ আসলে মহসিনের ওপর থেকে ক্লাবের আস্থা উবে যেতে শুরু করেছিল ১৯৮৫ সালের লিগ থেকেই। যে লিগে আবাহনীর হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতার কথাই ছিল না। বরং মোহামেডানই ছিল সুবিধাজনক অবস্থানে। কিন্তু সুপার লিগে আরামবাগের কাছে হেরেই সর্বনাশ হয়ে যায় আমাদের। হারে দায় ছিল মহসিনেরও। ওই বছরই নিয়ম করা হয়, ধরার পর গোলরক্ষককে চার স্টেপের মধ্যেই বল রিলিজ করে দিতে হবে। কিন্তু মহসিন আরো বেশি স্টেপ ফেলায় রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজায়। ফ্রি-কিক থেকে গোল করে বসে আরামবাগও। ওই ঘটনায় রেফারি রফিককে মেরেই বসে মহসিন। লালকার্ড পাওয়ার মতো ঘটনা নিঃসন্দেহে। কিন্তু এর আগেই আমাদের কোচ এনায়েত ভাই বুদ্ধি করে মহসিনকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে নামান আমাকে। কিন্তু এটাকেও ভুল বোঝে অধিনায়ক মহসিন। ও লাইনের বাইরে এসে ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড কোচের গলায় পরিয়ে দিয়ে এমন এক বাজে কথা বলে বসে যে মহসিনের ওপর থেকে এনায়েত ভাইয়ের মনও উঠে যায়।

প্রশ্ন :  সেই থেকে আপনি মোহামেডানে নিয়মিত হয়ে গেলেন?

কানন : হ্যাঁ, সেই ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৬, এই এক দশক আমি ছিলাম মোহামেডানের অপ্রতিদ্বন্দ্বী গোলরক্ষক। বিশেষ করে ১৯৮৬ সালের লিগটি আমার জন্য ছিল দারুণ স্মরণীয়। মহসিন দলে ছিল, কিন্তু খেলছি আমি। আর সেবারই শিরোপা পুনরুদ্ধার করে মোহামেডান। প্রথম লেগে বাদল রায়ের গোলে আমরা আবাহনীকে হারাই। দ্বিতীয় লেগে আবার মুখোমুখি হওয়ার সময় ওরা ১ পয়েন্টে এগিয়ে। সমীকরণটি এমন যে ওরা ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন আর আমাদের জয়ের বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা জিতব, সেটি আমরা তো বটেই ভাবেননি মোহামেডান সমর্থকরাও। স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখি মোহামেডান গ্যালারি পুরোটাই ফাঁকা। কারণ ওই ম্যাচের আগে আবাহনী কলকাতা লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ইস্ট বেঙ্গলের নাইজেরিয়ান খেলোয়াড় চিমাকে নিয়ে আসে। সঙ্গী মনোরঞ্জন ও গোলরক্ষক ভাস্কর গাঙ্গুলিও। ওই ম্যাচে আমাদের পারারই কথা নয়, তবু আমরা জীবন দিয়ে খেললাম। কায়সার হামিদ একদমই সুবিধা করতে দেয়নি চিমাকে। ওদিকে আবার ইলিয়াসের শট ডিফ্লেকটেড হয়ে ভাস্করের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে জালে জড়িয়ে গেলে প্রথমার্ধে মোহামেডান এগিয়েও যায়। ওই গোলের পরই মোহামেডান সমর্থকরা মাঠে ঢুকতে শুরু করেন। দ্বিতীয়ার্ধে মনুর ক্রস গোলে ঢুকে যাওয়ায় হয়ে যায় ২-০। ওই ম্যাচে আমরা শুধু জিতিইনি, সেবার অপরাজিত চ্যাম্পিয়নও হই।

প্রশ্ন :  এর আগে মহসিনের ছায়ায় থেকে তাঁর কোন ব্যাপারগুলো আপনি শেখার চেষ্টা করেছেন?

