আল্লাহ যাদের আমল কবুল করেন না

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
আল্লাহ যাদের আমল কবুল করেন না
সংগৃহীত ছবি

মুমিনের কোনো আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তাতে পূর্ণ ইখলাস থাকা আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখে সে যেন সৎকাজ করে এবং তার প্রভুর ইবাদতে কাউকে অংশীদার না করে।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ১১০)

যদি কোনো আমল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয়ে তাতে দুনিয়াবি স্বার্থ প্রবেশ করে, তবে তা আল্লাহর দরবারে মূল্যহীন হয়ে যায়। মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য ইবাদত করা আরো ভয়ানক বিষয়।

হাদিস শরিফে এসেছে, কিয়ামতের দিন বহু মানুষ পাহাড়সম ইবাদত নিয়েও জাহান্নামে যাবে, শুধু লোক-দেখানোর নিয়তে করার কারণে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে আছে ...তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য কিয়ামতের দিন তাদের সামনে হাজির হবেন। সমস্ত উম্মত তখন নতজানু অবস্থায় থাকবে। এরপর হিসাব-নিকাশের জন্য সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিদের ডাকা হবে, তারা হলো কোরআনের হাফেজ, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ এবং প্রচুর সম্পদের মালিক।

সেই ক্বারি (কোরআন পাঠক)-কে আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন করবেন, ‘আমি কি আমার রাসুলের মাধ্যমে যা প্রেরণ করেছি, তা তোমাকে শিখাইনি?’ সে বলবে, ‘হ্যাঁ, হে রব! আপনি শিখিয়েছেন।’ তিনি বলবেন, ‘তুমি যা শিখেছ, সে অনুযায়ী কী আমল করেছ?’ সে বলবে, ‘আমি দিনরাত তা তিলাওয়াত করেছি।’ তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলেছ।’ ফেরেশতারাও বলবে, ‘তুমি মিথ্যা বলেছ।

আল্লাহ তাআলা তাকে আরো বলবেন, ‘বরং তুমি চেয়েছিলে মানুষ তোমাকে বড় ক্বারি (হাফেজ) বলে ডাকুক। আর তা তো হয়েছে।’ তারপর সম্পদশালী ব্যক্তিকে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, ‘আমি কি তোমাকে সম্পদশালী করিনি? এমনকি তুমি কারো মুখাপেক্ষী ছিলে না?’ সে বলবে, ‘হ্যাঁ, হে রব! আপনি তা করেছেন।’ তিনি বলবেন, ‘আমার দেওয়া সম্পদ দিয়ে তুমি কী করেছ?’ সে বলবে, ‘আমি এর দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেছি এবং দান-খয়রাত করেছি।

’ আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলেছ।’ ফেরেশতারাও বলবে, ‘তুমি মিথ্যাবাদী।’ আল্লাহ তাআলা আরো বলবেন, ‘তুমি চেয়েছিলে মানুষ তোমাকে দানশীল ও দানবীর বলে ডাকুক। আর তা তো হয়েছে।’

তারপর যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছে, তাকে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে প্রশ্ন করবেন, ‘তুমি কিভাবে নিহত হলে?’ সে বলবে, ‘আমি তো আপনার পথে জিহাদ করতে আদিষ্ট ছিলাম। তাই আমি জিহাদ করতে করতে শাহাদাত বরণ করেছি।’ আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলেছ।’ ফেরেশতারাও বলবে, ‘তুমি মিথ্যাবাদী।’ আল্লাহ তাআলা আরো বলবেন, ‘তুমি চেয়েছিলে মানুষ তোমাকে সাহসী বীর বলে ডাকুক। আর তা তো হয়েছে।’ তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার হাঁটুতে হাত রেখে বললেন, ‘হে আবু হুরায়রা! কিয়ামতের দিন সৃষ্টিজগতের মধ্যে সর্বপ্রথম এই তিন ব্যক্তির মাধ্যমেই জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮২)

এ জন্য মুমিনের উচিত, প্রতিটি কাজ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় করা। কোনো কাজে মানুষের প্রশংসার প্রত্যাশী না হওয়া। কারণ লোক-দেখানো ইবাদতের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘ধ্বংস সেসব নামাজির জন্য, যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে উদাসীন, যারা (মানুষকে) দেখানোর জন্য তা (নামাজ আদায়) করে, আর যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়া থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা : মাউন, আয়াত : ৪-৭)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

প্রশ্ন-উত্তর

কবরস্থানের ঘাস কেটে গরুকে খাওয়ানো যাবে?

ইসলামী জীবন ডেক্স
ইসলামী জীবন ডেক্স
শেয়ার
কবরস্থানের ঘাস কেটে গরুকে খাওয়ানো যাবে?
প্রতীকী ছবি

প্রশ্ন : কবরস্থানের ঘাস কেটে নিয়ে গরুকে খাওয়ানো বা সেখানে গরু চরানোর বিধান কী?

