<p>দেশের তামাক খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটি)। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগও বড়। নানা সময়ে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আলোচনায় থাকে কম্পানিটি। </p> <p>চলতি অর্থবছরের বাজেটের আগে বিপুল পরিমাণে সিগারেট শুল্ক-কর দিয়ে ওয়্যারহাউজে মজুদ করে রাখে বিএটি। তবে বিক্রি করে বর্ধিত মূল্যে। এতে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ২১০ কোটি। টাকা আদায়ে বিএটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট-এলটিইউ (ভ্যাট)।</p> <p>বিএটির অপকৌশলে সিগারেটের ক্রেতার পাশপাশি সরকারও হারিয়েছে রাজস্ব। পরে এলটিইউ ভ্যাটের পক্ষ থেকে ডিলার/ডিস্ট্রিবিউটর পর্যায়ে সরবরাহ মূল্য জানতে চাইলেও কৌশলে এড়িয়ে যায় বিএটি। চলতি বছরের ৫ জুন কম্পানির ওয়্যারহাউজে মজুতের তথ্য নেয় এলটিইউ। ৬ জুন বাজেট ঘোষণার দিন থেকে সিগারেটের নতুন স্তরভিত্তিক মূল্য ও সম্পূরক শুল্ক বিবেচনায় শুল্ক-কর প্রযোজ্য। বাজেট ঘোষণার আগে বিএটিকে মজুদ সিগারেট ডিলার/ডিস্ট্রিবিউটর পর্যায়ে সরবরাহ রেট জানতে চেয়ে চিঠি দেয় এলটিইউ। তবে সময়ক্ষেপণ করে সরবরাহ মূল্য এড়িয়ে সরবরাহ সংক্রান্ত হিসাব বিবরণী দাখিল করে।</p> <p>নিয়ম অনুযায়ী, বাজেট প্রস্তাবের পর সিগারেটের কর ও মূল্য বাড়ানোর বিষয়টি কার্যকর। চারস্তরেই বেড়েছে করের হার। বাজেটে নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা, সম্পূরক শুল্ক ২ শতাংশ বাড়িয়ে ৫৮ থেকে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে। মধ্যমস্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৬৭ থেকে বাড়িয়ে ৭০ টাকা, উচ্চস্তরে ১১৩ থেকে ১২০ টাকা এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চস্তরের ১০ শলাকার দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ তিনস্তরেই সম্পূরক শুল্ক ৬৫ থেকে ৬৫.৫ করা হয়েছে। ভ্যাট ১৫ শতাংশ এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য সারচার্জ আগের মতই রয়েছে।</p> <p>বিএটি চার স্তরের সিগারেটই বিক্রি করে। এ প্রতিষ্ঠানের অতি উচ্চস্তরের সিগারেট বেনসন এন্ড হেজেস। উচ্চস্তরের মধ্যে আছে ক্যাপস্টেন ও গোল্ডলিফ। মধ্যমস্তরের সিগারেট স্টার ও লাকি স্ট্রাইক। নিম্নস্তরের সিগারেট আছে চারটি। সেগুলো হলো-ডার্বি, হলিউড, পাইলট, রয়েসল।</p> <p>বিএটি বাজেটের আগে চারস্তরের ৩৫ কোটি ৬৫ লাখ ২ হাজার ৯৭৫ প্যাকেট সিগারেট শুল্ক-কর দিয়ে ওয়্যারহাউজে মজুদ করে। এতে সরকার রাজস্ব পায় ৩ হাজার ৩৩ কোটি ৬৫ লাখ ৩৮ হাজার ৮৬ টাকা। তবে পুরাতন রেটে শুল্ক-কর দিলেও প্রতিষ্ঠানটি সিগারেট বিক্রি করেছে নতুন রেটে। ফলে প্রকৃতপক্ষে সরকারের রাজস্ব পাওয়ার কথা ছিল ৩ হাজার ২৫৫ কোটি ৫২ লাখ ১ হাজার ৪২৭ টাকা। বাজেটের মারপ্যাচে গ্রাহকের পকেট কেটে বিএটি ২১০ কোটি ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪২ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।</p> <p>অথচ এনবিআরের আইন অনুযায়ী, সিগারেটের উত্পাদক বা বিক্রেতা নির্ধারিত মূল্যস্তরের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন না। উত্পাদনস্থল থেকে যে মূল্যের উপর শুল্ক-কর পরিশোধ করা হয়েছে তার চেয়ে বেশি দামে সিগারেট সরবরাহ করা হলে সেই দামের উপর শুল্ক-কর দিতে হবে।</p> <p>এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএটি বাংলাদেশের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান জানায়, বর্তমানে আমরা এলটিইউ-ভ্যাটের কারণ দর্শানোর নোটিশ পর্যালোচনা করছি। বিষয়টি এলটিইউ-ভ্যাট ও বিএটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় হওয়ায় কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না।</p>