কানন : অনেক কিছুই শেখার চেষ্টা করেছি। আমি নিজেও ওর অনেক বড় ভক্ত ছিলাম। ওর রিফ্লেক্স আর পজিশন সেন্স ছিল দুর্দান্ত। ফিটনেসও ছিল সে রকম। সেই সঙ্গে ছিল গেম রিড করার ক্ষমতাও। এসবই আমি ওর কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করেছি। তা ছাড়া আমরা খুব ভালো বন্ধুও ছিলাম।

প্রশ্ন :  এও কি সম্ভব ছিল? বিশেষ করে এক নম্বর গোলরক্ষকের সঙ্গে দুই নম্বরের বন্ধুত্ব তো কল্পনাই করা যায় না! বরং তাঁদের একে অন্যের শত্রুই ধরে নেন সবাই।

কানন : জানি, এ কথা কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না। তবু বলি, আমরা সত্যি সত্যিই বন্ধু ছিলাম। মহসিন নিজেও অনেক বড় মনের মানুষ হওয়াতেই তা সম্ভব হয়েছিল। আমি নিজেও ওর খারাপ চাইনি কখনো। দুই নম্বর গোলরক্ষক থাকার সময় সুযোগের জন্য ভাগ্যের দিকেই শুধু চেয়ে থাকতাম। তা ছাড়া আমাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতাও চালু ছিল। কে কত কম গোল খাব, প্রতিটি মৌসুমের আগে আমরা একে অন্যকে এই চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিতাম।

প্রশ্ন :  মহসিনের সঙ্গে তুলনা করলে নিজেকে কোথায় রাখেন?

কানন : আসলে আমরা দুজন দুই ধরনের গোলরক্ষক ছিলাম। আমি ছিলাম লম্বা আর ও বেটে। শারীরিক গড়নের কারণেই দুজনের ভিন্ন ভিন্ন শক্তি আর দুর্বলতা ছিল। এই যেমন উচ্চতায় খাটো বলে ওর পক্ষে ক্রস চেজ করতে সমস্যা হতো। লম্বা হওয়ার কারণে আমি ক্রসে যেতে পারতাম। উচ্চতার কারণে ও কখনো কখনো আমার কাছে মার খেয়ে যেত। ১৯৯৩ সালের সাফ গেমস পর্যন্ত তো কখনো ও জাতীয় দলে, তো কখনো আমি। খারাপ দিন তো এসেছেই। আমিও সব সময় ভালো খেলিনি, আবার মহসিনও নয়। তবে উপমহাদেশের বাইরের দলের সঙ্গে খেলা হলে আমিই থাকতাম প্রথম পছন্দ। কারণ প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের উচ্চতার কারণে ও বিবেচনার বাইরেই চলে যেত। আবার এমনও হয়েছে যে ওর ব্যর্থতা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে তো আমার ব্যর্থতা ওকে। সব কিছু মিলিয়ে বলতে পারি, গোলরক্ষক হিসেবে আমরা দুজন ছিলাম ‘প্যারালাল’।

প্রশ্ন :  অর্থাৎ নিজেকে কিছুতেই পিছিয়ে রাখতে চান না?

কানন : কেন রাখব বলুন? এমন তো নয় যে আমি সব সময় ওর ছায়াতেই থেকে গেছি। মহসিনকে ‘বিট’ করে ওর জায়গাই শুধু নিইনি, অর্জনেও অনেক এগিয়ে। মোহামেডানের যত অর্জন, তার সব কিছুতে আমারও অংশীদারি আছে। মহসিনের তো সেটা নেই। আর জনপ্রিয়তায়ও কোনো অংশে পিছিয়ে ছিলাম না। ‘ক্রাউড ফেভারিট’ না হলে তো মোহামেডানের হয়ে এত দিন খেলতেও পারতাম না।

প্রশ্ন :  তা ওই একটি ক্লাবেই এক জীবন পার করে দিয়েছেন। কেন?

কানন : কারণ মোহামেডানকে আমি ভালোবাসতাম। মোহামেডান হারলে আমি দুঃখ পেতাম, কাঁদতাম। এখনো দুঃখ হয় এই দলটি কত দিন লিগ ট্রফি জেতে না। অথচ আমাদের সময়ে রানার্সআপ হওয়াও ছিল বাজে রেজাল্ট। আর এখন চার-পাঁচ নম্বর দল হওয়া নিয়েও সংশয় থাকে। আমি যেমন ভালোবেসেছি, তেমনি মোহামেডানও আমাকে কম দেয়নি। এ জন্য অন্য দল থেকে ডাক আসার পরও যাইনি। একবার আবাহনীতে খেলানোর আলাপ পাকা করার জন্য আসলাম ভাই (শেখ মোহাম্মদ আসলাম) আমাকে সাবের ভাইয়ের (সাবের হোসেন চৌধুরী) অফিস পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু যেতে যেতে তা নিয়ে আমার মধ্যে এত আক্ষেপ হয় যে আমি সাবের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা না করেই ফিরে আসি। এখনকার খেলোয়াড়দের মধ্যে এই ক্লাবপ্রীতি আপনি পাবেনই না।

