অনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল 'জাতীয় নাগরিক পার্টি'। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দলটি আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
আজ শুক্রবার বেলা ৩টায় মানিক মিয়া এভিনিউতে এই অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুরুতে কোরআন তেলাওয়াতের পর বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়।
ধর্মীয়গ্রন্থ পাঠ শেষে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন হয়।
তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইসলামী ঐক্য জোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজি বলেন, নতুন রাজনিক দলকে আমরা স্বাগত জানাই। তারা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়, সহযোদ্ধা।
আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে জনগণের সবথেকে ভালো সেবা কে দিতে পারে। যারা ভালো সেবা দিতে পারবে তারাই এগিয়ে যাবে, জনপ্রতিনিধি হবে এবং দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবে।
খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, যেহেতু তারা জুলাই আগষ্টের অভ্যুথ্যানের মধ্য দিয়ে নতুন দেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেছে, দেশকে নতুন করে স্বাধীন করেছে। এখন তারা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করছে।
আমি বিশ্বাস রাখতে চাই এই নেতৃত্বের ওপর, এই দলের ওপর।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এমন একটা সময় তারা দল গঠন করছেন যখন জাতির সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। জাতীয় জীবনে আমরা এখন ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি। রাষ্ট্র ব্যবস্থার পুন:গঠন ও সংবিধান সংস্কারের মধ্য দিয়ে নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিগত ৫৩ বছরে তরুণদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হয়নি।
আমরা আশা করবো তাদের এই দলের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও সাম্যের বাংলাদেশ তৈরি করতে সক্ষম হবে।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আশা করি এই নতুন রাজনৈতিক দলের মধ্য দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন বন্ধবস্ত ও সৌহার্দপূর্ন আচরণ পরিলক্ষিত হবে। আরো আশা করি এই দলটি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
সরেজিমিনে দেখা যায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশকে কেন্দ্র সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেন ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ। বিকাল ৪টায় তা জিনসমুদ্রে পরিণত হয়। দলে দলে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে আসছেন। আগতদের মধ্যে গণঅভ্যুত্থানে আহত অনেককেও আসতে দেখা গেছে। এসময় ব্যানার ও মিছিলসহ অনেককে মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধেও আসতে দেখা গেছে।
রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই ধানমন্ডি ও মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। পুলিশ ও বিজিবির পর্যপ্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি সেনা সদস্যদের টহল দিতেও দেখা গেছে।
অনুষ্ঠানস্থলে আগতদের মেটাল ডিটেকটর ও আর্চওয়ে দিয়ে তল্লাশি করে ভেতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশের গেইটের সামনে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
নিরাপত্তা নিয়ে ২৬ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উপ অধিনায়ক মেজর আবরার বলেন, ছয়টি পেট্রল কাজ করছে। প্রয়োজনে আরো ৪টি পেট্রল প্রস্তুত আছে। যান চলাচল স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই নিরাপত্তা জোরদার থাকবে। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য পাইনি।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত হয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম, ইসলামী ঐক্য জোটের সহ-সভাপতি মাওলানা জসিম উদ্দিন ও মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী ও নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমেদ আলী কাশেমী, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি আবদুর রব ইউসুফিও প্রমুখ।
সভাস্থলে এসেছেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন সেলিম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি আব্দুল মান্নান, মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
কূটনীতিবিদদের মধ্যে ঢাকায় ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস রেন্ডাল, পাকিস্তান হাই কমিশনের কাউন্সেলর কামরান ধাঙ্গালও এসেছেন।