<p>সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত করতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে তাদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করবে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল।</p> <p>আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটের নিউজ আপডেটে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৬(৫)(খ) অনুচ্ছেদ অনুসরণ করে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তদন্তের জন্য সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। সে অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল আগামী সপ্তাহে তদন্ত শুরু করবে।</p> <p>এর আগে, গত ৫ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জানান, বর্তমান বেশ কয়েকজন বিচারকের আচরণ সংক্রান্ত প্রাথমিক তদন্ত চলছে এবং এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। পরে ১৫ ডিসেম্বর জানায়, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে কয়েকজন বিচারপতির তথ্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে।</p> <p>গত ১৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান ও বিক্ষোভের মুখে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ হাইকোর্টের ১২ জন বিচারপতিকে বেঞ্চ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। এরপর থেকে তারা বিচারকাজের বাইরে আছেন।</p> <p>সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিচারকাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর ১২ জন বিচারপতি ছুটির আবেদন করলে তাদের আবেদন মঞ্জুর করা হয়। এরপর থেকে তারা ছুটিতে আছেন। এই ১২ বিচারপতি হলেন বিচারপতি আতাউর রহমান খান, নাইমা হায়দার, শেখ হাসান আরিফ, মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, আশীষ রঞ্জন দাস, খিজির হায়াত, এস এম মনিরুজ্জামান, খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, শাহেদ নূরউদ্দিন, মো. আখতারুজ্জামান, মো. আমিনুল ইসলাম ও এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন।</p> <p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভিযোগ, এই বিচারকরা পতিত শেখ হাসিনা সরকারের দোসর। আদালতকে ব্যবহার করে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ সংগঠনটির।</p> <p>এই ১২ জন বিচারপতি ছুটিতে থাকার মধ্যে গত ১৯ নভেম্বর অসদাচরণের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতি। তারা হলেন সালমা মাসুদ চৌধুরী, কাজী রেজা-উল হক এবং এ কে এম জহিরুল হক। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় আগে ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট অসদাচরণের অভিযোগে বিচারকাজ থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে বেতন-ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন তারা। এর মূল কারণ ছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণসংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া।</p> <p>সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত ও অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে গত ২০ অক্টোবর রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। সাত বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। পরে এ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করতে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সেই আবেদন নিষ্পত্তি করে রায় দেন। এ রায়ের ফলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ফেরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে।</p> <p>১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলকে।</p> <p>২০১৪ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনী এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংবিধান থেকে বাদ দেয়। ক্ষমতা দেওয়া হয় সংসদকে। ওই বছর ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় সংশোধনীর গেজেট।</p> <p>এই সংশোধনী বাতিল হওয়ায় সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয়টি উপ-অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হয়। যার ৩ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারককে নিয়ে। কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন, অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কাজে অসমর্থ হন অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধেই যদি তদন্ত চলে, সেক্ষেত্রে পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কাজ করবেন।</p> <p>কাউন্সিলের দায়িত্ব সম্পর্কে ৪ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, বিচারকদের জন্য পালনীয় একটি আচরণবিধি কাউন্সিল নির্ধারণ করে দেবে এবং একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সে বিষয়ে তদন্ত করবে।</p> <p>৫ নম্বর উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কাউন্সিল অথবা অন্য কোনো সূত্র থেকে রাষ্ট্রপতি যদি জানতে পারেন যে, কোনো বিচারক শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বা তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি তদন্ত করে ফলাফল জানানোর নির্দেশ দিতে পারেন।</p> <p>তদন্ত করার পর কাউন্সিল যদি সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বা তার অসমর্থ্যতার প্রমাণ পায় এবং বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানায়, তাহলে ৬ নম্বর দফা অনুসারে রাষ্ট্রপতি ওই বিচারককে অপসারণের আদেশ দেবেন। আর ৭ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, তদন্তের ক্ষেত্রে কাউন্সিলই নিজের কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে এবং সুপ্রিম কোর্টের মত ক্ষমতা ধারণ করবে।</p>