প্রশ্ন :  কিন্তু ‘ঘরের ছেলে’ হয়ে গেলে ক্লাব খেলোয়াড়কে বঞ্চিতও করে সাধারণত।

কানন : আমাদের সময়ও করত। দর কষাকষির পর আমি সব সময় ক্লাবের চাওয়াই মেনে নিতাম। ১৯৯৬ সালে খেলা ছেড়ে দেওয়ার এটিও একটি কারণ ছিল যে বয়স হয়ে গেলে ক্লাব আর মূল্যায়ন করতে চায় না। হ্যাঁ, চাইলে অন্য দলে গিয়ে আরো বছরতিনেক দিব্যি খেলা চালিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমি যে ভালোবাসার দলে থেকেই শেষ করতে চেয়েছিলাম।

প্রশ্ন :  এবার এক কথায় কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই। আপনার জীবনের সেরা সেভ কোনটি?

কানন : একটি নয়, চারটি। ১৯৯১ সালের স্বাধীনতা কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে, আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে চারটি শট ঠেকাই।

প্রশ্ন :  জাতীয় দলের হয়ে সেরা পারফরমেন্স?

কানন : সালাউদ্দিন ভাইয়ের (বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন) কোচিংয়ে আবুধাবীতে ১৯৮৮ সালের এশিয়া কাপে তিনটি ম্যাচ খেলেছিলাম এবং সব কটিতেই দুর্দান্ত পারফর্ম করেছিলাম।

প্রশ্ন :  জাতীয় দলের হয়ে কোন ব্যর্থতা সবচেয়ে বেশি পোড়ায়?

কানন : অবশ্যই ১৯৮৯ সালের ইসলামাবাদ সাফ গেমসের ফাইনাল। শেষ মিনিটে গোল খেয়ে আমরা পাকিস্তানের কাছে হেরে যাই। 

প্রশ্ন :  ওই গোল নিয়ে তো বিতর্কও হয়েছে অনেক?

কানন : হ্যাঁ, হয়েছে। মুন্না (মোনেম মুন্না) এ জন্য আমাকে সারাজীবন গালমন্দ করে গেছে, আমিও ওকে।

প্রশ্ন :  দোষটা আসলে কার ছিল?

কানন : যেহেতু গোলরক্ষক ছিলাম, তাই কিছুতেই দায় এড়াতে পারি না আমি। আরেকটু সজাগ থাকলে হয়তো গোলটি হতোই না। আমি মুন্নার ওপরে গিয়ে ফিস্ট করে দিলেই গোল খেতাম না। ফাইনালে ওই ধরনের ভুল অবশ্যই মার্জনীয় নয়। আর দল গোল খেলে গোলরক্ষকেরই দোষ। আসলে মুন্না মনে করেছিল আমি ধরব আর আমি মনে করেছিলাম ও হেড করে ক্লিয়ার করবে। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে মুন্না মাথা নামিয়ে নেওয়াতেই সমস্যাটা হয়। ওটা আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক গোল।

প্রশ্ন :  ক্লাব ফুটবলে এমন কোনো দুঃখজনক গোল নেই?

কানন : আছে তো! একই বছর অর্থাৎ ১৯৮৯ সালের লিগ শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মামুন জোয়ার্দারের গোলটি হয়েছিল আমার দোষেই। ও ক্রস মারবে ধরে নিয়ে কাছের পোস্ট ছেড়ে আমি একটু দূরে সরে যাই। কিন্তু সে কাছের পোস্টেই মেরে দেয়।

প্রশ্ন :  মামুনকে জড়িয়ে এক বিতর্কেও তো আপনার নাম জড়িত?

কানন : হ্যাঁ, সেটি ১৯৯৩ সালের ঘটনা। আমি বল ধরতে লাফিয়ে উঠি। আর ও পেছন থেকে হেড করতে উঠে আমার কাঁধে লেগে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলে। ঘটনা এটাই। অথচ আবাহনী ক্লাব ‘পলিটিক্স’ করে প্রচার করে দেয় যে আমি মামুনের হাত ভেঙে ফেলেছি। মামুনও এই মিথ্যাটা সব সময় বলে গেছে।

প্রশ্ন :  আচ্ছা কথায় কথায় এসেই গেল, আপনিও তো রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন।

কানন : আগেই বলে রাখি, ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক পদটি কিন্তু অরাজনৈতিক। কিন্তু নির্বাচন করতে হলে কোনো না কোনো একটি দলের মনোনয়ন নিতেই হয়। আমি প্রথমে ছাত্রলীগের মনোনয়নই চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা জনি ভাইকে (ইমতিয়াজ সুলতান) দিয়ে দেওয়াতে আমাকে পরে ছাত্রদলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে হয়। এ কারণেই আমার গায়ে ‘বিএনপির লোক’-এর সিলটি পড়ে গেছে।

প্রশ্ন :  কোনো কিছু নিয়ে আক্ষেপ বা অপূর্ণতা আছে?

