<p>বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা তরুণদের রক্তের ঋণ শোধ করতে বদ্ধপরিকর। আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতেই তুলে দিতে চাই। তাদের ফ্রেশ ব্লাড। তারা দেশ গঠন করুক। আমরা তাদের পরামর্শ দেব।’</p> <p>বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) যশোর শহরের একটি হোটেলে আয়োজিত সুধিসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। দলের জেলা শাখা এই কর্মসূচির আয়োজন করে।</p> <p>সুধিসমাবেশে জামায়াত আমির বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকার স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের নামে জাতিকে বিভক্ত করে রেখেছিল। তারা নাকি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। এখন ভারতে বসে আছেন। সেখান থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ১৬ ডিসেম্বরকে তাদের বিজয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে টুইট করছেন। সেখানে বাংলাদেশের কোনো কথা নেই। তিনি (শেখ হাসিনা) একবারও প্রতিবাদ করলেন না। অথচ তাদের এতো চেতনা! আমরা কিন্তু প্রতিবাদ করেছি।’</p> <p>তিনি প্রচলিত একটি গল্প শুনিয়ে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীরা পালিয়েও দেশকে শান্তি দিচ্ছে না। বিভিন্নভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তারা। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, জাতীয় স্বার্থে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে কোনো দল নেই, দেশের সবাই একদল।’</p> <p>ডা. শফিকুর আরো বলেন, ‘যশোরকে আমরা আলাদা দৃষ্টিতে দেখি। দেশ স্বাধীনের পর যখন ভারতীয় সেনারা খাদ্যগুদাম লুট করছিল, যখন ঢাকা থেকে সব আর্মস, মিলিটারি ভেহিকেলস নিয়ে যাচ্ছিল, তখন এই যশোর থেকেই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমাদের পদ্মা নদীকে হত্যা করা হয়েছে। পদ্মার অববাহিকা মরুভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। কী অন্যায় আমাদের? আসলে আমরা স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে পারিনি। সেই মূল্য এখনও আমাদের শোধ করতে হচ্ছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারের লিগ্যাসি বিগত সাড়ে ১৫ বছর লুটপাট করে বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তারা খালি করে দিয়েছে।’</p> <p>জোড়াতালি দিয়ে কিছু হবে না মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘সমাজের বোন ম্যারোতে হাত দিতে হবে। নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যার জন্য রক্ত দিয়েছে আবু সাইদ, মুগ্ধরা। সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল আমাদের ভাইবোনরা। সেই আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে সরকার নিজের পতন ডেকে এনেছে।’</p> <p>আওয়ামী সরকারের দুই শীর্ষনেতার প্রতি ইঙ্গিত করে ডা. শফিক বলেন, ‘তারা নাকি পালিয়ে যাবেন না। গর্ব করে বলতেন তিনি পালাবেন না। আরেকজন বলতেন, ‘কোথায় পালাবো? আপনার বাড়িতে উঠব।’ আসলে তারা জাতির সঙ্গে মশকরা করতেন।'</p> <p>সুধিসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা শাখার আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল। এতে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন।</p> <p>মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। উই ওয়ান্ট জাস্টিস, এটাই ছিল সেই আন্দোলনের মূলমন্ত্র। কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। জামায়াতে ইসলামী এদেশে একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ গড়তে লড়াই করছে। এর জন্য ছাড় দিয়ে হলেও জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।</p> <p>সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আদ-দ্বীনের চেয়ারম্যান ডা. শেখ মহিউদ্দিন, প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আহসান হাবিব, আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু মোর্তুজা ছোট, প্রাচ্যসংঘের প্রতিষ্ঠাতা বেনজীন খান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদ প্রমুখ।</p> <p>আগামী ২৭ ডিসেম্বর জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠেয় কর্মিসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেবেন।</p>