-রোকন, কুমিল্লা

উত্তর : কবরস্থানে গরু চরানো নিষিদ্ধ। আর সেখান থেকে সবুজ ঘাস কেটে গরুকে খাওয়ানো মাকরুহ। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার খাতিরে কাটার প্রয়োজন হলে কেটে নিয়ে গরুকে খাওয়ানো যাবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৪৫, হিন্দিয়া : ১/১৬৬, কিফায়াতুল মুফতি : ৭/১১৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৯/৪০৮)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ বসুন্ধরা, ঢাকা।


 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মৃত প্রিয়জনদের জন্য যেসব আমল করবেন

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
মৃত প্রিয়জনদের জন্য যেসব আমল করবেন

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এই মাসে মহান আল্লাহ জান্নাতের দরজা খুলে দেন, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন। তাই মুমিনের উচিত এই মাসে মৃত প্রিয়জনদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। তাদের কথা স্মরণ করা, যারা একসময় আমাদের সঙ্গে রমজানের দিনগুলো কাটিয়েছে।

সেই প্রিয় মা, প্রিয় বাবা, প্রিয় ভাই-বোন, কলিজার টুকরা সন্তান-সন্ততি, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে স্মরণ করা, যারা একসময় আমাদের জীবনের অংশ হয়ে ছিল।

তাদের সান্নিধ্য একসময়কে আনন্দময় ও অর্থবহ করত, আমাদের অনুভূতি ও মনকে উজ্জীবিত করত। কিন্তু আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত বিধানে তাদের সময় ফুরিয়ে গেছে, তারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। স্বপ্নের মতো হারিয়ে গেছে, রেখে গেছে অনেক মধুর স্মৃতি, যা এখনো আমাদের মনে কেবল তাদের জন্য ভালোবাসা ও হাহাকার জাগিয়ে তোলে।

মাগফিরাতের এই মাসে তাদের ভুলে গেলে চলবে না, যারা একসময় আমাদের সঙ্গে রমজানের আনন্দ ভাগ করে নিত। সাহরিতে ইফতারে আমাদের পরম যত্নে ইবাদতের তাগিদ দিত। স্মরণ করা উচিত আমাদের সেই পূর্ব পুরুষদের, যাঁদের রক্ত আমাদের শিরা-উপশিরায় বইছে। সেই মহা মনীষীদের, যাঁদের ত্যাগ, চোখের পানি ও রেখে যাওয়া জ্ঞানের আলোয় আমাদের পর্যন্ত ইসলাম পৌঁছেছে।

পূর্ববর্তীদের জন্য দোয়া করা প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে : হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই, যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে, তাদেরকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি জিনিস চলতে থাকে : সদকায়ে জারিয়া; এমন জ্ঞান, যা মানুষ উপকৃত হয়; আর নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪১১৫)

নিম্নে পবিত্র রমজানে মৃতদের জন্য করণীয় কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো—

সদকা : উল্লিখিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, মৃতদের ইসালে সওয়াব করার একটি উত্তম পদ্ধতি হতে পারে সদকা। কারো সামর্থ্য থাকলে দান-সদকার মাধ্যমে মৃত আত্মীয়দের ইসালে সওয়াব করা যেতে পারে।

দোয়া : উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন নেক সন্তানের কথা উল্লেখ করেছেন, যে তার জন্য দোয়া করে। তাই পবিত্র রমজানে মৃতদের জন্য আমরা খুব বেশি বেশি দোয়া করতে পারি, বিশেষ করে সাহরি ও ইফতারের সময় তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দোয়া করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন।

কোরআন তিলাওয়াত : মাকিল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের মৃতদের জন্য সুরা ইয়াসিন পাঠ করো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১২১)

অতএব, রমজান যেহেতু কোরআনের মাস, এ মাসে আমরা মৃত আত্মীয়দের ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতে পারি। কিন্তু মৃতদের জন্য অর্থের বিনিময়ে কাউকে দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করানো উচিত নয়।

ওমরাহ : বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এক মহিলা এসে বলল, ‘আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন, কিন্তু তিনি হজ আদায় করেননি। তাঁর পক্ষে কি আমি হজ আদায় করব?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তাঁর পক্ষে তুমি হজ আদায় করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৯২৯)

তাই কারো সামর্থ্য থাকলে পবিত্র রমজানে মৃতদের ইসালে সওয়াবের নিয়তে ওমরাহ পালন করা যেতে পারে।

মন্তব্য
প্রতিদিনের আমল

জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দোয়া

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দোয়া

পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কথা বলা হয়েছে। এ রকম একটি আয়াত হলো- 

رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অর্থ: হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সুরা : আলে ইমরান, ১৬)
 

মন্তব্য
হাদিসের বাণী

জুমা ও রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
জুমা ও রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ

মহান আল্লাহ বিভিন্ন উপলক্ষে তাঁর প্রিয় বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, এক জুমা ও পরবর্তী জুমা এবং এক রমজান ও পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে মুমিনের গুনাহ মাফ করা হয়। হাদিস শরিফে এসেছে, 

الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إلى الجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إلى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ ما بيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الكَبَائِرَ.

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহের মাফ করা হয়। যখন ওই বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।

’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