কানন : একদমই না। বরং আমি নিজেকে সার্থক একজন মানুষই মনে করি। কারণ মোহামেডান ও জাতীয় দলের গোলরক্ষক ছিলাম দীর্ঘদিন, ছিলাম ভীষণ জনপ্রিয় ফুটবলারও। পড়াশোনায়ও ঢিল দিইনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছি। পেয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্লু-ও। এরপর ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ক্রীড়া সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছি। ভিপি আমানউল্লাহ আমানের চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছিলাম আমি। জাতীয় দলের ম্যানেজার হিসেবেও সফল, ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

প্রশ্ন :  কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের বিদ্রোহ করার ঘটনাও তো ঘটেছিল?

কানন : সত্যি কথা এটি। আমি দলের ডিসিপ্লিন ঠিক রাখতে কঠোর হয়েছিলাম বলেই বিদ্রোহ করেছিল খেলোয়াড়রা। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে ভুটানের ফুন্টশোলিংয়ে খেলতে গিয়ে ওরা গভীর রাতে থার্টি ফার্স্টের পার্টিতে যেতে চেয়েছিল। আমি দিইনি। আমার অবস্থান যে সঠিক ছিল, সেটি তো দলের সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়াতেই প্রমাণিত হয়েছিল। আর এখনকার টিম ম্যানেজমেন্ট এত নাজুক যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচের আগের দিন খেলোয়াড়রা ক্যাম্প ছেড়ে ক্লাবে চলে যাওয়ার সাহস পায়। এটি ম্যানেজমেন্টের ব্যর্থতা হলেও বাফুফে তো কোনো ব্যবস্থাই নিল না। 

প্রশ্ন :  আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ডিফেন্ডার কে?

কানন : কায়সার হামিদ আর মুন্নার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। তবে কাউকে এগিয়ে রাখতে হলে আমি কায়সারকেই রাখব। কারণ মুন্না ফিজিক্যালি টাফ হলেও কায়সার ছিল টেকনিক্যালি টাফ। আর ও খেলত ‘ফেয়ার’ ফুটবল। যে জন্য কোনো দিন লাল কার্ড তো পায়ইনি, ওর জীবনে হলুদ কার্ড দেখার ঘটনাও নেই বললেই চলে। মোট কথা, ও শক্তির খেলা খেলত না। মারামারি-গ্যাঞ্জামের মধ্যে না গিয়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলত। শেষ মুহূর্তে স্লাইডিং করে অবিশ্বাস্য সব ক্লিয়ারের অজস্র নজির ও রেখেছে। গোল করার সামর্থ্যেও সে মুন্নার চেয়ে কিছুটা এগিয়ে ছিল।

প্রশ্ন :  আর সেরা স্ট্রাইকার?

কানন : অবশ্যই আসলাম ভাই। আমাকে জীবনে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন তো তিনিই।

প্রশ্ন :  সেই সময় আর এই সময়ের ফুটবলের তুলনা করলে কতটা হতাশ লাগে?

কানন : খুব। একটি কথা না বললেই নয়। এখনকার এক ফুটবলার নাকি দলবদলের বাজারে ৭০ লাখ টাকা দাম হাঁকছে। আমাদের সময়ে হলে ওর মতো খেলোয়াড়ের ভালো কোনো দলে সুযোগই হতো না।

প্রশ্ন :  আমরা শেষের দিকে, আপনার পেশাগত জীবন নিয়ে একটু জানতে চাই।

কানন : পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। খেলোয়াড়ি জীবনে যার সঙ্গে এক রুমে থাকতাম ও একসঙ্গে খেতে যেতাম, সেই প্রিয় বন্ধু কায়সার হামিদের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা আমার। ম্যাট্রিকস নামে আমরা একটি প্রতিষ্ঠানও দিয়েছি। তৈরি পোশাকের ব্যবসার সঙ্গেও আমরা যুক্ত।

প্রশ্ন :  ব্যক্তিজীবন নিয়েও একটু ধারণা চাই।

কানন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগের সহপাঠী রওশন আরা আমার জীবনসঙ্গী। ইদানীং আমরা একটু একাই হয়ে পড়েছি। কারণ আমাদের দুই ছেলেই উচ্চতর পড়াশোনার জন্য এখন কানাডায়। বড়টির নাম আলিফ হাসান আর ছোটটি আদিফ হাসান। এই তো!

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